রেকর্ড ঋণ পরিশোধের চাপ

এম আর মাসফি
এম আর মাসফি
শেয়ার
রেকর্ড ঋণ পরিশোধের চাপ

ক্ষমতাচ্যুত হাসিনা সরকারের নেতাকর্মীরা বিপুল অর্থ বিভিন্ন মাধ্যমে দেশের বাইরে পাচার করেন। যার ফলে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন থেকে এক লাফে ১৮ বিলিয়ন ডলারে নামে। বৈদেশিক মুদ্রার সংকটে পড়ে যায় সরকার। ঋণ পরিশোধ নিয়েও দেখা দেয় অনিশ্চয়তা।

অনেক বৈদেশিক প্রতিষ্ঠানের বিলও বকেয়া পড়ে যায়। আবার ২০২৪ সালে দেশে বাস্তবায়িত হওয়া বড় প্রকল্পগুলোর গ্রেস পিরিয়ড শেষ হওয়ায় ঋণ পরিশোধের চাপও অত্যধিক বাড়ে। রেকর্ড চার বিলিয়ন ডলার পরিশোধ করতে হয়েছে ২০২৪ সালে।

অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) বৈদেশিক ঋণের তথ্য প্রকাশ না পেলেও ইআরডির ঋণ পরিশোধের তথ্য প্রাক্কলন করে ও কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়।

২০২৪ সালে রেকর্ড চার বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ করতে হয়েছে। যার মধ্যে শুধু সুদ পরিশোধ করতে হয়েছে দেড় বিলিয়ন ডলারের বেশি। মূলত আন্তর্জাতিক ঋণের সুদহার রেকর্ড ৬ শতাংশে ওঠায় বেড়ে যায় সুদ পরিশোধ।

রেকর্ড ঋণ পরিশোধের চাপগত ১৫ বছরে উন্নয়নের নামে ভুল বয়ান দিয়ে দেদার বিদেশি ঋণ নেয় হাসিনা সরকার।

পালানোর আগে দেশের অর্থনীতিকেও ধ্বংস করে রেখে যায়। ৪৮ বিলিয়ন ডলারের রিজার্ভ ১৮ বিলিয়ন ডলারে নামিয়ে দেয়। যার ফলে বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের চাপ অন্তর্বর্তী সরকারকে বিপাকে ফেলে।

অর্থনীতিবিদরা বৈদেশিক মুদ্রায় বিদেশি ঋণ নেওয়াকে সব সময় স্বাগত জানান। গত ১৫ বছরে অনেক বিদেশি ঋণও নেওয়া হয়েছে।

তবে এসব ঋণের বেশির ভাগই নেওয়া হয়েছে দর-কষাকষি ও বাছবিচারহীনভাবে; যা সরকারের দায়দেনা পরিস্থিতিতে চাপ বাড়িয়েছে। সুদসহ ঋণ পরিশোধের ব্যয় বাড়ায় বাজেটের ওপর চাপ তৈরি করবে বলে মনে করছেন তাঁরা।

ইআরডির তথ্য মতে, গত অর্থবছরে ৩.৩৬ বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক ঋণের সুদ ও আসল পরিশোধ করতে হয়েছিল, চলতি অর্থবছরে এই ঋণ পরিশোধের পরিমাণ দাঁড়াবে প্রায় সাড়ে চার বিলিয়ন ডলার। ফলে বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ করতে গিয়ে অর্থনীতিতে আরেকটি চাপ তৈরির আশঙ্কা রয়েছে। ২০২৬ সালের পর রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে নেওয়া বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ঋণের আসল পরিশোধ শুরু হবে। একই সময়ে মেট্রো রেল প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ের ঋণের আসল পরিশোধও শুরু হবে। এতে ঋণ পরিশোধের বোঝা আরো বাড়বে।

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, আমাদের ঋণ বাড়ছে, সেই সঙ্গে পরিশোধও বাড়ছে। আগামী দু-তিন বছরের মধ্যে ঋণ পরিশোধে বেড়ে পাঁচ থেকে ছয় বিলিয়ন ডলার হয়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এর মধ্যে আমরা রাজস্ব আদায় যদি বাড়াতে না পারি এবং বৈদেশিক মুদ্রার জোগানও যদি না বাড়ে, তাহলে ঋণ পরিশোধের চাপে অর্থনীতিতে দুর্দশা নেমে আসতে পারে।

