<p>পারিবারিক পিকআপ ট্রাকে খালি আসন, যেখানে বসতেন মাইলস। কিন্তু তিনি এখন এই পৃথিবীতে নেই। তবে তার মা মাকেনহপট স্বামী এবং মেয়ের সঙ্গে বাড়ি ফেরার সময় ছেলের উপস্থিতি স্পষ্টভাবেই অনুভব করেছিলেন। ওয়াশিংটনের একটি প্রতিষ্ঠান তার ২২ বছর বয়সী ছেলে মাইলসের ছেলের নিথর দেহকে প্রায় দেড় শ কেজি মাটিতে পরিণত করে দিয়েছে। আর সেই মাটি নিয়েই তিনি তখন বাড়ি ফিরছিলেন।</p> <p>মরদেহ কবরস্থ করার পর যেভাবে ধীরে ধীরে মাটিতে পরিণত হয়। ‘আর্থ ফিউনারেল’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান ঠিক সেভাবেই কাজটি করছে একটি ধাতব যন্ত্রের সাহায্যে। প্রতিষ্ঠানটির সিইও টম হ্যারিস বলেছেন, ‘এই যন্ত্রের ভেতরে রেখে মরদেহ মাটিতে পরিণত করা হয় খুব দ্রুত এবং প্রক্রিয়াটি শেষ হয় ঠিক সেভাবেই, যেভাবে পৃথিবীর মাটি কোনো মরদেহকে মাটিতে পরিণত করে।’ </p> <p>টম হ্যারিস সিএনএনকে আরো বলেন, ‘আমরা যা করছি তা হলো, প্রাকৃতিক প্রক্রিয়াকে আরো ত্বরান্বিত করা। মানব কম্পোস্টিং বা মরদেহ ধীরে ধীরে মাটিতে পরিণত করা জলবায়ু এবং পৃথিবীর জন্য বন্ধুত্বপূর্ণ। আর মরদেহ দাহ করার তুলনায় অনেক কম কার্বন নিঃসরণ করে এই প্রক্রিয়া এবং এ ক্ষেত্রে ঐতিহ্যগতভাবে মরদেহ কবরস্থ করার সময় বিভিন্ন রাসায়নিকের ব্যবহারও করা হয় না।’</p> <p><img alt="ডি" height="600" src="https://asset.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/online/2024/12/31/my1153/Untitled-5.jpg" width="1000" /><em>মাইলস (সর্ববাঁয়ে) ও তার পরিবার। ছবি : লরা মাকেনহপট</em></p> <p>মাইলসের মরদেহ থেকে তৈরি করা মাটি রাখা হয়েছে তার মায়ের বাড়ির বাগানে। বেশির ভাগ মাটি রাখা হয়েছে মাইলসের প্রিয় হ্যামক চেয়ারটির পাশে এবং সেখানে লাগানো হয়েছে গোলাপগাছ।</p> <p>মাইলসের মা মাকেনহোপট বলেন, ‘যতবারই গোলাপ ফুলটির কুঁড়ি বের হয়। তখনই আমি এটি বেশ আগ্রহ নিয়ে দেখি। এটি আমার জন্য একটি উপহার। মনে হয় মাইল যেন অল্প সময়ের জন্য এসেছে, অসাধারণ একটি বিষয়।’</p> <p>তিনি আরো বলেন, ‘আমরা তাকে বড় করছি। তাকে বড় হতে দিচ্ছি... আমরা বাবা-মা এবং বোন তার বন্ধু হতে যাচ্ছি।’ মাইলসের মৃত্যুর পরপরই শোকের কুয়াশায় ঢেকে গিয়েছিলেন মা। এ ঘটনা মাকেনহোপটকে কিছুটা স্বস্তি এনে দিয়েছে বলে তিনি জানান। </p> <p>মাইলসের কিছু মাটি চলে গেছে ইন্দোনেশিয়া, পর্তুগাল এবং টাস্কানি পর্যন্ত। সেখানে রোপণ করা হয়েছে গাছ। মাইলস একজন নৃত্যশিল্পী ছিলেন।