সিলেটের ব্যবসায়ী গোষ্ঠী ফকর ব্রাদার্সের দুই কর্ণধার। সম্পর্কে তাঁরা পিতা-পুত্র। তবে অর্থপাচারে তাঁরা একে অপরের সহযোগী। কয়লা ও পাথর আমদানির আড়ালে প্রথমে টাকা পাচার করেছেন সংযুক্ত আরব আমিরাতে।
সিলেটের ব্যবসায়ী গোষ্ঠী ফকর ব্রাদার্সের দুই কর্ণধার। সম্পর্কে তাঁরা পিতা-পুত্র। তবে অর্থপাচারে তাঁরা একে অপরের সহযোগী। কয়লা ও পাথর আমদানির আড়ালে প্রথমে টাকা পাচার করেছেন সংযুক্ত আরব আমিরাতে।
অনুসন্ধান বলছে, দুবাইয়ের জুমেইরাহ ভিলেজ সিটিতে (প্লট নং ৬৮১৬৪৮১) প্রায় ২৯ কাঠা জায়গার ওপর ৩৩ তলাবিশিষ্ট ‘সাফায়া ৩২’ নামের একটি ভবন নির্মাণ করে দার আল কারামা নামের একটি রিয়েল এস্টেট কম্পানি। যৌথ অংশিদারির ভিত্তিতে এই কম্পানির মালিকানায় আছেন ফকর উদ্দিন ও ফকরুস সালেহিন নাহিয়ান। এই ভবনে ২২৪টি অ্যাপার্টমেন্ট রয়েছে, যার সিঙ্গল বেডরুমের একটি ফ্ল্যাটের দাম বাংলাদেশি মুদ্রায় পৌনে দুই কোটি টাকা থেকে শুরু।
এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের জানুয়ারিতে সিআইসির উচ্চ পর্যায়ের একটি তদন্তদল দুবাইয়ে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের অর্থপাচার অনুসন্ধানে যায়। ওই তদন্তদল ফকর ব্রাদার্সসহ শতাধিক ব্যক্তির অর্থপাচারের প্রমাণ পায়। এরই মধ্যে একাধিক ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়েছে।
সিআইসির তদন্ত অনুযায়ী, সম্পদ ও বিনিয়োগের তথ্য গোপন করে ফকর ব্রাদার্সের ফকর উদ্দিন আলী আহমেদ, ফালাহ উদ্দিন আলী আহমেদ, সালাহ উদ্দিন আহমেদ, ফয়েজ হাসান ফেরদৌস, ফকরুস সালেহিন নাহিয়ান কর ফাঁকি দিয়েছেন। এই করদাতারা নিজ নামে পাথর ও কয়লা আমদানি করে তা তাঁদের অংশীদারি প্রতিষ্ঠানের আয়কর নথিতে ২০১৭-১৮ করবর্ষ থেকে প্রদর্শনের মাধ্যমে শুধু সারচার্জ এবং এসংক্রান্ত জরিমানা বাবদ ৫০ কোটি টাকার আয়কর ফাঁকি দিয়েছেন। এ ছাড়া আলোচ্য করদাতারা নিজ নামে একটি আবাসিক এলাকায় জমি ক্রয় এবং ওই জমিতে নির্মিত স্পোর্টস কমপ্লেক্স থেকে ভাড়া আয় গোপন করেছেন। পাশাপাশি গুলশানে বিলাসবহুল ফ্ল্যাট এবং দামি গাড়ি ক্রয়ের ক্ষেত্রে প্রকৃত বিনিয়োগের তথ্য গোপনের মাধ্যমে আয়কর ফাঁকি দিয়েছেন। এ ছাড়া তাঁদের প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল সিকিউরিটিজ লিমিটেডের নামে গুলশানে কমার্শিয়াল স্পেস ক্রয়ে প্রকৃত বিনিয়োগ গোপনের মাধ্যমে আয়কর ফাঁকি দিয়েছেন। এসংক্রান্ত আয়কর ও জরিমানা বাবদ আট কোটি টাকার আয়কর ফাঁকি দিয়েছেন তাঁরা।
তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফকর উদ্দিন আলী আহমেদ ও ফকরুস সালেহিন নাহিয়ান দুবাইয়ে (৩২ জেভিসি ডিস্ট্রিক্ট ১২ জুমেইরাহ ভিলেজ সার্কেল, আল বারসা) নির্মীয়মাণ একটি ৩৩ তলাবিশিষ্ট টাওয়ারে বিনিয়োগ করেছেন। সাফায় ৩২ নামের প্রকল্পটিতে স্টুডিও অ্যাপার্টমেন্ট, এক বেডরুম, দুই বেডরুম ও তিন বেডরুম অ্যাপার্টমেন্ট মিলে সর্বমোট ২২৪টি অ্যাপার্টমেন্ট তৈরি করা হচ্ছে। এই ভবনে কমন স্পেস, জিম, সুইমিংপুলসহ নাগরিক সব সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। এই প্রকল্পে বিনিয়োগের তথ্য তাঁদের কর নথিতে দেখানো হয়নি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে তদন্তসংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘অর্থপাচারের সুনির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে ফকর ব্রাদার্সের কর ফাঁকি অনুসন্ধান শুরু করা হয়েছিল। প্রাথমিকভাবে কর ফাঁকির প্রমাণও পাওয়া গেছে। অনুসন্ধানের হাত থেকে বাঁচতে মিথ্যা তথ্য ছড়ানো এবং ছলচাতুরীর আশ্রয় নিচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। এই প্রতিষ্ঠানের কর ফাঁকির অনসুন্ধান বন্ধ করতে বিভিন্ন স্তর থেকে প্রভাবশালীরাও তদবির করেছেন।’
আয়কর আইনে বাংলাদেশি করদাতাদের বিদেশে রক্ষিত সম্পদ রিটার্নে দেখানোর বাধ্যবাধকতা আছে। যদি রিটার্নে সম্পদ দেখানো না হয় তাহলে জরিমানার বিধান রয়েছে। আয়কর আইনের ২১ ধারা অনুযায়ী, কোনো বাংলাদেশি করদাতার রিটার্নে অপ্রদর্শিত বিদেশে থাকা সম্পত্তির সন্ধান পাওয়া গেলে এবং সম্পত্তি অর্জনের উৎস বা প্রকৃতি সম্পর্কে সন্তোষজনক ব্যাখ্যা উপস্থাপনে তিনি ব্যর্থ হলে অথবা ব্যাখ্যা সন্তোষজনক না হলে ওই সম্পত্তির বাজারমূল্যের সমপরিমাণ অর্থ জরিমানা আদায় করবেন উপকর কমিশনার।
তবে জরিমানা আরোপের ক্ষেত্রে করদাতাকে যুক্তিসংগত শুনানির সুযোগ দিতে হবে। জরিমানার টাকা করদাতার কোনো পরিসম্পদ বা করদাতার পক্ষে অন্য কেউ কোনো পরিসম্পদ অর্জন করলে তা বিক্রি বা বাজেয়াপ্ত করে আদায় করা যাবে। বিদেশে থাকা সম্পত্তির বিষয়ে দেশে ও বিদেশে অনুসন্ধান ও তদন্ত করা যাবে। প্রয়োজনে বিদেশে গিয়ে অনুসন্ধানকারীরা সম্পত্তি ও সম্পত্তির এলাকা চিহ্নিতকরণ এবং মূল্য নির্ধারণ করতে পারবেন।
এ বিষয়ে ফকরুস সালেহিন নাহিয়ান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘দুবাইয়ে সাফায়া ৩২ নামের প্রোপার্টি আমাদের বলা হচ্ছে। সেটি আসলে ইনটেলেকচুয়াল প্রোপার্টি। এই ভবন নির্মাণে বাংলাদেশ থেকে কোনো টাকা নেওয়া হয়নি। আমরা শুধু অ্যাপার্টমেন্ট বিক্রির পার্টনার হয়েছি, যে চুক্তি ২০২৪ সালের ২ জুলাই করা হয়েছে। সেই চুক্তিনামা আমাদের কাছে আছে। অর্থাৎ আয়কর আইন অনুযায়ী এখনো প্রোপার্টির বিস্তারিত আয়কর আইনে দেখানোর সুযোগ আছে। তাই এটিকে এখনই কর ফাঁকি বলা যাবে না।’
কর ফাঁকি দেওয়া প্রসঙ্গে নাহিয়ান বলেন, ‘আমরা ব্যবসা করি। আইন-কানুন কম জানি। আমাদের ভুল হতেই পারে। কিন্তু এনবিআর আমাদের ফার্ম ক্যাটাগরিতে সর্বোচ্চ করদাতা হিসেবে ট্যাক্স কার্ড দিলেও তারাই এখন আবার বলছে, আমাদের ব্যবসার ধরন প্রোপ্রাইটারশিপ। ভুল আমরা করলেও ভুল তো তাদেরও আছে। আমাদের ভুলের শাস্তি তারা দিচ্ছে, তাদের ভুলের শাস্তি কে দেবে?’
সম্পর্কিত খবর
পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ৩০-৩১ মার্চ ও ১ এপ্রিল কালের কণ্ঠ বন্ধ থাকবে। তাই ৩১ মার্চ এবং ১-২ এপ্রিল পত্রিকা প্রকাশিত হবে না। পবিত্র ঈদুল ফিতর ১ এপ্রিল হলে ৩ এপ্রিলও পত্রিকা প্রকাশিত হবে না। তবে ঈদের ছুটিতে কালের কণ্ঠ অনলাইন চালু থাকবে।
— সম্পাদক
বকেয়া বেতন ও বোনাসের দাবিতে টিএনজেড গ্রুপের শ্রমিক-কর্মচারীরা গতকাল বিজয়নগরে শ্রমসচিবের গাড়ির সামনে বসে পড়েন।ছবি : কালের কণ্ঠ
।দেশে জরুরি অবস্থা জারির উসকানি দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর। ভারতের সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডেকে দেওয়া বক্তব্যে তিনি এই উসকানি দেন।
গত বৃহস্পতিবার ‘বাংলাদেশ সেনাপ্রধানের মনে কী আছে’ (‘হোয়াট’স অন বাংলাদেশ’স আর্মি চিফ’স মাইন্ড?’) শিরোনামে ইন্ডিয়া টুডেতে একটি সংবাদ বিশ্লেষণ প্রকাশিত হয়। সেখানে মূলত সেনাপ্রধান বাংলাদেশের রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়বেন কি না, তা নিয়ে বিশ্লেষণ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ নিয়ে কাজ করা বিবিসি ও রয়টার্সের সাবেক সাংবাদিক সুবির ভৌমিকের লেখায় বলা হয়, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান একজন রক্ষণশীল ও পেশাদার কর্মকর্তা, যিনি সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে বিস্তারিত বিশ্লেষণ করেন। তাঁর সহকর্মীরা জানান, তিনি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন, বাংলাদেশে সামরিক শাসন কার্যকর নয়। ইতিহাস, বিশেষ করে পাকিস্তানি সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের অভিজ্ঞতা তাঁকে এই দৃষ্টিভঙ্গি দিয়েছে।
জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার তুর্কের উদ্ধৃতি দিয়ে সেখানে বলা হয়েছে, জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে কঠোর দমন-পীড়ন না চালাতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে জাতিসংঘ সতর্ক করেছিল এবং তা কার্যকর হয়েছিল।
তবে ওয়াকার সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। তিনি গুলি চালানোর অনুমতি দেননি এবং শেখ হাসিনা ও তাঁর উপদেষ্টাদের নিরাপদে বেরিয়ে যাওয়ার সুযোগ দেন।
সম্প্রতি কিছু ব্লগার ও অভ্যুত্থানের ছাত্রনেতারা অভিযোগ করেছেন, জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান ভারতের প্রতি অনুগত এবং তিনি আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের চেষ্টা করছেন। তবে সেনাপ্রধানের ঘনিষ্ঠরা বলেন, তিনি কোনো গোষ্ঠীর অনুগত নন, বরং তিনি পেশাদার ভারতীয় সেনাবাহিনীকে অনুকরণ করে রাজনীতির বাইরে থাকতে চান।
এদিকে সেনাপ্রধান চাইলে দেশে জরুরি অবস্থা জারিতে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনকে সমর্থন দিতে পারেন বলে মনে করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী তানিয়া আমীর।
