বাম-প্রগতিশীলদের নতুন জোট ‘যুক্তফ্রন্ট’

নিখিল ভদ্র
নিখিল ভদ্র
শেয়ার
বাম-প্রগতিশীলদের নতুন জোট ‘যুক্তফ্রন্ট’

আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মতো বুর্জোয়া রাজনৈতিক শক্তিকে মোকাবেলায় দেশের বাম-প্রগতিশীল শক্তিগুলোকে ঐক্যবদ্ধ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। যে উদ্যোগের অংশ হিসেবে দ্রুতই যুক্তফ্রন্ট নামে নতুন রাজনৈতিক জোটের আত্মপ্রকাশ ঘটবে। যে জোটের সঙ্গে দেশের বামপন্থী দলগুলোর পাশাপাশি মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী প্রগতিশীল, গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং মুক্তবুদ্ধির চর্চায় বিশ্বাসী বিশিষ্টজনরাও যুক্ত হবেন বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন।

তাঁরা জানান, ব্রিটিশ-পাকিস্তানি আমলের মতো দেশের স্বাধীনতার পর ক্ষমতার পালাবদলে উন্নতি হলেও সমাজের পরিবর্তন হয়নি।

অতীতেও সমাজে যেমন মানুষের মধ্যে রাজা-প্রজার সম্পর্ক ছিল, এখনো সেই সম্পর্ক বিরাজমান। স্বাধীনতার পর থেকে দেশ শাসন করেছে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির মতো বুর্জোয়া রাজনৈতিক দল, যারা মূলত ধনিক শ্রেণির প্রতিনিধিত্ব করে। এ জন্য বুর্জোয়াদের বিপক্ষে দাঁড়িয়ে গণতন্ত্রের পক্ষে লড়াই জোরদার করতে বাম-প্রগতিশীলদের ঐক্যবদ্ধ মঞ্চ জরুরি। আর সেই তাগিদ থেকে যুক্তফ্রন্ট গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
এই জোট আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঐক্যবদ্ধভাবে অংশ নেবে বলেও আশা করা হচ্ছে।

সূত্রগুলো জানায়, অনেক আগে থেকেই যুক্তফ্রন্ট গঠনের বিষয়ে তাগিদ দিয়ে আসছেন বরেণ্য শিক্ষাবিদ ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। ফ্যাসিবাদ ও স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন চলাকালে এ বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া হয়। এরই মধ্যে অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বে কয়েক দফা বৈঠক হয়েছে।

যেখানে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদসহ বাম গণতান্ত্রিক জোটভুক্ত দলগুলো, ফ্যাসিবাদবিরোধী বাম জোটের শরিক দলগুলো, গণতান্ত্রিক বাম ঐক্যভুক্ত পাঁচটি দল, বাংলাদেশ জাসদ এবং ঐক্য ন্যাপের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি, দলিত ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর একাধিক সংগঠন, গণতান্ত্রিক সাংস্কৃতিক ঐক্যসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা চলছে। গণ-অভ্যুত্থানের পর এই আলোচনা জোরদার হয়েছে। চলতি মাসেই গণতান্ত্রিক যুক্তফ্রন্ট নামে নতুন এই জোটের আনুষ্ঠানিক প্রকাশ ঘটবে বলে জানা গেছে।

সমাজ বদলের জন্য যুক্তফ্রন্ট গঠনের বিকল্প নেই বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী।

