পেশাদার ক্রীড়ার সঙ্গে বাণিজ্যের মিশেল ঘটাতে পারলে তা একটি জাতির অর্থনীতিতে কতটা প্রাণ সঞ্চার করতে পারে, সৌদি প্রো লিগের দিকে তাকালেই তা টের পাওয়া যায়। ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো আর করিম বেনজেমার মতো বৈশ্বিক তারকার অন্তর্ভুক্তি নিমেষেই সৌদি প্রো লিগকে আন্তর্জাতিক ইমেজ এনে দিয়েছে। এখন দেশটি স্পন্সরের পাশাপাশি দর্শকও টানছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এটা কোনো ম্যাজিক নয়, সঠিক পরিকল্পনা আর যথাযথ বিনিয়োগের ফল।
উল্লেখ্য, সৌদি সরকার তার ভিশন ২০৩০-এর আওতায় জিডিপির নন-ওয়েল খাতে ১.৫ শতাংশ অবদানের পাশাপাশি ক্রীড়া খাতে এক লাখ ৪০ হাজার কর্মসংস্থান তৈরি করতে চাইছে।
ক্রীড়ায় দেশটির পরিকল্পনা উচ্চাভিলাষী। ফর্মুলা ওয়ান থেকে বক্সিং অথবা গল্ফ থেকে ফিফা বিশ্বকাপ ফুটবল, সব খাতেই দেশটি বৈশ্বিক স্পোর্টস হাবে পরিণত হতে চাইছে। বিশ্বমানের স্পোর্টস ইভেন্টের আয়োজক হওয়ার মাধ্যমে দেশটি বিশ্ববাসীকে যে মেসেজটি দিতে চাইছে, সেটি হলো ‘আমাদের ভিশন-২০৩০ কর্মপরিকল্পনা মূল লক্ষ্য হচ্ছে অর্থনৈতিক বৈচিত্র্যকরণ কৌশল।
’ তারা এটাই বোঝাতে চাইছে, ক্রীড়ার মাধ্যমেও দেশের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করা সম্ভব। হালে দেশটি মটরস্পোর্টস, টেনিস ও গলফের এলআইভি ট্যুরের মতো মাঝারি মাপের স্পোর্টস ইভেন্ট আয়োজন করছে। এর মাধ্যমে তারা পর্যটন খাতকে শক্তিশালী করার পাশাপাশি ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি করতে চাইছে। টিকিট বিক্রি, স্পন্সরশিপ আর ব্রডকাস্টিং রাইট থেকে কিছু রাজস্ব পেতে চাইছে। পিডবলিউসি মিডল ইস্ট নামের একটি অডিট ফার্মের ক্রীড়া উপদেষ্টা পিটার ডেয়ারি বলেন, “আমাদের ‘গ্লোবাল স্পোর্টস সার্ভে ২০২৩’ মতে, সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশের স্পোর্টস সেক্টর কিছুটা হলেও আয়ের পথে রয়েছে। বিশেষ করে সৌদি আরব তার ক্রীড়া-অর্থনীতি থেকে ২০৩০ সালের মধ্যে ৫৯০ কোটি ডলার আয়ের লক্ষ্যমাত্রা স্থির করেছে। চলমান ক্রীড়া প্রকল্পগুলোর অবকাঠামোর পাশাপাশি বিশ্বমানের স্পোর্টস ফ্যাসিলিটি নিশ্চিত করায় দেশটি এই লক্ষ্যমাত্রা নিতে পেরেছে।”
বেইন অ্যান্ড কম্পানির ম্যানেজমেন্ট কনসালট্যান্ট ইয়ুর্গ ক্রুনেনবুর্গও ক্রীড়া খাতে সৌদি পরিকল্পনার প্রশংসায় পঞ্চমুখ, ‘২০৩০ সালের মধ্যে স্পোর্টস সেক্টরে এক লাখ ৪০ হাজার কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে হলে অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগ তথা বিশ্বমানের স্টেডিয়াম ও ক্রীড়া ফ্যাসিলিটি নির্মাণ করতে হবে। পাশাপাশি ক্রীড়া খাতে বেসরকারীকরণ ও পেশাদারিত্ব নিশ্চিত করতে হবে।
নতুন নতুন লিগ তৈরি করতে হবে, বাড়াতে হবে ক্রীড়া প্রতিযোগিতার সংখ্যাও এবং সৌদি আরব তা করছে। দেশটির আর্থ-সামাজিক খাতে পরিবর্তন আনার ক্ষেত্রে ক্রীড়া একটি বড় মাপের প্রভাবক হিসেবে কাজ করছে। এরই মধ্যে সৌদি সরকার স্পোর্টস বিজনেসের অনুকূল পরিবেশ নিশ্চিতে বেসরকারি খাতকে অগ্রাধিকার দিয়েছে।’
২০৩৪ বিশ্বকাপ ফুটবলের স্বাগতিক হিসেবে সৌদি আরব ১১টি অত্যাধুনিক ফুটবল স্টেডিয়াম নির্মাণ করছে। পাশাপাশি রাজধানী রিয়াদে ১৩৫ কিলোমিটার দীর্ঘ স্পোর্টস বুলেভার্ড নির্মাণেও মনোযোগ দিয়েছে। দেশটির গিগা প্রজেক্টগুলোর অন্যতম হলো কিদ্দিয়া এন্টারটেইনমেন্ট সিটি। এই সিটিতে এতটাই আধুনিকতার পরশ থাকছে, যা এই সিটিকে ক্রীড়া খাতের আদর্শ গন্তব্যে পরিণত করতে পারে। সূত্র : এরাব নিউজ