গ্যাস অনুসন্ধান, উত্তোলন ও সরবরাহ

সাড়ে ১৩ হাজার কোটির আরো ৮ প্রকল্প আসছে

এম আর মাসফি
এম আর মাসফি
শেয়ার
সাড়ে ১৩ হাজার কোটির আরো ৮ প্রকল্প আসছে

অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর অভ্যন্তরীণ গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনে তিন হাজার ৮২৭ কোটি টাকার বেশি ব্যয় ধরে সাত প্রকল্প অনুমোদনের পর এ খাতে আরো আটটি প্রকল্প হাতে নিতে যাচ্ছে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ।

দেশীয় গ্যাসের ব্যবহার বাড়িয়ে আমদানিনির্ভরতা কমানোর লক্ষ্যে প্রস্তাবিত এসব প্রকল্পে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১৩ হাজার ৬৯৫ কোটি টাকার বেশি।

এসব প্রকল্পের মাধ্যমে জরিপ, অনুসন্ধানমূলক কূপ খনন ও গ্যাস উত্তোলন কার্যক্রম পরিচালনার পাশাপাশি রিগ ক্রয়, সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতা বাড়ানো ও গ্যাস ব্যবহারে দক্ষতা বৃদ্ধিতে নজর দেওয়া হবে। জ্বালানি সম্পদ বিভাগের প্রস্তাবগুলো অনুমোদনের সুবিধার্থে চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (আরএডিপি) অননুমোদিত প্রকল্পের তালিকায় রেখেছে পরিকল্পনা কমিশন।

এর মধ্যে কয়েকটি উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) পরিকল্পনা কমিশনের শিল্প ও শক্তি বিভাগে পাঠানো হয়েছে। যেগুলো অনুমোদনের প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে। এর মধ্যে পাঁচটি প্রকল্পেগু চার হাজার ৯৩৬ কোটি টাকা ব্যয়ে জরিপ ও অনুসন্ধানের মাধ্যমে গ্যাস সরবরাহ বাড়ানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

আর দুটি প্রকল্পে ৮৫৫ কোটি টাকা ব্যয়ে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রডাকশন কম্পানি লিমিটেড (বাপেক্স) ও বাংলাদেশ ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদপ্তরের অনুসন্ধান সক্ষমতা বাড়ানো হবে।

এ ছাড়া ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও আশপাশের এলাকায় গ্যাস সরবরাহের নেটওয়ার্ক উন্নত করতে এবং লিকেজ প্রতিরোধ করতে সাত হাজার ৯০৪ কোটি টাকা ব্যয়ে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কম্পানি লিমিটেডের অবকাঠামো উন্নয়নে একটি প্রকল্পও নেওয়া হবে।

মূলত অর্থনৈতিক সংকটের এই সময় অন্তর্বর্তী সরকার প্রাকৃতিক গ্যাস উত্তোলনে জোর দিয়েছে। টানা বিদ্যুৎ সরবরাহ না পাওয়ায় দেশের বেশির ভাগ কারখানায় দিন দিন গ্যাসের চাহিদা বাড়ছে। আবাসিক সরবরাহ ছাড়াও বিদ্যুৎ উৎপাদন, সার কারখানা, শিল্পসহ সব খাতে বেড়েছে গ্যাসের চাহিদা।

এই ঘাটতি মেটানোর নামে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানির দিকে ঝোঁকে আওয়ামী লীগ সরকার। ছয় বছরের ব্যবধানে দেশে দ্বিগুণ হয়েছে গ্যাসের চাহিদা। কিন্তু গ্যাস উৎপাদন সেভাবে নেই। তাই আমদানি কমাতে দেশীয় গ্যাস উত্তোলনে জোর দিচ্ছে সরকার।

এ বিষয়ে সম্প্রতি বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান জানান, চলমান জ্বালানি সংকটের মধ্যে গ্যাস অনুসন্ধান কার্যক্রম জোরদার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