সম্প্রতি এক সমাবেশে তিনি বলেন, দেশের যে উন্নয়ন হয়েছে, সেটি পুঁজিবাদী উন্নয়ন। এই উন্নয়নের ফলে বৈষম্য, মানুষে মানুষে বিচ্ছিন্নতা ও দেশপ্রেমের অবনতি ঘটেছে। ২০ শতাংশ মানুষের উন্নতি হয়েছে। বাংলাদেশ ঔপনিবেশিক শাসন থেকে বেরিয়ে আসার জন্য ব্রিটিশ ও পাকিস্তান আমলে সংগ্রাম করলেও বাংলাদেশ ধনীদের উপনিবেশ হয়ে উঠেছে। লুণ্ঠন করে ধনীরা আরো ধনী হয়েছে। দীর্ঘ ২৩ বছরের শোষণ শেষে স্বাধীন বাংলাদেশে ৫৩ বছরের উন্নতি হলেও সমাজ আগের জায়গায় রয়ে গেছে। এখন সংস্কারের কথা বলা হচ্ছে, কিন্তু সংস্কারের মাধ্যমে সমাজ বদল অসম্ভব। কারণ দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো বুর্জোয়া। যে দল পালিয়ে গেল তারা যেমন বুর্জোয়া ছিল, তেমনি ভবিষ্যতে যারা ক্ষমতায় আসবে, তারাও বুর্জোয়া রাজনৈতিক দল। যারা ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করে তারাও ওই একই ধারার। এই অবস্থায় যদি যুক্তফ্রন্ট গঠন করা যায়, তা হলে বুর্জোয়াদের বিপক্ষে দাঁড়িয়ে গণতন্ত্রের পক্ষে লড়াই সম্ভব হবে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম কালের কণ্ঠকে বলেন, জনগণের তিক্ত অভিজ্ঞতা হলো নৌকা-লাঙল-পাল্লা-শীষ, সব সাপেরই দাঁতে বিষ। তাই গণ-অভ্যুত্থানের জন-আকাঙ্ক্ষা রূপায়ণে যাদের দাঁতে বিষ আছে বলে প্রমাণিত, তাদের বাদ দিয়ে এর বাইরে যারা আছে, তাদের নিয়ে সব শক্তি মিলে একটি নয়া যুক্তফ্রন্ট গঠন করতে হবে।

বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশিদ ফিরোজ বলেন, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ ও নব্বইয়ের গণ-অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়ন হয়নি বলেই চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান ঘটেছে। এতে স্পষ্ট হয়েছে, পুঁজিবাদ ও সুবিধাবাদ টিকিয়ে রেখে গণ-আন্দোলনের চেতনা বাস্তবায়ন অসম্ভব।

সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স কালের কণ্ঠকে বলেন, আওয়ামী লীগ ও বিএনপির দ্বিদলীয় মেরুকরণের বাইরে আমরা গণতান্ত্রিক প্রগতিশীল শক্তি ও রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই বিকল্প জোট গঠনের চেষ্টা করেছি। আর বাংলাদেশ জাসদের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক বলেন, বৃহৎ একটি জোট গঠনের উদ্যোগ আছে। আমরা আলোচনা শুরু করেছি।

 

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

ক্রিকেটার সাকিবের সম্পদ জব্দের আদেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
ক্রিকেটার সাকিবের সম্পদ জব্দের আদেশ
সাকিব আল হাসান

চার কোটি টাকার চেক ডিজ-অনার মামলায় জাতীয় দলের ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানের সম্পদ জব্দের আদেশ দিয়েছেন আদালত। গতকাল সোমবার ঢাকার অতিরিক্ত মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জিয়াদুর রহমানের আদালত এ আদেশ দেন। আদালতের পেশকার রিপন মিয়া এ তথ্য জানিয়েছেন।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, বাদীপক্ষ সাকিবের সম্পদ জব্দ চেয়ে আবেদন করেন।

শুনানি শেষে আদালত এ আদেশ দেন।

এ মামলার অন্য আসামিরা হলেন সাকিব আল হাসান অ্যাগ্রো ফার্মের ম্যানেজিং ডিরেক্টর গাজী শাহাগীর হোসাইন, সাকিব আল হাসান অ্যাগ্রো ফার্মের ডিরেক্টর ইমদাদুল হক ও ডিরেক্টর মালাইকা বেগম। তাঁদের মধ্যে মালাইকা বেগম মারা গেছেন। অন্য দুজন জামিনে রয়েছেন।