ইআরডিসংশ্লিষ্টরা বলছেন, পদ্মা সেতু রেল সংযোগ ও বঙ্গবন্ধু টানেলের মতো বেশ কিছু মেগাপ্রকল্পের গ্রেস পিরিয়ড শেষ হওয়ায় বাংলাদেশের ওপর এসব প্রকল্পের জন্য নেওয়া ঋণের আসল ও সুদ পরিশোধের চাপ ক্রমে বাড়ছে। রূপপুর পারমাণকি বিদ্যুৎ প্রকল্প, মেট্রো রেলের মতো বড় প্রকল্পগুলোর ঋণ পরিশোধ শুরু হলে চাপ আরো বেড়ে যাবে।

অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদনে দেখা যায়, চলতি বছরের ১০ মাসে (জানুয়ারি-অক্টোবর) বৈদেশিক ঋণ ছাড় হয়েছে সাত বিলিয়ন ডলার। এই সময়ে ১.৪৪ বিলিয়ন দিয়েছে বিশ্বব্যাংক, এডিবি দিয়েছে ১.২৯ বিলিয়ন, জাপান দিয়েছে ১.৩৭ বিলিয়ন আর রাশিয়া দিয়েছে ০.৯৫ বিলিয়ন ডলার। ১০ মাসে বৈদেশিক ঋণের প্রতিশ্রুতি এসেছে চার বিলিয়ন ডলার। যার মধ্যে ১.২১ বিলিয়ন বিশ্বব্যাংক।

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

ভারতের চাল রপ্তানি দুই বছরে সর্বনিম্ন

বাণিজ্য ডেস্ক
বাণিজ্য ডেস্ক
শেয়ার
ভারতের চাল রপ্তানি দুই বছরে সর্বনিম্ন

চাল রপ্তানিতে ভারতের আয়ের পরিমাণ দুই বছরে সর্বনিম্ন পর্যায়ে দাঁড়িয়েছে। চাহিদার চেয়ে জোগান বেশি হওয়ায় রপ্তানিতে ভাটা পড়েছে। ভারতের সিদ্ধ চালের (৫ শতাংশ ভাঙা) প্রতি টনের দাম এখন ৪০৯ থেকে ৪১৫ ডলার। ২০২৩ সালের জুনের পর এটিই সর্বনিম্ন দাম।

গত সপ্তাহেও প্রতি টনের দাম ছিল ৪১৩ থেকে ৪২০ ডলার।

অন্যদিকে সাদা চালের (৫ শতাংশ ভাঙা) দাম এখন প্রতি টন ৩৯০ থেকে ৪০০ ডলার। শুধু বিশ্ববাজারে চাহিদা কমে যাওয়া নয়, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলেও চাল উৎপাদন নিয়ে সমস্যায় পড়তে পারে ভারত। দেশটির আবহাওয়া বিভাগ জানিয়েছে, গত ১২৪ বছরের মধ্যে ফেব্রুয়ারির তাপমাত্রা ছিল সর্বোচ্চ।

জলবায়ুর এই অচেনা আচরণ চাল উৎপাদনের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। দেশটির ভূ-বিজ্ঞান মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, চলতি অর্থবছরে চালের উৎপাদন কমতে পারে ৬ থেকে ১০ শতাংশ। ভারতের চাল রপ্তানির বাজারে মন্দাভাব দেখা দেওয়ায় বাড়তি সুবিধা ভোগ করে এগিয়ে গেছে ভিয়েতনাম। ভিয়েতনাম চালের দাম কম রাখায় এশিয়ার অন্যান্য চাল রপ্তানিকারক দেশগুলো চাপে পড়েছে।
গত সপ্তাহে ভিয়েতনামের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানায়, বাংলাদেশে এক লাখ টন চাল রপ্তানির চুক্তি হয়েছে। ভিয়েতনাম থেকে চাল আমদানিতে বাংলাদেশ ৫৭৮ কোটি ৫৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা ব্যয় করবে। এ ছাড়া নতুন ও প্রচলিত বাজারে ভিয়েতনামিজ চালের প্রচারণা চালানো হবে।

