<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">মহানবী (সা.) তাঁর জীবদ্দশায় পরিচালিত রাষ্ট্রে ইসলামের অর্থনৈতিক বিধান প্রবর্তন ও মাঠ পর্যায়ে তা প্রয়োগ করেছিলেন। যে অর্থনৈতিক শিক্ষা বাস্তবায়নের মাধ্যমে রাষ্ট্রের সব নাগরিকের অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ইত্যাদি সুনিশ্চিত হয়। যার অনুসরণ একটি কল্যাণময় ও বৈষম্যহীন সমাজ বিনির্মাণে যুগান্তকারী সহায়ক হিসেবে কাজ করবে। সব অর্থনৈতিক বৈষম্যের অবসানের সঙ্গে সঙ্গে সামাজিক ভেদাভেদেরও অবসান ঘটবে। </span></span></span></span></span></p> <p> </p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><strong><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">অর্থব্যবস্থায় শ্রেণিবৈষম্য</span></span></span></strong></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">বর্তমান সমাজে প্রচলিত পুঁজিবাদী অর্থব্যবস্থায় শ্রেণিবৈষম্য অত্যন্ত তীব্র ও শক্তিশালী। এই ব্যবস্থায় শ্রমিক, মালিক, প্রভু, ভৃত্য, কর্মকর্তা, কর্মচারী সব ক্ষেত্রে শ্রেণিবৈষম্যের আধিক্য। এ ক্ষেত্রে বিশ্বনবী (সা.)-এর অর্থনৈতিক শিক্ষা সম্পূর্ণ ন্যায্য। রাসুল (সা.) শ্রমিকের ঘাম শুকানোর আগেই তার পারিশ্রমিক পরিশোধের নির্দেশ দিয়েছেন।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">(ইবনে মাজাহ, হাদিস : ২৪৪৩)</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">তিনি বিশ্ব শ্রমিক অধিকারের যে আইনি মূলনীতি ঘোষণা করেছেন তাহলো, তিনি বলেন, </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">তুমি নিজের শ্রমিকের জিম্মা থেকে যতটুকু কাজ হালকা করবে, তোমার মিজানের পাল্লায় সেটুকু নেকি যোগ হবে।</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">’</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">(ইবনে হিব্বান, হাদিস : ৪৩১৪) </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><strong><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">মহানবী (সা.) প্রদর্শিত বৈষম্যহীন সর্বজনীন অর্থব্যবস্থা</span></span></span></strong></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">মহানবী (সা.) মদিনায় যে ইসলামী সমাজ ও রাষ্ট্রের ভিত্তি স্থাপন করেছিলেন, সেখানে মাত্র ১০ বছরে উন্নয়নমুখী, শোষণ ও বৈষম্যমুক্ত অর্থনীতি গড়ে উঠেছিল। সমাজের উঁচু থেকে নিচু শ্রেণি সবার জন্য অর্থনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। সেই অর্থব্যবস্থার কিছু দিক হলো</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">—</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">১. জাকাত<strong> ব্যবস্থা : মহানবী</strong> (সা.) ইসলামী রাষ্ট্রের কোষাগার হিসেবে বায়তুল মাল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, যার অন্যতম আয়ের উৎস ছিল জাকাত। জাকাত হলো ধনীদের সম্পদে গরিবের অধিকার। যার মুখ্য উদ্দেশ্য হলো দারিদ্র্য দূরীকরণ, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং সর্বোপরি অভাব থেকে মানবজাতিকে মুক্ত করে অর্থনৈতিক বৈষম্যহীন, সমৃদ্ধিশালী সমাজ বিনির্মাণ করা। </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><strong><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">২. সদকাতুল ফিতর</span></span></span></strong><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black"> : পবিত্র রমজান মাসে সিয়াম সাধনার পর বিত্তশালীদের ওপর গরিব-দুঃখীদের জন্য নির্দিষ্ট হারে বিশেষ দানের নির্দেশনা হলো সদকাতুল ফিতর। এটা ব্যক্তিগত দান হলেও মহানবী (সা.) মদিনা রাষ্ট্রে তা আদায় করে গরিব-দুঃখীদের মধ্যে বণ্টনের ব্যবস্থা করেছিলেন। </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><strong><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">৩. মিনাহ</span></span></span></strong><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black"> : মিনাহ হচ্ছে দারিদ্র্য দূরীকরণের গুরুত্বপূর্ণ একটি মেকানিজম। এই মেকানিজমে উৎপাদনমুখী কোনো সম্পদ অভাবী দরিদ্রকে একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য প্রতিদান ছাড়া প্রদান করা হয়। </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">৪. সুদ<strong> প্রথার</strong></span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><strong><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">বিলুপ্তি</span></span></span></strong><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black"> : বর্তমান পুঁজিবাদী অর্থব্যবস্থা সুদের ওপর প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে সামাজিক জীবনে শোষণ-বৈষম্যের বিস্তৃতি ঘটেছে। যার মাধ্যমে এক শ্রেণির পুঁজিপতির হাতে সব সম্পদ কুক্ষিগত হতে থাকে এবং গরিবরা ক্রমান্বয়ে আরো গরিব হয়ে ওঠে। এই সুদ হলো সামাজিক শোষণ-বৈষম্যের অন্যতম হাতিয়ার। ইসলাম সুদকে সম্পূর্ণ হারাম ঘোষণা করেছে। ইসলামী রাষ্ট্রব্যবস্থায় মহানবী (সা.) তা প্রদর্শন করেছেন। কোরআনে এসেছে, </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">আল্লাহ ক্রয়-বিক্রয় বৈধ করেছেন এবং সুদকে করেছেন হারাম।</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">’</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black"> (সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ২৭৫)</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><strong><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">৫. মোহর</span></span></span></strong><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black"> : মোহর হলো স্ত্রীর অর্থনৈতিক অধিকার, যা বিবাহের জন্য বাধ্যতামূলকভাবে স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে সম্মাননা হিসেবে প্রদান করা হয়। এই ব্যবস্থা সমাজে নারীর প্রতি বৈষম্যের আচরণকে ভেঙে দেয়। সামাজিক জীবন বৈষম্যহীন ও সৌহার্দ্যপূর্ণ হয়। </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><strong><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">৬. ফারায়েজ</span></span></span></strong><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black"> : ফারায়েজ হলো ইসলামী উত্তরাধিকার আইনে অত্যন্ত ন্যায়ানুগ ও সুবিন্যস্ত পদ্ধতি, যা পালন করা হলে জমিদারি প্রথার বিলুপ্তি ঘটবে। সমাজে দরিদ্রতা বৃদ্ধি পাবে না এবং বৈষম্যহীনভাবে সবাই উপকৃত হবে। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">তাতে (সম্পদে) পুরুষদের জন্য ন্যায্য অংশ আছে, যা তার মা-বাবা, আত্মীয়-স্বজন রেখে গেছে এবং মেয়েদের জন্য তাদের সম্পদে নির্দিষ্ট অংশ রয়েছে, যা তার মা-বাবা ও নিকটাত্মীয় রেখে গেছে। কমবেশি যাই হোক না কেন, তাতে অংশ নির্দিষ্ট করা হয়েছে।</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">’</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">(সুরা : নিসা, আয়াত : ৭)</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">মহানবী (সা.) নির্দেশিত অর্থব্যবস্থা এনে দিতে পারে সুখ-সমৃদ্ধি এবং গড়ে তুলতে পারে বৈষম্যহীন সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থা।</span></span></span></span></span></p> <p> </p> <p> </p>