এর আগে গত ১৫ ডিসেম্বর ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মাহবুবুল হকের আদালতে বেসরকারি আইএফআইসি ব্যাংকের রিলেশনশিপ অফিসার মো. শাহিবুর রহমান বাদী হয়ে মামলা করেন। এ মামলার পর তাঁকে আদালতে হাজিরের জন্য ১৯ জানুয়ারি দিন ধার্য করা হয়। তবে ওই দিন সাকিব ও গাজী শাহাগীর হোসাইন আদালতে হাজির না হওয়ায় তাঁদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। এ বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ২৪ মার্চ দিন ধার্য করেন আদালত।

মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, সাকিব আল হাসান অ্যাগ্রো ফার্ম লিমিটেড-এর চেয়ারম্যান হিসেবে সাকিব দায়িত্ব পালন করছেন। কম্পানিটির কার্যক্রম সাতক্ষীরায়। কম্পানিটি ২০১৭ সালে ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল হিসেবে এক কোটি এবং টার্ম লোন হিসেবে দেড় কোটি টাকা বনানী শাখার আইএফআইসি ব্যাংক থেকে নেন। পরে ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল হিসেবে নেওয়া টাকা সময়মতো পরিশোধ না করায় ব্যাংকটি এই টাকা মেয়াদি লোনে পরিবর্তন করে। টাকা ফেরত চেয়ে কয়েক দফা নোটিশ দেওয়ার পর কম্পানিটি ব্যাংককে চলতি বছরের ৪ সেপ্টেম্বর চার কোটি ১৪ লাখ টাকার দুটি চেক দেয়।

তবে সংশ্লিষ্ট অ্যাকাউন্টে যথেষ্ট টাকা না থাকায় চেক বাউন্স করে। পরে ঋণের টাকা ফেরত চেয়ে আইএফআইসি ব্যাংকের বনানী শাখা নেগোশিয়েবল ইনস্ট্রুুমেন্টস অ্যাক্ট অনুযায়ী দৈনিক পত্রিকার মাধ্যমে লিগ্যাল নোটিশ পাঠায়। তবে নোটিশ পাঠানোর ৩০ দিন পার হলেও তা না পেয়ে আদালতে এসে মামলা করে।

 

 

মন্তব্য

হান্নান মাসুদের সভায় বিএনপির হামলা

    প্রতিবাদে এনসিপির বিক্ষোভ
নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
হান্নান মাসুদের সভায় বিএনপির হামলা
হামলায় আহত আব্দুল হান্নান মাসুদ

নোয়াখালীর হাতিয়ায় জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সিনিয়র যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসুদের পথসভায় বিএনপির নেতাকর্মীরা হামলা চালিয়েছেন। এতে হান্নান মাসুদসহ বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন।

গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় জাহাজমারা ইউনিয়নের জাহাজমারা বাজারে এ ঘটনা ঘটে।

হামলার প্রতিবাদে গতকাল রাত ১২টায় ঢাকায় তাত্ক্ষণিক বিক্ষোভ মিছিল করেছে এনসিপি।

বাংলামোটর থেকে শুরু হয়ে মিছিলটি শাহবাগ ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলের মোড় ঘুরে আবার বাংলামোটরে এসে শেষ হয়।

এনসিপির নেতারা এ ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও তাদের রাজনৈতিক দল থেকে বহিষ্কারের দাবি জানান।

হামলার ঘটনার পর হান্নান মাসুদ বলেন, ৫ আগস্টের পর থেকে বিএনপি নামধারী সন্ত্রাসীরা হাতিয়ায় চাঁদাবাজির সিন্ডিকেট গড়ে তোলে। আমার ঘোষণা ছিল এসব চাঁদাবাজি বন্ধ করতে হবে।

সেই বিএনপি নামধারী চাঁদাবাজরা আজ আমার পথসভায় হামলা চালিয়েছে। হামলায় ৫০ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন বলে তিনি দাবি করেন।

