ক্যাপসিকাম বা মিষ্টি মরিচ বাংলাদেশে কম পরিচিতি একটি সবজি। এ দেশে এর চাষ কম হয়। গ্রামাঞ্চলে কম পরিচিত হলেও শহরের বাজারে এটা বেশ জনপ্রিয়। বাজারে চার রঙের ক্যাপসিকাম পাওয়া যায়।
ক্যাপসিকাম বা মিষ্টি মরিচ বাংলাদেশে কম পরিচিতি একটি সবজি। এ দেশে এর চাষ কম হয়। গ্রামাঞ্চলে কম পরিচিত হলেও শহরের বাজারে এটা বেশ জনপ্রিয়। বাজারে চার রঙের ক্যাপসিকাম পাওয়া যায়।
ক্যাপসিকাম ভিটামিন, খনিজ এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্টে ভরপুর। প্রতি ১০০ গ্রাম ক্যাপসিকামে পাওয়া যায় ২ গ্রাম ফাইবার, দৈনিক প্রয়োজনের ১৫০-২০০% ভিটামিন সি থাকে এতে।
শর্করার পরিমাণ মাত্র মাত্র ৬ গ্রাম। কার্বোহাইড্রেট এবং শক্তির পরিমাণ মাত্র ৩০ ক্যালরি। তাই ওজন কমাতে সাহায্য করে ও অতিরিক্ত শর্করাজনিত রোগ থেকে সহজেই মুক্ত থাকা যায়।
আগেই বলেছি, ক্যাপসিকামে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকে। এটা আমাদের শরীরের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করে। এটি ঠাণ্ডা, জ্বর এবং ভাইরাস সংক্রমণের বিরুদ্ধে কার্যকর।
ভিটামিন সি কোলাজেন উৎপাদন বাড়ায়। ফলে ত্বক করে মসৃণ এবং চুলের স্বাস্থ্য উন্নত করে।
লাল এবং হলুদ ক্যাপসিকামে লুটেইন এবং জিয়াজ্যানথিন নামের অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকে। এটা চোখের মাকুলার ডিজেনারেশন রোধ করে এবং দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখে।
ক্যাপসিকামে ক্যালরি কম এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট বেশি থাকে। এতে উপস্থিত লাইকোপেন এবং পটাশিয়াম হৃদরোগের ঝুঁকি কমায় এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
ক্যাপসিকামে ক্যারোটিনয়েড থাকে। ক্যারোটিনয়েড ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট কোষের ক্ষতি রোধ করে এবং ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়ক। বিশেষ করে লাল ক্যাপসিকাম স্তন, প্রস্টেট এবং পাকস্থলীর ক্যান্সার থেকে রক্ষা করে।
ক্যাপসিকামের ফাইবার হজম প্রক্রিয়া উন্নত করে, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে এবং অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখে।
কম ক্যালরি এবং উচ্চ ফাইবারযুক্ত ক্যাপসিকাম ওজন কমাতে সহায়ক। এটি দীর্ঘ সময় ধরে পেট ভরা রাখতে সাহায্য করে। তাও ক্ষুধাও কম লাগে।
ভিটামিন বি৬ মস্তিষ্কের কার্যক্রম উন্নত করে এবং মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখে। এটি মানসিক চাপ এবং উদ্বেগ কমাতে কার্যকর।
যেভাবে খাবেন
ক্যাপসিকামের পুষ্টিগুণ বজায় রাখার জন্য অতিরিক্ত সেদ্ধ না করাই ভালো। কাঁচা ক্যাপসিকাম সালাদ, স্যান্ডউইচ বা সালাদ তৈরিতে ব্যবহার করা যেতে পারে। এ ছাড়া ভাজা, গ্রিল করা বা ঝলসানো ক্যাপসিকাম খাবারের সাথে পরিবেশন করা যেতে পারে।
