<p>চাঁদপুরের মেঘনা নদীতে জাহাজে হত্যাকাণ্ডের শিকার মাগুরার মহম্মদপুরের সজীবুল ইসলামের মৃত্যু সহ্য করতে না পেরে গত বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে মারা গেছেন তাঁর বাবা দাউদ মোল্যা (৫৮)। ছেলের পর এবার বাবার মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।</p> <p>স্থানীয়রা জানান, ছেলে সজীবুলের মৃত্যুর খবর শোনার পর কেঁদেই চলছিলেন বাবা দাউদ মোল্যা। তাঁকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করেন স্বজনরা। এক পর্যায়ে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। এরপর বাড়িতেই তাঁর মৃত্যু হয়।</p> <p>সপ্তাহ দুয়েক আগে এমভি আল-বাখেরা জাহাজে গ্রিজার পদে চাকরি নেন তিনি। চাঁদপুরের হাইমচরে সোমবার এমভি আল-বাখেরা জাহাজে যে সাতজন খুন হন তাঁদের একজন সজীবুল।</p> <p>সজীবুল ইসলামের বাড়ি মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলার পলাশবাড়িয়া ইউনিয়নে। গত মঙ্গলবার রাতে তাঁর মরদেহ গ্রামের বাড়িতে দাফন করা হয়। সজীবুলের মামা আহাদ সর্দার সজীবুলের বাবা দাউদ মোল্যার মৃত্যুর খবরের সত্যতা নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, ‘দুই সপ্তাহ আগে বাড়িতে ধান কাটার কাজ করে গেছে। আগে যে জাহাজে কাজ করত সেই জাহাজে পদোন্নতির পরীক্ষা দিয়েছিল সজীবুল। ফলাফল পেতে দেরি হবে এ কারণে দুই সপ্তাহ আগে এমভি আল-বাখেরা জাহাজে গ্রিজার পদে চাকরি নেয় সে। যাওয়ার সময় বাড়িতে বলে গেছে ফলাফলের অপেক্ষায় ঘরে বসে না থেকে ছোট একটা জাহাজে কাজ করে আসি, তাতে কিছু রোজগার হবে।’</p> <p>মহম্মদপুর থানার ওসি আব্দুর রহমান জানান, জাহাজে হত্যাকাণ্ডের শিকার সজীবুলের বাবা দাউদ মোল্যার মৃত্যুর সংবাদ রাতেই জানতে পেরেছেন। বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক।</p> <p> </p> <p><strong>অনির্দিষ্টকালের জন্য পণ্যবাহী জাহাজ চলাচল বন্ধ </strong></p> <p>চাঁদপুরের মেঘনায় জাহাজের সাত শ্রমিক হত্যার রহস্য উদঘাটন করে হত্যার বিচার এবং নিহত শ্রমিকদের জীবনের আয়ের সমপরিমাণ ক্ষতিপূরণ পরিবারের কাছে প্রদানের দাবিতে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি পালন করছেন নৌযান শ্রমিকরা। গতকাল শুক্রবার সকাল থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য এই কর্মবিরতি শুরু হয়। মুন্সীগঞ্জ লঞ্চঘাটের কাছে ধলেশ্বরী নদীতে অবস্থান নিয়ে সব পণ্যবাহী জাহাজের শ্রমিকরা এই কর্মবিরতি পালনে অংশ নেন।</p> <p>সেখানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন বাংলাদেশ নৌযান ও শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মো. সবুজ শিকদার। বাংলাদেশ নৌযান ও শ্রমিক ইউনিয়ন মুন্সীগঞ্জ জেলা সভাপতি মো. তাইজুল ইসলাম বাদশার সভাপতিত্বে এতে আরো অনেকে বক্তব্য দেন। এ সময় বক্তারা সাত শ্রমিক খুনের বিচারের পাশাপাশি বিভিন্ন সময় নৌদুর্ঘটনায় আহত শ্রমিকদের সুচিকিৎসা, নৌপথে শ্রমিক হত্যা, ডাকাতি, সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজি বন্ধের দাবি তোলেন। আগামী দুই দিনের মধ্যে সাত খুনের রহস্য উদঘাটন, নৌনিরাপত্তা নিশ্চিত করা, শ্রমিকদের কর্মস্থলে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং সব শ্রমিকের গেজেট অনুযায়ী বকেয়া বেতন ও পাওনা পরিশোধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া না হলে একযোগে লঞ্চ, বাল্কহেড, লাইটার জাহাজসহ সব ধরনের যাত্রী ও পণ্যবাহী নৌযান বন্ধের হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়।</p> <p> </p> <p><strong>ধর্মঘটে অচল আশুগঞ্জ নদীবন্দর</strong></p> <p>নৌযান শ্রমিকদের ডাকা অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে নদীবন্দরেও পালন করা হচ্ছে। নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের এই ধর্মঘটে সেখানকার কার্যক্রমে অচলাবস্থা বিরাজ করছে। এতে বেকার হয়ে পড়েছেন বন্দরের শত শত শ্রমিক। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন বন্দরের ব্যবসায়ীরা।</p> <p>আশুগঞ্জ নদীবন্দরে প্রতিদিন সার, রড, সিমেন্ট, ধান, চাল, পাথর, কয়লাসহ কোটি কোটি টাকার বিভিন্ন পণ্য নিয়ে অর্ধশত জাহাজ নোঙর করে। এসব পণ্য আশুগঞ্জ থেকে নদীপথে ঢাকা, চন্দ্রগ্রাম, মোংলা, সিলেট, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, নরসিংদী, কুমিল্লা, কিশোরগঞ্জসহ সারা দেশে যায়।</p> <p>বন্দরের ব্যবসায়ীরা জানান, শ্রমিকদের আন্দোলনের কারণে বন্দরে সার, রড, সিমেন্ট নিয়ে আসা কার্গো জাহাজ থেকে পণ্য খালাস বন্ধ রয়েছে। বন্দরের কয়েক হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছেন। এতে বিপুল অঙ্কের লোকসান গুনতে হবে। </p> <p>বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক হাবিবুল্লাহ বাহার জানান, চাঁদপুরে মেঘনা নদীতে হরিণা ঘাটের কাছে মাঝেরচর এলাকায় এমভি আল-বাখেরা জাহাজে সন্ত্রাসী কায়দায় নির্মম হত্যাকাণ্ডে মাস্টারসহ সাতজন শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনার প্রকৃত কারণ উদঘাটন, হত্যাকারীদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তার, মৃত শ্রমিকদের প্রত্যেকের পরিবারের জন্য সরকারিভাবে ২০ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণের ঘোষণা, সব নৌপথে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, ডাকাতি বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এখনো সরকারের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি বিধায় শুক্রবার রাত ১২টা ১ মিনিট থেকে তৈল, গ্যাস, বালুসহ সব ধরনের পণ্যবাহী নৌযানের শ্রমিকরা লাগাতার কর্মবিরতি শুরু করেছেন।</p> <p> </p>