অভিযোগের বিষয়ে হাতিয়া উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী তানভীর আহমেদ রাজিব বলেন, হান্নান মাসুদ আওয়ামী লীগের পদধারী পলাতক সন্ত্রাসীদের নিয়ে জাহাজমারা বাজারে মিছিল করছিলেন দেখে বিএনপি নেতাকর্মীরা তাতে বাধা দেন। শুনেছি এ সময় হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে।

মন্তব্য

শহীদ আবু সাঈদের বাবাকে সেনাপ্রধানের আর্থিক সহায়তা

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
শহীদ আবু সাঈদের বাবাকে সেনাপ্রধানের আর্থিক সহায়তা
জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানে রংপুরের আলোচিত শহীদ আবু সাঈদের বাবাকে আর্থিক সহায়তা দিয়েছেন সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। গতকাল ঢাকা সেনানিবাসে। ছবি : আইএসপিআর

গত জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানে রংপুরের আলোচিত শহীদ আবু সাঈদের বাবাকে আর্থিক সহায়তা দিয়েছেন
সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। সোমবার (২৪ মার্চ) সেনানিবাসে আবু সাঈদের বাবা মকবুল হোসেনের হাতে আর্থিক সহায়তা তুলে দেন সেনাপ্রধান।

গত বছরের ১৬  জুলাই রংপুরে আন্দোলন চলাকালে নিরস্ত্র অবস্থায় পুলিশের গুলিতে শহীদ হন আবু সাঈদ।

গত ১০ ডিসেম্বর শহীদ আবু সাঈদের বাবা হঠাৎ হৃদরোগে আক্রান্ত হলে তাঁকে জরুরি ভিত্তিতে সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টারের মাধ্যমে রংপুর থেকে সিএমএইচ ঢাকায় আনা হয় এবং উন্নত চিকিৎসার মাধ্যমে তিনি সুস্থ হয়ে ওঠেন।

এর আগে রবিবার জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানে আহত ব্যক্তিদের সম্মানে আয়োজিত ইফতার মাহফিলে সেনাবাহিনী প্রধানের আমন্ত্রণে আবু সাঈদের বাবাও উপস্থিত ছিলেন।

 

মন্তব্য

বন্ধ হয়ে যাচ্ছে একাত্তরের বধ্যভূমি সংরক্ষণ প্রকল্প

    সাড়ে ৬ বছরে কাজের অগ্রগতি মাত্র ১৫ শতাংশ ২৮১টির মধ্যে কাজ শেষ ৪৩টির আসছে জুনের মধ্যে শেষ হবে আরো ১২টির কাজ
খায়রুল কবির চৌধুরী
খায়রুল কবির চৌধুরী
শেয়ার
বন্ধ হয়ে যাচ্ছে একাত্তরের বধ্যভূমি সংরক্ষণ প্রকল্প

জুলাই বিপ্লবে ক্ষমতার পালাবদলের পর বন্ধ হয়ে যাচ্ছে একাত্তরের বধ্যভূমি সংরক্ষণ প্রকল্প। মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী কর্তৃক নির্বিচার গণহত্যার সাক্ষী হিসেবে ২৮১টি বধ্যভূমি সংরক্ষণে স্বাধীনতার ৪৭ বছর পর ২০১৮ সালে চালু হওয়া এ প্রকল্পটি জমি অধিগ্রহণসহ নানা কারণে বন্ধ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে সরকার। তবে সরকারের এমন সিদ্ধান্তে হতাশা প্রকাশ করেছেন মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। তাঁরা বলছেন, ইতিহাস রক্ষার খাতিরেই এই বধ্যভূমিগুলো সংরক্ষণ করা রাষ্ট্রের অবশ্য কর্তব্য।

মন্ত্রণালয় সূত্র ও প্রকল্পসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, শুরু থেকেই ভূমি অধিগ্রহণে জটিলতাসহ বেশ কিছু সমস্যার কারণে প্রকল্পটি এগিয়েছে শামুকের গতিতে। গত সাড়ে ছয় বছরে মাত্র ৪৩টি বধ্যভূমির নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। ২০১৮ সালে শুরু হওয়া প্রকল্পটির মেয়াদ চলতি বছরের জুনে শেষ হওয়ার কথা।