সতর্কতা
ক্যাপসিকাম অত্যন্ত স্বাস্থ্যকর, তবে অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে পেটের সমস্যা যেমন, অ্যাসিডিটি বা অস্বস্তি হতে পারে। তাই পরিমিত পরিমাণে খাওয়াই ভালো।
সম্পর্কিত খবর
৯৫ শতাংশ কম অর্থ ব্যয় করেই ওপেনএআইয়ের জিপিটি ৪ও-কে টেক্কা দিয়েছে চীনা নির্মাতা ডিপসিক। ২০ জানুয়ারি নতুন মডেল আর১ প্রকাশিত হওয়ার পর প্রযুক্তিবিশ্বে কী কী ঘটেছে জানাচ্ছেন এস এম তাহমিদ।
চীনের জেজ্যাং বিশ্ববিদ্যালয়ের ইঞ্জিনিয়ারদের গড়া প্রতিষ্ঠান ডিপসিক। মাত্র দুই বছর আগে যাত্রা শুরু করে এটি।
গত ডিসেম্বরেই পশ্চিমা বিভিন্ন এআইয়ের সমকক্ষ হিসেবে প্রমাণ করেছিল আর১-এর আগের মডেল ডিপসিক ভি৩। প্রগ্রামিং, তথ্য বিশ্লেষণ, লেখালেখি এবং অঙ্কের জটিল সমস্যা সমাধানের মতো বিভিন্ন বেঞ্চমার্কে সেটি অনেকটা এগিয়ে ছিল। আরো শক্তিশালী নতুন আর১ মডেলটি প্রকাশিত হয়েছে ২০ জানুয়ারি। ব্যবহারকারীরা নতুন মডেলটি পরীক্ষা করার সুযোগ পেয়েই রীতিমতো অবাক! অনেকেই মন্তব্য করেছে, অবশেষে হাজির হয়েছে চ্যাটজিপিটির শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী।
আর১ মডেলটি চালাতে ব্যবহৃত হয়েছে এনভিডিয়া এইচ৮০০ এআই অ্যাকসেলারেটর, যা ওপেনএআইয়ের ব্যবহৃত এইচ১০০-এর তুলনায় বেশ দুর্বল। ডিপসিক এ-ও দাবি করেছে, তাদের আর১ মডেল ট্রেনিংয়ের শেষ পর্যায়ে খরচ হয়েছে মাত্র ৫৬ লাখ ডলার, যেখানে ওপেনএআইয়ের মডেল ট্রেইন করতে লেগেছিল ১০০ কোটি ডলারেরও বেশি।
এআই ব্যবহারের খরচ পরিমাপ করা হয় টোকেন হিসেবে। প্রতি ১০ লাখ টোকেনের জন্য ওপেনএআই নিচ্ছে ১৫ ডলার, সেখানে ডিপসিক নিচ্ছে মাত্র দুই ডলার ১৯ সেন্ট। যেসব প্রতিষ্ঠান বাণিজ্যিকভাবে এআই ব্যবহার করে, তারা দ্রুতই ওপেনএআই বাদ দিয়ে ডিপসিক ব্যবহারে ঝুঁকতে পারে।
ডিপসিক যদি ৯৫ শতাংশ কম খরচে এআই সেবা দিতে পারে, তাইলে পশ্চিমা এআই নির্মাতাদের আয় কমে যাবে—এমন ধারণা করে অনেক বিনিয়োগকারী এআই চিপ নির্মাতা এনভিডিয়ার শেয়ার বিক্রি করতে শুরু করেন। ফলে ৬০ হাজার কোটি ডলার বাজারমূল্য হারিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এক দিনে সর্বোচ্চ দরপতনের ইতিহাস গড়েছে এনভিডিয়ার শেয়ার। দরপতন হয়েছে গুগল, অ্যামাজন, মাইক্রোসফট এবং ওপেনএআইয়ের শেয়ারেরও। এক ডিপসিকে পতন ঘটিয়েছে এক লাখ কোটি ডলার বাজার মূল্যের বিভিন্ন প্রযুক্তিপণ্য নির্মাতা ও সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের শেয়ারে।