আওয়ামী লীগপন্থী এই আইনজীবী বলেন, ‘রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন সংবিধানের ১৪১ অনুচ্ছেদ ব্যবহার করে জরুরি অবস্থা জারি করতে পারেন; আর এ ক্ষেত্রে সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান তাঁকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন করতে পারেন। এর ফলে রাষ্ট্রপতি অন্তর্বর্তী সরকার বাতিল করে দ্রুত ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনের আয়োজন করতে পারবেন। সেনাবাহিনী সন্ত্রাসী ও অপরাধীদের কঠোর হস্তে দমন করতে পারবে এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সঠিক পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারবে।’
তবে তানিয়া আমীরের এমন মন্তব্য উড়িয়ে দিয়েছেন সেনা কর্মকর্তারা।
অন্যদিকে এক অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল, যাঁর অধীনে সেনাপ্রধান আগে চাকরি করেছেন, তিনি বলেন, ‘যদি মনে হয় তাঁকে (সেনাপ্রধান) সরিয়ে দেওয়ার গভীর ষড়যন্ত্র হচ্ছে, তাহলে তিনি কঠোর ভূমিকা পালন করবেন।’
ইন্ডিয়া টুডের সংবাদ বিশ্লেষণে আরো বলা হয়েছে, বাংলাদেশের সেনাপ্রধান সম্প্রতি আফ্রিকা সফর শেষে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘আমাকে এমন কিছু করতে বাধ্য করবেন না, যা আমি করতে চাই না।’ এতে বোঝা যায়, তিনি কঠোর অবস্থানে যেতে বাধ্য হতে পারেন, যদি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।
উল্লেখ্য, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কুষ্টিয়া-৪ আসন থেকে আওয়ামী লীগের হয়ে নির্বাচন করতে মনোনয়নপত্র কিনেছিলেন ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর। তাঁর বাবা ব্যারিস্টার আমীর-উল-ইসলাম কিনেছিলেন কুষ্টিয়া-৩ আসনের জন্য।
প্রতিবছর পবিত্র রমজান মাসকে কেন্দ্র করে অসাধু মুনাফালোভী ব্যবসায়ীরা বাজার অস্থিতিশীল করে তোলেন। রমজান এলেই মাছ-মাংস, শাক-সবজি থেকে শুরু করে কয়েকটি পণ্যের দাম বাড়তে বাড়তে দ্বিগুণেরও বেশি হয়ে যায়। বিশেষ করে রোজার ভোগ্যপণ্য হিসেবে পরিচিত ছোলা, খেজুর, ডাল, পেঁয়াজ, রসুন, চিনির বাজারে অস্থিরতা তৈরি হয়। বছরের পর বছর ধরে এমন চিত্রই দেখে আসছে দেশবাসী।
রমজান মাসে ভোগ্যপণ্যের সরবরাহ বৃদ্ধি এবং পণ্যের দাম কমানোকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে নানামুখী পদক্ষেপ নেয় অন্তর্বর্তী সরকার। ফলে এবার রমজানে নিত্যপণ্যের বাজারে স্বস্তি এসেছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিগত সরকারের টানা ১৫ বছরের শাসনামলে অসাধু ব্যবসায়ীদের যে সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছিল তা এখন ভেঙে গেছে। এ ছাড়া এ বছর রমজান সামনে রেখে ট্যাক্স-ভ্যাট কমার পাশাপাশি পণ্য আমদানি বেড়েছে, যার সুফল মিলছে বাজারে।
