সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি আলী রীয়াজ বলেছেন, বিদ্যমান রাষ্ট্র কাঠামোর সংস্কার দরকার। সংস্কার না হলে স্বৈরতন্ত্র মোকাবিলা করা সম্ভব হবে না। এতে দেশে আবারো দুঃশাসন ফিরে আসবে। তবে এই সংস্কার অন্তর্ভুক্তিমূলক, রাজনৈতিক, সুশাসনসহ সকল বিষয় মাথায় রেখে করতে হবে।
বৃহস্পতিবার (২০ মার্চ) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘রাষ্ট্র সংস্কারে রাজনৈতিক ঐকমত্য ও নাগরিক ভাবনা’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় এসব কথা বলেন তিনি।
সুজন সভাপতি ড. বদিউল আলম মজুমদারের সভাপতিত্বে বৈঠকে বক্তৃতা করেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী সাংবাদিক মনির হায়দার, বিচার ব্যবস্থা কমিশনের সদস্য বিচারপতি এমদাদুল হক, ফেমার প্রেসিডেন্ট মুনিরা খান, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক আবু সাঈদ খান, সুজনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার প্রমূখ।
আরো পড়ুন
ফরিদপুরে ৬ দফা দাবিতে পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ, ক্লাস বর্জন
আলোচনায় অংশ নিয়ে অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, বিগত ১৬ বছরে স্বৈরতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে দুর্বল প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। সঠিক গণতন্ত্রের চর্চা না থাকার কারণে দুর্বল ও ভঙ্গুর প্রতিষ্ঠান দাঁড়াতে দেয়নি।
ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে আমাদের বিচার বিভাগকে। ইচ্ছাকৃতভাবে এমনটা করা হয়েছে।
তিনি বলেন, এখন প্রশ্ন উঠতে পারে কেন সংস্কার করতে হবে, কারা তুলেছে এ সংস্কারের প্রস্তাব। এটা মূলত এসেছে জনগণের কাছ থেকে, তাদের ক্ষোভ-বিক্ষোভ থেকে এসেছে।
এখন কাঠামোগত বিদ্যমান ব্যবস্থার সংস্কার ছাড়া স্বৈরতন্ত্রের মোকাবিলা করা যাবে না। বারবার ফিরে আসবে। তাই সংস্কারের প্রস্তাব বা সংস্কার দরকার।
ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি আলী রীয়াজ বলেন, আমরা দেখেছি নির্বাচনের নামে প্রহসন করা হয়েছিল। আবার বিচার ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর একচ্ছত্র ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিল, এটা গণতান্ত্রিক নয়।
বিচারহীনতা থেকে বেরিয়ে আসতে সংস্কার। সংস্কার নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে সংস্কার প্রক্রিয়া চলমান থাকবে। সবার সঙ্গে আলোচনার মধ্য দিয়েই জাতীয় ঐকমত্য তৈরি হবে বলে জানান তিনি।
বিগত দিনে সংবিধান সংশোধনের ৯০ ভাগই ব্যক্তি ও গোষ্ঠী স্বার্থে হয়েছে বলে উল্লেখ করেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার। তিনি বলেন, জনস্বার্থে সংবিধান সংস্কার জরুরি হলেও রাজনৈতিক দলগুলোর বাধার কারণে বিগত দিয়ে তা সম্ভব হয়নি। ৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থান সংস্কারের পক্ষে একটি ভিত্তি তৈরি করে দিয়েছে। ইতোমধ্যে রাজনৈতিক দলগুলো সংস্কারের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল ৩১ দফা সংস্কার কর্মসূচি দিয়েছে, যা ইতিবাচক। ফলে নানা চ্যালেঞ্জ থাকলেও আশাবাদি হওয়ার জায়গা আছে। সকলের সহযোগিতায় সংস্কার উদ্যোগ সফল হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
আরো পড়ুন
চৈত্র সংক্রান্তিতে পার্বত্য অঞ্চলে ছুটি
বিচার ব্যবস্থা কমিশনের সদস্য বিচারপতি এমদাদুল হক বলেন, বিচার বিভাগ নিয়ে অনেক দিন থেকেই নানা প্রশ্ন উত্থাপিত হচ্ছে। যে কারণে সংস্কার প্রস্তাবে বিচার বিভাগকে স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও কার্যকর করার লক্ষ্যে বিভিন্ন সুপারিশ তুলে ধরা হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের আন্তরিকতার কারণে এই প্রস্তাব প্রণয়ন করা সম্ভব হয়েছে। এই প্রস্তাবের সঙ্গে রাজনৈতিক দল ও নাগরিক সমাজকে ঐকমত্যে পৌছাতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে বদিউল আলম মজুমদার বলেন, আমরা কতগুলো সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছি। সেখানে রাজনৈতিক দলের সংস্কারের কথাও বলা হয়েছে। বিশেষ করে রাজনৈতিক দলের অভ্যন্তরে গণতন্ত্র চর্চা, আর্থিক স্বচ্ছতা নিশ্চিত, মনোনয়ন বাণিজ্য বন্ধসহ বেশ কিছু সুপারিশ রয়েছে। এসব সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়ন করতে হবে।
তিনি আরো বলেন, আমাদের রাষ্ট্র ভঙ্গুর হয়ে গেছে। চারদিকে অনেক অসংগতি। এদেশের নির্বাচনী সংস্কৃতি ভেঙে গেছে। এদেশের নির্বাচনী ও রাজনৈতিক অঙ্গন পরিচ্ছন্ন করতে হবে। রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে কার্যকর করতে হবে। ভোটের অধিকারকে নিশ্চিত করতে হবে।