আধুনিক ও মোগল স্থাপত্যরীতিতে মেকুরটারী শাহী মসজিদ

হাবিবা রহমান উজরা
হাবিবা রহমান উজরা
শেয়ার
আধুনিক ও মোগল স্থাপত্যরীতিতে মেকুরটারী শাহী মসজিদ

বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী জেলা কুড়িগ্রামে অবস্থিত মেকুরটারী শাহী মসজিদ। জেলার রাজারহাট উপজেলার রাজারহাট ইউনিয়নেই তার অবস্থান। মসজিদে কোনো শিলালিপি উদ্ধার করা যায়নি, তাই সুনির্দিষ্ট করে তার বয়সকাল নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি। তবে স্থাপত্যশৈলীতে মোগল স্থাপত্যরীতির সঙ্গে মিল থাকায় ধারণা করা হয় মসজিদ কমপক্ষে দুই শ বছরের পুরনো।

মোগলরীতি অনুসারে মসজিদের সামনে একটি দিঘিও আছে। রাজারহাট ইউনিয়ন পরিষদ থেকে এক কিলোমিটার পূর্ব দিকে মেকুরটারী মৌজার ব্যাপারীপাড়া গ্রামে শাহী মসজিদ অবস্থিত হওয়ায় মসজিদটিকে স্থানীয়ভাবে ব্যাপারীপাড়া শাহী মসজিদও বলা হয়। কথিত আছে, প্রায় তিন শ বছর আগে গ্রামের জমিদার ছমির উদ্দীন ব্যাপারী পায়ে হেঁটে হজ পালন করে আসেন এবং মসজিদ নির্মাণ করেন।

মসজিদটির দৈর্ঘ্য ৩২ ফুট প্রস্থ ১০ ফুট।

চারপাশে তিন ফুট উঁচু প্রাচীর দ্বারা সুরক্ষিত। মসজিদের সামনে রয়েছে তিনটি দরজা, একটি সুদৃশ্য প্রবেশ তোরণ, দুটি মিনার এবং চার কোনায় চারটি উঁচু মিনার আছে। এই মিনারগুলোর পাশে আরো আটটি ছোট মিনার আছে । ছাদের মাঝে তিনটি বড় আকৃতির গম্বুজ আছে।
তবে সঠিক সংরক্ষণে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ না করা ও আরো নতুন স্থাপনা তৈরি হওয়ায় জৌলুস হারিয়েছে মেকুরটারী শাহী মসজিদ, অস্তিত্ব সংকটাপন্ন হয়ে উঠছে তার। স্থানীয় সূত্রের দাবি, এরই মধ্যে মসজিদের গম্বুজ তিনটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বর্ষাকালে দেয়াল চুষে পানি জমে মসজিদের ভেতর। ফলে বাধ্য হয়ে স্থানীয় মুসল্লিরা মসজিদটির পুরনো ভবন ঠিক রেখে বারান্দার পাশ দিয়ে নতুন ভবন নির্মাণ করেছেন। এলাকাবাসী মনে করে, বাংলাদেশ সরকারের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করলে তিন শতাব্দীকালের প্রাচীন মসজিদটির ঐতিহ্য সংরক্ষণ করা সম্ভব হবে।

     সূত্র : রাজারহাট ইউনিয়নের সরকারি ওয়েবসাইট ও উইকিপিডিয়া

 

 

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

কোরআন থেকে শিক্ষা

    পর্ব, ৭৪৮
শেয়ার
কোরআন থেকে শিক্ষা

আয়াতের অর্থ : ‘আল্লাহ মুশরিকদের বলবেন, তোমরা যা বলতে তারা তা মিথ্যা সাব্যস্ত করেছে। সুতরাং তোমরা শাস্তি প্রতিরোধ করতে পারবে না এবং সাহায্যও পাবে না। তোমাদের মধ্যে যে সীমা লঙ্ঘন করবে, আমি তাকে মহাশাস্তি আস্বাদ করাব। তোমার পূর্বে আমি যেসব রাসুল প্রেরণ করেছি, তারা সাবই তো আহার করত এবং হাটবাজারে চলাফেরা করত।

...(সুরা : ফুরকান, আয়াত : ১৯-২০)

আয়াতদ্বয়ে ঈমানের আহ্বানে সাড়া দেওয়া না দেওয়ার পরিণতি বর্ণনা করা হয়েছে।

শিক্ষা ও বিধান

১. পরকালে মিথ্যা উপাস্যরা উপাসকদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবে। ফলে তাদের জন্য জাহান্নাম অবধারিত হয়ে যাবে।

২. ঈমান ও ইসলামের আহ্বান মানুষের জন্য পরীক্ষাস্বরূপ।

যারা সাড়া দেয় তারা মুক্তি পায় এবং যারা প্রত্যাখ্যান করে তারা ধ্বংস হয়।

৩. হাদিসে কুদসিতে আল্লাহ বলেন, ‘হে রাসুল! আমি আপনাকে এবং আপনার দ্বারা অন্যকে পরীক্ষা করব।’

