<p>মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় এক প্রসূতির মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। শ্রীমঙ্গল শহরের কলেজ রোডের মজুমদার নার্সিং হোম অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ ওঠে। উন্নত চিকিৎসার জন্য সিলেটের একটি হাসপাতালে নিলে মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর) সকালে তার মৃত্যু হয়।</p> <p>নিহত প্রসূতি সাবিনা (২৩) উপজেলার আশীদ্রোন ইউনিয়নের রামনগর এলাকার পরিবহন শ্রমিক মো. নুর হোসেনের স্ত্রী।</p> <p>নিহতের স্বজনদের অভিযোগ, সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে সাবিনাকে শ্রীমঙ্গলের মজুমদার নার্সিং হোম অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নেওয়া হয়। সেখানে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে দ্বিতীয় পুত্রসন্তানের জন্ম দেন তিনি। কিছুক্ষণ পর হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. নিশিত নন্দী মজুমদার সাবিনার অবস্থা ভালো নয় বলে জানান। তাকে উন্নত চিকিৎসার মৌলভীবাজার অথবা সিলেট নেওয়ার কথা বলেন তিনি।</p> <div class="d-flex justify-content-center"> <div class="col-12 col-md-10 position-relative"><strong>আরো পড়ুন</strong> <div class="card"> <div class="row"> <div class="col-4 col-md-3"><img alt="শ্রীমঙ্গলে শিক্ষানবিশ আইনজীবী হত্যার ঘটনায় দুজন গ্রেপ্তার" height="66" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/2024/07/18/1721251921-22ffef2e2ae9e372526672539c107db3.jpg" width="100" /></div> <div class="col-8 col-md-9"> <p>শ্রীমঙ্গলে শিক্ষানবিশ আইনজীবী হত্যার ঘটনায় দুজন গ্রেপ্তার</p> </div> </div> </div> <a class="stretched-link" href="https://www.kalerkantho.com/online/country-news/2024/07/18/1407522" target="_blank"> </a></div> </div> <p>সাবিনার বড় ভাই মো. আলমগীর অভিযোগ করে বলেন, ‘আমরা সাবিনাকে নিয়ে মজুমদার নার্সিং হোমে গেলে তারা কোনো ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা না করেই তাকে ওটিতে (অপারেশন থিয়েটার) নিয়ে যান এবং অপারেশন করেন। অপারেশনের পর তাকে বেডে নিয়ে আসে। অপারেশনের সময় তার জরায়ু কেটে ফেলা হয়েছে তা আমাদের জানানো হয়নি। ঘণ্টাখানেক পরে রক্তে পুরো বেড ভিজে যায়। এ ঘটনা ডা. নিশীথ মজুমদারকে জানালে তিনি আমাদের রক্ত সংগ্রহ করতে বলেন। আমরা এক ব্যাগ রক্ত সংগ্রহ করে দিই। এরপর আরো এক ব্যাগ রক্ত রোগীকে দেওয়া হয়। একটু পর তৃতীয় ব্যাগ রক্ত দেওয়ার পর ডা. নিশীথ মজুমদার রোগীকে মৌলভীবাজার লাইফ লাইন প্রাইভেট হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলেন।’</p> <p>তিনি বলেন, ‘ডাক্তার আমাদের বলেন সে হাসপাতালে গিয়ে কোনো কিছু বলা লাগবে না। যা বলার তিনি ফোনে বলে দিয়েছেন। গেলেই রোগীকে ভর্তি করা হবে। তার কথায় আমরা রোগীকে নিয়ে লাইফ লাইন হাসপাতালে গেলে সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক রোগীর অবস্থা দেখে ভর্তি করতে অপরাগতা প্রকাশ করেন। পরে দ্রুত আমরা রোগীকে নিয়ে সিলেট নর্থ-ইস্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখানে যাওয়ার পর ডাক্তাররা আমাদের বলেন যে অস্ত্রোপচারের সময় রোগীর জরায়ুর নাড় কেটে ফেলায় অবস্থা সংকটাপন্ন। তার পরও তারা রোগীকে ভর্তি করে রাতেই তাৎক্ষণিক অপারেশন করেন। কিন্তু অপারেশনের পরও তার রক্তপাত বন্ধ হয়নি। সেখানেও আরো ৭-৮ ব্যাগ রক্ত দিতে হয়েছে। এরপর শেষ চেষ্টা হিসেবে সাবিনাকে আইসিইউতেও রাখা হয়। কিন্তু মঙ্গলবার সকাল ৯টায় তার মৃত্যু হয়।’