কভিডের আঘাত মোকাবেলা করে দেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ানোর আগেই শুরু হয় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। এতে অর্থনীতির বিভিন্ন সূচক আবারও নেতিবাচক অবস্থায় চলে গেছে। বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ কমে আসছে, ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমছে, প্রবাসী আয়ের প্রবাহে গতি কমেছে। সব মিলিয়ে লেনদেনের ভারসাম্যে ব্যাপক নেতিবাচক অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে।
৬৮ হাজার কোটি টাকা চায় সরকার
সজীব হোম রায়

ফলে লেনদেনের ভারসাম্য বজায় রাখা এবং বাজেট সহায়তা পাওয়ার জন্য সরকার বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগীর সহায়তা চাইছে। এর আগে করোনা মহামারি শুরুর সময় সরকার এভাবে উন্নয়ন সহযোগীদের কাছে সহায়তা চেয়েছিল। এবার আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলসহ (আইএমএফ) বিশ্বব্যাংক, জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা) ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) কাছে ৭২৫ কোটি ডলার ঋণ চেয়েছে সরকার। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ৬৮ হাজার ৫৯৫ কোটি ২৫ লাখ ৮৭ হাজার ৫০০ টাকা।
উন্নয়ন সহযোগীদের কাছে ঋণ চাওয়ার ব্যাপারে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব শরীফা খান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আইএমএফের বিষয়টি আমাদের আওতায় নয়।
অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে আমদানি ব্যয় বেড়ে গেছে। বিপরীতে রপ্তানি ও প্রবাসী আয়ের প্রবাহে আশানুরূপ সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না।
চার সংস্থার কাছে ৭২৫ কোটি ডলার সহায়তা চায় সরকার
প্রয়োজন না হলে আইএমএফের কাছে ঋণ চাওয়া হবে না বলে সাংবাদিকদের একাধিকবার জানিয়েছিলেন অর্থমন্ত্রী। তবে গত রবিবার আইএমএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভার কাছে ৪৫০ কোটি ডলার ঋণ চেয়ে চিঠি দিয়েছে অর্থ বিভাগ। অর্থসচিব ফাতিমা ইয়াসমিন স্বাক্ষরিত চিঠিতে ঋণের বিষয়ে আইএমএফকে প্রয়োজনীয় আলোচনা শুরুর অনুরোধ করা হয়। তিন বছরের জন্য ৪৫০ কোটি ডলার ঋণ চায় সরকার। লেনদেনের ভারসাম্য রক্ষা এবং বাজেটের সহায়তা বাবদ এই ঋণ চাওয়া হয়েছে।
এই ঋণ আইএমএফের বর্ধিত ঋণ সহায়তা (ইসিএফ), বর্ধিত তহবিল সহায়তা (ইএফএফ) এবং জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রভাব মোকাবেলার জন্য গঠিত সহনশীলতা ও টেকসই তহবিল (আরএসএফ) থেকে চাওয়া হয়েছে। প্রায় এক দশক পর আইএমএফের কাছে ঋণ চাইছে সরকার।
বাংলাদেশ এর আগে আইএমএফের কাছ থেকে এ রকম আরো চারবার ঋণ নেয়। প্রথমবার ঋণ নেওয়া হয় ১৯৯০-৯১ সময়ে। এরপর ২০০৩-০৪, ২০১১-১২ এবং সর্বশেষ ২০২০-২১ সালে সংস্থাটি থেকে ঋণ নেয় বাংলাদেশ। কোনোবারই ঋণের পরিমাণ ১০০ কোটি ডলার ছাড়ায়নি। তবে এবার প্রতিবছরের জন্য ১৫০ কোটি ডলার ঋণ চাওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, আইএমএফের পক্ষ থেকে এই ঋণ নিয়ে আলোচনা করার জন্য আগামী মাসে একটি মিশনকে বাংলাদেশে পাঠানো হতে পারে। এই মিশনের পক্ষ থেকে ঋণ নিয়ে সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করা হবে। তবে এই ঋণ পেতে হলে আইএমএফের পক্ষ থেকে বেশ কয়েকটি শর্তের মুখোমুখি হতে হবে সরকারকে। এর মধ্যে রয়েছে তেল ও সারের ওপর ভর্তুকি কমানো, ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ কমিয়ে এনে সংস্কার সাধন, বিদ্যুতের দাম বাড়ানো ইত্যাদি।
গত বছরের অক্টোবরে আইএমএফ বিশ্বে করোনার সংকট মোকাবেলায় ১৯০টি সদস্য দেশের জন্য ৬৫০ বিলিয়ন ডলার সমমানের স্পেশাল ড্রয়িং রাইটস (এসডিআর) ঘোষণা করে। এর মধ্যে বাংলাদেশের জন্য বরাদ্দ ছিল তিন বিলিয়ন ডলার। কিন্তু সে সময় রিজার্ভ ভালো থাকায় সরকার তা নেয়নি।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের একটি সূত্র জানায়, বিশ্বব্যাংক ও জাইকার কাছ থেকে ১০০ কোটি করে ২০০ কোটি ডলার পাওয়ার আশা করছে সরকার। এ জন্য অনানুষ্ঠানিক আলোচনা শুরু হয়েছে।
‘বেলআউট’ নয়, ঋণ চাওয়া হয়েছে
বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে আইএমএফের কাছে ‘বেলআউট’ সহায়তার কোনো প্রস্তাব দেওয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস। তিনি বলেন, ‘বেলআউট সহায়তা চাওয়ার মতো কোনো পরিস্থিতি বাংলাদেশে তৈরি হয়নি। আমাদের পাঁচ মাসেরও অধিক সময়ের আমদানি ব্যয় মেটানোর মতো পর্যাপ্ত বৈদেশিক মুদ্রা মজুদ আছে।’ তবে ব্যালান্স অব পেমেন্ট ও বাজেট সহায়তা হিসেবে সংস্থাটির কাছে সহজ শর্তের ঋণ চাওয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।
বাসসের খবরে বলা হয়, গতকাল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে নিজ অফিসকক্ষে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে মুখ্য সচিব এ কথা বলেন।
সম্পর্কিত খবর

