আহমেদ আকবর সোবহান

খেলাধুলার প্রসারে সহায়তা করে যাবে বসুন্ধরা গ্রুপ

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
খেলাধুলার প্রসারে সহায়তা করে যাবে বসুন্ধরা গ্রুপ
আহমেদ আকবর সোবহান

বসুন্ধরা গ্রুপ দেশের খেলাধুলার প্রসারে সহায়তা করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে বসুন্ধরার নিরলস প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান। গত রবিবার এবিজি বসুন্ধরা বিজয় দিবস গলফ টুর্নামেন্ট-২০২৩-এর সমাপনী অনুষ্ঠানে কুর্মিটোলা গলফ ক্লাবে আহমেদ আকবর সোবহান এ কথা বলেন।

আহমেদ আকবর সোবহান বলেন, আমি আজ এবিজি বসুন্ধরা বিজয় দিবস গলফ টুর্নামেন্ট-২০২৩-এর বিজয়ীদের ও অংশগ্রহণকারীদের সাফল্য ও কৃতিত্বের জন্য অভিনন্দন জানাতে চাই এবং সামনের সময়গুলোতে তাঁদের উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করছি।

আমি দৃঢ়ভাবে সবাইকে জানাতে চাই, জাতির অগ্রগতির অংশীদার হিসেবে বসুন্ধরা গ্রুপ দেশের খেলাধুলার পরিধি-পরিসর বৃদ্ধি ও সম্প্রসারণে সহায়তা করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে আমাদের নিরলস প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে।

এ সময় ক্রীড়াঙ্গনে বাংলাদেশের বিভিন্ন অর্জনের কথা তুলে ধরে বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান বলেন, ক্রীড়াঙ্গনে আমাদের রয়েছে উল্লেখযোগ্য অর্জন। ক্রিকেট, ফুটবল থেকে শুরু করে গলফ পর্যন্ত আমাদের ক্রীড়াবিদরা অর্জন ও সাফল্যের এক অনন্য গল্প বুনছেন।

তাঁরা বাংলাদেশের পতাকাকে গর্বের সঙ্গে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে নিয়ে যাচ্ছেন, যা আমাদের জন্য অনুপ্রেরণাদায়ী।

বক্তব্যের শুরুতে আহমেদ আকবর সোবহান বলেন, এবিজি বসুন্ধরা বিজয় দিবস গলফ টুর্নামেন্ট-২০২৩-এর পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে আপনাদের মাঝে উপস্থিত হতে পেরে আমি অত্যন্ত আনন্দিত। আমি তাঁদের উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করছি, যেন তাঁরা দেশের জন্য সম্মান বয়ে আনতে পারেন।

বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান বলেন, আমি বিনম্রভাবে শ্রদ্ধা জানাতে চাই মুক্তিযুদ্ধের ৩০ লাখ শহীদ ও মুক্তিযোদ্ধার প্রতি; যাঁদের বীরত্বপূর্ণ, নিঃস্বার্থ আত্মত্যাগ ৫২ বছর আগে আমাদের এনে দিয়েছিল বহুল আকাঙ্ক্ষিত বিজয়।

তাঁদের অদম্য সাহস, শৌর্য এবং জাতির প্রতি ভালোবাসা এখনো আমাদের সবার হৃদয়ে স্পন্দিত। সেই একই চেতনায় আমরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা বাস্তবায়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছি।

বাংলাদেশের সাফল্যের পেছনে প্রতিরক্ষা বাহিনীর ভূমিকা রয়েছে উল্লেখ করে আহমেদ আকবর সোবহান বলেন, একটি জাতি হিসেবে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক, সামাজিক ও জাতীয় উন্নয়নের অসংখ্য চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে যে সমৃদ্ধি ও প্রবৃদ্ধির দিকে অগ্রসর হয়েছে, সেই সাফল্যের গল্প রচনায় প্রতিরক্ষা বাহিনীর রয়েছে বিশাল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।

আহমেদ আকবর সোবহান বলেন, পরম করুণাময় সর্বশক্তিমান আল্লাহ আমাদের জাতিকে ক্রমাগত সাফল্য দ্বারা সমৃদ্ধ করুন। ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত জাতি এবং ২০৪০ সালের মধ্যে ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতিতে পরিণত হওয়ার স্বপ্ন পূরণে আমাদের সক্ষম করুন।

বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান বলেন, জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা শিগগিরই রূপান্তরিত হোক। এটি আগামী প্রজন্মের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে থাকুক।

