<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ছোট ও স্থলবেষ্টিত দেশ লাওস। রাজধানী ভিয়েনতিয়েন। পাহাড়-পর্বতের দেশ লাওসের মোট আয়তন ৯১ হাজার ৮৭৫ বর্গমাইল। জনসংখ্যা ৭২ লাখ ৭৫ হাজার ৫৫৬। লাওসের বেশির ভাগ মানুষ বৌদ্ধ ধর্মে বিশ্বাসী। দেশটিতে স্বল্পসংখ্যক মানুষ ইসলাম ধর্মে বিশ্বাস করে। তাদের সংখ্যা কয়েক হাজার বলে ধারণা করা হয়। তবে ইসলাম লাওসের রাষ্ট্র স্বীকৃত চারটি ধর্মের একটি।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ধারণা করা হয়, বিংশ শতাব্দীর শুরুর ভাগে দেশটিতে মুসলমানের আগমন ঘটে। তাদের বেশির ভাগই ছিল তামিলভাষী লাব্বাই ও রাথার। তখন লাওস ফ্রান্সের উপনিবেশ ছিল। ফ্রান্স ভারতের পণ্ডিচেরি থেকে তাদের নিয়ে আসে। তামিল মুসলিমরা লাওসে শ্রমিক ও নিরাপত্তাকর্মী হিসেবে কাজ করত। পরে তাদের সঙ্গে যোগ দেয় পাকিস্তানের সীমান্ত প্রদেশের মুসলিমরা। সীমান্ত প্রদেশের মুসলিমরা ছিল ব্রিটিশ বাহিনীতে কর্মরত এবং প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় তাদের বার্মায় নিয়োগ দেওয়া হয়। কম্বোডিয়া থেকে বহু মুসলিম লাওসে পালিয়ে আসে। ব্যবসার সূত্রে চীন থেকে আসে কিছু মুসলিম পরিবার। এর বাইরে সংখ্যাগরিষ্ঠ লাও, চিন হাও, চ্যামসসহ স্থানীয় জাতি-গোষ্ঠীর কেউ কেউ ধর্মান্তরিত হয়ে মুসলিম হয়েছে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">গত শতকের ষাটের দশকে লাওসে মুসলিম জনসংখ্যা ছিল সাত হাজারের মতো। দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধের কারণে তাদের অনেকেই দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছে। বর্তমানে শতাধিক মুসলিম পরিবার লাওসে বসবাস করে। তাদের মধ্যে বড় একটি অংশই কম্বোডীয় বংশোদ্ভূত। তাদের পরিবারের সংখ্যা ৬১ বলে ধারণা করা হয়। প্রায় চার দশক আগে কম্বোডিয়া থেকে লাওসে মুসলমানের আগমনের সূচনা হয়েছিল শ্রমিক ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী হিসেবে। কিন্তু তাদের বেশির ভাগ এসেছিল ১৯৮০-র দশকের মধ্যভাগে, যখন তাদের প্রিয় মাতৃভূমি খেমাররুজরা দখল করেছিল। কম্বোডীয় বংশোদ্ভূত মুসলিমদের বেশির ভাগই ঐতিহ্যবাহী ভেষজ ওষুধ বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে। তারা কম্বোডিয়া থেকে আমদানি করে। ভিয়েনতিয়েনে কম্বোডীয় বংশোদ্ভূত মুসলিমরা চায়না কলোনির কাছাকাছি এলাকায় বসবাস করে এবং তারা সেখানে ১৯৮৬ সালে একটি মসজিদ নির্মাণ করে। তাদের প্রতিষ্ঠিত আল আজহার মসজিদটি লাওসের তিনটি মসজিদের একটি। মসজিদে একটি মক্তবও আছে। মুসলিম শিশুরা সেখানে কোরআন ও প্রয়োজনীয় দ্বিনি শিক্ষা লাভ করে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">মুসলমানদের মধ্যে সংখ্যার বিচারে পাকিস্তানের সীমান্ত প্রদেশের মুসলিমদের অবস্থান দ্বিতীয়। বর্তমানে তাদের প্রায় ৩০টি পরিবার লাওসে বসবাস করে। এখন তাদের অনেকেই পাকিস্তান ও পশ্চিমা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে চলে যাচ্ছে। পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত বেশির ভাগ মুসলিম লাও নাগরিক। তাদের অনেকেই স্থানীয় লাও নারীদের বিয়ে করেছে। কেউ কেউ সরকারি চাকরিও করছে। অর্থনৈতিকভাবে মুসলিমদের মধ্যে এরা এগিয়ে। এদের অনেকের বিপুল পরিমাণ কৃষিজমি আছে। কাপড় ব্যবসার সঙ্গে জড়িত কয়েকটি পরিবার।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">তৃতীয় স্তরে রয়েছে তামিলভাষী মুসলিমরা। এদের আদি নিবাস দক্ষিণ ভারত। ২০টির মতো তামিল মুসলিম পরিবার সেখানে বাস করে। তাদের বেশির ভাগ প্রসাধনী ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। তারা চীন, ভিয়েতনাম ও থাইল্যান্ড থেকে পণ্য আমদানি করে ব্যবসা করে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">পাকিস্তানি ও তামিল মুসলিমদের উদ্যোগেও একটি মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছে। নাম ভিয়েনতিয়েন জামে মসজিদ। এখানেও একটি মক্তব চালু আছে। সেখানে শিশুদের কোরআন, আরবি ভাষা ও ধর্মীয় বিধি-বিধান শেখানো হয়। এই মসজিদে উর্দু ও তামিল ভাষায় জুমার বয়ান করা হয়। এক সপ্তাহে তামিল এবং অন্য সপ্তাহে উর্দুতে জুমার বয়ান করা হয়। উল্লিখিত দুটি মসজিদের বাইরে আরো একটি মসজিদ নির্মাণের অনুমতি পেয়েছে মুসলিমরা। ২০১৬ সালে তা নির্মাণের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া লুয়াং প্রাবাং প্রদেশে ভারতীয় মুসলিম ব্যবসায়ীরা একটি মসজিদ প্রতিষ্ঠা করেছে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">লাওসে ইসলাম একটি বিকাশমান ধর্ম। ইসলাম প্রচারে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে তাবলিগ জামাত। লাওসের মুসলিমরা উচ্চতর ইসলামী শিক্ষার জন্য সাধারণত মালয়েশিয়ায় যায়। মুসলিমদের সংঘবদ্ধ করতে এবং সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে সব শ্রেণির মুসলিমরা মিলে দ্য মুসলিম অ্যাসোসিয়েশন অব লাওস গঠন করেছে। সংগঠনের প্রধান হাজি মুহাম্মদ রফিক। তিনি বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">লাও সরকারের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক সব সময় ভালো। ধর্ম পালন করতে গিয়ে আমরা কোনো সমস্যার মুখোমুখি হই না। লাওসের মানুষ সাধারণত খুবই ভদ্র ও সহনশীল। এই দেশে বসবাস করতে পারা সত্যিই সৌভাগ্যের বিষয়।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">তথ্যসূত্র : কানতারা ডটডিই, আলজাজিরা ও দাওয়াহ ডটসেন্টার</span></span></span></span></p>