<p style="text-align:justify">গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রধান কামাল আহমেদ বলেছেন, ‘সাংবাদিকদের মধ্যে যারা উসকানিদাতা তাদের উসকানির তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হোক। উসকানির তো একটা শাস্তি আছে। হত্যার জন্য উসকানি হলে সেটা ফৌজদারি অপরাধ।’</p> <p style="text-align:justify">আজ রবিবার চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের সম্মেলনকক্ষে বিভাগের সাংবাদিকদের সঙ্গে গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের মতবিনিময়সভায় তিনি এসব কথা বলেন।</p> <p style="text-align:justify">তিনি বলেন, ‘সাংবাদিকদের রাজনৈতিক দলবাজি বন্ধ করা দরকার পেশার জন্য। সেটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ সাংবাদিকতা এবং দলীয় রাজনীতির আদর্শ থেকে খবর সেন্সর করা, অথবা বিকৃত করা সাংবাদিকতাকে প্রভাবিত করছে, ক্ষতিগ্রস্ত করছে।’</p> <p style="text-align:justify">কামাল আহমেদ বলেন, ‘আপনারা বলছেন, সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে রাজনৈতিক সক্রিয়তা, দলীয় সক্রিয়তা, ফ্যাসিবাদের সহযোগিতা। যারা ফ্যাসিবাদকে সহযোগিতা করেছেন তাদের বিচারের প্রশ্ন এসেছে। সমস্যা হলো আমরা কোনো তদন্ত সংস্থা না। অপরাধগুলোর তদন্ত আমরা করতে পারব না।’</p> <p style="text-align:justify">‘তবে আমরা এটা বলতে পারি, যারা উসকানিদাতা তাদের উসকানির তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হোক। উসকানির তো একটা শাস্তি আছে। হত্যার জন্য উসকানি হলে সেটা ফৌজদারি অপরাধ।’</p> <p style="text-align:justify">তিনি বলেন, ‘সাংবাদিকতার কোনো নীতিমালা নেই, কথাটা ঠিক নয়। অনেকগুলো নীতিমালা আছে। কিন্তু সম্পাদকীয় নীতিমালা নেই।’</p> <p style="text-align:justify">সম্পাদকদের জন্য নীতিমালা হওয়া দরকার জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা সম্পাদক পরিষদকে বলেছি, আসলে একটা জাতীয় নীতিমালা হওয়া দরকার। আপনারা একটা মান নির্ধারণ করেন, যেটা ন্যূনতম হলেও মেনে চলা দরকার। আশা করছি, সম্পাদক পরিষদ সেই উদ্যোগ নেবে।’</p> <p style="text-align:justify">সভায় কমিশনপ্রধান বলেন, ‘নীতিগতভাবে বা বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে যে বৈষম্য হয়েছে, রাজনৈতিক কারণে যারা বৈষম্যের শিকার হয়েছেন সেসব প্রতিষ্ঠান, ব্যক্তি, সাংবাদিকদের ক্ষতিপূরণের প্রশ্ন খুব গুরুত্বপূর্ণ। এটা আমাদের বিবেচনায় নিতে হবে। আসলেই অনেকে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। একইভাবে হয়রানিমূলক মামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, জেল খেটেছেন দিনের পর দিন, কাজ করতে পারেননি, সেই ব্যক্তিদের মামলা প্রত্যাহারের বিষয়টি অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে বলা দরকার। যাতে হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহার করা হয়। আর যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ক্ষতিপূরণের দাবিটাও যৌক্তিক এবং ন্যায্য।’</p> <p style="text-align:justify">তিনি আরো বলেন, ‘এমনও উপজেলা আছে যেখানে চারটা প্রেস ক্লাব। এটি আসলে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব। প্রেস ক্লাব করলে হয়তো কিছু সুবিধা পাওয়া যায়। প্রেস ক্লাবের নেতা হলে মনে হয় একটু আলাদা মর্যাদা, একটু আলাদা কোনো আর্থিক ব্যাপার থাকতে পারে। সেই কারণে এই প্রতিদ্বন্দ্বিতা। সেগুলোর সমাধান আমরা করতে পারব না। আমরা বলতে পারি, এটা একটা সমস্যা। এটি গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা দরকার।’