</p> <p>মা মাকেনহোপট বলেন, ‘আপনার প্রিয়জনের দেহাবশেষ মরদেহ দাহ বা কবরস্থ করার চেয়ে এই প্রক্রিয়াটি ভিন্ন।’ তিনি বলেন, ‘আপনি প্রিয়জনের জন্য শেষকৃত্যের আয়োজন করবেন এবং তারপর গল্পটি শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু মাটি দিয়ে সেই গল্প আবার শুরু হবে।’ </p> <p><strong>কিভাবে মৃতদেহ কম্পোস্টিং বা মাটিতে পরিণত করা হয়</strong></p> <p>‘আর্থ ফানারেল’-এর সিইও টম হ্যারিস অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া প্রতিষ্ঠানে বহু বছর কাজ করেছেন। তবে নিজের মৃত্যুর চিন্তা থেকে তিনি মরদেহকে মাটিতে পরিণত করার বিষয়টি উদ্ভাবন করেন। হ্যারিস বলেন, ‘আমি আমার মৃত্যুর পর মরদেহ পুড়িয়ে ফেলা বা কবরস্থ করার পক্ষে নই।’ </p> <p>তিনি জানান, গত কয়েক দশক ধরে যুক্তরাষ্ট্রে  সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় পন্থা হলো মরদেহ দাহ করা। উত্তর আমেরিকার ক্রিমেশন অ্যাসোসিয়েশন অনুসারে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৬০ শতাংশ মানুষকে দাহ করা হয়। কারণ কবরস্থ করার চেয়ে এটি বেশি সাশ্রয়ী। কিন্তু মরদেহ দাহ করলে এটি পরিবেশের ক্ষতি করে। অপরদিকে কবরস্থ করলে ফর্মালডিহাইডসহ বিভিন্ন রাসায়নিক এবং অন্যান্য রাসায়নিক তরল ব্যবহার করা হয়। এটি পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর।</p> <p>তিনি আরো জানান, কিন্তু এই যন্ত্রের সাহায্যে মরদেহ মাটিতে পরিণত করতে আশ্চর্যজনকভাবে খুব কম সময় লাগে। প্রথমে মরদেহটিকে একটি বায়োডিগ্রেডেবল কাফনে মোড়ানো হয় এবং লম্বা ধাতব ক্যাপসুলের মতো এই যন্ত্রে রাখা হয়। </p> <p>মরদেহটির সঙ্গে দেওয়া হয় কাঠের খণ্ড, গাছের শিকড়ের পাশে থাকা ভেজা খড়, পাতা এবং বনফুল। যখন মরদেহটি মাটিতে পরিণত হওয়া শুরু করে, তখন এটি নাইট্রোজেন নিঃসরণ করে। অপরদিকে কাঠ, গাছের শিকড়— এগুলো থেকে বের হয় কার্বন। ক্যাপসুলটির ভেতরে একটি নির্দিষ্ট তাপমাত্রা বজায় রাখা হয়। যে তাপমাত্রা জীবাণুগুলোর জন্য একটি সঠিক পরিবেশ তৈরি করে এবং দ্রুত সময়ে মৃত শরীরকে মাটিতে পরিণত করে। এই প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হতে সময় লাগে ৪৫ দিন। এরপর মরদেহ থেকে প্রায় ৩০০ পাউন্ড মাটি তৈরি হয় বলে হ্যারিস জানান। </p> <p>পরিবারের সদস্যরা যতটুকু খুশি ততটুকু মাটি নিতে পারেন। বাকিটা মাটি ওয়াশিংটন ও ক্যালিফোর্নিয়ার প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণস্থলে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।</p> <p>সূত্র : সিএনএন</p>