সবাইকে আগামী নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানিয়ে তিনি তাঁর বক্তব্য শেষ করেন।

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

কম খরচে অ্যাওটিক ভালভ স্থাপন

    ডা. কায়সার নসরুল্লাহ খান
শেয়ার
কম খরচে অ্যাওটিক ভালভ স্থাপন
ডা. কায়সার নসরুল্লাহ খান

সাধারণত রোগীরা চিকিৎসকদের কাছে যায় বুকে ব্যথা, বুক ধড়ফড় করা অথবা শ্বাসকষ্ট নিয়ে। হাসপাতালে আসার পর রোগীর ইসিজি, ইকো পরীক্ষা করা হয়। মূলত ইকোর মাধ্যমে বুঝতে পারি ভালভ নষ্ট হয়ে গেছে।  ভালভ নষ্টের তিনটা ভাগ আছেহালকা, মাঝারি ও গুরুতর।

 

বয়স হওয়ার সঙ্গে অ্যাওটিক ভালভ নষ্ট হয়ে যাওয়া।  সাধারণত এটি নষ্ট হয় বয়সজনিত কারণে ক্ষয় হয়ে যাওয়া অথবা বাতজ্বরের কারণে হার্টের ভালভ স্থায়ীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলে।

আগে এই ভালভ ঠিক করার জন্য ওপেন হার্ট সার্জারি অর্থাৎ বুক কেটে অপারেশন করতে হতো। ব্যথামুক্ত করতে অ্যানেসথেসিয়া করতে হতো এবং রক্ত লাগত।

পাঁচ-ছয় বছর ধরে বুক না কেটে পায়ে ছোট্ট একটি ছিদ্র করে ভালভ বসিয়ে দিই। এতে সুবিধা হলো ঝুঁকি কম, রোগীর কষ্ট কম হয়। অজ্ঞান না করে কোনো ধরনের রক্তপাত ছাড়াই অস্ত্রোপচার করা যায়। রোগী তিন দিনের মধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়ি চলে যেতে পারে।
তবে চিকিৎসাটা একটু ব্যয়বহুল।

ইউনাইটেড হাসপাতালে এ পর্যন্ত আটটি ভালভ প্রতিস্থাপন করেছি। প্রতিটি অপারেশন সুন্দরভাবে হয়েছে। আমাদের রোগীরা এখনো ভালো আছে।

লেখক : সিনিয়র কনসালট্যান্ট, কার্ডিওলজি

ইউনাইটেড হাসপাতাল

মন্তব্য

টিএভিআর পদ্ধতিতে অ্যাওটিক ভালভের চিকিৎসা

    অধ্যাপক ডা. আফজালুর রহমান
শেয়ার
টিএভিআর পদ্ধতিতে অ্যাওটিক ভালভের চিকিৎসা
ডা. আফজালুর রহমান

হার্টের চারটা ভালভ থাকে। অ্যাওটিক ভালভের মাধ্যমে হার্ট থেকে রক্ত শরীরের সব জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে। অনেক সময় এ অ্যাওটিক ভালভ সংকুচিত হয়ে যেতে পারে। তখন হার্টের পাশাপাশি শরীরের বিভিন্ন জায়গায় রক্ত সঞ্চালন কমে যাবে।

এ সময় রোগী কিছু উপসর্গ দেখা দেয়। যেমনশ্বাসকষ্ট, ক্লান্তিবোধ, অজ্ঞান হয়ে পড়া। রোগীর ইকো করলে ৯৫ শতাংশ ক্ষেত্রে বোঝা যাবে অ্যাওটিক ভালভ কেমন আছে। ইকো করে যদি দেখা যায় অ্যাওটিক সংকুচিত হয়ে গেছে তাহলে ভালভ পরিবর্তন না করলে কোনো ওষুধ কাজ করে না।
ভালভ পরিবর্তনে যত দেরি হবে রোগীর তত বেশি ক্ষতি হবে। অ্যাওটিক ভালভের এখন আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি এসেছে, যেটাকে টিএভিআর বলা হয়। বুক কেটে খুলতে হয় না। পায়ের ধমনী দিয়ে ট্রান্স ক্যাথেটার অ্যাওটিক ভালভ রিপ্লেসমেন্ট (টিএভিআর) করি।
যারা সার্জারির জন্য যোগ্য নয়, এ ছাড়া যাদের বয়স ৭০ বছরের বেশি অথবা যারা কোমরবিডিটি রোগে ভুগছে যেমনস্ট্রোক, কিডনির সমস্যা, গুরুতর ফুসফুসের সমস্যা, লিভারের সমস্যা তাদের টিএভিআর পদ্ধতিতে অপারেশন করতে হয়। অপারেশনের মাধ্যমে এই ভালভ প্রতিস্থাপনের চিকিৎসা করা হয়।

