<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">জমি নিয়ে বিরোধের জেরে গত ৩৫ বছরে নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার মুরাদপুর গ্রামের একটি পরিবারের আট সদস্যকে হত্যা করেছে প্রতিপক্ষচক্র। ২০০৩ সালেই চারজনকে হত্যা করা হয়। ১৯৮৯ সাল থেকে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত এসব হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ওই ভুক্তভোগী পরিবারের বেঁচে থাকা বাকি দুই সদস্য বর্তমানে ভয়ে দিন পার করছেন। তাঁরা হলেন শাহিনা আক্তার ও সেলিনা আক্তার। অভিযুক্তদের আইনের আওতায় আনতে না পেরে হতাশায় দিন কাটাচ্ছেন তাঁরা। প্রতিবেশী নুর হাজি পরিবার এবং তাঁর আত্মীয়রা ৪৫ শতাংশ জমি দখল করে নিতে বিরোধের জের ধরে সব হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সম্প্রতি বন্দর থানায় দুটি জিডির পাশাপাশি নিরাপত্তা চেয়ে জেলা পুলিশ সুপারের কাছে আবেদন করেন ভুক্তভোগী শাহিনা আক্তার। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সর্বশেষ নিহত মনিরুজ্জামান মনুকে চলতি বছরের ৭ জুন নিজ বাড়িতে দিবালোকে হত্যা করা হয়। নৃশংস ওই হত্যাকাণ্ডের প্রত্যক্ষদর্শী নিহত মনুর আট বছরের শিশুকন্যা ১৭ সেকেন্ডের একটি ভিডিও ধারণ করে। পরে ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। এ ঘটনায় ৮ জুন মনুর স্ত্রী সাবিনা বেগম বাদী হয়ে মনির, মিঠু, টিটু ও মোহাম্মদ ফারুক, তাদের বাবা নুর ওরফে নুর হাজি, কাওসার, নাঈম, ফরহাদ, ফয়সাল, রায়হান, নুরুল, মোজাম্মেল, ইউনুস ও জনির বিরুদ্ধে বন্দর থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ঘাতকদের ভয়ে স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে গাজীপুর ও নরসিংদীতে থাকতেন সর্বশেষ নিহত মনু। ৬ জুন তাঁর খালা মারা গেলে তিনি স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে সোনারগাঁর কুতুবপুরের বাড়িতে যান। সেখান থেকে তাঁর স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে মুরাদপুরে বাড়ি আসেন। তাঁর উপস্থিতি জানতে পেরে অভিযুক্তরা সকাল ১০টা ৫৫ মিনিটে গুলি ছুড়ে ঘরে ঢুকে এবং তাঁকে ঘর থেকে তুলে আনে। পরে তারা তাঁকে নির্বিচারে মারধর এবং হত্যা করে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">নিহতের বোন শাহিনা আক্তার বলেন, ওই হত্যাকাণ্ডের মামলায় পুলিশ ১১ আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে। তাদের মধ্যে ফরহাদ ও ফয়সাল নামের দুজন নারায়ণগঞ্জ আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">যে আটজনকে হত্যা করা হয়: স্বজন হারিয়ে আতঙ্কে থাকা শাহিনা বলেন, ১৯৮৯ সালের এক সন্ধ্যায় নুর হাজির এক মহিলা আত্মীয় তাঁর মাকে (ফুলমতি বেগম) তাঁদের রান্নাঘর থেকে ডেকেছিলেন। পরদিন মুরাদপুর কবরস্থানে তাঁর মায়ের লাশ পাওয়া যায়। তিনি বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ঘটনার সময় আমরা বুঝতে পারিনি নূর হাজির পরিবার মাকে হত্যা করেছে। তখন অন্যদের দোষারোপ করেছি। পরে মামলা স্থগিত করা হয়। মাকে হত্যার ঠিক এক বছর পর নূর হাজির বাড়ির সামনের রাস্তায় গাড়ির ধাক্কায় তার বাবা কালাম উদ্দিন নিহত হন।