এআই মডেলগুলোকে সম্পূর্ণ ওপেনসোর্স করেছে ডিপসিক। চীনা প্রযুক্তির বিষয়ে পশ্চিমাদের অবিশ্বাস কমানোই তাদের লক্ষ্য। সে জন্যই মডেলের পুরো কোড নিজে পরীক্ষা করার সুযোগ দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। পাশাপাশি যে কেউ চাইলে ওপেনসোর্স মডেলগুলো ডাউনলোড করে নিজেদের পিসিতে চালাতে পারবে। ওপেনএআইয়ের মতো ক্লাউডসেবার ওপর নির্ভরশীল থাকতে হবে না। বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান এর মধ্যেই নিজস্ব ডিপসিক সেবা চালুর জন্য কাজ করছে। এতে করে এআই বাজারে থাকবে না গুগল, মেটা ও ওপেনএআইয়ের অলিগার্কি।
তবে ডিপসিকের দাবিগুলো নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন অনেক এআই বিশেষজ্ঞ। স্কেল এআই প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী আলেক্সান্ডার ওয়াং বলেছেন, শুধু এইচ৮০০ চিপ ব্যবহার করে এতটা চমৎকার এআই তৈরি করা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। অন্তত ৫০ হাজার এইচ১০০ চিপ অবৈধভাবে আমদানি করেছে ডিপসিক। তিনি এও বলেছেন, ডিপসিকের আর১ মডেলের অনেকটা অংশ ওপেনএআইয়ের জিপিটি ও১ থেকে নকল করা। নিজস্ব সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট কিট তৈরি না করে ওপেনএআইয়ের এসডিকে ব্যবহার করাকে ট্রোজান হর্স উপাধি দিয়েছেন অনেক এআই গবেষক। এতে করে বর্তমান ওপেনএআইয়ের সেবা ব্যবহারকারীরা শুধু এক লাইন কোড পরিবর্তন করেই ডিপসিক ব্যবহার শুরু করতে পারবে। ফলে ওপেনএআইয়ের ক্রেতাদের আকৃষ্ট করা ডিপসিকের জন্য খুবই সহজ। পশ্চিমা প্রযুক্তি নকল করে স্বল্প মূল্যে বিক্রি করে বাজার ধরার জন্য চীনাদের দুর্নাম আছে আগে থেকেই, ডিপসিকও হাঁটছে একই পথে। একাধিক ব্লগে এমনটাই লিখেছেন বেশ কিছু এআই গবেষক ও বাজার বিশেষজ্ঞ।
বর্তমানে অ্যাপল ও গুগল অ্যাপস্টোরের সবচেয়ে জনপ্রিয় অ্যাপের তালিকার শীর্ষে রয়েছে ডিপসিক। বিপুল পরিমাণ নতুন ব্যবহারকারী সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে ডিপসিকের সার্ভার। তাদের দাবি, এর মধ্যেই হ্যাকাররা তাদের সার্ভারে চালাচ্ছে সাইবার হামলা। ব্যবহারকারীরা ডিপসিকের জ্ঞানের বিভিন্ন সীমাবদ্ধা নিয়ে হাসি-তামাশাও করছে, সেসব মিম বর্তমানে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল। এ বিষয়ে ডিপসিকের মুখপাত্র তীব্র সমালোচনা করে বলেছেন, প্রতিটি দেশেরই নিজস্ব আইন আছে, প্রতিষ্ঠানগুলোকে তা মেনে চলতে হয়। ডিপসিক যেহেতু চীনা প্রতিষ্ঠান, অবশ্যই তাদের এআই চীনা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল।
ব্যবহারকারীদের তথ্য অরক্ষিত ডেটাবেইসে রাখায় এর মধ্যেই শুরু হয়েছে কঠিন সমালোচনা। সাইবার নিরাপত্তা গবেষণা প্রতিষ্ঠান উইজ আবিষ্কার করেছে ডিপসিকের একটি ক্লিকহাউস ডেটাবেসের নিয়ন্ত্রণ যে কেউ চাইলেই নিয়ে নিতে পারবে। সমস্যাটি দ্রুতই সমাধান করেছে ডিপসিক, তবে তথ্য নিরাপত্তা নিয়ে সন্দেহ কাটছে না। ডিপসিক কিভাবে, কোথায় গ্রাহকদের তথ্য ব্যবহার করছে তা জানতে চেয়ে আশানুরূপ উত্তর না পাওয়ায় এআই সেবাটির ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ইতালির সরকার। ভবিষ্যতে যুক্তরাষ্ট্রেও ব্যান হতে পারে ডিপসিক। তবে ডিপসিকের মাধ্যমে পূর্ব-পশ্চিম এআই যুদ্ধ সবে শুরু, সে বিষয়ে সন্দেহ নেই।