এর মধ্যে ১৫টি কূপ খনন করে ১৭৬ মিলিয়ন ঘনফুট প্রতিদিন উত্তোলনযোগ্য গ্যাস মিলেছে। তবে পাইপলাইন না থাকায় এখন ৭৬ মিলিয়ন ঘনফুট দেওয়া হয়েছে জাতীয় গ্রিডে। তিনি বলেন, ২০২৫ সালের মধ্যে আরো ৩৫টি কূপ খনন করা হবে। ২০২৮ সালের মধ্যে ১০০টি গ্যাসকূপ খনন করা হবে।

বিশেষজ্ঞ ও অর্থনীতিবিদরা এসব প্রকল্পকে দেশীয় গ্যাস অনুসন্ধান বাড়ানোর ইতিবাচক উদ্যোগ হিসেবে দেখছেন। তাঁরা বলছেন, এসব প্রকল্প আমদানি ব্যয় ও বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভের ওপর চাপ কমাবে। তা ছাড়া দেশীয় গ্যাসের মজুদ ব্যবহার নিশ্চিত হলে সরকারের আর্থিক সক্ষমতাও বাড়বে। তবে তাঁরা প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে দক্ষতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করে সরকারি অর্থের অপচয় রোধ করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নতুন প্রকল্পের মাধ্যমে তিনটি সিসমিক জরিপ, ছয়টি অনুসন্ধানমূলক কূপ, দুটি গভীর অনুসন্ধানমূলক কূপ এবং পাঁচটি মূল্যায়নমূলক কূপ খনন করা হবে।

পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আটটি প্রকল্পের জন্য ৯ হাজার ৪৯১ কোটি টাকা (৬৯ শতাংশ) দেশীয় উৎস থেকে এবং বাকি চার হাজার ২০৪ কোটি টাকা বিদেশি ঋণ থেকে সংগ্রহ করা হবে।

গত আগস্ট থেকে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) অন্তত সাতটি প্রকল্প অনুমোদন করেছে, যার মোট ব্যয় তিন হাজার ৮২৭ কোটি টাকা।

পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার এক দশক ধরে দেশীয় গ্যাস অনুসন্ধান বন্ধ রেখে ব্যয়বহুল এলএনজি আমদানির দিকে ঝুঁকেছিল। নতুন সরকার দেশীয় গ্যাস উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি বাপেক্সকে শক্তিশালী করতে চায়, যাতে বিদেশি কম্পানির ওপর নির্ভরতা কমানো যায়।

কনজিউমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি অধ্যাপক এম শামসুল আলম কালের কণ্ঠকে বলেন, গত এক দশকে দেশীয় সম্পদ কাজে না লাগিয়ে আমদানিনির্ভরতা বাড়ানোর ফলে উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পেয়েছে। এখন গ্যাস অনুসন্ধান বাড়াতে জরুরি ভিত্তিতে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।

তিনি প্রকল্প বাস্তবায়নে স্বচ্ছতা ও দক্ষতার ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, দুর্নীতির কারণে অনেক প্রকল্পেগু ব্যয় অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেছে। তাই প্রস্তাবিত প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে।

প্রস্তাবিত হবিগঞ্জ, বাখরাবাদ ও মেঘনা ফিল্ডে ৩-ডি সিসমিক সার্ভে শীর্ষক প্রকল্পে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৫৪ কোটি টাকা। এর আওতায় ২০২৭ সালের জুন মাসের মধ্যে তিনটি সার্ভে পরিচালনা করা হবে।

