<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">মাত্র ১৫ বছরেই খুলনা সিটি করপোরেশনের (কেসিসি) সদ্য সাবেক মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি তালুকদার আব্দুল খালেকের সম্পদ বেড়ে হয়েছে ৪০০ গুণ। আর এই সম্পদ গড়ার পেছনে উঠে আসছে নামে-বেনামে টেন্ডার, উন্নয়নকাজের ভাগ-বাটোয়ারা, কমিশন বাণিজ্যসহ কলাকৌশলের নিত্যনতুন তথ্য। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">শুধু অর্থবিত্তই নয়, তালুকদার খালেকের ক্ষমতার দাপটে অসহায় ছিলেন খুলনার নগর ভবনের কর্মকর্তা-কর্মচারী থেকে শুরু করে নিজ দলের কর্মীরাও। তাঁর দুর্ব্যবহার ও গালাগালের কারণে কেউ তাঁর সামনে আসতেন না। বিভিন্ন সময়ে তিনি নাম লেখিয়েছেন ব্যাংকের মালিকানায়, আবার কখনো ছিলেন সিরামিক ইন্ডাস্ট্রিজেও। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০০৮ সালের সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দাখিল করা হলফনামায় তালুকদার আব্দুল খালেকের বার্ষিক আয় ছিল মাত্র এক লাখ ৪০ হাজার টাকা। তাঁর কাছে নগদ টাকা ছিল মাত্র ৫৭ হাজার ৫৫০। সম্পদ বলতে ছিল ব্যাংকে জমা ১৬ লাখ ৯৮ হাজার টাকা, সঞ্চয়পত্র ও স্থায়ী আমানতে ২৮ লাখ টাকা। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">একই ব্যক্তির ২০২৩ সালের হলফনামায় দেখা গেছে, বার্ষিক আয় ২৮ লাখ ১৫ হাজার ৭০২ টাকা। নগদ চার কোটি ৭৯ লাখ, চারটি ব্যাংকে জমা এক কোটি ১৮ হাজার টাকা। এর বাইরে ৩.২১ একর কৃষিজমি, তিন কাঠা অকৃষি জমি, রাজউকের পূর্বাচলে একটি, কেডিএর ময়ূরী আবাসিকে একটি, গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের মুজগুন্নী আবাসিকে প্লট রয়েছে।  </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">তালুকদার খালেক খুলনা পৌরসভার মহসিনাবাদ ইউনিয়নে দুইবার কাউন্সিলর হয়ে জনপ্রতিনিধির খাতায় নাম লেখান। এরপর ছিলেন বাগেরহাট-৩ (রামপাল-মোংলা) আসনে চারবারের সংসদ সদস্য ও কেসিসির তিনবারের মেয়র। একবার মেয়র পদে পরাজিত হয়ে খুলনা ওয়াসার চেয়ারম্যান পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১৮ সালে সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নেওয়ার আগে বাগেরহাট-৩ আসন ছেড়ে দেওয়ার পর উপনির্বাচনে তাঁর স্ত্রী হাবিবুন্নাহার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">স্থানীয় সরকার আইন, ২০০৯ (সিটি করপোরেশন) এর ধারা ৯ (২) অনুযায়ী, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">কোনো ব্যক্তি মেয়র বা কাউন্সিলর পদে নির্বাচিত হওয়ার অথবা মেয়র বা কাউন্সিলর পদে থাকবার যোগ্য হবেন না যদি তিনি বা তাঁর পরিবারের কোনো সদস্য সংশ্লিষ্ট সিটি করপোরেশনের কাজ সম্পাদন বা মালপত্র সরবরাহের জন্য ঠিকাদার হন অথবা তারা এ ধরনের কাজে নিযুক্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অংশীদার হন বা সিটি করপোরেশনের কোনো বিষয়ে তাদের কোনো ধরনের আর্থিক স্বার্থ থাকে, অথবা তিনি বা তারা সরকার নিযুক্ত অত্যাবশ্যক কোনো দ্রব্যের ডিলার হন।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> কিন্তু সদ্য সাবেক মেয়র তালুকদার খালেক নানা বিধিমালার ফাঁক-ফোকর খুঁজে পছন্দের ঠিকাদারদের কাজ দিয়ে কোটি কোটি টাকা পকেটে ভরেন বলে অভিযোগ আছে। চালু করেন কমিশন পদ্ধতি। প্রকৌশলী মোহাম্মদ হোসেন ঠিকাদারদের কাছ থেকে ১ শতাংশ জমা নিয়েই শুধু চেক পাস করতেন। আর তাতেই কোটি কোটি টাকা আয় করেন সাবেক মেয়র। তাই খুলনা সিটি করপোরেশনে হাতে গোনা কয়েকটি প্রতিষ্ঠানই একের পর এক কাজ পেয়েছে, বাকিরা বঞ্চিত ছিল।