এ বছর পৃথিবীর আকাশে একসঙ্গে চার গ্রহ দেখার ঘটনা ঘটেছে। গ্রহগুলো হচ্ছে- শুক্র, শনি, মঙ্গল আর বৃহস্পতি। এর আগ্রহীদের এটি দেখার ব্যবস্থা করে দিয়েছে বাংলাদেশ অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন।
সন্ধ্যার আকাশে দেখা দিচ্ছে সন্ধ্যা তারা।
পৃথিবীর অবস্থানের কারণে আমরা এই গ্রহগুলোকে আকাশের বুকে সারিবদ্ধভাবে অবস্থান করছে বলে দেখি। এই আপাত দৃশ্যমানতার কারণে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা মজা করে এর নাম দিয়েছেন, ‘প্ল্যানেট প্যারেড’।
শনিবার (২৫ জানুয়ারি) ঢাকার কলাবাগানে এই ‘প্ল্যানেট প্যারেড’র আয়োজন করা হয়। সন্ধ্যা ৬টা থেকে শুরু হয়ে যা চলে রাত ১০টা পর্যন্ত। এর সার্বিক সহযোগিতা করে জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘর।
এ আয়োজক সংস্থার সভাপতি মশহুরুল আমিন বলেন, ‘আকাশের খুবই সাধারণ ঘটনা এটি।
শীতকালে বাতাসের আর্দ্রতা অনেক কম থাকে। আর এ কারণে আমাদের শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ফেটে যায়। বাতাসের এই আর্দ্রতা নির্ভর করে বাতাসে কতটুকু জলীয় বাষ্প আছে তার ওপর। বাতাস কতটুকু ভেজা বা শুষ্ক তা বোঝা যায় আর্দ্রতার পরিমাপ দিয়ে।
বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বেশি হলে আর্দ্রতাও বেশি হয়, কম হলে আর্দ্রতাও কম হয়। অনেকে ভেবে থাকেন, বাতাস নিজেই বুঝি জলীয় বাষ্প রাখতে চায় না। কিংবা ঠাণ্ডা বাতাস কম আর গরম বাতাস বেশি জলীয় বাষ্প ধারণ করে। আসলে বিষয়টি এমন নয়।
আর্দ্রতা ধরে রাখার ক্ষেত্রে বাতাসের খুব একটা ভূমিকা নেই। বাতাস হলো গ্যাসের মিশ্রণ। নাইট্রোজেন, অক্সিজেন, কার্বন ডাই-অক্সাইড বা জলীয় বাষ্পসহ বিভিন্ন যৌগের অণুগুলো এতে মুক্তভাবে ভেসে বেড়ায়। ভূ-পৃষ্ঠের কাছাকাছি স্থানে এসব গ্যাসীয় অণু ঘণ্টায় প্রায় ১ হাজার মাইল বেগে ছুটতে থাকে।
আর বাতাসে জলীয় বাষ্প ধারণ করার একটা নির্দিষ্ট সীমা থাকে। একে বাতাসের সম্পৃক্ত অবস্থা বলে। বাতাস সম্পৃক্ত অবস্থায় পৌঁছে গেলে আর জলীয় বাষ্প শোষণ করতে পারে না। বাতাসের আর্দ্রতা সম্পৃক্ত অবস্থার খুব কাছাকাছি হলে অন্যবস্তু থেকে জলীয় বাষ্প শুষে নেওয়ার ক্ষমতা কমে যায়। অর্থাৎ বাতাস বেশি ভেজা হলে তার জলীয় বাষ্প শোষণ করার ক্ষমতা কম হয়।
শীতকালে বাতাসের আর্দ্রতা গরমকালের তুলনায় অনেক কম। এ কারণে শীতের বাতাস বেশি শুষ্ক। তাই শীতের বাতাসের জলীয় বাষ্প শোষণ করার ক্ষমতাও অনেক বেশি। ফলে ভেজা কাপড় বা যেকোনো ভেজা বস্তু থেকে শীতের বাতাস খুব সহজেই পানি শোষণ করে নিতে পারে। এ কারণে শীতকালে কাপড় তাড়াতাড়ি শুকায়।
