<p>সংঘাত, ক্ষমতার পালাবদল, নির্বাচন আর রেকর্ড তাপমাত্রার বছর ২০২৪। টানটান উত্তেজনার মধ্য দিয়ে পার হচ্ছে বছরটি। বছরের পর বছর ধরে ক্ষমতা আঁকড়ে থাকা শাসকদের পতন, বিশ্বের ৬০টিরও বেশি দেশে নির্বাচন, মধ্যপ্রাচ্য সংঘাত এবং বিভিন্ন পর্যায়ের শীর্ষ নেতাদের মৃত্যুর খবরে আলোচনায় ছিল এ বছর।</p> <p>বড় দুইটি বিমান দুর্ঘটনা দিয়ে শেষ হচ্ছে বছরটি। ২৫ ডিসেম্বর বড় দিনে মধ্য এশিয়ার দেশ কাজাখস্তানে ৬৭ জন আরোহী নিয়ে আজারবাইজান এয়ারলাইনসের একটি যাত্রীবাহী বিমান বিধ্বস্ত হয়। এই ঘটনায় বিমানের ৩৮ আরোহী নিহত হয়। এরপর ২৯ ডিসেম্বর দক্ষিণ কোরিয়ার জেজু এয়ারের একটি বিমান ১৮১ জন যাত্রীসহ মুয়ান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিধ্বস্ত হয়। তার মধ্যে ১৭৯ জন নিহত হন এবং শুধু দুই জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়।</p> <p><strong>আলোচিত মৃত্যু বা হত্যা</strong></p> <p><strong>অ্যালেক্সি নাভালনি </strong></p> <p>রাশিয়ার সবচেয়ে প্রভাবশালী পুতিনবিরোধী নেতা অ্যালেক্সেই নাভালনি গত ফেব্রুয়ারি মাসে কারাগারে মারা যান। কারা কর্তৃপক্ষ দাবি করে, অসুস্থ হয়ে মৃত্যু হয় তার। তবে তার দল ও পশ্চিমা দেশগুলো এই মৃত্যুর জন্য রুশ কর্তৃপক্ষকে দায়ী করে।</p> <p><strong>ইব্রাহিম রাইসি</strong></p> <p>আরো এক আলোচিত নেতার মৃত্যু হয় বিদায়ি বছরের মে মাসে। হেলিকপ্টার দুর্ঘটনার কবলে পড়েন ইরানের প্রেসিডেন্ট এব্রাহিম রাইসি। এ ঘটনায় ১৯শে মে তার মৃত্যু হয়।</p> <p><strong>ইসমাইল হানিয়া </strong></p> <p>৩১শে জুলাই হামাসের সর্বোচ্চ নেতা এবং রাজনৈতিক শাখার প্রধান ইসমাইল হানিয়াকে ইরানে রকেট হামলায় হত্যা করা হয়। তিনি কাতার, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং মিসরের মধ্যস্থতায় গাজায় যুদ্ধবিরতির আলোচনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় ছিলেন।</p> <p><strong>ইয়াহিয়া সিনওয়ার </strong></p> <p>ইসমাইল হানিয়ের পর হামাসের নতুন প্রধান ইয়াহিয়া সিনওয়ারকে গাজার রাফাহ শহরের একটি ভবনে ড্রোন হামলা চালিয়ে হত্যা করা হয় অক্টোবরে। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলার মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে পরিচিত ছিলেন তিনি।</p> <p>এ ছাড়া বছরের একদম শুরুতে জানুয়ারিতে হামাসের উপ-প্রধান সালিহ আল-আরোরি বৈরুতে ড্রোন হামলায় নিহত হন। হামাসের সামরিক শাখা কাসাম ব্রিগেডের গুরুত্বপূর্ণ এই ব্যক্তি লেবানন থেকে হামাস ও হিজবুল্লাহর মধ্যে যোগসূত্রের কাজ করতেন। এরপর ইসরায়েলের মোস্ট ওয়ান্টেড তালিকায় থাকা হামাসের অন্যতম শীর্ষ সামরিক কমান্ডার মারওয়ান ইসাকে গাজায় বিমান হামলায় হত্যা করা হয় গত মার্চে। হামাসের রহস্যময় সামরিক প্রধান মোহাম্মদ দেইফকে বহুদিন ধরে খুঁজেছে ইসরায়েল। অগাস্ট মাসের ১ তারিখ ইসরায়েল ঘোষণা দেয় যে ১৩ই জুলাই গাজার খান ইউনিস এলাকায় বিমান হামলায় তাকে হত্যা করেছে তারা।