<p>মহাবিশ্বে কি আমরাই একা?</p> <p>এ প্রশ্নের উদ্ভব আজকের নয়। সরাসরি না বললেই, বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিতে এ প্রশ্নের উদ্ভব হয়েছিল, সেই ষোড়শ শতাব্দীতে। কোপার্নিকাস আর জিওর্দানো ব্রুনোর হাত ধরে। কোপার্নিকাস পৃথিবী নয় সূর্যই সৌরজগতের কেন্দ্র। ব্রুনো বলেছিলেন, পৃথিবীর বিশেষ কোনো গ্রহ নেই। মহাকাশে অজস্র গ্রহের মতো সেও একটা নিতান্ত সাধারণ গ্রহ।</p> <p>সরাসরি বলেননি, সাধারণ গ্রহ বলার মানে এমন আরও গ্রহ আরও থাকতে পারে, এমনটা খুবই স্বাভাবিক। ব্রুনোর ভাবনা ছিল যুগান্তকারী, তাই তাঁর কথা সমাজ মানতে পারেনি। নিজেদের অস্তিত্ব সঙ্কটে পড়েছিলেন সমাজপতিরা, তাই ব্রুনোকে হত্যা করে সত্য আড়াল করার ব্যর্থ প্রয়াস চালিয়েছিলেন।</p> <p>সময় সামনের দিকে এগিয়েছে। বদলে গেছে বিজ্ঞানের ইতিহাস। এখন সাধারণ মানুষও মানে মহাবিশ্বে সূর্যের মতো অগণিত নক্ষত্র যেমন আছে, আছে অজস্র গ্রহ। তার সংখ্যা বিলিয়ন বিলিয়ন। এত্ত এত্ত গ্রহ-নক্ষত্রের ভিড়ে একটা-দুটো এমনকী কয়েক হাজার কিংবা লাখ পৃথিবীর মতো গ্রহ থাকা সম্ভব, যেগুলোতে মানুষের মতো বৃদ্ধিমান প্রাণী আছে। আসলেই কি তাই?</p> <p>ইতালীয়-মার্কিন বিজ্ঞানী এনরেকি ফার্মি এ ধরনের কথা শুনে একটা প্রশ্ন তুলেছিলেন, তাই যদি হয়, ওরা কোথায়? <br /> আপাত নিরীহ ধাঁচের এই প্রশ্নই জন্ম দিয়েছিল একটা বড় প্যারাডক্সের। </p> <p>ব্যাপারটা এমন, মহাবিশ্বে বিলিয়ন বিলিয়ন গ্যালাক্সি আছে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। তাহলে সে সব গ্যালাক্সিতে কত নক্ষত্র আছে আর গ্রহের কত সংখ্যা ভাবতে গেলেও মাথা ঘুরবে। এসব নক্ষত্রের সব নিশ্চয়ই এক সঙ্গে জন্মায়নি। সবগুলো গ্রহের বয়সও নিশ্চয়ই এখন।</p> <p><a href="https://www.kalerkantho.com/online/science/2024/07/04/1403291"><span style="color:#2980b9;">আরও  পড়ুন: ইউএফও : রহস্য নাকি গুজব: পর্ব ৫</span></a></p> <p>তাই যদি হয়, পৃথিবীর অনেক আগেই হয়তো অনেক গ্রহে প্রাণের উদ্ভব ঘটেছে। সেগুলোতে বুদ্ধিমান প্রাণীর আবির্ভাবও নিশ্চয়ই অনেক আগেই ঘটেছে। সে সব গ্রহের প্রাণীরা নিশ্চয়ই মানুষের চেয়ে উন্নত বুদ্ধির। তাদের প্রযুক্তিও নিশ্চয়ই উন্নত। তা-ই যদি হয়, কোনো কোনো গ্রহের মানুষ এতদিনে পৃথিবীতে চলে আসার কথা। এ প্রশ্নটিই এখন ফার্মি প্যারাডক্স নামে জনপ্রিয়। তাই বলে কি যারা ইউএফও দেখার দাবি করছেন, এগুলোই কি ফার্মি প্যারাডক্সের জবাব? না বোধহয়।</p> <p>১৯৬০ দশকে মার্কিন বিজ্ঞানী ফ্রাঙ্ক ড্রেক একটা অঙ্ক কষেছিলেন। মহাবিশ্বের কতগুলো বুদ্ধিমান থাকতে তার একটা হিসাব কষা যায় এই সমীকরণে। এটা একটা সম্ভবনা সমীকরণ। এতে কতগুলো চলক পাশাপাশি গুণ করা হয়েছে। এসব চলকের গুণফল করলে যে ফল পাওয়া যাবে, সেই সংখ্যক প্রাণধারী গ্রহ থাকার সম্ভাবনা আছে মহাবিশ্বে। সমীকরণটা গত ষাট বছরে কেউ বাতিলের কথা বলেনি। তবে এই সমীকরণটা প্রণয়ন করা হয়েছিল শুধু আমাদের গ্যালাক্সি মিল্কিওয়েতে বুদ্ধিমান সভ্যতার হিসাব করার জন্য। সমীকরণটা হলো: <br />  N = R<sub>∗ </sub>× f<sub>p</sub> × n<sub>e</sub> × f<sub>l</sub> × f<sub>i </sub>× f<sub>c</sub> × L <br /> যেখানে,<br /> N- হল মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সিতে মোটামুটি বুদ্ধিমান সভ্যতার সংখ্যা, যে সভ্যতার প্রাণীরা বিদ্যুৎচুম্বক তরঙ্গ বিতরণ করতে পারে। <br /> R<sub>*</sub>- বুদ্ধিমান প্রাণের অনুকূল নক্ষত্র গঠনের হার<br /> f<sub>p</sub> -  গ্রহব্যবস্থা রয়েছে, এমন নক্ষত্রের শতকরা হার<br /> n<sub>e</sub> - হলো যে সকল তারার গ্রহব্যবস্থা রয়েছে সেগুলোর নক্ষত্র গ্রহের সংখ্যা, এসব গ্রহের আবার বুদ্ধিমান প্রাণ ধারণের সম্ভবনা থাকতে হবে <br /> f<sub>l</sub> - অনুকূল পরিবেশের কারণে প্রাণের আবির্ভাব ঘটেছে তাদের শতকরা হার<br /> f<sub>i</sub> - বুদ্ধিমান প্রাণ রয়েছে এমন গ্রহের শতকরা হার<br /> f<sub>c</sub> - বিদ্যুৎচুম্বক তরঙ্গ পাঠাতে সক্ষম এমন প্রাণের বিকাশ হওয়া গ্রহের শতকরা হার<br /> L - হলো একটি সময়, যে সময় ধরে বুদ্ধিমান প্রাণীরা তাদের উপস্থিতির প্রমাণ দিতে পারে </p> <p>চলবে...</p> <p>সূত্র: স্পেস ডট কম</p>