<p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">গ্রামবাংলার ঐতিহ্যের কথা বলতে গেলে চাটাই প্রসঙ্গও আসবে। কেননা এক সময়ের গ্রামের মানুষজনের কাছে অত্যন্ত পরিচিত ও জীবন-যাপনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ ছিল এটি। বর্তমানে কারুপণ্য হিসেবে পরিচিত এটি চাটাই, মাদুর কিংবা পাটি নামেও পরিচিত। বাঁশ, বেত, তালপাতা, খেজুরপাতা, হোগলাপাতা ইত্যাদি দিয়ে চাটাই বোনা হয়। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">অতীতে গ্রামবাংলার মানুষ খাবার খাওয়ার সময় মেঝেতে চাটাই বিছিয়ে বসত। রাতে ঘুমানোর সময় চাটাইয়ের ওপর কাঁথা বিছিয়ে ঘুমাত। বাঁশের চাটাই দিয়ে ঘরের চাল ও বেড়াও তৈরি করা হতো। নৌকার ওপর চাটাই দিয়ে তৈরি হতো ছই। এতে রোদ-বৃষ্টিতে মাঝিরা আশ্রয় নিতে পারে ছইয়ের ভেতরে। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বাংলাদেশের সিলেট, রাজশাহী, যশোর, মানিকগঞ্জ, কুমিল্লা, নোয়াখালীসহ বেশ কিছু অঞ্চলে বহুকাল ধরে চাটাই তৈরি করা হয়। নোয়াখালী জেলার উপকূলীয় পলিমাটিসমৃদ্ধ এলাকায় প্রচুর হোগলা বা চাটাই পাতা উৎপাদন হয়। হোগলাপাতা দিয়ে তৈরি চাটাই প্রধানত বিছানা হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এ ছাড়া হোগলাপাতা বিশেষ কায়দায় চাটাইয়ের মত বুনে বুনে নামাজের মাদুর, কুশন, ঝুড়ি, টুপি, হাতপাখা, টুকরি ওয়ালম্যাট, ছোট ব্যাগও বানানো হয়ে থাকে।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আমাদের দেশে চাটাই তৈরির কাজ নারীরাই বেশি করেন। চাটাই সাধারণত নিম্ন আয়ের মানুষ বেশি ব্যবহার করে। দামেও এটি অপেক্ষাকৃত কম। তাই একে গরিবের বিছানা নামে অনেকেই অভিহিত করেন। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ফরিদপুর, সিরাজগঞ্জ, নওগাঁ, কুষ্টিয়া জেলার বিভিন্ন গ্রামের মানুষের হাতে তৈরি খেজুরপাতার চাটাই একসময় ব্যাপক জনপ্রিয় ছিল। আদিবাসী নারী-পুরুষ বৃষ্টিবাদলে ছাতার বদলে খেজুরপাতার চাটাই দিয়ে তৈরি ঘোমটা বা মাথাল বৃষ্টি আটকানোর ঢাল হিসেবে মাথায় ব্যবহার করত। একসময় অনেকে খেজুরপাতার চাটাইয়ে নামাজ পড়ত। খেজুর পাটিতে ধান, গম, কলাই, ধনিয়াসহ বিভিন্ন ফসল শুকানোর কাজও করত অনেকে।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আবহমান বাংলার দৈনন্দিন জীবনের নানা কাজে চাটাই ব্যবহারের কথা উঠে এসেছে বাংলা সাহিত্যেও। কবিকঙ্কন মুকুন্দরাম চক্রবর্তীর কবিতায় চাটাই বা পাটির উল্লেখ আছে। তারাশংকর বন্দোপাধ্যায় রচিত হাঁসুলী বাঁকের উপকথা উপন্যাসে, তালপাতা ও খেজুরপাতার চাটাইয়ের কথা বলা আছে। এখনো বিয়ে, ঈদ এমন নানা উৎসবে চাটাইয়ের ব্যবহার দেখা যায়। মুসলিমরীতিতে মৃতদেহ দাফন প্রক্রিয়ায় বাঁশের চাটাই গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"> </p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">অলকানন্দা<strong> রায়</strong></span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"> </p>