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত কয়েক বছরে হোসেন ট্রেডার্সের সেলিম মুন্সী ১৫-১৬টি, তাজুল এন্টারপ্রাইজের তাজুল ইসলাম ১৫-১৬টি, আজাদ ইঞ্জিনিয়ার্স ১৫-১৬টি, সাঈদ এন্টারপ্রাইজের আবু সাঈদ ৩৫ থেকে ৪০টি, টুটুল অ্যান্ড কোং ৭-৮টি, রোজা এন্টারপ্রাইজ, রহমান অ্যান্ড ব্রাদার্স ৭ থেকে ১০টি কাজ করেছে। গত কয়েক বছরে প্রথমোক্ত তিনটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নামে কাজ হয়েছে প্রায় ৬০ কোটি টাকার। এসব কাজের দেখাশোনার দায়িত্বে ছিলেন ঠিকাদার এইচ এম সেলিম ওরফে সেলিম হুজুর। এর বাইরেও বিদায়ি মেয়র ৫ শতাংশ কমিশনের ভিত্তিতে আরো প্রায় শতকোটি টাকার উন্নয়নকাজ বিক্রি করেছেন। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">নাম প্রকাশ না করে কেসিসির তালিকাভুক্ত ঠিকাদারদের কয়েকজন জানান, টেন্ডারে কী ঘটছে, ওপর থেকে কেউই বুঝত না। কাগজে-কলমেও সব পরিষ্কার। কিন্তু ক্ষতির শিকার হয়েছেন সাধারণ ঠিকাদাররা। এসব ঘটনার তদন্ত চান বঞ্চিতরা। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">অন্যদিকে ক্ষমতাসীন দলের মহানগর কমিটির সভাপতি হওয়ায় তাঁর অপছন্দের দলীয় নেতাকর্মীরা প্রায়ই দুর্ব্যবহার, লাঞ্ছনা ও অশ্লীল গালাগালের শিকার হয়েছেন। সর্বশেষ ২০২৩ সালের সিটি নির্বাচনেও সদ্য দলে যোগ দেওয়া ব্যক্তিদের কাউন্সিলর পদে সমর্থন দেন তিনি।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">নাম প্রকাশ না করার শর্তে বঞ্চিত তিন নেতা কালের কণ্ঠকে জানান, দলের দুর্দিনে কাজ করেও তাঁরা শীর্ষ নেতাদের নজরে আসতে পারেননি। সিটি নির্বাচনে হারাতে তাঁদের ওপর জুলুম করা হয়েছে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সাউথ বাংলা অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান ও বিতর্কিত ব্যবসায়ী আমজাদ হোসেনের লুটপাটের পেছনেও বড় ভূমিকা রাখেন তালুকদার খালেক। এ কারণেই খালেককে বানানো হয় ওই ব্যাংকের ভাইস চেয়ারম্যান। আমজাদ হোসেনের মালিকানাধীন মুনস্টার পলিমার এক্সপোর্ট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালকও ছিলেন তিনি। এক সময়ে শুল্ক ফাঁকির অভিযোগে কম্পানির লাইসেন্স বাতিল ও পাঁচ কোটি টাকা অর্থদণ্ড দেওয়া হলে তিনি পদত্যাগ করে সরে পড়েন। আর এ ঘটনার সংবাদ প্রকাশ করে সাবেক মেয়রের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলায় জেল খাটেন এনটিভির খুলনা প্রতিনিধি আবু তৈয়ব। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সাবেক মেয়র নিজ ক্ষমতায় পারভীন আক্তারকে কাউন্সিলর না থাকা সত্ত্বেও খুলনা ওয়াসায় প্রতিনিধি করেন। স্ত্রী হাবিবুন নাহারকে বাগেরহাট-৩ আসনে এমপি বানান। সর্বশেষ নির্বাচনে এই দম্পতির বিরুদ্ধে ব্যাপক টাকা, সন্ত্রাসী ও প্রশাসনকে ব্যবহারের অভিযোগ করেন প্রতিদ্বন্দ্বী ইদ্রিস আলী। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">কেসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা লস্কর তাজুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আমরা এরই মধ্যে কাজ পাওয়া শীর্ষ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে কালো তালিকাভুক্ত করেছি। কিছু কাজের পুনঃ দরপত্র আহবান করা হয়েছে। অন্যান্য অভিযোগেরও তদন্ত হচ্ছে।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span></span></span></p>