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এ ছাড়া ২০০৩ সালে নূর হাজির ছেলেসহ আরো কয়েকজন ঘাতক দিবালোকে তাঁর দুই ভাই মোহাম্মদ বাবুল ও নুরুজ্জামানকে মুরাদপুরে তাঁদের বাড়ির কাছে গুলি করে হত্যা করে। এ ঘটনায় সুরত আলী, রব, হাবিব, আব্দুল মালেক, আব্দুল জলিল, আমান, তালু ও আব্দুর রহিমকে আসামি করে বন্দর থানায় একটি জোড়া খুনের মামলা হয়। মামলাটি বর্তমানে বিচারাধীন। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">শাহিনা জানান, নূর হাজির ছেলে এবং আত্মীয়রা ২০০৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে তাঁর বোন রেহেনা আক্তারকে অপহরণ করেছিল। কিন্তু তাঁর হদিস বা তাঁর লাশ এখনো পাওয়া যায়নি। সে বছর ২৬ ফেব্রুয়ারি হাবিব, মিঠু, জাবেদ, রনি ও কাবিলের বিরুদ্ধে জোড়া খুনের এ ঘটনায় বন্দর থানায় একটি মামলা করা হলেও এখন পর্যন্ত কোনো অগ্রগতি হয়নি। ওই বছরই অক্টোবরে নূর হাজির ছেলে ও আত্মীয়রা তাঁর আরেক বোন নিলুফা আক্তারকে মদনপুর স্ট্যান্ড থেকে অপহরণ করে। পরে তাঁর লাশ নোয়াপুরে ফেলে যায়। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ওই বছরের ৫ অক্টোবর নুর উদ্দিন, জাবেদ, হাবিব, রনি, আমান, কাবিল, সালাউদ্দিন, সফিউদ্দিন ও আলী আহমেদের বিরুদ্ধে বন্দর থানায় হত্যা মামলা হয়। মামলাটি এখন বিচারাধীন। এরপর ২০০৯ সালে ৫ জানুয়ারি শাহিনার বড় ভাই আবুল হোসেন তথাকথিত ক্রসফায়ারে নিহত হন। শাহিনা সন্দেহ করেন, ক্রসফায়ারের নামে পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডের পেছনে নুর হাজি পরিবারের হাত রয়েছে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">শাহিনা অভিযোগ করে বলেন, নুর হাজির পরিবারের কাছ থেকে ঘুষ নিয়ে পুলিশ তাঁর আরেক ভাই মোহাম্মদ কামরুজ্জামানকে গ্রেপ্তার করে অস্ত্র মামলা দেয়। পরে জামিনে কারাগার থেকে বেরিয়ে আসার পর ২০১১ সালের ২৫ নভেম্বর স্ট্রোক করে তিনি মারা যান।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">শাহিনা বলেন, সবাইকে হারিয়ে বর্তমানে তিনি ও তাঁর আরেক বোন সেলিনা বেঁচে আছেন। সর্বশেষ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় করা মামলা তুলে নেওয়ার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। এ বিষয়ে বন্দর থানার ওসি মোহাম্মদ তরিকুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">নিরাপত্তা চেয়ে যে জিডি করেছে তা তদন্তাধীন। এ ছাড়া শাহিনার পরিবারের হত্যাকাণ্ডের একটি মামলা ডিবি তদন্ত করছে।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> গত ৩৫ বছরে পরিবারের আটজনকে হত্যার বিষয়টি শুনেছেন বলে জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার (এসপি) প্রত্যুষ কুমার মজুমদার কালের কণ্ঠকে বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">শাহিনা আক্তার এসেছিলেন কিছুদিন আগে। বন্দর থানার ওসিকে বলেছি ব্যবস্থা নিতে। তার পরও তাঁরা যদি নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন, তাহলে প্রশাসন থেকে যতটুকু সহযোগিতা দরকার সেটুকু করব। তবে আমাদের সঠিক সময়ে জানাতে হবে, কে কিভাবে হুমকি দিচ্ছে।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span></span></span></p>