ভিয়েতনামের মেকং বদ্বীপের এক চাল ব্যবসায়ী জানান, ভিয়েতনামের বাজারে পর্যাপ্ত সরবরাহ আছে। চাহিদা থাকলেও দাম কমছে।

দেশটিতে সিদ্ধ চালের (৫ শতাংশ ভাঙা) প্রতি টনের দাম ৩৮৯ ডলার। গত সপ্তাহে প্রতি টনের দাম ছিল ৩৯৩ ডলার। সূত্র : দ্য ইকোনমিক টাইমস

 

 

মন্তব্য

পানচাষে ভাগ্য বদলাচ্ছে কৃষকের

মনোতোষ হাওলাদার, বামনা
মনোতোষ হাওলাদার, বামনা
শেয়ার
পানচাষে ভাগ্য বদলাচ্ছে কৃষকের

একসময় যে জমিটি ছিল জঙ্গলে ঘেরা পরিত্যক্ত, যে জায়গাটিকে মালিক বছরে একবারও তাকিয়ে দেখতেন না; সেই পরিত্যক্ত জমিতে এখন সবুজের বিপ্লব শুরু হয়েছে। পরিত্যক্ত এসব জমিতে এখন চোখে পড়ে সবুজ পানের বরজ।  

উৎপাদন খরচ কম ও বহুবর্ষজীবী হওয়ায় পান চাষে আগ্রহ বাড়ছে কৃষকদের। বরগুনার বামনা উপজেলায় ব্যাপক হারে পান চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে।

উপজেলার বামনা সদর ইউনিয়নসহ ডৌয়াতলা, রামনা ও বুকাবুনিয়া ইউনিয়নে এবার পানের আশানুরূপ ফলন হয়েছে। ফলে ধীরে ধীরে পান চাষে ঝুঁকছেন প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষকরা।

এদিকে পান চাষ বৃদ্ধি পাওয়ায় উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গড়ে উঠেছে পাইকারি পানের বাজার। প্রতি হাটে লাখ লাখ টাকার পান কেনাবেচা হয়।

কোনো কোনো হাট বসে সন্ধ্যার পর, আবার কোনো হাটে কেনাবেচা শুরু হয় ভোরবেলা। এই পাইকারি বাজারগুলো থেকে ক্ষুদ্র পান ব্যবসায়ীরা খুচরা বাজারে বিক্রির জন্য পান কিনে নিয়ে আসেন। আবার পাইকাররা ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পান চালান করেন।

পান চাষ একটি দীর্ঘমেয়াদি লাভজনক ফসল।

অনেক কৃষক পান চাষ করে অর্থনৈতিক চাহিদা মিটিয়ে সংসার চালাচ্ছেন বলে জানা যায়। পান চাষে তুলনামূলকভাবে অন্যান্য ফসলের চেয়ে রাসায়নিক সার অনেক কম ব্যবহার হয় ও জৈব সারের ব্যবহার অনেকটাই বেশি।

চাষাবাদ পদ্ধতিতে পান চাষে প্রথমে কাটিং সংগ্রহ করে জমিতে রোপণ করতে হয়। এরপর এক থেকে দুই মাসের মধ্যে ডাল থেকে সবুজ লতা বের হয়ে ছেয়ে যায় পানপাতায়। এরপর শুরু হয় চাষিদের পান সংগ্রহ।

এক বিঘা জমিতে পান চাষ করে প্রতিবছর প্রায় চার লাখ টাকা পর্যন্ত আয় করা সম্ভব বলে জানান পান চাষিরা। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে প্রাপ্ত তথ্য মতে, এ বছর উপজেলায় চারটি ইউনিয়নের মধ্যে পানের চাষ করেছেন কৃষকরা।

 

 

মন্তব্য

বগুড়ায় ‘শিল্প পার্ক’ পাল্টে দিতে পারে উত্তরাঞ্চলের অর্থনীতি

টি এম মামুন, বগুড়া
টি এম মামুন, বগুড়া
শেয়ার
বগুড়ায় ‘শিল্প পার্ক’ পাল্টে দিতে পারে উত্তরাঞ্চলের অর্থনীতি