</p> <p>শিয়া ধর্মপ্রচারক ও লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হেজবুল্লাহর প্রধান হাসান নাসরাল্লাহকে লেবাননে ২৭শে সেপ্টেম্বর হত্যা করা হয়।লেবানন বা ইরান ছাড়াও আরব বিশ্বে তার বাড়তি জনপ্রিয়তার জায়গা ছিল। </p> <p><strong>নির্বাচনের বছর</strong></p> <p>বছরের শুরুতে বাংলাদেশের নির্বাচন স্থান পায় আন্তর্জাতিক খবরের শিরোনামে। এরপর আলোচিত নির্বাচনের মধ্যে ছিল পাকিস্তান, ভারত ও আমেরিকার নির্বাচন।</p> <p>নির্বাচনে তার দল ভারতীয় জনতা পার্টি বা বিজেপিকে হোঁচট খেতে হয় একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন নিয়েই। ভারতের লোকসভায় নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের মাধ্যমে সরকার গঠন করতে হলে একটি দলকে অন্তত ২৭২টি আসন পেতে হয়। বিজেপির নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট সে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলেও বিজেপি এককভাবে পায় ২৪০টি আসন।</p> <p>অন্যদিকে বিরোধী ইন্ডিয়া জোট পায় ২৩২টি আসন। এর মধ্য দিয়ে এক রকম পুনরুত্থান হয় কংগ্রেসের। জোটের ওপর ভর করে হলেও তৃতীয়বারের মতো ভারতের প্রধানমন্ত্রী হন মোদি।</p> <p>ফেব্রুয়ারি মাসে পাকিস্তানের নির্বাচনে ইমরান খানকে ঘিরে নানা নাটকীয়তা আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের মনোযোগ কেড়ে নিয়েছিল। নির্বাচনের সপ্তাহখানেক আগে দেশের গোপন তথ্য পাচার করার অভিযোগে দশ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয় আগে থেকেই দুর্নীতির দায়ে দোষী সাব্যস্ত হওয়া ইমরান খানকে। তার দল তেহরিক-ই-ইনসাফ বা পিটিআই-এর 'ক্রিকেট ব্যাট' প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করতে না পারার মতো নির্বাচন কমিশনের আইনের কারণে দলের সদস্যরা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।</p> <p>স্বতন্ত্র হিসেবেই তারা ২৬৬টি আসনের মধ্যে ৯৩টি আসনে জয় পেয়ে শোরগোল বাঁধিয়ে ফেলেন। পরবর্তীতে ইমরানবিরোধীদের সমঝোতার মধ্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রী হন শাহবাজ শরিফ।</p> <p>এদিকে জুলাই মাসে রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের ওপর একটি সমাবেশে হামলা হয়। কানের পাশ দিয়ে চলে যায় গুলি। ট্রাম্পের রক্তমাখা ছবি শিরোনাম হয় গোটা বিশ্বেই। অন্যদিকে গাজা যুদ্ধ নিয়ে চাপে থাকা জো বাইডেন বয়স নিয়েও তিনি কম বিতর্কে পড়েননি। তবে নির্বাচনের মাত্র সোয়া তিন মাস আগে জুলাই মাসে প্রেসিডেন্ট দৌড় থেকে সরে ভাইস প্রেসিডেন্ট কমালা হ্যারিসকে এগিয়ে দেন বাইডেন। তবে শেষ পর্যন্ত ডেমোক্র্যাটদের হারিয়ে জয়ী হন ট্রাম্প।</p> <p>যুক্তরাজ্যের নির্বাচনও এবার আলোচিত ছিল। অক্টোবর-নভেম্বর মাসে সেখানে ভোট হতে পারে ধারণা করা হলেও হুট করে আগেভাগেই জুলাই মাসে নির্বাচন দেয়ার ঘোষণা দেন কনজারভেটিভ পার্টির প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক।