<p>ইসলামে জন্মসূত্রে যে সম্পর্কগুলো নিষিদ্ধ, সেগুলো দুধপানের মাধ্যমেও হারাম হয়। যেমন—হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে সম্পর্ক জন্মসূত্রে (বংশ) হারাম হয়, তা দুধপানের মাধ্যমেও হারাম হয়।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ২৬৪৫)</p> <p>অন্য একটি হাদিসে বলা হয়েছে, ‘দুধপানের কারণে সেসব সম্পর্ক হারাম হয়ে যায়, যা জন্মের (বংশ) মাধ্যমে হারাম হয়।’ (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ২০৫৫)</p> <p>সুতরাং কোনো শিশুকে দুধ পান করানোর মাধ্যমে সেই নারী শিশুটির দুধমা হন এবং তাঁর স্বামী শিশুটির দুধবাবা একইভাবে স্বামীর ভাই শিশুটির দুধচাচা হয়ে যায়। অর্থাৎ দুধপানের মাধ্যমে শিশুটি শুধু দুধমার সঙ্গে নয়, তার পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গেও একটি বৈধ সম্পর্ক স্থাপন করে। এমনকি যদি দুধপানের বিষয়ে সন্দেহ থাকে, সেটিও এড়িয়ে চলা উচিত।</p> <p><strong>হিউম্যান মিল্ক ব্যাংকের ক্ষতিকর দিকসমূহ</strong></p> <p>হিউম্যান মিল্ক ব্যাংক একটি গভীর সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। এটি শুধু ইসলামী রীতিনীতি এবং সম্পর্কের বিধি-বিধানকে অবহেলা করার মাধ্যম নয়, বরং তা একটি বৃহত্তর সামাজিক ও ধর্মীয় বিভ্রান্তির কারণ হতে পারে।</p> <p>ইসলামের বিধান অনুযায়ী, যেমন রক্তের সম্পর্কের কারণে কিছু সম্পর্ক হারাম হয়, তেমনি দুধপানের সম্পর্কের ক্ষেত্রেও তা প্রযোজ্য। কিন্তু ‘হিউম্যান মিল্ক ব্যাংক’ প্রতিষ্ঠা এই ইসলামী রীতিনীতিকে লঙ্ঘন করে। বিভিন্ন নারীর দুধ সংগ্রহ করে তা একত্র করা এবং পরে সেই দুধ শিশুকে খাওয়ানো—এতে এই নারীদের পরিচয় অজানা থেকে যায়।</p> <p>ফলে দুধপানের মাধ্যমে যে সম্পর্ক তৈরি হয়, তা অস্বচ্ছ থেকে যায় এবং পারিবারিক সম্পর্কের পবিত্রতা ক্ষুণ্ন হয়। এ ধরনের প্রতিষ্ঠানের কারণে দরিদ্র মায়েরা তাঁদের নিজের সন্তানের প্রয়োজন উপেক্ষা করে টাকার বিনিময়ে দুধ বিক্রি করতে প্রলুব্ধ হবেন। এটি মানবিক মর্যাদার সম্পূর্ণ বিপরীত এবং দরিদ্র শিশুদের প্রতি চরম অবিচার। আর এটি সরাসরি সামাজিক বৈষম্য এবং অন্যায়ের শামিল।</p> <p><strong>হিউম্যান মিল্ক ব্যাংকের শরয়ি বিধান</strong></p> <p>যদিও কিছু আলেম হিউম্যান মিল্ক ব্যাংকের সামগ্রিক কল্যাণ ও সামাজিক প্রয়োজনকে বিবেচনায় নিয়ে এর ‘জায়েজ’ (হালাল)-এর পক্ষে মত দিয়েছেন, তবে বিশ্বের বিপুলসংখ্যক প্রখ্যাত আলেম ও ফকিহ এই ধরনের ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাকে নানা শরয়ি ও নৈতিক ক্ষতির কারণে হারাম বলে অভিমত দিয়েছেন।</p> <p>এই মতটিই সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য ও প্রাধান্যপ্রাপ্ত। নিম্নে সংক্ষিপ্ত আকারে তা তুলে ধরা হলো—</p> <p>১. ইন্টারন্যাশনাল ফিকহ একাডেমি, জেদ্দা (যেটি বিশ্বের মুসলিম দেশগুলোর শীর্ষস্থানীয় আলেম ও ফকিহদের প্রতিনিধিত্বকারী একটি সংস্থা), তারা হিউম্যান মিল্ক ব্যাংক স্থাপনকে হারাম ঘোষণা করেছে। (মাজাল্লাতু মাজমাউল ফিকহি ইসলামী, দ্বিতীয় সংখ্যা, খণ্ড-২, পৃষ্ঠা-৪২৪)</p> <p>২. সৌদি আরবের ফতোয়া কমিটি  (Permanent Committee for Islamic Research and Fatwas)  হিউম্যান মিল্ক ব্যাংককে হারাম বলে ফতোয়া দিয়েছে। (ফতওয়ায়ে লাজনাদুত দায়েমা, খণ্ড-২১, পৃষ্ঠা-৪৪)</p> <p>৩. প্রখ্যাত আলেম শাইখ ইবনে বায (রহ.) এই ধরনের প্রতিষ্ঠাকে নাজায়েজ উল্লেখ করে এর বিভিন্ন ক্ষতিকর দিক ব্যাখ্যা করেছেন। (আল ইমাম ইবনে বায ওয়েবসাইট, শিরোনাম : মা হুকমু ইনশাউ ব্যাংক লিল লাবানিল আদামিয়্যাত)</p> <p>৪. প্রখ্যাত আলেম মুফতি আবদুস সাত্তার হামমাদ (শারহে সহিহ বুখারির রচয়িতা), এই ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাকে এর অন্তর্নিহিত ক্ষতির কারণে নাজায়েজ ও হারাম বলে ঘোষণা করেছেন। (ওয়েবসাইট দ্রষ্টব্য)</p> <p>৫. উপমহাদেশের বিখ্যাত আলেম মুফতি তাকি উসমানী (দা. বা.) এবং দারুল উলুম করাচি থেকেও একই রকম ফতোয়া জারি করা হয়েছে, যেখানে এই ধরনের প্রতিষ্ঠানকে নাজায়েজ ও হারাম বলা হয়েছে। (দারুল উলুম করাচির ওয়েবসাইট দ্রষ্টব্য)</p> <p>এটি স্পষ্ট যে আলেমদের বৃহৎ অংশের মতে হিউম্যান মিল্ক ব্যাংকের মতো প্রতিষ্ঠান শরিয়তের দৃষ্টিতে গ্রহণযোগ্য নয়।<br />  </p>