লেখক : সিনিয়র কনসালট্যান্ট, ইউনাইটেড হাসপাতাল

মন্তব্য

কার্ডিওলজিস্টদের সুস্থ ও ফিট থাকা প্রয়োজন

    ডা. রেয়ান আনিস
শেয়ার
কার্ডিওলজিস্টদের সুস্থ ও ফিট থাকা প্রয়োজন
ডা. রেয়ান আনিস

কার্ডিওলজিস্টদের নিজেদের সুস্থ ও ফিট থাকার প্রতি নজর দিতে হবে। চিকিৎসক হিসেবে আমি নিজে যদি ফিট না থাকি কিংবা আমার জীবনযাপন যদি স্বাস্থ্যকর না হয় তাহলে রোগীকে কিভাবে পরামর্শ দেব? কার্ডিওলজিস্ট হিসেবে আমরা কিন্তু অনেক চাপযুক্ত জীবন যাপন করি। কার্ডিওলজিস্টরা মানুষের হার্ট নিয়ে কাজ করে। তাদের নিজেদের মানসিক ও শারীরিক সুস্থতা খুব গুরুত্বপূর্ণ, যাতে আমরা ভালোভাবে রোগীদের চিকিৎসা করতে পারি।

এখন রোগীদের প্রসঙ্গে আসি। হার্টের স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো খাদ্যাভ্যাস ও শারীরিক কাজকর্ম। আমরা রোগীদের হার্টের বা হার্ট অ্যাটাকের চিকিৎসা করি, এনজিওপ্লাস্টি করি, বাইপাস করি, পেসমেকার বসাইঅনেক কিছু করি। কিন্তু দিন শেষে যখন রোগী বাসায় যায় তখন সবাই আমাদের কাছে একটাই প্রশ্ন করে, কী খাব? মানুষের মধ্যে এ নিয়ে অনেক ভুল ধারণা রয়েছে।

খাওয়ার তিনটা ভাগ আছে। একটা হলো কার্বোহাইড্রেট বা শর্করা, একটা হলো প্রোটিন বা আমিষ, আরেকটা হলো ফ্যাট বা স্নেহজাতীয় খাবার। অবাক করার মতো বিষয়, আমার ৫০ শতাংশ রোগী শর্করা কী তা কোনো দিন শোনেইনি। আবার আমি যদি বলি ভাত, তাহলে বুঝতে পারে।

আমাদের দেশে আরেকটা ভুল ধারণা আছে যে হার্ট অ্যাটাক হলে আর জীবনে কোনো দিন গরুর মাংস খাওয়া যাবে না। অবশ্যই আপনি গরুর মাংস খেতে পারবেন। আমি আমার সব রোগীকে বলি, আপনার যদি গরুর মাংস খেতে ভালো লাগে তাহলে আপনি সপ্তাহে এক দিন তা খেতে পারেন। আপনি তো এক কেজি গরুর মাংস খাবেন না একবেলায়, বড়জোর চার-পাঁচটি টুকরা খাবেন। এটা আপনাকে মেরে ফেলবে না।

মূল কথা হলো, একজন হৃদরোগীর যে খাদ্য পরিকল্পনা তা পরিবারের অন্য সদস্যদের মতোই। শুধু বেড়ে ওঠা শিশু ছাড়া। অর্থাৎ প্রাপ্তবয়স্ক সবাইকে একটা ভারসাম্যপূর্ণ খাবারের মধ্যে থাকতে হবে। এর মধ্যে শর্করা, আমিষ ও স্নেহজাতীয় খাবার থাকতে হবে।

শর্করার ক্ষেত্রে যাদের স্থূলতা আছে, তাদের ভাত খাওয়ার ব্যাপারে সাবধানী হতে হবে। ভাত সবচেয়ে খারাপ জিনিস। কারণ এতে প্রচুর সুগার বা চিনি থাকে। উচ্চ আঁশযুক্ত খাবার খেতে হবে। এটাকে আমরা কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেট বা জটিল শর্করা বলি। লাল চাল, মোটা চাল, লাল আটা, ওটসএগুলো কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেট। লাল আটা শিশুদের জন্যও ভালো। সে জন্যই আমি বলছি পরিবারের সবার জন্য যা ভালো ও স্বাস্থ্যকর তা হার্টের রোগীর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।