</p> <p>২০১৯ সালের কনজারভেটিভ পার্টির জয়ের পর ২০২৫ সালের জানুয়ারির মধ্যে নির্বাচন হওয়ার কথা। তবে বরিস জনসন, লিজ ট্রাস, ঋষি সুনাক, সব মিলিয়ে পাঁচ বছর পূর্ণ হয়নি টোরি সরকারের। ২০২৪ সালের নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত জয়ী হয়েছেন লেবার পার্টির স্যার কিয়ের স্টারমার।</p> <p>রাজনৈতিক নাটকীয়তার বিবেচনায় দক্ষিণ কোরিয়ায় হঠাৎ করে দেশে সামরিক শাসন জারি করে বড় বিতর্কের মুখে পড়েন প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইওল। শেষ পর্যন্ত সংসদে ইমপিচ বা অভিশংসিত হয়ে সরকারি দায়িত্ব থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয় এবং তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত।</p> <p><strong>পতন</strong></p> <p>রাজনৈতিক পর্যায়ে এ বছরের বড় নাটকীয় পরিবর্তন বলা যায় বাংলাদেশ ও সিরিয়ার সরকার পতন এবং ক্ষমতাবানদের দেশ ছেড়ে পালানোর ঘটনা।</p> <p>বাংলাদেশে জুলাই মাসের আন্দোলন, ইন্টারনেট বন্ধ, সহিংসতার ঘটনা বিশ্বজুড়েই খবরের শিরোনাম হয়েছে। খুব কম সময়ে অনেক বেশি রক্তক্ষয়ী পরিস্থিতির সম্মুখিন হয় বাংলাদেশ। দেড় দশকেরও বেশি সময় ক্ষমতায় থাকা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পালানো এবং পাঁচই অগাস্টের পরিস্থিতি এসব কিছুই হয়ে দাঁড়ায় বৈশ্বিক খবর।</p> <p>এরপর বছরের প্রায় শেষদিকে এসে ২০০০ সাল থেকে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট পদে থাকা বাশার আল আসাদের দুর্গের পতন হয়। দেশ গৃহযুদ্ধে জর্জরিত হলেও মূলত রাশিয়া ও ইরানের সমর্থনের জোরে টিকে ছিলেন আসাদ। বিদ্রোহীদের দমাতে না পেরে রাশিয়া পালিয়ে যেতে হয়েছে এই নেতাকে। এর মধ্য দিয়ে দীর্ঘদিনের স্বৈরশাসনের অবসান ঘটল সিরিয়ায়।</p> <p><strong>যুদ্ধ, সংঘাত</strong></p> <p>বিশ্বের নানা অঞ্চলে যুদ্ধ, হামলা-পাল্টা হামলা, রক্তক্ষয়ী আন্দোলন উত্তেজনা তৈরি করেছে। লড়াইয়ের কারণে হাজারো মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন, বাস্তুচ্যুত হয়েছেন লাখ লাখ শিশু ও বৃদ্ধ।</p> <p>রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ তো চলছিলই, ২০২৩ সালের অক্টোবরে শুরু হওয়া গাজা যুদ্ধও চরম পর্যায়ে পৌঁছে যায় ২০২৪ সালে। যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত ৪৫ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনিকে হত্যা করা হয়েছে এবং ২০ লাখেরও বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। ফিলিস্তিনের ভূখণ্ড ছাড়িয়ে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন ফ্রন্টে ছড়িয়ে পড়ে এই সংঘাত।</p> <p>এ ছাড়া হামলা-পাল্টা হামলার দিক দিয়ে ইসরায়েলের বাইরে এ বছর ইরানই ছিল সবচেয়ে বেশি আলোচনায়। মধ্যপ্রাচ্যে ছড়িয়ে পড়া সংঘাতের অনেক দিকেই ছায়ার মতো ছিল ইরান। ইসরায়েলের বিরুদ্ধে দেশটির বহু দিনের ছায়াযুদ্ধ তীব্র আকার নেয় বছরজুড়ে।