বর্তমানে প্রকল্পটির অধীনে ৯টি বধ্যভূমির কাজ চলমান রয়েছে, আরো তিনটির কাজ শুরু হবে।

অর্থাৎ সব মিলিয়ে ২৮১টির মধ্যে ৫৫টি বধ্যভূমি সংরক্ষণের মধ্য দিয়ে প্রকল্পটির সমাপ্তি টানা হচ্ছে।

প্রকল্প পরিচালক ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম কালের কণ্ঠকে বলেন, এটি ক্লোজ (বন্ধ) করে দেওয়া হচ্ছে। আমাদের টার্গেট ছিল (বন্ধের আগে) ৫৭টি বধ্যভূমির কাজ শেষ করা। কিন্তু ৫৫টা করেই বন্ধ করে দেওয়া হবে।

আগামী জুনের মধ্যেই শেষ করা হবে। শুধু রায়েরবাজার বধ্যভূমির কাজ শেষ করতে ডিসেম্বর লেগে যাবে।

এ বিষয়ে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম কালের কণ্ঠকে বলেন, যেসব বধ্যভূমি আমরা নিরঙ্কুশ পেয়েছি সেগুলোর কাজ শেষ হবে। আর যেগুলোর জমি অধিগ্রহণ করতে হবে সেগুলো আমরা বাতিল করেছি। একজন লোক জানে তার জমিতে বধ্যভূমি আছে।

কিন্তু যদি এটা (জমি) দামি জমি হয়, তাহলে তার কাছে এর (বধ্যভূমি) কোনো পবিত্রতা বা ভ্যালু নেই।

তাহলে কি মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ আকর এসব বধ্যভূমি আর সংরক্ষণ করা হবে না? এমন প্রশ্নে উপদেষ্টা বলেন, মানুষের জায়গা অধিগ্রহণ করে সরকার এটা সংরক্ষণ করবে না। স্বেচ্ছায় যদি কেউ জমি দেয় তাহলে আমরা এটা করব।

২০১৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রায় ৪৪২ কোটি (৪৪২ কোটি ৪০ লাখ ১৩ হাজার) টাকার প্রকল্পটির বাস্তবায়নকাল ধরা হয়েছিল ২০১৮ সালের জুলাই থেকে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত। মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের এই প্রকল্পটির বাস্তবায়নকারী সংস্থা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছে গণপূর্ত অধিদপ্তর।

এখন পর্যন্ত প্রকল্পটির মেয়াদ বেড়েছে দুই দফায়। কাজের তেমন অগ্রগতি না থাকায় ২০২১ সালে প্রকল্পটির মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২৩ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত করা হয়। ২০২৩ সালের মধ্যেও কাজ শেষ না হওয়ায় দ্বিতীয় দফায় আবারও মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত সময় নির্ধারণ করা হয়।

তবে দুই দফা মেয়াদ বাড়ালেও প্রকল্পটির অগ্রগতির চিত্র হতাশাজনক। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৪৩টি বধ্যভূমির কাজ শেষ হয়েছে। অর্থাৎ অগ্রগতি মাত্র ১৫.৩ শতাংশ। এ ছাড়া আরো ১২টি বধ্যভূমির কাজ শেষ করা হবে।

মন্ত্রণালয় ও প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বেশির ভাগ বধ্যভূমির জায়গাই ব্যক্তি মালিকানাধীন। বধ্যভূমির জন্য ভূমি অধিগ্রহণের দায়িত্ব পুরোটাই জেলা প্রশাসনের ওপর। মন্ত্রণালয় থেকে জায়গার জন্য চাহিদা দেওয়া হয়। এরপর দাগ ও বিভিন্ন নথি দেখে জায়গা চূড়ান্ত করে দিলে অধিগ্রহণের প্রস্তাব দেওয়া হয়। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই জায়গা চূড়ান্ত হচ্ছে না, অধিগ্রহণও হচ্ছে না।

