ঢাকা, শনিবার ১২ এপ্রিল ২০২৫
২৮ চৈত্র ১৪৩১, ১২ শাওয়াল ১৪৪৬

ঢাকা, শনিবার ১২ এপ্রিল ২০২৫
২৮ চৈত্র ১৪৩১, ১২ শাওয়াল ১৪৪৬
দেশে দেশে মুসলিম

বৈষম্যের শিকার ফ্রান্সের মুসলিমরা

মুফতি মুহাম্মদ মর্তুজা
মুফতি মুহাম্মদ মর্তুজা
শেয়ার
বৈষম্যের শিকার ফ্রান্সের মুসলিমরা

বর্তমান বিশ্বে সবচেয়ে বেশি আলোচিত-সমালোচিত একটি দেশ ফ্রান্স। এটি প্রাচীনকালে গল (Gaul) নামে পরিচিত ছিল।

ফ্রান্স দেখতে অনেকটা ষড়ভুজের মতো। দেশটি ইউরোপ মহাদেশীয় ভূখণ্ডের পশ্চিম সীমানায় অবিস্থত।

এর আয়তন ছয় লাখ ৭৪ হাজার ৮৪৩ বর্গকিলোমিটার।

এখানে বিভিন্ন ধর্মের মানুষ বাস করে, যার মধ্যে রোমান ক্যাথলিক ৮৩ থেকে ৮৮ শতাংশ, মুসলিম ৫ থেকে ১০ শতাংশ, প্রোটেস্ট্যান্ট ২ শতাংশ, ইহুদি ১ শতাংশ, অননুমোদিত ৪ শতাংশ। (সূত্র : https://www.cia.gov/library/publications/the-world-factbook/geos/fr.html#People) ইসলাম সেখানে দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্ম। অষ্টম শতকে স্পেন বিজয়ের পর থেকে ফ্রান্সে মুসলমানদের বসবাস শুরু হয়।

ফ্রান্সকে যদিও ইউরোপের ইতিহাসে স্বাধীনতার লালনকেন্দ্র ও গণতন্ত্রের প্রতীক হিসেবে চেনা হয়, কিন্তু দুঃখের বিষয়, সেখানকার দ্বিতীয় বৃহৎ জনগোষ্ঠী মুসলিম সমাজ স্বাধীনভাবে তাদের ধর্ম চর্চা করতে সক্ষম হয় না। অথচ এটিকেই নাকি বলা হয় গোটা ইউরোপের সর্বাধিক মুসলিম অধ্যুষিত দেশ।

কেমন আছেন ফ্রান্সের মুসলিমরা?

লামিন টুরে মালির লোক, কুড়ি বছর আগে স্থায়ীভাবে চলে আসেন ফ্রান্সে। তাঁর বয়স এখন ৪১।

দিলখোলা একজন ফরাসি মানুষ, ফ্রান্সে ধর্মভীরু মুসলমানদের জীবন সম্পর্কে কিছু কথা বলতে রাজি হলেন তিনি। তাঁর অভিমত হলো, ফ্রান্সে ঠিকঠাক ধর্ম পালন করা মুসলমানদের জন্য কঠিন হচ্ছে। যথেষ্ট মসজিদ এমনকি প্যারিসেও নেই। তা ছাড়া অল্প যে কয়েকটি মসজিদ আছে, সেগুলোও বড্ড ছোট। আসল মসজিদও আছে কিছু।
কিন্তু সেখানে ব্যাপক ভিড়। শুক্রবার জুমার নামাজের সময় মসজিদ ওমরও একেবারে ভরে যায়। বাইরে ফুটপাতের ওপর নামাজ পড়তে হয় অনেককে।

এ ছাড়া ফ্রান্স ইউরোপে প্রথম দেশ, যে জনসমক্ষে এই পোশাক পরা নিষিদ্ধ করল। বোরকা নিষিদ্ধ করার আইন ভঙ্গ করলে দোষীকে ১৫০ ইউরো (প্রায় ১৩৪ পাউন্ড স্টার্লিং) জরিমানা করা হবে। (সূত্র : http://www.bbc.co.uk/bengali/news/2011/04/110411_sm_veil_france.shtml) ) আরবি উইকিপিডিয়ার তথ্য অনুযায়ী, ফ্রান্সে মুসলমানদের অন্যতম সমস্যা হলো, ইসলামী ও অনৈসলামিক সংগঠনগুলোর বিরোধ, মিশ্রিত বিবাহ, যুবকদের ইসলামী জ্ঞানের অভাব, অপর্যাপ্ত কবরস্থান, শিশুদের অনৈসলামিক শিক্ষায় বাধ্যকরণ, মুসলিম অভিবাসীদের ওপর আইনগত কঠোরতা, ইসলামবিরোধী উগ্র জাতীয়তাবাদী আন্দোলন; 'সন্ত্রাসী' অপবাদসহ বহু সমস্যার সম্মুখীন সেখানকার মুসলিমরা।

পরিসংখ্যান বলছে, প্রায় ৮০ শতাংশ মুসলমান সেখানে কখনো না কখনো ইসলামবিদ্বেষী মন্তব্য শুনেছে মিডিয়া ও পলিটিশিয়ানদের কাছ থেকে। (সূত্র : ttps://www.youtube.com/watch?v=7nJTq NeMNWU)

সে দেশে একজন খ্রিস্টানের চেয়ে একজন মুসলিমের চাকরি পাওয়ার সম্ভাবনা আড়াই ভাগ কম। সবচেয়ে দরিদ্র এলাকায় তাদের বসবাস। শিক্ষার হারেও সবার পেছনে মুসলিমরা। (http://en.wikipedia.org/ wiki/Islam_in_France) প্রিয় পাঠক! এভাবেই নির্যাতিত হচ্ছে ফ্রান্সের মুসলমানরা, অথচ কয়েক দিন আগে শার্লি এবদো ট্র্যাজেডিকে কেন্দ্র করে দেশটির সার্বিক পরিস্থিতির বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে সেখানকার প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওলাঁদ বলেন, 'অন্যান্য নাগরিকের মতো ফ্রান্সের মুসলিমদেরও সমান অধিকার রয়েছে। আমরা সেগুলো রক্ষা করে যাব। তিনি বলেন, গির্জা, মসজিদ, সিনাগগ- যেখানেই সন্ত্রাসী হামলা হোক, প্রতিহত করা হবে। (সূত্র : http://www.banglanews24.com/beta/fullnews/bn/358093.html#sthash.bcjAGO5o.dpuf) কিন্তু শার্লি এবদোতে হামলাকে কেন্দ্র করে সেখানে প্রায় ৫০-এর বেশি মসজিদে সন্ত্রাসীরা যে আক্রমণ চালিয়েছে, এর বিচার না হওয়ায় মিষ্টার ওলাঁদের কথা অসত্য বলে প্রমাণিত হয়েছে।

লেখক : ফাজিল, আলজামিয়া ইসলামিয়া, মাইজদী

 

 

 

 

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