বগুড়ায় শিল্প পার্ক স্থাপন করা গেলে চীন থেকে পণ্য আমদানি কমে যাবে ৫০ শতাংশ। অর্থাৎ বগুড়াতেই ৫০ শতাংশ পণ্য উৎপাদন করা হবে। পাল্টে যাবে বগুড়াসহ গোটা উত্তরাঞ্চলের অর্থনীতির চিত্র। যদিও এই মুহূর্তে উৎপাদন এবং সরকারকে রাজস্ব প্রদানের ক্ষেত্রে বগুড়ার অবস্থান শীর্ষে এবং বিনিয়োগ ও কারখানাভিত্তিক কর্মসংস্থানে দ্বিতীয়।

স্বল্প পুঁজি ও অল্প জনবল নিয়ে বিগত ১৬ বছর নিজ প্রতিষ্ঠান আঁকড়ে ধরে রেখেছেন এখানকার উদ্যোক্তারা।

বগুড়ায় ‘শিল্প পার্ক’ পাল্টে দিতে পারে উত্তরাঞ্চলের অর্থনীতিসূত্র দাবি করে, এখানকার শিল্প মালিকরা উৎপাদনব্যবস্থা আধুনিকায়নে বরাবরই মনোযোগী। শত বাধাবিপত্তি সত্ত্বেও দমে যাননি তাঁরা। স্বল্প পুঁজি নিয়েই বিসিকের অল্প জায়গা কাজে লাগিয়ে চাহিদাসম্পন্ন পণ্য উৎপাদন করেন।

পরিশ্রম ও কষ্ট করে কাজ ধরে রেখেছেন। শেখ হাসিনা সরকারের কাছে চেয়েও মেলেনি শিল্পের জন্য এতটুকু জায়গা। ‘শিল্প পার্ক’ স্থাপনের বিষয়টি শুধুই ছিল ছলনা। তবু মিথ্যা আশ্বাসে থেমে থাকেননি উদ্যোক্তারা।
বাজারে টিকে থাকার কৌশল হিসেবে পণ্যগুলোর উৎপাদনব্যবস্থা আধুনিকায়নে পদক্ষেপ নেন। ফলে বছরভিত্তিক পণ্য উৎপাদন এবং সরকারকে রাজস্ব দেওয়ার ক্ষেত্রে উত্তরাঞ্চলে সব বিসিক শিল্পনগরীকে পেছনে ফেলতে সক্ষম হয়েছে বগুড়া। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বগুড়ায় বিসিকের শিল্প পার্ক স্থাপন প্রকল্পটি গুরুত্ব পাচ্ছে।    

বিসিক শিল্প মালিক সমিতির সভাপতি মিল্টন ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপের স্বত্বাধিকারী আজিজুর রহমান মিল্টন জানান, বগুড়ার গুরুত্ব বিবেচনায় দ্রুত এখানে বিসিক শিল্প পার্ক করা প্রয়োজন। বাংলাদেশ লাইট ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের জেলা সাধারণ সম্পাদক ও কামাল মেশিনারিজের স্বত্বাধিকারী কামাল পাশা জানান, বগুড়া এত দিন অবহেলিত ছিল।

অতীতে শিল্পোদ্যোক্তাদের সঙ্গে বৈষম্যমূলক আচরণ করা হয়েছে।

বাংলাদেশ অ্যাগ্রিকালচারাল মেশিনারি মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশন (বামমা) জেলার সাধারণ সম্পাদক রাজেদুর রহমান রাজু জানান, দেশের অনেক বিসিক শিল্পনগরীতে প্লট ফাঁকা পড়ে আছে। অথচ বগুড়ায় শিল্প স্থাপনের জন্য উদ্যোক্তারা জায়গা পাচ্ছেন না। বিসিক শিল্পনগরীকে সম্প্রসারণ অথবা শিল্প পার্ক স্থাপিত হলে শুধু বগুড়া নয়, সারা দেশে এর প্রভাব পড়বে। ২০৩০ সালের মধ্যে চীন থেকে পণ্য আমদানি ৫০ শতাংশ কমিয়ে দেওয়া হবে। অর্থাৎ বগুড়াতেই ৫০ শতাংশ পণ্য উৎপাদন করা হবে। পাল্টে যাবে বগুড়াসহ উত্তরাঞ্চলের অর্থনীতির চিত্র।