</p> <p>বছরটা শুরু হয়েছিল তেসরা জানুয়ারি ইরানে কাসেম সোলেইমানিকে হত্যার বার্ষিকীতে জোড়া বোমা বিস্ফোরণের মধ্য দিয়ে। অন্তত ৮৪ জন নিহত হন সেই বিস্ফোরণে। জানুয়ারি মাসের মাঝামাঝিতে সেই বোমা হামলার জেরে ইরাক, সিরিয়া ও পাকিস্তানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইরান।</p> <p>ইরাকের কুর্দিস্তান অঞ্চলে ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা ‘মোসাদের সদর দপ্তর’ লক্ষ্য করে, সিরিয়ার উত্তর-পশ্চিমে ইসলামিক স্টেটের (আইএস) ঘাঁটির উদ্দেশে এবং পাকিস্তানে ‘জঙ্গিগোষ্ঠী জইশ আল আদলের’ ঘাঁটি লক্ষ্য করে ছিল এই হামলা। জবাবে ইরান সীমান্ত এলাকায় পাকিস্তানি ‘জঙ্গি গোষ্ঠীর আস্তানা’ লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে পাকিস্তান।</p> <p>প্রায় কাছাকাছি সময়ে ইয়েমেনের হুথি গোষ্ঠীকে লক্ষ্য করে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য দফায় দফায় হামলা চালায়। ইরান সমর্থিত হুথিরা গাজা যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে লোহিত সাগরে বাণিজ্যিক জাহাজ চলাচল হুমকির মুখে ফেলেছিল।</p> <p>আবার সিরিয়ার দামেস্কে বিমান হামলায় ইরানের অভিজাত ইসলামিক বিপ্লবী গার্ডের পাঁচজন উচ্চপদস্থ সদস্যসহ দশজন নিহতের ঘটনায় ইসরায়েলকে দায়ী করে ইরান ও সিরিয়া। জানুয়ারির শেষদিকে জর্ডান সীমান্তের কাছে এক মার্কিন ঘাঁটিতে ড্রোন হামলায় তিন মার্কিন সেনা নিহত ও ৪০ জনের বেশি আহত হন। যুক্তরাষ্ট্র এজন্য ইরানকে দায়ী করলেও ইরান তা অস্বীকার করে।</p> <p>প্রতিশোধ হিসেবে ফেব্রুয়ারির শুরুতে সিরিয়া এবং ইরাকের ৮৫টি লক্ষ্যবস্তুতে যুক্তরাষ্ট্র হামলা চালায়। ইয়েমেনেও যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের হামলা চলতে থাকে। পরিস্থিতি আরো জটিল হয়ে পড়ে যখন সিরিয়ায় ইরানের কনস্যুলেট ভবনে ইসরায়েলের বিমান হামলায় ইরানি বিপ্লবী গার্ডের কমান্ডারসহ সাত জন কর্মকর্তা নিহত হন।</p> <p>পহেলা এপ্রিলের সে হামলার প্রেক্ষাপটে ১৪ই এপ্রিল ইসরায়েলের ভূখণ্ডে ৩০০-এর বেশি ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা করে ইরান।এর মধ্য দিয়ে ইরান-ইসরায়েল প্রথমবারের মতো সরাসরি সংঘাতে জড়ায়। ১৯শে এপ্রিল ইরানের পারমাণবিক স্থাপনার গুরুত্বপূর্ণ শহর ইস্ফাহানে হামলা হয়।</p> <p>ওদিকে গাজায় ইসরায়েলের রাফাহ শহরে অভিযান, আল শিফা হাসপাতালে নতুন অভিযান, ত্রাণ সংকট সব মিলিয়ে মানবিক বিপর্যয় বাড়তেই থাকে। আমেরিকার তফর থেকে ইসরায়েলকে অস্ত্র বন্ধের হুমকিও দেয়া হয়, যদিও সেসব কিছু খুব একটা ধোপে টেকেনি।</p> <p>আর গাজার সূত্র ধরে ক্রমাগত ইসরায়েলি বাহিনীকে লক্ষ্য করে লেবাননের দিক থেকে হামলা অব্যাহত রাখে ইরান সমর্থিত হিজবুল্লাহ গোষ্ঠী। সীমান্তে তাদের ওপর পাল্টা হামলা ছাড়াও দক্ষিণ লেবানন সীমান্তে সাদা ফসফরাস (রাসায়নিক) বোমা হামলা চালিয়ে যেতে থাকে ইসরায়েল। আমেরিকাসহ বিভিন্ন পশ্চিমা দেশে ফিলিস্তিনিদের পক্ষে বিক্ষোভও দেখা যায়। ইসরায়েলের পক্ষেও পাল্টা অবস্থান দেখা যায় অনেক ক্ষেত্রে।