<p>সিজারিয়ান ডেলিভারি কী?</p> <p>সিজারিয়ান ডেলিভারি মূলত সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার স্বাভাবিক পদ্ধতির একটি বিকল্প পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে গর্ভবতী মায়েদের স্বাভাবিক প্রসবের স্থান ছাড়া পেটের নিম্নাংশে সার্জারির মাধ্যমে বাচ্চা ভূমিষ্ঠ করা হয়। যেহেতু এটি একটি সার্জিক্যাল পদ্ধতি, এ কারণে এই পদ্ধতিতে অ্যানেসথেসিয়া বা অবেদন করা প্রয়োজন হয়। কোনো জটিলতা না থাকলে শরীরের নিচের অংশ অবশ করে এ ধরনের অপারেশন করা হয়। শরীরের নিচের অংশ অবশ করার দুটি মাধ্যম সচরাচর ব্যবহার করা হয়ে থাকে—স্পাইনাল অ্যানেসথেসিয়া ও ইপিডোরাল অ্যানেসথেসিয়া।</p> <p> </p> <p><strong>অপারেশনের পর মাথা ব্যথা কেন হয়?</strong></p> <p>সিজারিয়ান অপারেশনের পর মাথা ব্যথা মূলত অ্যানেসথেসিয়াজনিত কিছু জটিলতার জন্য হতে পারে। তবে অ্যানেসথেসিয়া ছাড়া অন্য অনেক কারণেই এই মাথা ব্যথা হতে পারে। অ্যানেসথেসিয়ার জন্য যে দুটি পদ্ধতি ব্যবহৃত হয় তার মধ্যে স্পাইনাল অ্যানেসথেসিয়ার জন্য এ ধরনের মাথা ব্যথা হয়ে থাকে। তবে একটি বিষয় খেয়াল করতে হবে যে অ্যানেসথেসিয়াজনিত জটিলতার জন্য মাথা ব্যথা হলে এ ধরনের মাথা ব্যথা সাধারণত ৪৮ থেকে ৭২ ঘণ্টা পর হয়ে থাকে।</p> <p>আমাদের মস্তিষ্ক ও স্পাইনাল কর্ড মূলত একটি বদ্ধ জায়গায় (সাব-আরাকনয়েড স্পেস) এক ধরনের তরলের মধ্যে ভাসতে থাকে। যখন স্পাইনাল অ্যানেসথেসিয়া দেওয়া হয়, তখন মূলত এই বদ্ধ জায়গায় একটি লম্বা চিকন সুচের মাধ্যমে ছিদ্র করে স্পাইনাল অ্যানেসথেসিয়ার ওষুধ প্রয়োগ করা হয়। কোনো কারণে যদি এই ছিদ্র বড় হয়, তাহলে অ্যানেসথেসিয়া দেওয়ার পর এই ছিদ্র দিয়ে ধীরে ধীরে পানির মতো তরল পদার্থ বের হয়ে আসতে থাকে। এভাবে ধীরে ধীরে তরল পদার্থ বের হয়ে আসতে থাকলে বদ্ধ জায়গায় ভারসাম্যহীনতা তৈরি হয়। এই ভারসাম্যহীনতার জন্য আমাদের ব্রেইন বা মস্তিষ্ক মাথার খুলির ভেতরে যেকোনো এক দিকে কাত হয়ে যেতে পারে। এই ভারসাম্যহীনতার জন্য ব্রেইন বা মস্তিষ্ক কাত হয়ে এর আবরণীতে চাপ প্রয়োগ করে, যে কারণে মাথা ব্যথার লক্ষণ তৈরি হতে পারে। এ জন্য এ ধরনের জটিলতায় মাথা ব্যথা তৈরি হতে ৪৮ থেকে ৭২ ঘণ্টা সময় লাগে। তাই সিজারিয়ান অপারেশনের পর মাথা ব্যথা যদি ৪৮ থেকে ৭২ ঘণ্টা পরে শুরু হয় এবং তীব্র থেকে তীব্রতর হতে থাকে, তখনই শুধু এটি স্পাইনাল অ্যানেসথেসিয়াজনিত জটিলতার কারণে মাথা ব্যথা বলা যেতে পারে। অন্য যেসব কারণে সিজারিয়ান অপারেশনের পরও মাথা ব্যথা হতে পারে তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে—</p> <p> </p> <p>♦ রক্তচাপের ওঠানামা।</p> <p>♦ শরীরে আয়রনের ঘাটতি।</p> <p>♦ মাংসপেশির অতিরিক্ত সংকোচন।</p> <p>♦ নিদ্রাহীনতা।</p> <p>♦ হরমোনজনিত জটিলতা।</p> <p>♦ একলাম্পসিয়া ও প্রি-একলাম্পসিয়া।</p> <p> </p> <p><strong>মাথা ব্যথার ধরনগুলো</strong></p> <p>♦ এ ধরনের মাথা ব্যথা মূলত অপারেশনের ৪৮ থেকে ৭২ ঘণ্টা পর শুরু হয়।