<p>সিএএ-কে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের জেরে গত তিন দিন ধরে উত্তাল ভারতের রাজধানী দিল্লি। সোমবার এক পুলিশ কর্মী-সহ সাত জনের মৃত্যু হয়েছিল। আজ মঙ্গলবারও সকাল হতেই ফের উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে উত্তর-পূর্ব দিল্লির বিভিন্ন এলাকায়। লাঠি, রড, ইট-পাটকেল নিয়ে রাস্তায় নেমে পড়তে দেখা গিয়েছে অনেককে। বেলা বাড়তেই উত্তেজনা আরও বাড়ে। একাধিক দোকানপাট, গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। ভজনপুরা, চাঁদ বাগ, করাবল নগরের মতো এলাকা অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে এ দিনও একাধিক জায়গায় কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটায় পুলিশ।</p> <p>সন্ধ্যার দিকে সবচেয়ে উত্তেজনাপ্রবণ এলাকাগুলি চিহ্নিত করে কারফিউ জারি করা হয়েছে। প্রায় গোটা উত্তর-পূর্ব দিল্লি জুড়েই ১৪৪ ধারা করা হয়েছিল সোমবার। মঙ্গলবারও তা অব্যাহত ছিল। কিন্তু সে সব উপেক্ষা করেই মঙ্গলবার যে ভাবে পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠেছে, তাতে উদ্বেগ বেড়েছে দিল্লি পুলিশের। পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনা যায়নি।</p> <p>আজ সহিংসতার শিকার হয়েছেন সাংবাদিকরাও। মঙ্গলবার সংঘর্ষের খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হন এক সাংবাদিক। মারধর করা হয় আরো দুই সংবাদকর্মীকে।</p> <p>সোমবার খবর সংগ্রহ করতে গেলে এক সাংবাদিকের ধর্মীয় পরিচয় জানতে চান উগ্র হিন্দুরা। তারা ওই সাংবাদিকের প্যান্ট খুলে ধর্মীয় পরিচয় নিশ্চিত করতে বলেন। </p> <p>হিন্দুস্তান টাইমস এমন খবর দিয়েছে। হিন্দুস্তান টাইমস এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মঙ্গলবার উত্তর-পূর্ব দিল্লির মৌজপুরে হামলাকারীদের গুলিতে জখম হয়েছেন জে কে ২৪X৭ নিউজ চ্যানেলের সাংবাদিক আকাশ। তাকে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করা হয় স্থানীয় হাসপাতালে। </p> <p>এ ছাড়া জ্বলন্ত মসজিদের ছবি তুলতে গেলে প্রচণ্ড মারধর করা হয় এনডিটিভি চ্যানেলের দুই সাংবাদিক অরবিন্দ গুণশেখর ও সৌরভ শুক্লাকে। </p> <p>ওই এলাকাতেই ছবি তুলতে গিয়ে আক্রান্ত হন টাইমস অফ ইন্ডিয়ার চিত্র সাংবাদিক অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়।</p> <p>মঙ্গলবার টাইমস অফ ইন্ডিয়া সংবাদপত্রে প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে চিত্র সাংবাদিক অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায় তার সাম্প্রতিক অভিজ্ঞতার বিবরণ দেন। </p> <p>তিনি জানান, উত্তেজনাপূর্ণ জাফরাবাদ অঞ্চলে সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে হিংসার নিশানায় পড়ে ভয়াবহ পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছিলেন তিনি ও তার সহকর্মী সাংবাদিক।</p> <p>অনিন্দ্য লিখেছেন, সোমবার দুপুর ১২টা ১৫ নাগাদ তিনি মৌজপুর মেট্রো রেলস্টেশনে পৌঁছলে এক হিন্দু সংগঠনের সদস্য তার কপালে তিলক এঁকে দিতে তৎপর হন। আপত্তি করলে তাকে শুনতে হয়, ‘ভাই, আপনিও তো হিন্দু। তা হলে অসুবিধা কীসের?’</p> <p>এর ১৫ মিনিট পরেই এলাকায় দুই গোষ্ঠীর মধ্যে পাথর ছোড়াছুড়ি শুরু হয় এবং ‘মোদী’ ‘মোদী’ স্লোগানের মাঝে কালো ধোঁয়ায় আকাশ ঢেকে যায়। </p> <p>জানা যায়, স্থানীয় একটি বাড়িতে আগুন লেগেছে। সে দিকে এগোতে গেলে একটি শিব মন্দিরের কাছে অনিন্দ্যকে বাধা দেন একদল। অগ্নিকাণ্ডের ছবি তুলতে যাচ্ছেন জানতে পেরে তারা সাংবাদিককে বলেন, ‘ভাই, আপনিও তো হিন্দু। তা হলে ওখানে কেন যাচ্ছেন? আজ হিন্দুরা জেগে উঠেছে।’</p> <p>বাধা পেয়ে ঘুরপথে ঘটনাস্থলে পৌঁছে ছবি তুলতে গেলে তাকে ঘিরে ফেলে হাতে লাঠি ও লোহার রডধারী একদল। তারা সাংবাদিকের ক্যামেরা ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করলে বাধা দেন তার সহ-সাংবাদিক সাক্ষী চাঁদ। রুখে দাঁড়াতেই সেখান থেকে চম্পট দেয় সশস্ত্র দলটি।</p> <p>তবে একটু পরেই অনিন্দ্য বুঝতে পারেন, তার পিছু নেওয়া হয়েছে। অনুসরণকারীদের মধ্যে এক তরুণ এগিয়ে এসে তাকে সতর্ক করে, ‘ভাই, তুই একটু বেশি চালাকি করছিস। তুই হিন্দু, না মুসলিম?’ তারা সাংবাদিকের প্যান্ট খুলে ধর্মীয় চিহ্ন খোঁজার চেষ্টা করলে হাতজোড় করে অনেক অনুনয়ের পরে কিছু হুমকি দেওয়ার পরে রেহাই দেওয়া হয় চিত্র সাংবাদিককে।</p> <p>পরে একটি অটো রিকশা ধরে তথ্যকেন্দ্রে পৌঁছানোর চেষ্টা করেন অনিন্দ্য। কিন্তু অটোচালক মুসলিম হওয়ায় তাদের মাঝপথে থামিয়ে ঘেরাও করে চার জন সশস্ত্র যুবক। কলার ধরে দুজনকে অটো থেকে নামিয়ে মারধরের উপক্রম করে দুষ্কৃতীরা। নিজের সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে এবং অটোচালক যে নির্দোষ, সে কথা জানিয়ে অনেক অনুনয়ের পরে ছাড়া পান অনিন্দ্য ও তার সঙ্গী চালক।</p>