</p> <p>গাজায় হামাস তো ছিলই, সঙ্গে লেবাননের হিজবুল্লাহ গোষ্ঠীও বছরজুড়ে ইসরায়েলের দিকে হামলা অব্যাহত রাখে। সেপ্টেম্বর মাসে লেবাননে দুই দফায় হাজার খানেক পেজার ও রেডিও ডিভাইস বিস্ফোরণ এবং রাজধানী বৈরুতে বড় পরিসরে হামলা করতে থাকে ইসরায়েল। ২৪শে সেপ্টেম্বর এক দিনেই ৪৯২ জন নিহত হন। লেবাননে অনেকটা গাজার মতো করেই হামলা চালিয়ে যায় ইসরায়েল।</p> <p>এমন নানা পরিস্থিতি আর হিজবুল্লাহ, হামাস ও বিপ্লবী গার্ডের শীর্ষ নেতাদের হত্যার প্রতিশোধ হিসেবে পহেলা অক্টোবর আবারও ইসরায়েলে হামলা চালায় ইরান। তাদের প্রায় ২০০ ক্ষেপণাস্ত্র হামলার জবাবে পাল্টা হামলা করে ইসরায়েলও। লেবাননে এক রকম যুদ্ধবিরোধী হলেও ইসরায়েলের সাথে দেশটির সংঘাত থেমে নেই।</p> <p>এ ছাড়া ইয়েমেনের হুথিরা ইসরায়েলের দিকে হামলা করেছে, পাল্টা হামলা করেছে ইসরায়েলও। মধ্যপ্রাচ্য ছাড়াও বিশ্বের অন্যান্য প্রান্তে আগে থেকে চলতে থাকা বেশ কয়েকটি সংঘাত এ বছরও অব্যাহত ছিল। যেমন মিয়ানমার। বছরের শেষদিকে এসে রাখাইন অঞ্চলের বেশিরভাগ অংশের দখল নেয় বিদ্রোহী আরাকান আর্মি। এর মধ্য দিয়ে প্রথমবারের মতো দেশটির সেনাবাহিনী পুরো একটি সীমান্তের নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে বলা হচ্ছে।</p> <p>এদিকে চলতি বছর রাশিয়া অন্তত ছয় গুণ বেশি ইউক্রেনীয় ভূমি দখলে নেয়ার তথ্য দিচ্ছে ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অফ ওয়ার বা আইএসডব্লিউ। সেনা সংকট কাটাতে উত্তর কোরিয়া থেকে যোদ্ধা নিয়োগ করেছে রাশিয়া। এ ছাড়া রাশিয়ার অভ্যন্তরে বছরের শুরুতে কনসার্ট হলে হামলা এবং বছর শেষে বৈদ্যুতিক স্কুটারের মধ্যে লুকিয়ে রাখা বোমার বিস্ফোরণে রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর একজন জ্যেষ্ঠ জেনারেলের মৃত্যু উঠে এসেছে বিশ্বের খবরে।</p> <p><strong>আরো মৃত্যু</strong></p> <p>সৌদি আরবের কর্মকর্তাদের উদ্ধৃত করে বার্তা সংস্থা এএফপি জানায়, এই বছর হজ পালন করতে গিয়ে ১৩০১ জন হাজির মৃত্যু হয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের দিকে দেখলে সেপ্টেম্বর মাসে মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম ও লাওসের ওপর দিয়ে বয়ে যায় টাইফুন ইয়াগি। এতে এশিয়াজুড়ে পাঁচ শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়।</p> <p>প্রায় কাছাকাছি সময় হারিক্যান হেলেনের তাণ্ডবে যুক্তরাষ্ট্রের ছয়টি রাজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং শতাধিক মানুষের মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়। পাপুয়া নিউ গিনিতে গত মে মাসে ভূমিধসে ৬৭০ জন মৃত্যুর কথা জানায় জাতিসংঘ। যদিও দেশটির সরকার এতে দুই হাজারের মতো মানুষ চাপা পড়ার শঙ্কা প্রকাশ করে।</p> <p>অক্টোবরে ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে স্পেনে দুই শতাধিক মানুষ প্রাণ হারান এবং এটাও বলা হচ্ছিলো, গত এক শতাব্দির মধ্যে এরকম বন্যা দেখেনি ইউরোপ।</p> <p>সূত্র : বিবিসি</p>