এবার আমিষের কথা বলি। আমরা সবাই বলি উদ্ভিজ্জ আমিষ খুব ভালো। বর্তমানে পুরো পৃথিবীতেই এটা নিয়ে খুব কথা হচ্ছে। যেমনসব ধরনের ডাল, বুট, রাজমা, বীজ ইত্যাদি। এ ছাড়া মাছ প্রাণিজ আমিষের খুব ভালো উৎস। আমাদের দেশে তো মাছের কোনো অভাব নেই। মাংসের মধ্যে মুরগি থেকে পাওয়া প্রোটিনও খুব ভালো। কিন্তু আমি মনে করি পোল্ট্রি মুরগি খুব ভালো কিছু নয়। যাদের সামর্থ্য আছে তারা দেশি মুরগি খেতে পারে।

তবে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো শাক-সবজি। বলা হয়ে থাকে, প্রতিদিনের খাদ্যাভ্যাস বা খাদ্যতালিকায় অন্তত শাক-সবজি ও ফলমূল থাকা উচিত। আমাদের দেশের মানুষ সবজি খেতেই চায় না। তারা মনে করে, আলু, কচু এগুলো সবজি। আসলে এগুলো সবজি নয়, কার্বোহাইড্রেট। আমাদের দেশে লালশাক, পালংশাক, পুঁইশাক, ঢেঁকিশাক, কলমিশাক, পাঁচমিশালি শাকসহ বহু ধরনের শাক আছে। সবুজ শাক-সবজিতে প্রচুর অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকে। এই অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট হার্টের জন্য খুব ভালো। এ ছাড়া যত রঙিন শাক-সবজি ও ফলমূল আমরা আমাদের খাদ্যতালিকায় যুক্ত করতে পারব তত ভালো। যেমনটমেটো, গাজর, বিট, ডালিম এগুলো আমরা সহজেই পাই। হার্টের রোগীদের এমন কিছু ওষুধ খেতে হয় যেগুলোর ফলে শরীর থেকে লবণ, পটাসিয়াম ইত্যাদি কমে যেতে পারে। সবুজ শাক-সবজি, ডাল, মাল্টা, কমলালেবু, টমেটোতে পটাসিয়াম থাকে।

আমাদের দেশে আমরা সব কিছু বেশি রান্না করে ফেলি। প্রয়োজনের বেশি রান্না করা উচিত নয়। আমরা কাঁচা খাবার খেতে চাই না। যেমনশীতে আমরা গাজর খেতে পারি।  এ ছাড়া আমরা জাতি হিসেবে অনেক বেশি লবণ খাই। এটা আমাদের নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।

লেখক : সিনিয়র কনসালট্যান্ট, ইন্টারভেনশনাল কার্ডিওলজি, ইউনাইটেড হাসপাতাল

মন্তব্য

হার্টের চিকিৎসায় যত বৈষম্য

    ডা. ফাতেমা বেগম
শেয়ার
হার্টের চিকিৎসায় যত বৈষম্য
ডা. ফাতেমা বেগম

পৃথিবীজুড়ে এখন হার্টের চিকিৎসা সমানভাবে হচ্ছে না। একই দেশে হয়তো গরিবরা এক রকম চিকিৎসা পাচ্ছে, ধনীরা এক রকম পাচ্ছে, নারীরা এক রকম পাচ্ছে। অর্থাৎ একেক দেশে ব্যক্তিরা যার যার অবস্থান অনুযায়ী একেক রকম চিকিৎসা পাচ্ছে। এবারের বিশ্ব হার্ট দিবসের প্রতিপাদ্য লক্ষ করলে আমরা দেখব, হার্টের চিকিৎসাকে ছড়িয়ে দেওয়া এবং এখানে সমতা আনার ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে।

আগামী ২০২৬ সাল পর্যন্ত এই প্রতিপাদ্যের ওপরই কাজ করা হবে। অর্থাৎ স্থানীয় ও বৈশ্বিক পর্যায়ে একটি প্ল্যাটফরম করে সেই প্ল্যাটফরমের অধীনে হার্টের রোগীদের হৃদয় দিয়ে চিকিৎসা করা হবে এবং এই চিকিৎসায় যাতে সামাজিক অবস্থান অনুযায়ী কোনো ভেদাভেদ না হয়, সেদিকে দৃষ্টি দিতে হবে।