তিতাস ও বাখরাবাদ ফিল্ডে দুটি গভীর অনুসন্ধান কূপ খনন প্রকল্পে মোট ৭৯৮ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। চারটি মূল্যায়ন-কাম-উন্নয়ন কূপ (শাহবাজপুর ৫, ৭, ভোলা নর্থ ৩, ৪) এবং একটি অনুসন্ধান কূপ (শাহবাজপুর নর্থ ইস্ট ১) খনন প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে এক হাজার ৫৫৬ কোটি টাকা। এক হাজার ২৬৮ কোটি টাকা ব্যয় করে তিনটি অনুসন্ধান কূপ (শ্রীকাইল ডিপ ১, মোবারকপুর ডিপ ১ এবং ফেঞ্চুগঞ্জ সাউথ ১) খনন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে।

একটি মূল্যায়ন-কাম-উন্নয়ন কূপ (বেগমগঞ্জ ৫) এবং দুটি অনুসন্ধান কূপ (বেগমগঞ্জ ৬ ও সুনেত্র ২) খনন প্রকল্প বাস্তবায়নে মোট ৮৬০ কোটি টাকা ব্যয়ের পরিকল্পনা রয়েছে।

পরিকল্পনা কমিশনের শিল্প ও শক্তি বিভাগের সদস্য (সচিব) ড. মো. মোস্তাফিজুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, আমদানি ব্যয় কমাতে সরকার প্রাকৃতিক গ্যাস উত্তোলন ও এ ধরনের প্রকল্পকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। পরবর্তী একনেকে তিনটি প্রকল্প তোলা হচ্ছে। আরো কয়েকটি প্রকল্প নিয়ে পর্যালোচনা চলছে। যাচাই-বাছাই শেষে সেগুলোও একনেকের জন্য সুপারিশ করা হবে।

গত ছয় অর্থবছরে এক লাখ ৬৪ হাজার ২৭৫ কোটি টাকার ৫৭.৮২ মিলিয়ন ঘনমিটার এলএনজি আমদানি করা হয়েছে। ২০২০-২১ অর্থবছরে যেখানে ১০.১৫ মিলিয়ন ঘনমিটার এলএনজি আমদানিতে সাড়ে ১৬ হাজার কোটি টাকা খরচ হয়েছে। করোনার ধাক্কার পর মাত্র এক মিলিয়ন বেশি এলএনজি আমদানিতে তিন গুণ বেশি সাড়ে ৪০ হাজার কোটি টাকা খরচ করতে হয়েছে।

গত অর্থবছরে ১১.৬৭ মিলিয়ন ঘনমিটার এলএনজি আমদানিতে ৪২ হাজার ৬৪৩ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে। অর্থাৎ সরকারের বিপুল পরিমাণ অর্থ শুধু এলএনজি আমদানিতেই চলে যাচ্ছে। গত ছয় বছরে ২৬ হাজার ২১৫ কোটি টাকা ভর্তুকি দেওয়া হয়েছে এ খাতে। বাকি এক লাখ ৩৮ হাজার ৬০ কোটি টাকা ব্যয় মেটানো হয়েছে গ্যাসের দাম বাড়ানোর মাধ্যমে।

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

সবিশেষ

বায়োহাইব্রিড প্রযুক্তি মেশিনকে অনুভূতির পরশ দেবে এবার

কালের কণ্ঠ ডেস্ক
কালের কণ্ঠ ডেস্ক
শেয়ার
বায়োহাইব্রিড প্রযুক্তি মেশিনকে অনুভূতির পরশ দেবে এবার

উদ্ভিদ ও ছত্রাকের সহায়তায় রোবটদের সামগ্রিক সামর্থ্যের মাত্রা আগামী দিনগুলোতে আরো অনেক বেশি বাড়বে। গবেষকরা দাবি করেছেন, বায়োহাইব্রিড প্রযুক্তি রোবট বা মেশিনের অনুভূতিকে বেশ খানিকটা শাণিত করতে পারবে। এতে রোবট তথা মেশিনরা আহত হলে নিজেরাই তা সারিয়ে নিতে পারবে। গবেষকরা বলছেন, রোবটে যদি জীবন্ত টিস্যুর প্রয়োগ ঘটানো যায়, তাহলে এসব রোবট পরিবেশের সঙ্গে আরো সহজভাবে ইন্টারেক্ট করার সুযোগ পাবে।

