<p style="text-align:justify">তীব্র শীতের প্রকোপে কুপোকাত দেশ। জানুয়ারির শুরু থেকেই বেশ ভালোভাবে শীত টের পাওয়া যাচ্ছে ঢাকায়। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে শীতলতম মাস জানুয়ারি। তবে কুয়াশা বাড়ার কারণে বর্তমানে শীতের তীব্রতা বেশি অনুভূত হচ্ছে বলে জানান আবহাওয়াবিদ ড. মো. বজলুর রশিদ।</p> <p style="text-align:justify">গত কয়েক বছরের শীতের বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ইদানি শৈত্যপ্রবাহের সংখ্যা কমেছে। কিন্তু ঘনকুয়াশার কারণে শীতের তীব্রতা বেড়েছে।’</p> <p style="text-align:justify">কুয়াশা কেটে গেলে শীতের তীব্রতাও কমে আসবে বলে জানান এই আবহাওয়াবিদ। একইসঙ্গে জানুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহের শেষের দিকে সিলেট, ময়মনসিংহ, রংপুরে হালকা বৃষ্টি হতে পারে বলেও জানান তিনি।</p> <p style="text-align:justify">বজলুর রশিদ বলেন, ‘বৃষ্টি হলে ভালো। বৃষ্টি হলে যেটা হতে পারে যে ফগি কন্ডিশনে যে ময়েশ্চার আছে, সেটা কেটে যাবে। সে সময় আকাশ ক্লিয়ার হয়ে যাবে। বৃষ্টি না হলে কুয়াশাটা দীর্ঘ সময় কন্টিনিউ করে।’</p> <p style="text-align:justify">প্রান্তিক পর্যায়ে নভেম্বরের মাঝামাঝি থেকেই শীতের অনুভূতি ধীরে ধীরে বাড়তে থাকলেও ডিসেম্বরে তা ৮ থেকে ১০ ডিগ্রির মধ্যেই ওঠানামা করে বলে জানান আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক।</p> <p style="text-align:justify">তিনি বলেন, ‘লম্বা সময় ধরে ঘনকুয়াশা পড়লে সূর্যের আলো ভূপৃষ্ঠে পড়ার সুযোগ পায় না। ফলে তা ভূমিকে উত্তপ্ত করতে পারে না এবং শীত বেশি লাগে।’ এরসঙ্গে সূর্যের দক্ষিণায়ন বা সূর্যের আলোর প্রাপ্যতা কমে যাওয়াও শীত বাড়ার একটি কারণ।</p> <p style="text-align:justify">তিনি বলেন, ‘২৩ সেপ্টেম্বর দিন ও রাত সমান থাকে। এরপর থেকেই শুরু হয় সূর্যের দক্ষিণায়ন, অর্থাৎ বর্তমানে সূর্যের অবস্থান বঙ্গোপসাগরের ওপরে। ফলে ভূমির ওপর সূর্যের কিরণকাল বা সূর্যের আলোর প্রাপ্যতা তীর্যকভাবে ভূভাগের ওপর পড়ে। ফলে বেশি শীত অনুভূত হয়।’</p> <p style="text-align:justify">এ ছাড়াও সূর্যের আলোর প্রাপ্যতা সাধারণত ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা হওয়ার কথা। কিন্তু কুয়াশা বেশি হলে এবং বেশিক্ষণ থাকলে ভূপৃষ্ঠ সূর্যের আলো পায় পাঁচ থেকে ছয় ঘণ্টা। এ কারণেও বেশি শীত অনুভূত হয়।</p> <p style="text-align:justify">শীত বেশি লাগার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলো দিন ও রাতের তাপমাত্রার পার্থক্য কমে যাওয়া। যেমন, শুক্রবার ঢাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৩.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অর্থাৎ, এক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার পার্থক্য মাত্র দুই দশমিক চার ডিগ্রি সেলসিয়াস।</p> <p style="text-align:justify">আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম মল্লিক বলেন, ‘সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার পার্থক্য ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কম হলেই শীত অনুভূত হয়। এই পার্থক্য যদি পাঁচ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে আসলে হাড়কাঁপানো শীত লাগে।’ জানুয়ারির শুরু থেকে ঢাকায় শীত বেশি অনুভূত হওয়ার এটাও একটা কারণ।</p> <p style="text-align:justify">শীত বেশি লাগার আরো দুটি কারণের কথা জানাচ্ছেন আবহাওয়াবিদরা। বাতাসে জলীয়বাষ্পের পরিমাণ কমে যাওয়া এবং উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে আসা বাতাস।</p> <p style="text-align:justify">স্থানীয় জলবায়ু পারিপার্শ্বিক অবস্থার ওপরও নির্ভরশীল বলে জানান আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক।</p> <p style="text-align:justify">তিনি বলেন, ‘ইন্ডিয়ান ওশান ডাইপোল বা আইওডি যদি নেগেটিভ থাকে তাহলে পশ্চিম বঙ্গোপসাগরের এবং আরব সাগরের সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা কম থাকে। আর এটি কম থাকলে বাংলাদেশ ও ভারতে ঠান্ডা বেশি পড়ে।’</p> <p style="text-align:justify">এ বছর আইওডি মার্চ পর্যন্ত থাকবে বলেও জানান তিনি। আর লা নিনা কন্ডিশন ‘নিউট্রাল ফেইজের’ কাছাকাছি থাকায় বাংলাদেশ ও এর আশেপাশের দেশগুলোতে শীত বেশি পড়বে বলেও জানান এই আবহাওয়াবিদ।</p>