বাতাসে কোনো একটি উপাদানের হ্রাস পাওয়া বা বেড়ে যাওয়া নির্ভর করে ওই উপাদান কতটা তৈরি হচ্ছে আর কতটুকু বিভিন্ন কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে, তার ওপর। জলীয় বাষ্প বা আর্দ্রতার বিষয়টিও সেরকম। আর এর কারণ হচ্ছে তাপমাত্রা।
বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ কেমন হবে, তা মূলত তাপমাত্রার ওপর নির্ভর করে। তাপমাত্রা বেশি থাকলে বাতাসে গ্যাসীয় অণুগুলোর বেগ অনেক বেশি হয়। এই বেগের বিষয়টা হিসাব করা যায় একটা কঠিন নামের সূত্র থেকে। এর নাম ‘মূল গড় বর্গ বেগ’ বা ‘রুট মিন স্কয়ার ভেলোসিটি’।
এই গ্যাসীয় অণুগুলোর উচ্চ গতির কারণে জলীয় বাষ্পের অণুগুলো বাষ্পীভবনের মাধ্যমে সহজেই তরল থেকে গ্যাসে রূপান্তরিত হয়। শীতকালে তাপমাত্রা কমে গেলে এই গতিশীলতা অনেক হ্রাস পায়। জলীয় বাষ্পের অণুগুলো ধীরে চলতে শুরু করে। ফলে বাষ্পীভবনের হার কমে যায়, বেড়ে যায় ঘনীভবনের হার। এর ফলস্বরূপ বাতাসে জলীয় বাষ্পের অণুগুলোর সংখ্যা কমে আসে।
বাষ্পীভবন প্রক্রিয়ায় তরল বাষ্পে রূপ নেয়, আর ঘনীভবন প্রক্রিয়ায় বাষ্প তরলে রূপান্তরিত হয়। বাতাসের তাপমাত্রা স্থির থাকলে পানি বা যেকোনো তরলের বাষ্পীভবন ও ঘনীভবন প্রক্রিয়া একটি ভারসাম্য বজায় রাখে। যতটি অণু বাষ্পীভূত হয়, ততটিই ঘনীভূত হয়ে আবার তরলে পরিণত হয়। তবে শীতকালে তাপমাত্রা কমে যাওয়ায় এই ভারসাম্য ভেঙে পড়ে। কারণটা আগেই বলেছি। ঠাণ্ডা বাতাসে জলীয় বাষ্পের অণুগুলো ধীরে চলার ফলে ঘনীভবনের হার বেড়ে যায়। তাই জলীয় বাষ্প বেশি তরলে পরিণত হয় বা ঘন হয়ে আসে।
একই কারণে বাষ্পীভবনের হার কমে যায়। ফলাফল হিসেবে শীতকালে বাতাসের জলীয় বাষ্প কমে যায় এবং শিশির, কুয়াশা বা তুষার তৈরি হয়। যেহেতু বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ কমে যায়, তাই বলা হয় বাতাসের আর্দ্রতা কমে গিয়েছে। শীতকালে এই আর্দ্রতা কম থাকার কারণেই বাতাসে মেঘ বা বৃষ্টির জন্য প্রয়োজনীয় জলীয় বাষ্পও কম পাওয়া যায়। ফলে শীতকাল অপেক্ষাকৃত শুষ্ক থাকে। সে কারণেই শীতকালে বৃষ্টিপাত তেমন একটা হয় না।
সূত্র : ইন্টারনেট
ভার্চুয়াল এবং অগমেন্টেড রিয়ালিটি নিয়ে কাজ করছে বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান কীর্তি ক্রিয়েশনস। তাদের তৈরি ভার্চুয়াল আর্ট গ্যালারি, ৩৬০ ডিগ্রি ভার্চুয়াল ট্যুর এবং অগমেন্টেড রিয়ালিটি প্রদর্শনী দেখে রীতিমতো মুগ্ধ দর্শনার্থীরা। কীর্তি ক্রিয়েশনসের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের খবর জানাচ্ছেন এস এম তাহমিদ।
গুগলের তৈরি ‘আর্ট অ্যান্ড কালচার’ প্রজেক্টের মাধ্যমে সারা বিশ্বের বিখ্যাত সব জাদুঘর ঘুরে দেখা যায় ফোন বা পিসি থেকেই।
শুরুর কথা
