<h3><span style="color:#e74c3c;">জন্ম নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলার কাজলা গ্রামে। ১১ নম্বর সেক্টরের কমান্ডার কর্নেল আবু তাহের তাঁর বড় ভাই। একাত্তরে ভারতের তুরা থেকে দুই মাসের ট্রেনিং শেষে এক্সপ্লোসিভের ওপর বিশেষ ট্রেনিংও সমাপ্ত করেন।  মুক্তিযুদ্ধ করেছেন ১১ নম্বর সেক্টরের হালুয়াঘাটের ঘোষগাঁও বিওপি এলাকায়</span></h3> <p>হালুয়াঘাটের ঘোষগাঁওয়ে পাকিস্তানি সেনাদের বিওপিতে সাপ্লাই আসা বন্ধ করতে হবে। কিভাবে? ওখানে রাস্তায় একটি ব্রিজ আছে। সেটি উড়িয়ে দিলেই সাপ্লাই লাইন কাট অফ হবে। এক্সপ্লোসিভ এক্সপার্ট হওয়ায় এ দায়িত্ব দেওয়া হয় আমাকে।</p> <p>আলম নামে চট্টগ্রামের একটি ছেলেকে নিই সঙ্গে। ক্যালকুশেন করে এক্সপ্লোসিভ নিয়ে বাহারকে (শাখাওয়াত হোসেন বাহার, বীরপ্রতীক) বললাম, সাপোর্টিং ফায়ার দেবে তোমরা। রাত ১২টায় হেঁটে ব্রিজের কাছে পৌঁছে যাই। ব্রিজের দুই পাশে কয়েকজন পাকিস্তানি আর্মি পাহাড়ারত ছিল। বাহাররা ফায়ার ওপেন করতেই ওরা পালিয়ে যায়। তখন পানিতে নেমে আমরা ব্রিজে এক্সপ্লোসিভ ও ডেটোনেটর সেট করে করটেক্স নিয়ে এসে ফিউজ জোড়া দিই তীরে বসে। এর পরই ধুম করে উড়িয়ে দিই ব্রিজটাকে। সফল অপারেশন ছিল ওটা। এরপর সেক্টর গঠন হলে চলে যাই এগারো নম্বর সেক্টর হেডকোয়ার্টার মহেন্দ্রগঞ্জে।</p> <p>কামালপুর এবারের অপারেশনটা ভিন্ন রকমের। আমাদের সঙ্গে এসে যুক্ত হয় ভারতের মারাঠা রেজিমেন্ট, গুর্খা রেজিমেন্ট আর গার্ড রেজিমেন্ট। সবগুলোর কমান্ডে ছিলেন ব্রিগেডিয়ার ক্লেয়ার। সিদ্ধান্ত হয় অপারেশনটির নেতৃত্ব দেবেন সেক্টর কমান্ডার কর্নেল আবু তাহের।</p> <p>১৩ নভেম্বর ১৯৭১। রাত ১২টার পরই অর্থাৎ ১৪ নভেম্বর কামালপুর অ্যাটাক করা হবে। বলা হলো কর্নেল তাহেরের কোড হবে ‘কর্তা’। রাত ১১টায় রওনা হলাম। কামালপুরের আগেই বানরোড। তারও পেছনে কর্নেল তাহেরের কমান্ড পোস্ট। আমরা ওখানেই পজিশন নিই। পাশেই ব্রিগেডিয়ার ক্লেয়ার, গুর্খা রেজিমেন্টে কর্নেল বারাখ, মারাঠা রেজিমেন্টের কর্নেল বুলবুল, গার্টস রেজিমেন্টের বারাট।</p> <p>আর্টিলারি ফায়ারের পর শুরু হবে অপারেশন। রাত তখন ১২টা। মুহুর্মুহু শেল ড্রপিং হচ্ছে কামালপুর বিওপির ওপর। পাকিস্তানি সেনারাও ফায়ার করছে। ট্রেসার ফায়ারও যাচ্ছে।  কর্নেল তাহেরের কাছে একটা ওয়াকিটকি। সেখানে লেফটেন্যান্ট মিজান জানাল, ‘কর্তা আমরা পাকিস্তানিদের প্রথম লাইনের বাংকার দখল করে নিয়েছি।’ </p> <p>রাত তখন ৩টার মতো। ওয়াকিটকিতে কর্নেল তাহের বারবার বলছিলেন, ‘মিজান, তুমি কোথায়?’ ওপাশে কোনো সাড়া নেই। ভোর হয়ে আসছে। হঠাৎ উনি কমান্ড পোস্ট থেকে উঠে সামনে রওনা হন। সঙ্গে আমরাও।</p> <p>বানরোডের কাছে গিয়ে বর্ডার ক্রস করি। তাহের ভাই পজিশন নিয়ে নিয়ে এগোয়। বানরোডের ঢালে এসে বসলেন দুই পা ভাঁজ করে। এক পাশে আমি, আরেক পাশে বাহার, পেছনে তিন-চারজন পজিশনে। কর্নেল তাহের কলফ স্টিক দিয়ে পাকিস্তানিদের দেখালেই, ওদিকে ফায়ার দিচ্ছি। এর মধ্যেই হঠাৎ একটা আওয়াজ হলো। খেয়াল করলাম কর্নেল তাহের আমার ওপর পড়ে যাচ্ছেন। দেখলাম তার বাঁ পা-টা প্রায় বিচ্ছিন্ন, দু-তিনটা ভেইনের সঙ্গে ঝুলে আছে কোনো রকমে। </p> <p>উনাকে ধরতে গেলে উনি বলেন, ‘আমার কিছু হয়নি। তোমরা যুদ্ধটা চালিয়ে যাও।’ রক্ত গিয়ে কর্নেল তাহের নিস্তেজ হয়ে যাচ্ছেন। আমি তখন ভুল করে ওয়াকিটকিতে বলে ফেললাম, ‘কর্তা ইজ ডেড।’</p> <p> </p> <p> </p> <p> </p>