বাজারসংশ্লিষ্টরা বলছেন, আমদানি বাড়ানো ও মূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে ভোজ্যতেল, ছোলা, চিনি, পেঁয়াজ, আলু, খেজুরসহ বিভিন্ন পণ্যে শুল্ক ছাড় দেওয়া হয়। সব মিলিয়ে আমদানিতে উৎসাহ বাড়ায় এবার ব্যাপক হারে ভোগ্যপণ্য আমদানি করেছেন আমদানিকারকরা। এতে গত বছরের তুলনায় কিছুটা কমে বিক্রি হয়েছে ছোলা, পেঁয়াজ, চিনি, দেশি রসুন, আলু ও আদাসহ কয়েকটি পণ্য। সবজি ও মুরগির বাজারেও কিছুটা স্বস্তি ছিল।
এবার রমজানে পেঁয়াজ ও আলু গত বছরের তুলনায় অর্ধেক দামে বিক্রি হচ্ছে।
গত রমজানে রাজধানীর খুচরা বাজারে দেশি পেঁয়াজ কেজি ১২০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে। এবার বিক্রি হচ্ছে মাত্র ৩৫ থেকে ৪০ টাকা কেজিতে। আলু বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ৩০ টাকায়, যা গত বছর রমজানে বিক্রি হয় ৪০ টাকা কেজি। পাকা টমেটো কেজি ২৫ থেকে ৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা গত বছর বিক্রি হয় মানভেদে ৫০ থেকে ৬০ টাকায়। এখন ঈদ ঘিরে মুরগির দাম বাড়লেও রোজার শুরু থেকে মাঝামাঝি পর্যন্ত অনেকটাই সহনীয় দরেই এবার মুরগি বিক্রি হয়। প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৯০ টাকা এবং সোনালি মুরগি ২৮০ থেকে ৩০০ টাকায় বিক্রি হয়। ঈদ উপলক্ষে এখন মুরগির দাম কিছুটা বেড়ে যাওয়ায় ব্রয়লার মুরগি কেজি ২১০ থেকে ২২০ টাকা এবং সোনালি মুরগি কেজি ৩০০ থেকে ৩৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত বছর রোজায় ব্রয়লার মুরগি কেজি ছিল ২৩০ থেকে ২৪০ টাকা, রোজার আগে আগে যা ২৫০ টাকা পর্যন্ত উঠেছিল। দাম কমে চিনি কেজি ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা গত বছর ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টার ডেপুটি প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার জানিয়েছেন, গত বছরের রমজানের তুলনায় এ বছর বেশির ভাগ পণ্যের দাম কমেছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের তালিকায় রয়েছে গম, ডাল, মুরগি, ডিম, মাছ, সয়াবিন, পামঅয়েল, চিনি, লবণ, আলু, টমেটো, মরিচ, পেঁয়াজ, আদা, রসুন ও হলুদ।
বাণিজ্য উপদেষ্টা সেখ বশির উদ্দিন বলেছেন, প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ায় এবার রমজানে বাজারে পণ্যের দাম সহনীয়।
এদিকে এবার রোজায় পণ্যের দাম সহনীয় রাখতে সরকারের একাধিক সংস্থা মাঠে আছে। সংস্থাগুলো হলো বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মনিটরিং সেল, র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, খাদ্য মন্ত্রণালয়, কৃষি মন্ত্রণালয়, শিল্প মন্ত্রণালয়, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি), কৃষি বিপণন অধিদপ্তর, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ, সিটি করপোরেশন ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর মনিটরিং টিম। এ ছাড়া নিত্যপণ্যের বাজারে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার নজরদারিও করা হচ্ছে।