ভূমি অধিগ্রহণ সমস্যার পর লোকবল সংকটকে সবচেয়ে বড় কারণ বলে জানিয়েছে মন্ত্রণালয় সূত্র। নেই কোনো স্থায়ী পরিচালক। দীর্ঘদিন ধরেই অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে প্রকল্প পরিচালকের কাজ করছেন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব জাহাঙ্গীর আলম। মন্ত্রণালয়ের রুটিন কাজের বাইরে তাঁকে এই দায়িত্বটি পালন করতে হয়।

জমি অধিগ্রহণের বিষয়টি দেখার জন্য মাঠ পর্যায়ে কোনো লোক নেই। ফলে এই অধিগ্রহণ প্রক্রিয়ার কিছু কাজ কখনো কখনো অন রিকোয়েস্টে  প্রকল্পটির বাস্তবায়নকারী সংস্থা গণপূর্ত অধিদপ্তরকে দিয়ে করানো হয় বলে জানান প্রকল্প পরিচালক।

এ বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, জমিই তো পাওয়া যায় না। জায়গার সমস্যা বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই সমস্যার মধ্যেই আমরা বন্ধ করে দিলাম। কারণ এভাবে এগোনো যায় না।

গণহত্যার বেদনাবিধুর স্মারক বধ্যভূমি, রক্ষা করা রাষ্ট্রের কর্তব্য

১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর চালানো নৃশংস গণহত্যার বিভিন্ন স্মৃতি ও ক্ষতচিহ্ন আজও অনেকটা অনাদরে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে দেশজুড়ে। ২০১৭ সাল থেকে খুলনায় অবস্থিত দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র গণহত্যা জাদুঘর  ১৯৭১ : গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘর জেলাভিত্তিক গণহত্যার জরিপকাজ পরিচালনা করছে। জরিপে দেখা গেছে, কেবল ৪২টি জেলায়ই ২১ হাজার ৮৫৬টি গণহত্যা, গণকবর, বধ্যভূমি ও নির্যাতন কেন্দ্রের সন্ধান মিলেছে। এর মধ্যে গণহত্যা সংঘটিত হয়েছে ১৮ হাজার ৪৮১টি। বধ্যভূমি শনাক্ত হয়েছে  ৮৮৮টি।  এ ছাড়া গণকবর এক হাজার ৩১৩টি ও নির্যাতনকেন্দ্র শনাক্ত হয়েছে এক হাজার ১৭৪টি। ৬৪ জেলার জরিপ শেষে গণহত্যা, গণকবর, বধ্যভূমি ও নির্যাতনকেন্দ্রের সংখ্যা ৩০ হাজার ছাড়াতে পারে বলে ধারণা করছেন জাদুঘরের গবেষকরা।

এমন বাস্তবতায় সরকারের বধ্যভূমি সংরক্ষণের চিন্তা থেকে সরে আসা এবং এগুলোকে অবহেলা করা ঠিক হবে না বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, বধ্যভূমিগুলো সংরক্ষণ করা অবশ্যই কর্তব্য। আমাদের তো ইতিহাসকে রক্ষা করতে হবে এবং চর্চা করতে হবে। এর জন্য ইতিহাসের স্মৃতিগুলো রাষ্ট্রের সংরক্ষণ করতে হবে। না হলে মানুষ তো সব ভুলেই যাবে। শহীদদের আত্মত্যাগকে ভুললে চলবে না।

মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি সারওয়ার আলী কালের কণ্ঠকে বলেন, ১৯৭১ সালে পাকিস্তান সরকারের নির্বিচার গণহত্যা, নৃশংসতা ও বেদনার সাক্ষ্য বহন করে। এর স্মারক হচ্ছে বধ্যভূমিগুলো। ফলে পরিকল্পিতভাবে বধ্যভূমি সংরক্ষণ একান্ত প্রয়োজন। আমি আশা করছি, বধ্যভূমি সংরক্ষণের বিষয়টি সরকার পুনরায় বিবেচনা করবে।

 

 

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