যাত্রা শুরু ২০২৩ সালে। কীর্তি ক্রিয়েশনসের সহ-প্রতিষ্ঠাতা অ্যান্থনি রোজারিও, সৌরভ হাসান, আশিক এ এলাহী অনি, ধীমান সাহা এবং ওমর শরিফ—পাঁচজন মিলে শুরু করেন থ্রিডি স্ক্যানিং, এআর-ভিআর কনটেন্ট তৈরি এবং প্রডাক্ট ভিজুয়ালাইজেশনের কাজ। শশীলজের ভেনাস ভাস্কর্যের থ্রিডি মডেল তৈরি করে প্রথম লাইমলাইটে আসেন তাঁরা। বর্তমানে থ্রিডি স্ক্যানিং প্রযুক্তির মাধ্যমে ইতিহাস সংরক্ষণের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে কীর্তি ক্রিয়েশনস।
যেভাবে তৈরি হয় থ্রিডি স্ক্যান ও ভার্চুয়াল ট্যুর
ভাস্কর্য থেকে পুরাকীর্তি—থ্রিডি স্ক্যানের মাধ্যমে সব কিছুরই ভার্চুয়াল কপি তৈরি করা সম্ভব। তার জন্য আছে বেশ কিছু হার্ডওয়্যার। কী ধরনের প্রযুক্তি ব্যবহৃত হবে তা নির্ভর করে কোন বস্তুটি স্ক্যান করে ডিজিটাইজ করা হবে। টমোগ্রাফি স্ক্যানিং, স্ট্রাকচারড লাইট থ্রিডি স্ক্যানিং, লাইডার অথবা টাইম অব ফ্লাইট প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে তৈরি করা হয় থ্রিডি মডেল, যা পরে ব্লেন্ডার অথবা অটোডেস্ক মায়ার মতো সফটওয়্যারের মাধ্যমে পরিমার্জন করা হয়।
ই-কমার্স প্ল্যাটফরমে ক্রেতাদের ৩৬০ ডিগ্রিতে পণ্য দেখানোর প্রতি তাদের আগ্রহ বাড়ছে। এ কাজটি সবচেয়ে সহজ উপায়ে করছে কীর্তি ক্রিয়েশনস। বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে ক্যামেরায় ছবি তুলে, সেগুলো সম্পাদনা সফটওয়্যারে বসিয়ে স্টিচ করে তৈরি করা হয় প্রাথমিক মডেলটি। ছবি থেকে থ্রিডি মডেল তৈরির জন্য স্ট্রাকচারড লাইট ব্যবহার অত্যন্ত জরুরি। আর স্ক্যানের জন্য ছবি তোলা হয় পুরো ৩৬০ ডিগ্রি দৃষ্টিকোণ থেকে সমান দূরত্বে ক্যামেরা রেখে।
ভার্চুয়াল ট্যুরের জন্য ব্যবহৃত হয় ৩৬০ ডিগ্রি চিত্রধারণ প্রযুক্তি। বিশেষায়িত ৩৬০ ক্যামেরা ব্যবহার করেও কাজটি করা সম্ভব। তবে মানসম্মত ট্যুর তৈরির জন্য প্রয়োজন উচ্চমানের স্ক্যান, যা এখনো ৩৬০ ক্যামেরায় পাওয়া যায় না। ফলে একাধিক শক্তিশালী ক্যামেরা একটি রিগের মধ্যে বসিয়ে, প্রতিটি ক্যামেরায় আলাদা আলাদা দৃষ্টিকোণ থেকে ছবি তোলা হয়। একই কায়দায় ৩৬০ ট্যুরের জন্য চিত্র গ্রহণ করেছে কীর্তি ক্রিয়েশনস। পরে সেসব ছবি সম্পাদনা সফটওয়্যারের মাধ্যমে স্টিচিং করে তৈরি করা হয় ৩৬০ ভিউ। ওয়েব ব্রাউজার ও ভিআর হেডসেট—দুটি ডিভাইসের মাধ্যমেই সেটি নেড়েচেড়ে দেখতে পারেন দর্শক। অনেকটা গুগল ম্যাপের স্ট্রিট ভিউ ফিচারের মতোই।
অগমেন্টেড ও মিক্সড রিয়ালিটি