</p> <p>♦ এ ধরনের মাথা ব্যথা মূলত ধীরে ধীরে তীব্র থেকে তীব্রতর হয়।</p> <p>♦ শোয়া থেকে উঠে বসলে বা দাঁড়ালে মাথা ব্যথার তীব্রতা বেড়ে যায়।</p> <p>♦ চিত হয়ে শুয়ে থাকলে মাথা ব্যথা কম থাকে।</p> <p>♦ মাথা ব্যথার সঙ্গে দেখতে ঝাপসা লাগতে পারে।</p> <p> </p> <p><strong>প্রাথমিকভাবে করণীয়</strong></p> <p>এ ধরনের মাথা ব্যথায় ধৈর্যসহকারে চিকিৎসা করাতে হবে। প্রাথমিকভাবে কিছু পদ্ধতি রয়েছে, যেগুলো অবলম্বন করলে অনেক ক্ষেত্রেই মাথা ব্যথা কমে যেতে পারে।</p> <p>♦ প্রথমত বেশির ভাগ সময় চিত হয়ে শুয়ে থাকতে হবে।</p> <p>♦ প্রচুর পরিমাণে পানি ও তরল খাবার খেতে হবে।</p> <p>♦ হাসপাতালে অবস্থান করলে চিকিৎসকের পরামর্শে অতিরিক্ত স্যালাইন পুশ করার প্রয়োজন হতে পারে।</p> <p>♦ ক্যাফেইনযুক্ত তরল, বিশেষ করে চা বা কফি পান করা যেতে পারে।</p> <p>♦ প্যারাসিটামলজাতীয় ওষুধ চিকিৎসকের পরামর্শে আট ঘণ্টা বা ছয় ঘণ্টা পর পর সেবন করা যেতে পারে।</p> <p> </p> <p><strong>প্রাথমিক চিকিৎসায় ব্যর্থ হলে করণীয়</strong></p> <p>সিজারিয়ান অপারেশনের পর মাথা ব্যথা যদি অ্যানেসথেসিয়াজনিত জটিলতার জন্য হয়, তাহলে এ ধরনের মাথা ব্যথা সাধারণত সাত দিনের মধ্যে ঠিক হয়ে যায়। এ ধরনের মাথা ব্যথা যদি সাত দিনের মধ্যে ঠিক না হয়, তাহলে ১৪ দিন পর্যন্ত একই ধরনের চিকিৎসা চালিয়ে দেখা যেতে পারে। এর পরও এ ধরনের ব্যথা থাকলে বা মাথা ব্যথা তীব্রতর হলে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। কিছু অ্যাডভান্স পদ্ধতি রয়েছে, যেগুলো করার মাধ্যমে এ ধরনের মাথা ব্যথা নিরাময় করা সম্ভব। অ্যাডভান্স চিকিৎসা পদ্ধতি মূলত হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার মাধ্যমে করাতে হয়। এ চিকিৎসায় রোগীর যেই জায়গা দিয়ে অ্যানেসথেসিয়া প্রয়োগ করা হয়েছে, সেই জায়গায় বা তার ওপরের জায়গা দিয়ে আরো একবার সুই স্থাপন করা হয় এবং রোগীর থেকে ২০ সিসি রক্ত সংগ্রহ করে ওই একই জায়গায় বা তার ওপরের জায়গায় সঙ্গে সঙ্গে পুশ করা হয়।</p> <p>প্রাথমিক চিকিৎসায় ব্যর্থ—এ ধরনের মাথা ব্যথা মূলত এই চিকিৎসার মাধ্যমে ৯৫ শতাংশ ক্ষেত্রেই উন্নতি হয়। এ ক্ষেত্রে যদি কখনো ব্যর্থ হয়, তাহলে দ্বিতীয়বারের মতো একই পদ্ধতি অবলম্বন করা যেতে পারে। এই পদ্ধতিতে কিছু ঝুঁকি রয়েছে। সুতরাং এ ধরনের মাথা ব্যথায় প্রাথমিক চিকিৎসাকে গুরুত্বসহকারে নিয়ে ধৈর্যসহকারে অবস্থান করলে আশা করা যায় কিছুদিনের মধ্যে মাথা ব্যথার উন্নতি হতে পারে।</p> <p>সিজারিয়ান অপারেশনের পর মাথা ব্যথা যদি শুরু থেকেই হয় বা অন্য কোনো কারণ জড়িত থাকে, সে ক্ষেত্রে কারণনির্ভর চিকিৎসাগুলো চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে গ্রহণ করলে মাথা ব্যথার উন্নতি করা সম্ভব।</p> <p> </p> <p>লেখক : চিফ কনসালট্যান্ট ও ব্যথা</p> <p>বিশেষজ্ঞ, বাংলাদেশ সেন্টার ফর রিহ্যাবিলিটেশন কাটাবন, ঢাকা</p>