<br />  <br /> পত্রপত্রিকার বিষয়ে কামাল আহমেদ বলেন, ‘পত্রিকার বিষয়ে অনেক নীতামালা আছে, কিন্তু সমস্যা হচ্ছে সরকার সেই নীতিমালাগুলো মানে না। সরকারের কর্মকর্তারা রাজনৈতিক প্রভাবে অথবা অন্য কোনা কারণে সেগুলো অনুসরণ করেননি। পত্রিকা প্রকাশের ক্ষেত্রে যোগ্যতার প্রশ্ন, পেশাদার সাংবাদিকের সম্পাদক হওয়ার প্রশ্ন, এগুলো নীতিমালায় আছে। আপনারাই বলছেন, উত্তরাধিকার সূত্রে ভাই অথবা পুত্রকে সম্পাদক বানিয়ে দেওয়া হচ্ছে, যাদের কোনো অভিজ্ঞতা নেই। সেটা আবার সরকার গ্রহণ করছে। কারণ হতে পারে রাজনৈতিক প্রভাব কিংবা অন্য কিছু। নীতি থাকলেও কার্যকর হচ্ছে না।’</p> <p style="text-align:justify">তিনি বলেন, ‘হকারদের পত্রিকা বিক্রির হিসাবের সঙ্গে বাস্তবতার কোনো মিল নেই। ঢাকা শহর থেকে ৩০২টি পত্রিকা মিডিয়া লিস্টে আছে, সারা দেশে ৫৯২টির মতো পত্রিকা আছে। আমরা দেখেছি হকারদের তালিকায় ৪৬টি কাগজ তারা লেনদেন করে। বাকি কাগজগুলোর কোনো পেপার (নথি) নেই। কেউ নেয় না ওই কাগজ। তাহলে এটা সরকারের মিডিয়া লিস্টিংয়ের মধ্যে ঢুকল কী করে? এই সমস্যার সমাধান করতে হবে।’</p> <p style="text-align:justify">তিনি বলেন, ‘একইভাবে পত্রিকার প্রচারসংখ্যার দিকে থেকে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর প্রেসসচিবের একার নামেই চারটি পত্রিকার ডিক্লারেশন ছিল। একটি পত্রিকার সার্কুলেশন যেটা ৬ হাজারেরও কম সেটাকে তিনি ২ লাখ ৯৯ হাজার দেখিয়েছেন, দেখাতে বাধ্য করেছেন। এখন তো হিসাবও বেরিয়েছে ২৯৬ কোটি টাকা উনার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে লেনদেন করা হয়েছে।’</p> <p style="text-align:justify">টেলিভিশন নিয়ে কমিশনপ্রধান বলেন, ‘বাংলাদেশে ৪৬টি টেলিভিশন চলার মতো বাজার নেই। কিন্তু ৪৬টি টেলিভিশনকে সরকার অনুমতি দিয়েছে। এটা গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। এই টেলিভিশন কেন্দ্রগুলোর যেহেতু বাজার নেই, সেহেতু তারা আয়ও করতে পারে না। আবার নিয়োগ দেয় বিনা বেতনে, কার্ডের ব্যবসায় চলে যায়। দুষ্টচক্র তৈরি হয়েছে। এগুলো ভেঙে শৃঙ্খলায় আনতে হবে।’</p> <p style="text-align:justify">ওয়েজ বোর্ডের বদলে সাংবাদিকদের ন্যূনতম বেতন নির্ধারণ করার প্রস্তাবের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘সেটা ভালো সমাধান হতে পারে; সারা দেশে সাংবাদিকদের জন্য ন্যূনতম বেতন থাকবে। যে শহরে খরচ বেশি, বিশেষ করে ঢাকায় আলাদা করে ভাতা বা বাড়তি বেতন দিতে হবে।’</p> <p style="text-align:justify">তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করছি, এ ধরনের সমাধানগুলো আমরা আপনাদের কাছ থেকেই পাব। সেটার ভিত্তিতেই আমরা সুপারিশমালা তৈরি করব। একটি কার্যকর সুপারিশমালা আমরা তৈরি করে দিয়ে যেতে পারব। বাস্তবায়ন আমাদের হাতে নেই, বাস্তবায়ন সরকার করবে। সেটা অন্তর্বর্তী সরকার হোক আর রাজনৈতিক সরকার হোক। আমরা রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকেও তাদের সুপারিশ লিখিতভাবে চেয়েছি। আমরা আশা করছি, তারা সুপারিশ দেবেন। ইতিমধ্যে অনেকে সুপারিশ দিয়েছেনও।’</p> <p style="text-align:justify">সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের সদস্য অধ্যাপক গীতিআরা নাসরীন, শামসুল হক জাহিদ, আখতার হোসেন খান, আব্দুল্লাহ আল মামুন প্রমুখ।</p>