গবেষকরা দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন, এমন একটি রোবট উদ্ভাবন করতে, যে রোবট দেখতে হবে প্রাণবন্ত। তবে তারা এটা ভালো করেই জানেন, সিনথেটিক উপাদান দিয়ে তৈরি রোবট তেমন হতে পারবে না। যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের কর্নেল ইউনিভার্সিটির গবেষক আনন্দ মিশ্র বলেন, প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতার কারণে আমরা এখনো সিনথেটিক উপাদান দিয়ে প্রাণবন্ত রোবট বানাতে পারছি না।

পরিবেশের উপযোগী করে রোবট বানানোর কর্মযজ্ঞ চলমান থাকলেও নিশ্চিত কোনো তথ্য আমাদের হাতে এত দিন ছিল না।

গবেষকরা বলছেন, এমন রোবট বানাতে যে হবে, যে রোবট সব ধরনের পরিবেশে টিকে থাকতে পারবে। এরা যেমন আলো শনাক্ত করতে পারবে, গরম লাগলেও তা ধরতে পারবে। খাবারের স্বাদও নিতে পারবে। গবেষক আনন্দ মিশ্র জানালেন, রোবট তৈরিতে যদি ছত্রাক-টিস্যু ব্যবহার করা যায়, তাহলে সমস্যার বেশ খানিটা সমাধান হয়ে যাবে।

ছত্রাক উদ্ভিদ নয়। তবে ছত্রাকের মাঝে উদ্ভিদের বেশ কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে। বিশেষ করে মাইসেলিয়াম। উল্লেখ্য, মাইসেলিয়াম ​​হলো একটি ছত্রাকের শিকড়সদৃশ গঠন যাতে একটি ভরের শাখা, থ্রেডসদৃশ হাইফাই থাকে। এর স্বাভাবিক রূপ হলো শাখাযুক্ত, সরু, আটকানো, অ্যানাস্টোমোসিং, হাইলাইন থ্রেড।

মাইসেলিয়াম দ্বারা গঠিত ছত্রাকের উপনিবেশগুলো মাটি এবং অন্যান্য অনেক স্তরে পাওয়া যায়। গবেষক মিশ্র জানান, এই ছত্রাক টিস্যু আলো, তাপ ও রাসায়নিক শনাক্ত করতে সক্ষম। মিশ্র ও তাঁর গবেষক দল দুটি রোবটে ইলেকট্রোডের সহায়তায় মাইসেলিয়াম টিস্যু সংযুক্ত করেছেন, যা এখন ইলেকট্রনিক সিগন্যাল পয়দা করতে পারছে, যা হার্ট ও নার্ভ সেল হিসেবে কাজ করছে। গবেষকরা মনে করছেন, তাঁরা এখন প্রাণবন্ত রোবট তৈরির পথে বেশ খানিকটা এগিয়ে যেতে পেরেছেন। সূত্র : সায়েন্স ডটঅর্গ

 

 

 

 

মন্তব্য

বিক্ষোভ সমাবেশ করেন ফ্যাসিবাদবিরোধী শিক্ষার্থীরা

শেয়ার
বিক্ষোভ সমাবেশ করেন ফ্যাসিবাদবিরোধী শিক্ষার্থীরা
রাজধানীর খামারবাড়ি মোড়ে গতকাল সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন ফ্যাসিবাদবিরোধী শিক্ষার্থীরা। এ সময় ওই এলাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। অনেকে হেঁটে গন্তব্যের উদ্দেশে রওনা দেন। ছবি : কালের কণ্ঠ
মন্তব্য
রংপুর

হিমাগারগুলো আলু নিচ্ছে না, বিপাকে চাষিরা

রফিকুল ইসলাম, রংপুর
রফিকুল ইসলাম, রংপুর
শেয়ার
হিমাগারগুলো আলু নিচ্ছে না, বিপাকে চাষিরা