ছুটির ঘোষণা

আজ ১৪ এপ্রিল সোমবার বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে কালের কণ্ঠের সব বিভাগ বন্ধ থাকবে। তাই কাল মঙ্গলবার পত্রিকা প্রকাশিত হবে না। তবে আমাদের অনলাইন ও মাল্টিমিডিয়া চালু থাকবে। —সম্পাদক
।
আধাপাকা ধান কাটার উৎসব


মডেল মেঘনার আটকাদেশ কেন অবৈধ নয় : হাইকোর্ট
- গ্রেপ্তার প্রক্রিয়া সঠিক ছিল না : আইন উপদেষ্টা
নিজস্ব প্রতিবেদক

মিস আর্থ বাংলাদেশ বিজয়ী-২০২০ মডেল মেঘনা আলমকে বিশেষ ক্ষমতা আইনে আটকাদেশ কেন অবৈধ নয়, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। গতকাল রবিবার এ বিষয়ে এক রিট আবেদনের শুনানি শেষে হাইকোর্টের একটি ডিভিশন বেঞ্চ এই আদেশ দেন। অন্যদিকে গতকাল সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে আইন উপদেষ্টা বলেছেন, মডেল মেঘনা আলমকে গ্রেপ্তার প্রক্রিয়া সঠিক ছিল না।
আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে এই রুলের জবাব দিতে বলেছেন আদালত।
মেঘনা আলমকে ৩০ দিনের আটকাদেশ কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, কেন তাঁকে মুক্তি দিতে নির্দেশ দেওয়া হবে না এবং কেন তাঁকে গ্রেপ্তার ও আটকের প্রক্রিয়াটি অসাংবিধানিক ও মৌলিক অধিকার পরিপন্থী ঘোষণা করা হবে না—রুলে হাইকোর্ট এসব বিষয় জানতে চেয়েছেন।
আদালত স্বরাষ্ট্রসচিব, আইনসচিব, পুলিশের আইজি, ডিএমপি কমিশনার, জেলা ম্যাজিস্ট্রেটসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের দুই সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলেছেন।
এর আগে গত ১০ এপ্রিল আবেদনের ভিত্তিতে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সেফাতুল্লাহ মডেল মেঘনা আলমকে ৩০ দিনের জন্য কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছিলেন।
আদেশে বলা হয়, ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের ২(এফ) ধারার জননিরাপত্তা ও আইন-শৃঙ্খলা পরিপন্থী ক্ষতিকর কার্য থেকে নিবৃত্ত করার জন্য এবং আইন-শৃঙ্খলা বজায় রাখার স্বার্থে আবশ্যক অনুভূত হওয়ায় ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের ৩(১) ধারায় অর্পিত ক্ষমতাবলে মেঘনা আলমকে কর্তৃপক্ষের অনুমোদনক্রমে এই আটকাদেশ স্বাক্ষরের তারিখ থেকে ৩০ দিন কারাগারে আটক রাখার আদেশ প্রদান করা হলো। পরে তাঁকে কাশিমপুর কারাগারে পাঠানো হয়।
গ্রেপ্তার প্রক্রিয়া সঠিক ছিল না : আইন উপদেষ্টা
এদিকে গতকাল সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেছেন, মডেল মেঘনা আলমকে রাতে যে প্রক্রিয়ায় বাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তা সঠিক ছিল না।
তিনি বলেন, ‘আমরা স্বীকার করছি, গ্রেপ্তার প্রক্রিয়া সঠিক হয়নি।

জয়নুল আবদিন ফারুকের বক্তব্যের প্রতিবাদ জামায়াতের
নিজস্ব প্রতিবেদক

জামায়াত নিয়ে বিএনপি নেতা জয়নুল আবদিন ফারুকের বক্তব্যকে অসত্য উল্লেখ করে নিন্দা জানিয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান। গতকাল রবিবার এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, “বিএনপি নেতা জয়নুল আবদিন ফারুক গত ১০ এপ্রিল একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের টক শোতে ‘জামায়াতে ইসলামী মসজিদে মসজিদে মহিলাগুলোকে একত্র করে বেহেশতের টিকিট দেওয়া শুরু করেছে’ মর্মে যে বক্তব্য দিয়েছেন, আমি তার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। তাঁর এই বক্তব্যে সত্যের লেশমাত্রও নেই। তাঁর এ বক্তব্য হীন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
জয়নুল আবদিন ফারুকের মতো একজন ব্যক্তির মুখে এ ধরনের বক্তব্য মানায় না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘জামায়াতের সমালোচনা করার মতো কোনো কিছু না পেয়ে জয়নুল আবেদিন ফারুক ইসলামের দাওয়াত সম্পর্কে কটাক্ষপূর্ণ হাস্যকর বক্তব্য দিয়ে নিজের মর্যাদা ক্ষুণ্ন করেছেন। এভাবে বক্তব্য দিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা অত্যন্ত হাস্যকর।’
বিবৃতিতে রফিকুল ইসলাম খান বলেন, ‘নিজের অবস্থান ও মর্যাদার কথা চিন্তা করেই জামায়াত সম্পর্কে বানোয়াট ও হাস্যকর মিথ্যা বক্তব্য দেওয়া থেকে বিরত থাকার জন্য আমি বিএনপি নেতা জয়নুল আবদিন ফারুকের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।