ঈদে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ঘরে ফেরা রংপুর অঞ্চলের মানুষজনের জন্য বিশেষ ট্রেনের উদ্যোগ এখনো নেওয়া হয়নি। আগের দেওয়া আন্ত নগর ট্রেনে আসা-যাওয়া করতে হবে মানুষজনকে। ফলে যাত্রীর চাপে শিডিউল হেরফেরে ঈদ যাত্রায় নতুন করে ভোগান্তি বাড়ার আশঙ্কা দেখছেন ট্রেনসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। অন্যান্য বছরের মতো এবারও বিশেষ ট্রেন বা বগির ঘোষণা না আসায় ক্ষুব্ধ নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা।
জানা গেছে, পশ্চিমাঞ্চল রেলের লালমনিরহাট বিভাগ থেকে ১০টি আন্ত নগর ট্রেন রংপুর বিভাগের আট জেলা থেকে ঢাকায় যাতায়াত করে। এগুলো হচ্ছে রংপুর এক্সপ্রেস, লালমনি এক্সপ্রেস, বুড়িমারী এক্সপ্রেস, কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস, পঞ্চগড় এক্সপ্রেস, একতা এক্সপ্রেস, দ্রুতযান এক্সপ্রেস, বাংলাবান্ধা এক্সপ্রেস, নীলসাগর ও চিলাহাটি এক্সপ্রেস।
স্টেশনসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, নিয়মিত চলা এসব আন্ত নগর ট্রেনে প্রতিদিন পাঁচ থেকে সাত হাজার যাত্রী ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করে। এই ১০টি আন্ত নগর ট্রেনের মধ্যে রংপুর স্টেশনের ওপর দিয়ে আসা-যাওয়া করে রংপুর, কুড়িগ্রাম, বুড়িমারী ও লালমনি এক্সপ্রেস।
অন্য ছয়টি ট্রেন লালমনিরহাট, নীলফামারী, পার্বতীপুর ও পঞ্চগড় থেকে চলাচল করে। এ কারণে চাইলেই সব যাত্রী সব আন্ত নগর ট্রেনে আসা-যাওয়া করতে পারবে না।
রংপুর রেলওয়ে স্টেশন সূত্র জানিয়েছে, ঈদ ঘিরে যাত্রীর সংখ্যা দু-তিন গুণ পর্যন্ত বেড়ে যায়। এবারও ব্যতিক্রম হওয়ার সম্ভাবনা নেই।
ঈদে যাত্রীদের চাপ কমাতে বিশেষ ট্রেন চালুর উদ্যোগের কোনো চিঠিপত্র হাতে এসে পৌঁছেনি। যেসব ট্রেন আছে, তার সঙ্গে বগি বাড়বে কি না তা-ও জানে না ট্রেনসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
এদিকে জনবল, ট্রেনের ইঞ্জিনসংকট, বগিসংকটে চারটি ট্রেন বন্ধ রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে। বন্ধ রয়েছে আনন্দনগর, আওলীয়াগঞ্জ, সৈয়দ আহমেদ কলেজ ও মনমথোপুর স্টেশন। ফলে এবার আগাম ভাবিয়ে তুলছে ট্রেনযাত্রীদের।
রংপুর রেলস্টেশনে থাকা ঢাকাগামী যাত্রী মোহাইমিনুল ইসলাম বলেন, ‘আমার বাড়ি কুড়িগ্রামে। চাকরির কারণে স্ত্রী, দুই সন্তান ও মা-বাবাকে নিয়ে ঢাকায় থাকি। মা-বাবা বৃদ্ধ হওয়ায় বাসে আসা-যাওয়া খুব কষ্টকর। সে কারণে ট্রেনেই সুবিধা আমার জন্য। কিন্তু ঈদ এলে বাড়তি দুশ্চিন্তা মাথায় চেপে ধরে। গত বছর আসতেও টিকিট পাইনি, যেতেও না। যদি ঈদে বিশেষ ট্রেন দিত তাহলে আমার মতো শত শত যাত্রী আছে, যারা এই দুর্ভোগ থেকে রক্ষা পেত।’
আব্দুল আজিজ নামের এক যাত্রী বলেন, ‘রংপুর বরাবরই বৈষম্যের শিকার। এখান থেকে কেউ আওয়াজ তোলে না। আওয়াজ উঠলেই হয়তো সরকারের দৃষ্টি আকৃষ্ট হবে, আমাদের হয়রানি বন্ধ হবে। আমরা চাই নতুন আন্ত নগর ট্রেন এবং ঈদে বিশেষ ট্রেন।’
রংপুর রেলস্টেশনের সুপার শংকর গাঙ্গুলী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আসন্ন ঈদ ঘিরে এখনো বিশেষ ট্রেন বা বগি দেওয়ার জন্য কোনো নির্দেশনা পাইনি। আমরা প্রতিবছরই বিশেষ ট্রেন দেওয়ার জন্য কর্তৃপক্ষকে জানাই, এবারও জানিয়েছি। কিন্তু বিশেষ ট্রেন পাওয়ার আশা একবারেই নেই।’
তিনি বলেন, ‘ঢাকা থেকে এই অঞ্চল বা ঈদ শেষে ঢাকা ফেরত যাত্রী অসংখ্য। বিশেষ ট্রেন বা পর্যাপ্তসংখ্যক বগি বাড়ালে লোকসানের বদলে লাভবানই হবে ট্রেন।’
রংপুর মহানগর সুজনের সভাপতি অধ্যক্ষ খন্দকার ফখরুল আনাম বেঞ্জু বলেন, ‘বিগত সময়ে রেলের উন্নয়ন নিয়ে আমাদের অনেক কাগুজে পরিকল্পনা দেখানো হয়েছে, কিন্তু তা এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান হয়নি। লাখ লাখ মানুষ ঢাকায় পোশাক কারখানায় চাকরি করছে। কিন্তু তাদের যাতায়াতের জন্য কোনো বিশেষ ট্রেন বরাদ্দ নেই। অবিলম্বে আসন্ন ঈদে রংপুরে বিশেষ ট্রেন বরাদ্দসহ রংপুর-ঢাকা ইন্টার সিটি রেল চালুর জোর দাবি জানাচ্ছি।’