</p> <div class="d-flex justify-content-center"> <div class="col-12 col-md-10 position-relative"><strong>আরো পড়ুন</strong> <div class="card"> <div class="row"> <div class="col-4 col-md-3"><img alt="শ্রীমঙ্গলে কুকুরের কামড়ে আহত ২৪, এলাকাজুড়ে আতঙ্ক" height="66" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/2024/06/08/1717837132-40e6486d6ac6a1fea2295acee7eeb04a.jpg" width="100" /></div> <div class="col-8 col-md-9"> <p>শ্রীমঙ্গলে কুকুরের কামড়ে আহত ২৪, এলাকাজুড়ে আতঙ্ক</p> </div> </div> </div> <a class="stretched-link" href="https://www.kalerkantho.com/online/country-news/2024/06/08/1395716" target="_blank"> </a></div> </div> <p>মো. আলমগীর অভিযোগ দিয়ে বলেন, ‘মজুমদার হাসপাতালে অপারেশনের সময় জরায়ুর নাড় কেটে ফেলায় আমার বোনের মৃত্যু হয়েছে। যার ফলে মাতৃহারা হলো আমার পাঁচ বছর বয়সী ও সদ্যোজাত দুই ভাগনে। আমি আমার বোন হত্যার বিচার চাই।’ </p> <p>তিনি বলেন, ‘বিকেল ৩টার দিকে আমার বোনের মরদেহ নিয়ে শ্রীমঙ্গল পৌঁছেছি। বোনের মরদেহ জানাজার পর কবরস্থ করে আমি বিষয়টি মৌলভীবাজারের সিভিল সার্জনসহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবরে লিখিতভাবে জানাব এবং আইনি পদক্ষেপ নেব।’ </p> <p>এ বিষয়ে মজুমদার নার্সিং হোম অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. নিশিত নন্দী মজুমদার বলেন, ‘এই রোগীর আগেও একবার সিজার করা হয়েছে। অক্টোবর মাসের ২৩ তারিখে ছিল এবারের ডেলিভারির ডেট। আগে কোনো রোগীর সিজার করা থাকলে ডেলিভারি ডেটের সাধারণত ১৪ থেকে ১৫ দিন আগে সিজার করতে হয়। এ হিসেবে তারা আসেননি। ২৮ অক্টোবর সন্ধ্যার দিকে যখন তারা রোগীকে নিয়ে আমার ক্লিনিকে আসেন তখন তার অবস্থা খুব খারাপ ছিল। তখন আমি অ্যানেস্থেসিয়া দেওয়ার জন্য ডা. এরশাদকে ফোন করে নিয়ে আসি। রোগীর অবস্থা এমন ছিল যে কোথাও রেফার করলে হয়তো রোগী ও গর্ভজাত শিশু দুই জন্যই মারা যেতে পারেন। এ অবস্থায় জরুরি ভিত্তিতে আমরা সিজার করি।’ </p> <div class="d-flex justify-content-center"> <div class="col-12 col-md-10 position-relative"><strong>আরো পড়ুন</strong> <div class="card"> <div class="row"> <div class="col-4 col-md-3"><img alt="ভুল অস্ত্রোপচারে প্রসূতির মৃত্যুর অভিযোগ" height="66" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/2024/10/06/1728232776-7819d64b662f3e8be6157c67fe5042a9.jpg" width="100" /></div> <div class="col-8 col-md-9"> <p>ভুল অস্ত্রোপচারে প্রসূতির মৃত্যুর অভিযোগ</p> </div> </div> </div> <a class="stretched-link" href="https://www.kalerkantho.com/online/country-news/2024/10/06/1432473" target="_blank"> </a></div> </div> <p>তিনি বলেন, ‘সিজারের সময় দেখি সেলাইটা একদিকে ফেটে গেছে। আর একটু সময় হলেই বাচ্চাটা ও মা মারা যেত। আমরা সিজারের মাধ্যমে বাচ্চাটা বের করে আমি ডা. এরশাদের সাহায্যে অনেক চেষ্টার পর রোগীর রক্ত বন্ধ করি। এরপর রোগীকে সিটে নেওয়ার পর দেখা যায় নিচ দিয়ে ব্লিডিং হচ্ছে। আমি তাৎক্ষণিক ব্লিডিং বন্ধ করার সব ব্যবস্থা নিই। রোগীর শরীরে কয়েক ব্যাগ রক্ত দিই। এরপর আরো এক ব্যাগ রক্ত দেবার পরও দেখি নিচের ব্লিডিং বন্ধ হচ্ছে না। তখন আমি রোগীর স্বজনদের বলি তাড়াতাড়ি অন্যত্র নিয়ে যেতে। ডা. এরশাদ মৌলভীবাজার লাইফ লাইন হাসপাতালের ম্যানেজারের সঙ্গে আলাপ করেন। রোগীর অপারেশনের জন্য সার্জনসহ ওটি রেডি করে রাখা হয়। রোগীর স্বজনরা রোগীকে নিয়ে সেখানে গেলে ডিউটিরত চিকিৎসক ব্লিডিং হচ্ছে শুনে রোগী রাখেনি। পরে তারা তাকে সিলেট নর্থ-ইস্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন।</p> <p>ডা. নিশীথ নন্দী মজুমদার বলেন, ‘একজন ডাক্তার চান না কোনো রোগী মৃত্যুবরণ করুক। কোনো চালক চান না একটা ইঁদুরও গাড়িচাপা পড়ে মারা যাক। গত ৬ বছরেও আমার হাসপাতালে এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেনি। গতকাল সাবিনার ঘটনাটি আমার এখানে প্রথম। রোগীকে ভর্তির সময় রোগীর স্বজনরা যে ছয় হাজার টাকা জমা দিয়েছেন তা ফেরত দিয়ে দেব।’</p>