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) কার্যালয় এবং বাংলাদেশ অ্যাগ্রিকালচারাল মেশিনারি মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশন জানিয়েছে, ১৯৬০ সালে উত্তরাঞ্চলের সর্বপ্রথম বিসিক শিল্পনগরী গড়ে ওঠে বগুড়ায়। দুই বছর পর ১৯৬২ সালে রাজশাহী, পাবনা ও দিনাজপুরে এবং ১৯৬৭ সালে রংপুরে বিসিক শিল্পনগরী গড়ে ওঠে। রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের ১৬ জেলার মধ্যে ১১টি জেলায় ১৯৮৪ থেকে ২০০০ সালের মধ্যে পর্যায়ক্রমে বিসিক শিল্পনগরীগুলো গড়ে ওঠে। বিনিয়োগ, পণ্য উৎপাদন, কর্মসংস্থানসহ সরকারকে রাজস্ব প্রদানের ক্ষেত্রে উত্তরাঞ্চলের ১৬টি বিসিক শিল্পনগরীর মধ্যে বগুড়া, রাজশাহী, পাবনা, দিনাজপুর ও রংপুর অন্য ১১টির চেয়ে অনেক এগিয়ে রয়েছে। বিসিক শিল্পনগরী থেকে প্রাপ্ত তথ্য মতে, পণ্য উৎপাদন এবং সরকারকে রাজস্ব প্রদানের ক্ষেত্রে বগুড়ার অবস্থান শীর্ষে। বগুড়ায় শিল্প খাতে বিনিয়োগ হয়েছে ৮৬৫ কোটি টাকা। মাত্র ৩৩.১৭ একর জায়গায় প্রতিষ্ঠিত বগুড়া বিসিক শিল্পনগরীতে সচল ৯০টি প্রতিষ্ঠান থেকে বছরে প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকার পণ্য উৎপাদন হচ্ছে। বছরে রাজস্ব আসে প্রায় ১৭০ কোটি টাকা। 

এখানকার মানুষ উৎপাদনমুখী হওয়ায় স্থানীয় উদ্যোক্তারা পঞ্চাশের দশকে সাবান, বস্ত্র, লৌহ, কাচ, সিরামিক, দিয়াশলাই এবং ট্যোবাকো খাতে অর্ধশত কলকারখানা গড়ে তোলেন। বিসিক শিল্পনগরী গড়ে ওঠার আগেই বগুড়া ‘শিল্পের শহর’ হিসেবে ব্যাপক পরিচিতি পায়। পরবর্তী সময়ে শহরের ফুলবাড়ী এলাকায় প্রথমে ১৪.৫০ একর জায়গায় বিসিক শিল্পনগরী গড়ে তোলা হয়। ব্যাপক চাহিদার কারণে ১৯৮০ সালে আরো ১৮.৬৭ একর জায়গা সম্প্রসারণ করা হয়। কিন্তু বর্ধিত শিল্পনগরীর প্লটগুলো কলকারখানায় ভরে যায়। এর পর থেকেই শিল্প স্থাপনের জন্য উদ্যোক্তারা জায়গা পেতে বিসিকে ধরনা দিতে থাকেন। তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার জরুরি এ বিষয়ে কর্ণপাত না করায় বাধ্য হয়েই উদ্যোক্তারা ফসলি জমিতে কলকারখানা স্থাপন করেন। এতে করে একদিকে যেমন ফসলি জমি কমতে থাকে, তেমনি পরিবেশদূষণও বাড়তে থাকে। এক পর্যায়ে ২০১৪ সালে বিসিক কর্তৃপক্ষ দ্বিতীয় শিল্পনগরী স্থাপনের উদ্যোগ নেয়। সেটিও মুখ থুবড়ে পড়লে ২০১৮-তে শাজাহানপুর উপজেলায় ৩০০ একর জমিতে ‘উত্তরাঞ্চল কৃষিজাত পণ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্প পার্ক’ স্থাপনের প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। এতে জমি অধিগ্রহণসহ ৬৪০টি প্লট নির্মাণে ব্যয় ধরা হয় ৯২০ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। প্রস্তাবনাটি পরিকল্পনা কমিশনে গেলেও রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় তা আটকে দেওয়া হয়।