৪. রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, তাঁকে নবী ও বাদশাহ এবং রাসুল ও বান্দা হওয়ার ইচ্ছাধিকার দেওয়া হয়। তিনি রাসুল ও বান্দা হওয়াকে বেছে নেন।

৫. আল্লাহ নবী-রাসুলকে অঢেল সম্পদ ও প্রবল ক্ষমতার অধিকারী করেননি, যাতে মানুষ বলতে না পারে যে সম্পদের লোভ ও ক্ষমতার প্রভাবে মানুষ তাঁর অনুসরণ করেছে। (তাফসিরে ইবনে কাসির : ৮/১৯৩)

 

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

মনীষীদের কথা

শেয়ার
মনীষীদের কথা

আমলের মাধ্যমে ইলম (দ্বিনি জ্ঞান) সজীব হয় যদি তা আল্লাহর দরবারে কবুল হয়, নতুবা তা মানুষের জন্য বোঝা হবে।

আলী ইবনে আবি তালিব (রা.)

 

মন্তব্য

প্রশ্ন-উত্তর

    সমাধান : ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার বাংলাদেশ, বসুন্ধরা, ঢাকা
শেয়ার
প্রশ্ন-উত্তর

নামাজে নারীদের পা দেখা গেলে কি নামাজ ভাঙবে?

প্রশ্ন : অনেক সময় নামাজ পড়ার সময় নারীদের পা খুলে যায়। কিছু অংশ দেখা যায়। আমার প্রশ্ন হলো, নামাজ পড়া অবস্থায় নারীদের পা কি সতর? সতর হলে কতটুকু দেখা গেলে নামাজ ভেঙে যাবে?

মুহসিন, ময়মনসিংহ

উত্তর : বিশুদ্ধ ও আমলযোগ্য মত অনুসারে নামাজে নারীদের পা সতরের অন্তর্ভুক্ত নয়। তাই পা খোলা থাকলেও নামাজ শুদ্ধ হয়ে যাবে।

(আল হিদায়া : ১/৭৬, আদ্দুররুল মুখতার : ১/৬৬)

 

মন্তব্য

মুসলমানের পরিচয় ও উৎসবের স্বাতন্ত্র্য

ড. আবু সালেহ মুহাম্মদ তোহা
ড. আবু সালেহ মুহাম্মদ তোহা
শেয়ার
মুসলমানের পরিচয় ও উৎসবের স্বাতন্ত্র্য

মানুষের জীবনে নিজেকে প্রকাশ করার মতো বিভিন্ন পরিচয় থাকে; যেমনভাষার পরিচয়ে আমরা বাঙালি। ভূখণ্ডের পরিচয়ে আমরা বাংলাদেশি। এ ছাড়া পেশার ভিত্তিতে আমাদের বহুমুখী পরিচয় রয়েছে; যেমনশিক্ষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, ব্যবস্থাপক, হিসাবরক্ষক, কৃষক, শ্রমিক, কামার, কুমার ইত্যাদি। মানুষ সাধারণত পেশাভিত্তিক পরিচয়ে নিজেদের প্রকাশ করতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে।

এসব পরিচয় সাময়িক ও ক্ষণস্থায়ী। আমাদের আরেকটি মূল পরিচয় রয়েছে, সেটি হলো ধর্মের পরিচয়। অর্থাৎ আমরা মুসলমান। ইসলাম আল্লাহ কর্তৃক মনোনীত দ্বিন।
এই পরিচয়টি মানুষের জন্য চিরস্থায়ী। এই পরিচয়ের সঙ্গে অন্যান্য পরিচয় সাংঘর্ষিক হলে সেগুলো ছেড়ে দিতে হবে অথবা সংশোধন করতে হবে। যেমনমুসলমান ও মাদক কারবারি পরিচয় একত্রে হওয়া সাংঘর্ষিক। কারণ ইসলামে ব্যবসা হালাল হলেও মাদকের কারবার হারাম ও নিষিদ্ধ।
মাদক কারবারের মাধ্যমে মুসলমান পরিচয় মিথ্যায়      রূপান্তরিত হয়। ভাষার পরিচয়ে আমরা বাঙালি। ভাষা আল্লাহর দান। সব ভাষাই আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন। ভাষার ভিত্তিতে কেউ শ্রেষ্ঠ বা নিকৃষ্ট হতে পারে না।
কাজেই আমাদের বাংলাভাষী হওয়া বা বাঙালি হওয়ার বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে কিংবা যেকোনো উৎসব পালনে এমন কোনো কাজ কাম্য হতে পারে না, যা মুসলমান হিসেবে পরিচয় দিতে বাধা হয়ে দাঁড়ায় অথবা ইসলামের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হয়। মুসলমান পরিচয় কলুষিত হওয়ার কয়েকটি বিষয় নিম্নরূপ

প্রাণীর চিত্র বা প্রতিকৃতি ধারণ করা : কোনো প্রাণীর চিত্রাঙ্কন ইসলামে অনুমোদিত নয়। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেন, কিয়ামতের দিন মানুষের মধ্যে সবচেয়ে কঠিন শাস্তি প্রদান করা হবে তাদের, যারা প্রাণীর চিত্র অঙ্কনকারী।

