জীবাশ্ম জ্বালানির (গ্যাস, তেল, কয়লা) পরিবর্তে নবায়নযোগ্য জ্বালানিই বাসযোগ্য শহরের নিশ্চয়তা দিতে পারে। নবায়নযোগ্য জ্বালানি ছাড়া বাসযোগ্য নগরী সম্ভব নয়। তাই দ্রুত জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমিয়ে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বাড়ানোর ওপর জোর দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর বাংলামোটরে ‘রোল অব রিনিউয়েবল এনার্জি ফর এ লিভঅ্যাবল সিটি’ শীর্ষক একটি পলিসি ডায়ালগ অনুষ্ঠানে বিশেষজ্ঞরা এই তথ্য জানান।
অনুষ্ঠানটির যৌথ আয়োজক ছিল বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস), বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি), বাংলাদেশ রিসোর্স সেন্টার ফর ইন্ডিজেনাস নলেজ (বারসিক), সেন্টার ফর পার্টিসিপেটরি রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (সিপিআরডি) ও জেট নেট বিডি।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের প্রেসিডেন্ট পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খানের সভাপতিত্ব এবং সঞ্চালনায় পলিসি ডায়ালগে গেস্ট অব অনার হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্টেট ইউনিভার্সিটির স্থাপত্য বিভাগের প্রধান এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি অনুষদের ডিন অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী নকী। ডায়ালগটিতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনা করেন বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যায়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার।
অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার বলেন, বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে, যেখানে শিল্পায়ন ও নগরায়ণ দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে, সেখানে জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরশীলতা উল্লেখযোগ্য।
এই নির্ভরশীলতাই দেশের বর্তমান বায়ুমান পরিস্থিতির অবনতি ঘটাচ্ছে, যা ক্রমেই আরো তীব্র আকার ধারণ করছে। আইকিউ এয়ার ২০২৪-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, বাংলাদেশের প্রধান শহর রাজধানী ঢাকা বায়ুদূষণের তালিকায় তৃতীয় স্থানে রয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানদণ্ড অনুযায়ী, ঢাকার বায়ুমান সব সময়ই নিম্নমানের থাকে।
অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী নকী বলেন, প্রথম কথা হলো অবশ্যই সাধ্যমতো জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমাতে হবে।
এটি শুধু সরকার বা সরকারি সংস্থা বা কেবল নীতিমালার বিষয় নয়। এটি সচেতন সংস্কৃতির বিষয়, তা প্রতিটি নাগরিকের দায়িত্ব, যা স্বভাবে পরিণত হবে।
পরিবেশ অধিদপ্তরের বায়ুমান ব্যবস্থাপনা বিভাগের পরিচালক মো. জিয়াউল হক বলেন, জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে সৃষ্ট বায়ুদূষণ বাংলাদেশের জন্য একটি গুরুতর সমস্যা, যা জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। তবে সঠিক নীতি গ্রহণ ও কার্যকর পদক্ষেপের মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান সম্ভব। পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে এরই মধ্যে বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো মনিটরিংয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
পরিবেশ অধিদপ্তর ২০৩০ সালের মধ্যে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে ৪০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দূষণ নিয়ন্ত্রণে সব মন্ত্রণালয়কে একযোগে কাজ করতে হবে।
পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, ‘বাংলাদেশে নবায়নযোগ্য শক্তির প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে। নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বৃদ্ধি, পরিবহন ও শিল্প খাতে পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তির প্রয়োগ এবং জনগণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করে আমরা একটি সুস্থ ও সবুজ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে পারি।’