রংপুরে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় এক-তৃতীয়াংশ বেশি জমিতে আলু উৎপাদন হওয়ায় সেই আলু নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন প্রান্তিক আলু চাষি ও ব্যবসায়ীরা। জায়গা সংকুলান না হওয়ার কারণ দেখিয়ে বেশির ভাগ হিমাগার কর্তৃপক্ষ আলু নেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে জমিতে-রাস্তায় হাজার হাজার বস্তা আলু রেখে কৃষকরা দুশ্চিন্তায়।

এদিকে জমি থেকে দেরিতে ওঠা বীজ আলু হিমাগারে রাখতে না পারলে পরের বছর বীজ আলু নিয়ে হাহাকার পড়ে যাবে, সংকটে পড়বে দেশ।

এ কারণে অন্তত বীজ আলুগুলো হিমাগারে রাখার জোর দাবি তুলেছেন আলু চাষিরা।

কৃষকরা জানিয়েছেন, একদিকে দাম নেই, অন্যদিকে হিমাগার মালিকরা মাইকে ঘোষণা করছেন তাঁদের হিমাগারে আলু রাখতে পারবে না। এই অবস্থায় পুঁজি হারিয়ে রাস্তায় বসা ছাড়া উপায় নেই।

গতকাল রবিবার রংপুরের কাউনিয়া, নব্দিগঞ্জ পীরগাছা এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, বিস্তীর্ণ মাঠে চাষিরা আলু তুলছেন।

কেউ কেউ আলু বস্তায় ভরে জমিতেই ফেলে রাখছেন, আবার অনেকে মহাসড়কের পাশে রাখছেন।

কৃষকরা বলছেন, অনুরোধ করার পরও আলু নিচ্ছে না হিমাগার কর্তৃপক্ষ। এমনকি দালাল ফড়িয়াদের বাকিতে আলু দিতে চাইলেও তাঁরা নিচ্ছেন না। উৎপাদন প্রতি কেজি ২০ টাকা হলেও ৮-৯ টাকা কেজি দরে গ্র্যানুলা আলু পাইকারদের দিতে চাইলেও জায়গা না থাকার অজুহাতে তাঁরাও নিচ্ছেন না।

জানা গেছে, রংপুর বিভাগের পাঁচ জেলায় এক লাখ ১৯ হাজার ৮৭৯ হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। কিন্তু এর এক-তৃতীয়াংশ বেশি জমিতে আলু চাষ হয়েছে। কৃষকদের ভাষ্য, ২০১১ সালের পর এবারই এমন রেকর্ড আলু চাষ হয়েছে। চরাঞ্চলে যাঁরা আলু চাষ করেছেন, তাঁরা আগে তুলতে পারায় হিমাগারে রেখেছেন। কিন্তু সমতল জমিতে যাঁরা পরে আবাদ করেছেন তাঁরা আলু রাখতে পারছেন না।

কৃষকরা জানান, মূলত বীজ আলু দেরিতে ওঠে। এই বীজ আলু স্টোরে রাখতে না পারলে আগামী মৌসুমে আলু বীজের চরম সংকট দেখা দেবে।

নব্দিগঞ্জের মকবুল হোসেন বলেন, ১০০ বস্তা আলু নিয়ে গত শনিবার এসেছি অপু মুনশি হিমাগারের সামনে। এসে শুনি জায়গা নেই। কর্তৃপক্ষ আলু নেবে না বলে মাইকে ঘোষণা করছে। আমার সেই আলু এখন রাস্তায়। কাউনিয়ার মীরবাগে এমন কয়েক লাখ বস্তা আলু রাস্তায় পড়ে আছে।

অপু মুনশি হিমাগারের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে বলেন, আলু নেওয়ার অনুমতি নেই। তাই নেওয়া হচ্ছে না।

