<p>বিটকয়েন এক ধরনের ক্রিপ্টোকারেন্সি। ক্রিপ্টো মানে গোপন, আর কারেন্সি মানে মুদ্রা। সহজে বলতে গেলে গোপন মুদ্রা, যা ধরা যায় না, ছোঁয়াও যায় না। নেই কোনো নিজস্ব মূল্যমান। একে ডিজিটাল মুদ্রা, ভার্চুয়াল মুদ্রা বা অনলাইন কারেন্সিও বলা হয়। এর লেনদেনের জন্য কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠান বা নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনও হয় না।</p> <p>২০০৮ সালে সাতোশি নাকামোতো নাম দিয়ে অজ্ঞাত কয়েকজন ব্যক্তি এটি উদ্ভাবন করেন। সাতোশি বলা হয় বিটকয়েনের সর্বনিম্ন একককে। এক কোটি সাতোশিতে হয় এক বিটকয়েন। লেনদেন হয় গ্রাহক থেকে গ্রাহকের ডিভাইসে। তৈরি হয় অনলাইন মাইনিং পদ্ধতিতে। হিসাব রাখা হয় ব্লকচেইন প্রযুক্তির মাধ্যমে, যা হ্যাক করা অসম্ভব বলে দাবি করা হয়। এ পর্যন্ত তাদের ব্লকচেইন ডাটা বেইসে এক লাখ ৪৮ হাজার ৯৪৫ মেগাবাইট ডাটা জমা হয়েছে।</p> <p>বিটকয়েন সংগ্রহ করা যায় দুইভাবে—১. মাইনিংয়ের মাধ্যমে; ২. ক্রয় করে। মূলত শক্তিশালী কম্পিউটারের মাধ্যমে কিছু গাণিতিক জটিলতা দ্রুত সমাধান করাকেই মাইনিং বলে।</p> <p>ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক বি এম মইনুল হোসেন বলেন, বিটকয়েন মাইনিং বলা হয়—মাইনিং হচ্ছে মূলত কিছু গাণিতিক জটিলতা সমাধান করার নাম। সবাই একসঙ্গে ওই গাণিতিক জটিলতা সমাধান করতে চায়। ধরুন, এক হাজার জন একসঙ্গে সমাধানের চেষ্টা করে একজনই সেখান থেকে বিজয়ী হবে, যে সবার আগে সমাধান করতে সক্ষম হয়েছে। এখানে সবার লোকসান হবে। শুধু বিজয়ী ব্যক্তিই কয়েন পেয়ে যাবে। এভাবে মাইনিং করে বিটকয়েন তৈরি হয়।</p> <p>সংরক্ষণ করা হয় ইলেকট্রনিক বিশেষ পন্থা  ই-ওয়ালেটের মাধ্যমে। বেচাকেনার মাধ্যম হিসেবেও ব্যবহৃত হয় ই-ওয়ালেট।</p> <p>বিশ্বের শ্রেষ্ঠ ধনী বিল গেটস বিটকয়েনকে মনে করেন ভবিষ্যৎ পৃথিবীর অর্থ; কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এই কয়েন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। কেননা রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দাঁড়াতে যাচ্ছে বিটকয়েন। শুধু তা-ই নয়, এর নিয়ন্ত্রণ করাও অসম্ভব। কারণ বিটকয়েনের লেনদেনের ক্ষেত্রে লেনদেনকারীর সব তথ্য কঠোরভাবে গোপন করা হয়। ফলে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষেও লেনদেনকারীকে শনাক্ত করা সম্ভব নয়। এর মাধ্যমে মানুষের লেনদেনের গোপনীয়তা বাড়ছে মনে হলেও এর অসদ্ব্যবহার হওয়ার আশঙ্কাই বেশি। কারণ বিভিন্ন মাফিয়া, অপহরণকারী এটি ব্যবহার করে মানুষের অর্থ লুটে নেবে; কিন্তু তাদের শনাক্ত করা সম্ভব হবে না।</p> <p>জুয়া, মাদক, অস্ত্র কেনাবেচা, অপহরণ কিংবা অর্থপাচার—বিটকয়েন এখন অপরাধীদের কাছে সবচেয়ে প্রিয়। গোপনীয়তার কারণে সারা বিশ্বের কালো টাকার মালিকরা বিটকয়েনে বেশি আগ্রহী হচ্ছে।</p> <p>পালাস রিসার্চ সেন্টারের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘আমার কাছে মনে হয় বিটকয়েন জুয়া খেলার মতো। ওই মানসিকতা নিয়ে অনেকে এগুলোকে কেনে যে এর দাম বাড়বে। বিটকয়েনের সর্বোচ্চ ব্যবহার হয় ক্যাসিনোতে, ড্রাগ আর স্মাগলিংয়ে।</p> <p>তুরস্কের ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়, মিসরের কেন্দ্রীয় ফতোয়া বিভাগ, ফিলিস্তিনের কেন্দ্রীয় ফতোয়া বিভাগ, আন্তর্জাতিক ইসলামী বিদ্যাপীঠ দারুল উলুম দেওবন্দের ফতোয়া বিভাগ ও ইসলামিক ইকোনমিক ফোরাম নামক ইসলামিক স্কলারদের একটি অনলাইন গ্রুপ বিটকয়েনকে নাজায়েজ ফতোয়া দিয়েছে।</p> <p>তা ছাড়া বিটকয়েন প্রকাশকের অজ্ঞতা, এর ভবিষ্যৎ বিষয়ে অজ্ঞতা, এর প্রাতিষ্ঠানিক কোনো প্রকাশক না থাকা, কোনো নির্দিষ্ট দায়িত্বশীল না থাকা, রাষ্ট্রীয় তত্ত্বাবধান ও পর্যবেক্ষণ না থাকা, ব্যাপকভাবে স্প্যাকুলেশন হওয়ায় এর মূল্য স্থির না থাকা এবং আইনবহির্ভূত কাজে অধিক ব্যবহৃত হওয়ায় এটি ইসলামের দৃষ্টিতে মূল্যমানবিশিষ্ট (মালে মুতাকাওয়্যিম) হয় না; সঙ্গে জুয়া তো আছেই।</p> <p>বিশ্বের কোনো দেশেই সরকারিভাবে স্বীকৃতি পায়নি বিটকয়েন; যদিও এত প্রতিকূলতার মাঝেও বিশ্বের বড় বড় অসাধু ব্যবসায়ীর হাত ধরে এরই মধ্যে তারা একটি শক্ত অবস্থান করে নিতে সক্ষম হয়েছে।</p>