থ্রিডি মডেলিং ও ৩৬০ ডিগ্রি ট্যুরের পাশাপাশি ভিআর এক্সপেরিয়েন্স এবং মিক্সড বা অগমেন্টেড রিয়ালিটি নিয়েও কাজ করছে কীর্তি ক্রিয়েশনস। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে আজ শেষ হচ্ছে (৮—১৯ জানুয়ারি) জুলাই অভ্যুত্থানের শিল্পকর্ম নিয়ে প্রদর্শনী—পোস্টারে জুলাই অভ্যুত্থান। সেটির এআর ও ভিআর ইন্টারঅ্যাকটিভ অংশটি তৈরি করেছে কীর্তি ক্রিয়েশনস। প্রদর্শনীতে থাকা প্রতিটি পোস্টার ও চিত্রকর্মের পাশে ছোট স্টিকারে আছে কিউআর কোড। ছোট একটি অ্যাপ ডাউনলোড করার পর কোডটি স্ক্যান করে দর্শনার্থীরা নিজের ফোন থেকেই মিক্সড রিয়ালিটিতে প্রদর্শনীটি দেখার সুযোগ পাচ্ছেন। ক্যামেরার মাধ্যমে অ্যাপটি চারপাশের দৃশ্য ধারণ করে, এর মধ্যে থাকা প্রতিটি পোস্টারের পাশে তার পেছনের ঘটনাবলি, সম্পর্কিত সংবাদ, ভিডিও রিপোর্ট এবং সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট তুলে ধরছে। ভবিষ্যতে অন্যান্য প্রদর্শনীতেও এরূপ মিক্সড রিয়ালিটি এক্সপেরিয়েন্স যোগ করে দর্শনার্থীদের শিল্পকর্মের বিস্তারিত জানানো যাবে। এতে শিল্পকর্মের তাৎপর্য সহজেই বুঝতে পারবেন দর্শনার্থীরা।
ভার্চুয়াল রিয়ালিটি এক্সপেরিয়েন্স
বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সঙ্গে মিলিতভাবে ভিআর গ্যালারি তৈরির কাজও করছে কীর্তি ক্রিয়েশনস। চলমান ষষ্ঠ জাতীয় ভাস্কর্য প্রদর্শনীতে ১৫৯ জন ভাস্করের ১৭৮টি শিল্পকর্ম প্রদর্শিত হয়েছে, যার প্রতিটি থ্রিডি স্ক্যানের মাধ্যমে ডিজিটাইজ করা হয়েছে। তৈরি করা হয়েছে ভিআর গ্যালারি, যা ভার্চুয়াল রিয়ালিটি হেডসেটের মাধ্যমে দেখা যাবে। ধীরে ধীরে গ্যালারিতে নতুন সব ভাস্কর্য যুক্ত করারও পরিকল্পনা আছে। সারা বছরই বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে এসে দর্শনার্থীরা উপভোগ করতে পারবেন ‘ভিআর এক্সিবিট’।
পুরাকীর্তির ভার্চুয়াল ট্যুর
বাংলাদেশের দুটি পুরাকীর্তি ও দর্শনীয় স্থানের ভার্চুয়াল ট্যুর তৈরি করেছে কীর্তি ক্রিয়েশনস। এর মধ্যে আছে পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার এবং পুরান ঢাকার আর্মেনিয়ান চার্চ। সরাসরি তাদের ওয়েবসাইট থেকেই অডিওসহ এ দুটি স্থান ঘুরে দেখা যাবে। দেশের অন্যান্য পুরাকীর্তি ও দর্শনীয় স্থানের স্ক্যান তৈরিতে কাজ করছে তারা। ভার্চুয়াল ট্যুরের পাশাপাশি ভিআর এক্সপেরিয়েন্সও তৈরি করা হবে, তবে সেটি বেশ সময়সাপেক্ষ।
নিজে করতে চাইলে -
থ্রিডি কনটেন্ট নিয়ে কাজ করার জন্য প্রয়োজন বেশ শক্তিশালী পিসি। থ্রিডি স্ক্যানিং এবং ভার্চুয়াল ট্যুর তৈরির জন্য পাশাপাশি থাকতে হবে ভালো মানের ক্যামেরা, লাইট ও ট্রাইপড। মডেল তৈরিতে বর্তমানে সবচেয়ে জনপ্রিয় সফটওয়্যার ব্লেন্ডার। ভার্চুয়াল রিয়ালিটি এক্সপেরিয়েন্স তৈরি করতে রপ্ত করতে হবে ইউনিটি ইঞ্জিন এবং ভিআর এসডিকের ব্যবহার। অগমেন্টেড রিয়ালিটি নিয়ে কাজ করার জন্য প্রয়োজন প্যানো২ভিআর অথবা টেলিপোর্টমি। তবে সবচেয়ে বেশি জোর দিতে হবে ফটোগ্রাফি এবং থ্রিডি মডেলিং স্কিল তৈরিতে।
কীর্তি ক্রিয়েশনসের বিভিন্ন ভার্চুয়াল ট্যুর এবং থ্রিডি মডেল দেখা যাবে তাদের ওয়েবসাইটে, লিংক: t.ly/JNBf4