বাংলাদেশ ক্ষেতমজুর ও কৃষক সংগঠনের আহ্বায়ক আহসানুল আরেফিন তিতু হিমাগারে আলু নেওয়া বন্ধের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন। অবিলম্বে আলু চাষিদের জন্য কোল্ড স্টোর খুলতে সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

 

 

 

মন্তব্য
শু ভ কা জে স বা র পা শে

বসুন্ধরার সেলাই মেশিনে দুঃখ ঘুচবে তাঁদের

কালের কণ্ঠ ডেস্ক
কালের কণ্ঠ ডেস্ক
শেয়ার
বসুন্ধরার সেলাই মেশিনে দুঃখ ঘুচবে তাঁদের
নীলফামারীতে বসুন্ধরা গ্রুপের উদ্যোগে তিন মাসের প্রশিক্ষণ শেষে গতকাল ২০ নারীর হাতে তুলে দেওয়া হয় সেলাই মেশিন। জেলা সদরের পূর্ব খোকসাবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় চত্বরে। ছবি : কালের কণ্ঠ

দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপ অসচ্ছল নারীদের স্বাবলম্বী করতে সেলাই প্রশিক্ষণ ও বিনামূল্যে সেলাই মেশিন উপহার দেওয়ার কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে দীর্ঘদিন ধরে। এরই ধারাবাহিকতায় নীলফামারীর ২০ জন নারীকে প্রশিক্ষণ শেষে সেলাই মেশিন উপহার দেওয়া হয়েছে। গতকাল রবিবার এই নারীদের হাতে সেলাই মেশিন তুলে দেওয়া হয়। অন্যদিকে বসুন্ধরা শুভসংঘ রংপুর কারমাইকেল কলেজ শাখার নতুন কমিটির পরিচিতিসভা ও ইফতার মাহফিল আয়োজন করা হয়।

প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর : 

বসুন্ধরার সেলাই মেশিনে দুঃখ ঘুচবে তাঁদেরনীলফামারী : স্বামীর দিনমজুরির আয়ে ঠিকমতো সংসার চলে না। অর্ধাহার-অনাহার নিত্যদিনের সঙ্গী। এমন দুর্দশায় স্বামীকে সহযোগিতার প্রবল ইচ্ছা মনিরা আক্তারের (২৭)। এ জন্য কাজের সন্ধান করেছিলেন বিভিন্ন স্থানে।

কাজ জুটেছিলও পাশের গ্রামের একটি কারখানায়। কিন্তু প্রতিবন্ধী সন্তানকে রেখে কাজে যেতে পারেননি তিনি। কারণ, দুজনের মুখে খাবার তুলে দেওয়ার একমাত্র ভরসা মা মনিরা। তাই তিনি বাড়িতেই কোনো কাজ করে টাকা উপার্জনের পথ খুঁজছিলেন।
কিন্তু দীর্ঘদিন চেষ্টা করেও কোনো উপায় করতে পারছিলেন না। ফিকে হতে শুরু করে সংসারে সচ্ছলতা ফেরানোর স্বপ্ন। অবশেষে তাঁর সেই স্বপ্নপূরণে এগিয়ে এসেছে বসুন্ধরা গ্রুপ। তিন মাস সেলাই প্রশিক্ষণ শেষে তাঁকে গ্রুপের পক্ষ থেকে উপহার দেওয়া হয়েছে সেলাই মেশিন।

গতকাল রবিবার জেলা সদরের পূর্ব খোকসাবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় চত্বরে এক অনুষ্ঠানে ২০ জন নারীর হাতে সেলাই মেশিন তুলে দেওয়া হয়।

দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্নপূরণে সেলাই মেশিন পেয়ে আনন্দিত মনিরা। অনুভূতি প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘সংসারোত খুব কষ্ট। স্বামীর কিষান খাটার কামাই দিয়া ছয়টা মানষির খাবার জুটে না। কষ্টের কারণে মনটা চায় কোনো কাম-কাজ করি কামাই করিবার। কিন্তু ছাওয়া দুইটাক থুইয়া বাড়ি থাকি কোনঠে যাবার পারো না। এলা বসুন্ধরার মেশিন দিয়া বাড়িত বসি সেলাইর কাজ করি কামাই করির পারিম। এলা কামাই সংসারোত সহযোগিতা করির পারিমো।’

একই অনুষ্ঠানে সেলাই মেশিন পেয়েছেন আঁখি আক্তার (১৯)। খলিশাপচা গ্রামের আঁখি আক্তার দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী। তাঁর বাবা অলিয়ার রহমানের দিনমজুরির আয়ে চলে তাঁদের সাত সদস্যের পরিবার। তিন বোন এক ভাইয়ের মধ্যে আঁখি সবার বড়। অভাব-অনটনের সংসারে এসএসসি পাসের আগেই বিয়ে দিতে চেয়েছিল পরিবার। কিন্তু আঁখি তাতে রাজি না হয়ে লেখাপড়া শিখে প্রতিষ্ঠিত হতে চান। এমন প্রবল ইচ্ছায় এসএসসি পাসের পর ভর্তি হন কলেজে। কিন্তু পরিবারের অর্থাভাবে লেখাপড়া প্রায় বন্ধের পথে। এ অবস্থায় আঁখি গ্রামে টিউশনি করে লেখাপড়া চালানোর উদ্যোগ নিয়েও হয়েছেন ব্যর্থ। এ জন্য খুঁজতে শুরু করেন সহজ কাজ করে নিজেরসহ ভাই-বোনদের লেখাপড়া চালাতে। সেই আঁখি আক্তারকে সেলাই মেশিন দিয়ে স্বপ্নপূরণ করেছে বসুন্ধরা গ্রুপ।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উচ্ছ্বাস রায়। বিশেষ অতিথি ছিলেন জেলা জামায়াতে ইসলামীর কর্মপরিষদ সদস্য মো. মনিরুজ্জামান মন্টু।

পূর্ব খোকসাবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাজেদা চৌধুরীর সভাপতিত্বে বক্তৃতা করেন বসুন্ধরা শুভসংঘের পরিচালক জাকারিয়া জামান, বসুন্ধরা ফাউন্ডেশনের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা মো. মামুন, কালের কণ্ঠের প্রতিনিধি ভুবন রায় নিখিল, শুভসংঘ কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সম্পাদক ইয়াছির আরাফাত রাফি, সদস্য ফরিদ মিয়া, আমিনুর রহমান, মো. গোলাম হোসেন, নিউজ-২৪-এর জেলা প্রতিনিধি আব্দুর রশীদ শাহ, বসুন্ধরা শুভসংঘ জেলা শাখার সহসাধারণ সম্পাদক দীপু রায় প্রমুখ।

রংপুর : বসুন্ধরা শুভসংঘ রংপুর কারমাইকেল কলেজ শাখার উদ্যোগে গত শনিবার নতুন কমিটির পরিচিতিসভা, ইফতার মাহফিল ও দুস্থদের মধ্যে ইফতারি বিতরণ করা হয়েছে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বসুন্ধরা শুভসংঘের উপদেষ্টা ও কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. মোস্তাফিজুর রহমান।

বসুন্ধরা শুভসংঘ রংপুর কারমাইকেল কলেজ শাখার নব গঠিত কমিটির সভাপতি আহসান হাবিবের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বসুন্ধরা শুভসংঘ কলেজ শাখার সাধারণ সম্পাদক সজীব সরকার, সহসভাপতি সাজ্জাদ হোসেন সোহাগ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আরাফাত হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক  মুশফিকুর রহমান সজীব, অর্থবিষয়ক সম্পাদক শাহরিয়ার, সাবেকুন নাহার শিমলা, আইনুল হক, আসিফ, মানিক, হাসান হাবিব, ইসমাইল প্রমুখ।

 

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