মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মনে করেন, ইউক্রেনের ‘বিপুল পরিমাণ ভূখণ্ড’ এরই মধ্যে দখলে নিয়ে নেওয়ায় যুদ্ধের অবসানে যেকোনো শান্তি আলোচনায় রাশিয়াই সুবিধাজনক অবস্থানে আছে।
ট্রাম্প স্থানীয় সময় গত বুধবার এয়ারফোর্স ওয়ানে বসে বিবিসিকে বলেন, রাশিয়া প্রায় তিন বছর আগে যে যুদ্ধ শুরু করেছিল সেটার অবসান দেখতে চাইছে বলেই তিনি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করেন।
বিবিসিকে ট্রাম্প বলেন, ‘আমি মনে করি, রাশিয়া যুদ্ধের শেষ দেখতে আগ্রহী; আমি সত্যিই মনে করি। আমার মনে হয় তারা কিছুটা সুবিধাজনক অবস্থানে আছে।
কারণ তারা বিপুল পরিমাণ ভূখণ্ড দখলে নিয়েছে। তাস তাদের হাতে।’ রাশিয়া সত্যিই শান্তি চায়, এমনটা বিশ্বাস করেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, করি।’
ইউক্রেনে নািসজমের উত্থান প্রতিহত করে সেখানকার রুশভাষীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের লক্ষ্যে তিন বছর আগে রাশিয়াই ইউক্রেনের বিরুদ্ধে পুরোদমে যুদ্ধে নেমেছিল।
মস্কোকে চেপে ধরতে জো বাইডেনের যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে পশ্চিমা দেশগুলো মস্কোর ওপর একের পর এক নিষেধাজ্ঞা দিয়েও তাদের কাবু করতে পারেনি। শিল্পসমৃদ্ধ দনবাসের বেশির ভাগ অংশসহ ইউক্রেনের যুদ্ধ-পূর্ববর্তী মানচিত্রের প্রায় ২০ শতাংশ এখনো মস্কোর নিয়ন্ত্রণে।
ফ্লোরিডায় সৌদি পৃষ্ঠপোষকতায় আয়োজিত এক বিনিয়োগ সম্মেলনে ভাষণ দিয়ে ওয়াশিংটন ডিসিতে ফেরার পথে বিবিসিকে ট্রাম্প শান্তি আলোচনায় রাশিয়ার ‘সুবিধাজনক অবস্থার’ কথা জানান।
এর আগে ফ্লোরিডার সম্মেলনে ট্রাম্প ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কিকে একই দিনে দ্বিতীয়বার ‘স্বৈরাচার’ অ্যাখ্যা দেন।
এর আগে ট্রুথ সোশ্যালে এক পোস্টে তিনি ইউক্রেনের ‘কৌতুক অভিনেতা’ প্রেসিডেন্টকে ‘স্বৈরাচার’ তকমা দেওয়ার পাশাপাশি তীব্র ভাষায় আক্রমণ করেছিলেন।
কিয়েভকে বাদ দিয়ে সৌদি আরবে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে জেলেনস্কি ট্রাম্পকে আক্রমণ করে বলেছিলেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট রাশিয়ার তৈরি করা ‘অপতথ্যের জগতে’ বাস করছেন। এর প্রতিক্রিয়ায় ট্রাম্প ট্রুথ সোশ্যাল ও ফ্লোরিডার সম্মেলনে জেলেনস্কিকে তীব্র ভাষায় আক্রমণে করেন বলে হোয়াইট হাউসের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
ফ্লোরিডা সম্মেলনে ট্রাম্প বলেন, ‘তিনি নির্বাচন আয়োজনে রাজি হচ্ছেন না। ইউক্রেনে হওয়া সত্যিকারের জরিপগুলোতে তাঁর গ্রণযোগ্যতা খুবই কম দেখা যাচ্ছে।
প্রতিটি শহর যখন ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে, তখন আপনি এতটা বাস্তবতাবিচ্ছিন্ন থাকেন কী করে?’
গত বছরের মে মাসে জেলেনস্কির পাঁচ বছরের মেয়াদ শেষ হয়। রাশিয়ার আক্রমণ শুরু হওয়ার পর থেকে দেশটিতে জরুরি অবস্থা জারি আছে, যাকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে নির্বাচন স্থগিত রাখা হয়েছে।
ট্রাম্পের দাবি, ইউক্রেনে জেলেনস্কির গ্রহণযোগ্যতা এখন মাত্র ৪ শতাংশ। তবে বিবিসির যাচাই করা কিছু জরিপ বলছে, এখনো ৫৭ শতাংশ ইউক্রেনীয় তাদের প্রেসিডেন্টের ওপর আস্থা রাখছে।
এদিকে জেলেনস্কিকে নিয়ে ট্রাম্পের অবস্থান মেনে নিতে পারছেন না ইউরোপীয় নেতারা। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার ফোন করে জেলেনস্কির প্রতি তাঁর সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছেন। যুক্তরাজ্যও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নির্বাচন স্থগিত রেখেছিল—স্টারমারের অবস্থান ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেছেন ডাউনিং স্ট্রিটের এক মুখপাত্র। ট্রাম্পের মন্তব্যের সমালোচনা করেছেন জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শোলজও। তিনি বলেছেন, ‘প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির গণতান্ত্রিক বৈধতা অস্বীকার করা খুবই ভুল এবং বিপজ্জনক।’
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে মস্কোর সাঁড়াশি অভিযান শুরুর পর গত মঙ্গলবার সৌদি আরবে রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র প্রথম উচ্চ পর্যায়ের কোনো বৈঠকে মুখোমুখি বসে। এই বৈঠকে ইউক্রেনকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি।
ওই বৈঠকের পর ট্রাম্প যুদ্ধের জন্য ইউক্রেনকে দায়ী করে বলেন, ‘আপনাদের (ইউক্রেন) যুদ্ধ শুরু করাই উচিত হয়নি। আপনারা চাইলে চুক্তি করতে পারতেন।’ সূত্র : বিবিসি