এখন আমাদের দেশে তো চিকিৎসায় সমতা নেই। এখানে সরকারি হাসপাতালে এক রকম চিকিৎসা, বেসরকারি পর্যায়ে এক রকম চিকিৎসা।

আবার জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে আরেক রকম চিকিৎসা। হার্টের চিকিৎসার জন্য একটি সর্বজনীন প্ল্যাটফরম করে সবার একই রকম চিকিৎসা পাওয়া নিশ্চিত করতে হবে।

আমাদের এখানে চিকিৎসার পার্থক্যটা কোথায় হচ্ছে? দেখা যাচ্ছে, হার্ট অ্যাটাকের রোগী যখন উপজেলায় যাচ্ছে সে হয়তো কোনো ওষুধই পাচ্ছে না। বেসরকারি হাসপাতালে গেলে যাদের সামর্থ্য আছে তারা হয়তো সঙ্গে সঙ্গেই এনজিওগ্রাম করাতে পারছে।

আবার সরকারি হাসপাতালে যারা যাচ্ছে তারা কিছুটা সুবিধা পাচ্ছে, আবার কিছুটা পাচ্ছে না। এটাকে আমাদের সমান করতে হবে।

আবার একজন নারী কার্ডিওলজিস্ট হিসেবে নারীদের কথাও একটু আলাদা করে বলতে চাই। আগে একটা মিথ ছিল, নারীদের হার্টের অসুখ কম হয়। কিন্তু এখন আর এটা মনে করা হয় না।

নারীদের পুরুষদের মতো সমান হার্টের অসুখ হয়, কিন্তু পুরুষদের তুলনায় ১০ বছর পর হয়। নারীরা এখন অনেক বেশি বাইরে যায়। সেই সঙ্গে তাদের ঘর ও সংসারের চিন্তা, বাচ্চাদের চিন্তাএসবও করতে হয়। স্থূলতা, মানসিক চাপ, ডায়াবেটিস ইত্যাদি বেড়েছে। বিদেশে ধূমপায়ী নারীর সংখ্যা বেড়েছে। সব মিলিয়ে এখন নারী হৃদরোগীর সংখ্যাও অনেক।

এখন হার্টের চিকিৎসার ক্ষেত্রে নারী ও পুরুষদের মধ্যে অসমতা আছে। অনেক ক্ষেত্রেই নারীদের বুকে ব্যথা শুরু হলে আমরা দেখি তাদের তুলনামূলক দেরি করে হাসপাতালে আনা হয়। ভাবা হয়, এটা খুব উদ্বেগজনক কিছু নয়। ফলে চিকিৎসাও বিলম্বিত হয়। বিশেষ করে গ্রামের নারীদের পেছনে খরচ করার প্রবণতা আমরা কম দেখি। কারণ তারা উপার্জন করছে না। আমাদের দেশে মনে করা হয়, যে উপার্জন করে তাকেই বেশি গুরুত্ব দিতে হবে।

এ জন্যই একটা গ্লোবাল প্ল্যাটফরম দরকার, যেখানে সবাই সমান চিকিৎসা পাবে। আরেকটি বিষয় বলি, এখনো আমাদের দেশে ও অন্যান্য দেশে মানুষ মনে করে যে উচ্চ ঝুঁকিসম্পন্ন রোগীদের চিকিৎসার জন্য নারী চিকিৎসকদের ওপর নির্ভর করা যায় না। আমাদের এই চিন্তা ও উপলব্ধির জায়গাটাও বদলাতে হবে। আমাদের দেশে দুই শর বেশি যোগ্য নারী কার্ডিওলজিস্ট আছেন। কিন্তু কর্মক্ষেত্রে বা ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে দেখা যায়, নারীদের সব সময় উপেক্ষা করা হচ্ছে। আমাদের এখানে নারী কার্ডিওলজিস্টরা যে অবমূল্যায়িত, তা নিয়েও আমাদের কাজ করতে হবে। আমরা যখন আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফরমে যাই তখন দেখি তাদেরও একই অবস্থা। সুতরাং হার্টের চিকিৎসায় রোগী, চিকিৎসক ও চিকিৎসাব্যবস্থার সব ক্ষেত্রেই সমতা প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।

লেখক : সিনিয়র কনসালট্যান্ট

ইউনাইটেড হাসপাতাল

 

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