(বুখারি, হাদিস : ৫৬০৬)

আবার চিত্রাঙ্কনের মতো ইট, পাথর, মাটি বা অন্য কিছুর মাধ্যমে প্রাণীর প্রতিকৃতি নির্মাণও ইসলামে বৈধ নয়। আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেন, এই প্রতিকৃতি নির্মাতাদের কিয়ামতের দিন আজাবে নিক্ষেপ করা হবে এবং তাদের সম্বোধন করে বলা হবে, যা তোমরা সৃষ্টি করেছিলে তাতে প্রাণসঞ্চার করো।

(বুখারি, হাদিস : ৫৯৫১)

তবে সৌন্দর্যবর্ধন, স্মৃতিচারণা বা জ্ঞানার্জনের প্রয়োজনে স্তম্ভ, ফলক, মিনার বা অন্য কিছুর প্রতিকৃতি ইসলামী শিল্পকলায় প্রাণীর ভাস্কর্য নির্মাণের বিকল্প হতে পারে। এ ছাড়া বিভিন্ন ধরনের উদ্ভিদ, ফুল-পাতা, নদ-নদী, প্রাকৃতিক দৃশ্য, জড় পদার্থ, মসজিদ ইত্যাদির চিত্রাঙ্কন ইসলামী শিল্পকলায় ব্যবহৃত হয়ে থাকে। পোশাক, পর্দা, মাদুর, কার্পেট ইত্যাদিতে এ ধরনের চিত্রের ব্যবহার হতে পারে।

বিজাতীয় সংস্কৃতি গ্রহণ : প্রত্যেকে যার যার বিশ্বাস অনুযায়ী উৎসব পালন করবেএটাই স্বাভাবিক। যেকোনো উৎসব পালন ও আচার-অনুষ্ঠানে বিজাতীয় সংস্কৃতি মুসলমানদের জন্য পরিত্যাজ্য বিষয়। ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি কোনো জাতির সাদৃশ্য অবলম্বন করবে সে তাদের দলভুক্ত বিবেচিত হবে। (আবু দাউদ, হাদিস : ৪০৩৩)

অশ্লীলতা পরিত্যাজ্য : বর্ষবরণ উদযাপন করতে নানা রকম অশ্লীলতা, নগ্নতা, মদপান, তরুণ-তরুণীর যৌন উন্মাদনাসহ বিভিন্ন অনৈতিক কর্মকাণ্ডের সংবাদ পাওয়া যায়, যেগুলো ইসলামের দৃষ্টিতে গুরুতর অপরাধ। ইসলামে কোনো ধরনের অনৈতিক ও অনর্থক কর্মকাণ্ডের সুযোগ নেই। আল্লাহ বলেন, আল্লাহ ন্যায়পরায়ণতা, সদাচরণ ও আত্মীয়-স্বজনকে দানের নির্দেশ দেন এবং তিনি নিষেধ করেন অশ্লীলতা, অসৎকর্ম ও সীমালঙ্ঘন; তিনি তোমাদের উপদেশ দেন, যাতে তোমরা শিক্ষা গ্রহণ করো। (সুরা : নাহল, আয়াত : ৯০)

আল্লাহ ছাড়া অন্যের কাছে কল্যাণ কামনা : মুসলমানরা বিশ্বাস করে, কল্যাণ-অকল্যাণ বা মঙ্গল-অমঙ্গলের মালিক মহান আল্লাহ। তাই মহান আল্লাহর কাছে নতুন বছরসহ যেকোনো উৎসবে ইহকালীন ও পরকালীন সুখ, শান্তি, সফলতা ও কল্যাণ কামনা করবে। আল্লাহই বান্দার সুখ, শান্তি, সফলতা ও কল্যাণ প্রদানকারী; অন্য কেউ নয়। কোরআনে এসেছে, আমি কি তাঁর (আল্লাহর) পরিবর্তে অন্যদের উপাস্যরূপে গ্রহণ করব?  করুণাময় যদি আমাকে কষ্টে নিপতিত করতে চান, তাহলে তাদের সুপারিশ আমার কোনোই কাজে আসবে না এবং তারা আমাকে রক্ষাও করতে পারবে না। এমন করলে আমি প্রকাশ্য পথভ্রষ্টতায় পতিত হব। (সুরা : ইয়াসিন, আয়াত : ২৩-২৪)

পরিশেষে বলা যায়, জীবনের সব ক্ষেত্রে মুসলমান পরিচয় ধারণ করাই ঈমানের মূল দাবি। এই পরিচয় কলুষিত হওয়ার মতো কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকতে হবে। মুসলমান পরিচয়ের সঙ্গে অন্য পরিচয় সাংঘর্ষিক হলে সেটি বাদ দিতে হবে অথবা সংশোধন করতে হবে। আল্লাহ আমাদের সেই তাওফিক দান করুন। আমিন।

লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, আরবি বিভাগ

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

 

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