<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">দেশে গত অর্থবছরে চালের উৎপাদন চার কোটি টন ছাড়ালেও চলতি অর্থবছরের আমন মৌসুমে পর পর কয়েকবার বন্যার কারণে চালের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারেনি। ফলে এ নিয়ে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। চলতি মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রা থেকে তিন লাখ হেক্টর জমিতে আমন আবাদ কম হয়েছে। এরই মধ্যে ৩২ শতাংশ আমন ধান কাটা শেষ হলেও দেশের সব এলাকায় প্রত্যাশিত ফলন পাওয়া যায়নি। এ পরিস্থিতিতে দেশে যেন চালের সংকট না হয় তার জন্য চাল আমদানির বড় ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছে সরকার। এর জন্য শুল্ক ছাড়ের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে, কিন্তু তার পরও চাল আমদানিতে গতি আসছে না। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে অনেক ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে মামলা হওয়ার কারণে অনেক আমদানিকারক গ্রেপ্তারের পর জেলে কিংবা পলাতক রয়েছেন।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি আমন মৌসুমে ৫৯ লাখ ৬৭ হাজার হেক্টর জমিতে আমন ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। তবে বন্যার ক্ষয়ক্ষতির কারণে ৫৬ লাখ ৭২ হাজার হেক্টর জমিতে আমন ধানের আবাদ করা হয়। এরই মধ্যে দেশের বিভিন্ন এলাকায় ১৮ লাখ হেক্টর জমির আমন ধান কাটা শেষ হয়েছে। কিন্তু বেশ কিছু এলাকায় কাঙ্ক্ষিত ফলন পাওয়া যায়নি। এ পরিস্থিতিতে আগামী বোরো মৌসুমে ধানের উৎপাদন ঠিক রাখতে কৃষি উপকরণের সঠিক ব্যবস্থাপনা প্রয়োজন। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">চলতি আমন ও বোরো মৌসুমের ঝুঁকি বিবেচনায় এবার আট থেকে ১০ লাখ টন চাল আমদানির প্রয়োজন হতে পারে। এর জন্য সরকার শূন্য ট্যারিফে আমদানিকারকদের চাল আমদানির সুযোগ করে দিয়েছে। কিন্তু এই সুযোগে বাদ সেধেছে মামলা। মামলার কারণে অনেক আমদানিকারক পলাতক রয়েছেন। আগের সরকারের আমলে সুবিধাভোগী প্রায় সব আমদানিকারক বর্তমানে পলাতক থাকায় চাল আমদানিতে তেমন সাড়া মিলছে না। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সাবেক গবেষণা পরিচালক এম আসাদুজ্জামান কালের কণ্ঠকে বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বর্তমানে দেশে চালের বা খাদ্যশস্যের মজুদ সক্ষমতা কিছুটা কম। এটিকে ৩০ লাখ টনে উন্নীত করতে হবে। তবে চলতি মৌসুমে বারবার বন্যার কারণে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী আমন আবাদ করা যায়নি। এ অবস্থায় আমন উৎপাদন কম হলে চাল আমদানি বাড়াতে হবে। চাল উৎপাদনের যে তথ্য রয়েছে তা সঠিক নয়। কারণ সরবরাহ যদি সত্যিই পর্যাপ্ত থাকে তাহলে চালের দাম বাড়ছে কেন? যতটা উৎপাদন বেড়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে আসলে ততটা বাড়েনি। এ পরিস্থিতিতে কৃষকের ধানের দাম নিশ্চিত করে চাল আমদানি বাড়াতে হবে। আগের আমদানিকারকরা পলাতক থাকলে নতুন আমদানিকারকদের সুযোগ করে দিতে হবে। তা না হলে চালের বাজারে অস্থিরতা তৈরি হতে পারে। চাল নিয়ে কোনো ধরনের অনিশ্চয়তায় থাকা যাবে না।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য মতে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে দেশে চাল উৎপাদন হয়েছে চার কোটি সাত লাখ টন। যা আগের অর্থবছরে ছিল তিন কোটি ৯১ লাখ টন। এক বছরের ব্যবধানে চালের উৎপাদন বেড়েছে ১৬ লাখ টন (প্রায় ৪ শতাংশ)। তবে চলতি অর্থবছরে সব মিলিয়ে আট থেকে ১০ লাখ টন চালের উৎপাদন কম হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগসহ দেশের কৃষিসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। এ কারণে কৃষি মন্ত্রণালয় ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় যৌথভাবে চাল আমদানির সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। এমনকি চাল আমদানিতে সব ধরনের শুল্ক ও বাধা দূর করা হয়েছে। দেওয়া হচ্ছে জিরো ট্যারিফে চাল আমদানির সুযোগ। যেকোনো পরিস্থিতিতে বাজারে চালের সরবরাহ সঠিক রাখতে চায় সরকার।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এ বিষয়ে কৃষিসচিব ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান কালের কণ্ঠকে বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">গত আউশ মৌসুমে দেশে কয়েক লাখ টন চালের উৎপাদন কম হয়েছে। চলতি আমন মৌসুমে কিছু অঞ্চলে ভালো উৎপাদনের তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। সব মিলিয়ে আমন ধানের ফলন ভালো হলে চাল আমদানি সীমিত করা লাগতে পারে। কিন্তু ফলন ভালো না হলে আট থেকে ১০ লাখ টন পর্যন্ত চাল আমদানি করতে হতে পারে। এ জন্য আমরা আগাম প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি। চাল আমদানি হলেও কৃষক যাতে প্রকৃত দাম পায় সে ব্যবস্থা করা হয়েছে। এরই মধ্যে আমন মৌসুমের ধানের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। এই দাম গত বছরের চেয়ে বেশ বাড়ানো হয়েছে। সরকারের মূল লক্ষ্য হলো কৃষকের ধানের ন্যায্য দাম নিশ্চিত করা আর চাল আমদানি করে ভোক্তা পর্যায়ে চালের সরবরাহ ঠিক রাখা।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span> </span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের ২০ নভেম্বর পর্যন্ত আট হাজার ২১০ টন চাল আমদানি করা হয়েছে। অবশ্য ২০২৩-২৪ অর্থবছরে কোনো চাল আমদানি করা হয়নি। তবে ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১০ লাখ ৫৬ হাজার টন চাল আমদানি করা হয়েছিল। সরকারি হিসাবে গত ২০ নভেম্বর পর্যন্ত দেশে খাদ্যশস্যের সরকারি মজুদ রয়েছে ১২ লাখ ৩৭ হাজার টন। এর মধ্যে চাল আট লাখ আট হাজার ৯৭১ টন, গম চার লাখ ২৭ হাজার ৪৯৩ টন এবং ধান ৩১৪ টন। তবে সরকারি খাদ্যশস্যের মজুদ আরো বাড়ানো প্রয়োজন। এ জন্য খাদ্যগুদাম ও সাইলোগুলোর সক্ষমতা বাড়াতে হবে। </span></span></span></span></p>