বিসিকের পরিচালক মীর শাহে আলম জানান, প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই প্রতিবেদন পেলেই দ্রুত অনুমোদনের উদ্যোগ নেওয়া হবে। বগুড়া চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি সাইরুল ইসলাম জানান, শেখ হাসিনার শাসনামলসহ দীর্ঘ ১৬ বছর বগুড়া ছিল উপেক্ষিত ও বঞ্চিত। এখানে শিল্প পার্ক স্থাপন করা হলে অর্থনীতিতে বিরাট বিপ্লব ঘটবে। বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) বগুড়া জেলা কার্যালয়ের উপমহাব্যবস্থাপক এ কে এম মাহফুজুর রহমান জানান, প্রস্তাবিত প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হলে অর্থনীতির গতিশীলতা নতুন মোড় পাবে এবং বগুড়া অঞ্চলের লক্ষাধিক মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।

 

মন্তব্য

বিশ্ববাজারে কেন বাড়ছে সোনার দাম

    ♦ ১ মাসে বিশ্ববাজারে সোনার দাম বেড়েছে ৬৩.১৪ ডলার ♦ গত ৯ দিনে বেড়েছে প্রায় ৫৮ ডলার
বাণিজ্য ডেস্ক
বাণিজ্য ডেস্ক
শেয়ার
বিশ্ববাজারে কেন বাড়ছে সোনার দাম

বিশ্ববাজারে সোনার দাম ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে। গতকাল শনিবার প্রতি আউন্সের দাম বাড়ে ৬.৮৭ ডলার। এতে বিশ্ববাজারে প্রতি আউন্স সোনার দাম বেড়ে দাঁড়ায় দুই হাজার ৯৮৬.৫ ডলার। বাজার বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্পের শুল্কনীতি নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হওয়াই মূল্যবৃদ্ধির মূল কারণ।

গত ৩০ দিনে বিশ্ববাজারে সোনার দাম বেড়েছে ৬৩.১৪ ডলার। এর মধ্যে গত ৯ দিনে বেড়েছে প্রায় ৫৮ ডলার। ফলে বাংলাদেশ, ভারতসহ সব দেশের বাজারে সোনার দাম বেড়েছে। সোনার মূল্যবৃদ্ধির পেছনে আছে ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিভিন্ন দেশের পণ্যে যুক্তরাষ্ট্রের আমদানি শুল্ক বৃদ্ধির চাপ এবং তার জেরে শুল্কযুদ্ধের আশঙ্কা।

ফলে রাজনৈতিক, কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক জটিলতা তৈরি হচ্ছে। সুরক্ষিত বিনিয়োগের ক্ষেত্র হিসেবে অনেকে সোনার দিকে ঝুঁকছেন। শেয়ারবাজার থেকে পুঁজি প্রত্যাহার করেও অনেকে সোনা কিনছেন। বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতির কারণে মানুষ নিজেদের অর্থ ব্যবস্থাপনার বিষয়ে শঙ্কিত।
মানুষ নিরাপদ বিনিয়োগমাধ্যম হিসেবে সোনার দিকে ঝুঁকছে। এ কারণে সোনার দাম আরো বাড়বে বলে মনে করছেন ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিলের প্রধান বাজার কৌশলবিদ জো কাভাতোনি।

ট্রাম্প যেভাবে শুল্ক আরোপ করছেন, তাতে যুক্তরাষ্ট্রসহ সারা বিশ্বেই মূল্যস্ফীতি বাড়তে পারে। এটাই সোনার প্রতি আকৃষ্ট হওয়ার কারণ বলে মনে করেন জো কাভাতোনি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর সোনার রিজার্ভ আবার বাড়ছে।

মানুষও সোনার বার ও সোনাভিত্তিক এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ডে (ইটিএফ) বিনিয়োগ বাড়াচ্ছে। ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিলের বার্ষিক প্রতিবেদনের তথ্যানুসারে, গত বছর সারা বিশ্বে সোনা বেচাকেনা হয়েছে চার হাজার ৯৭৪ টন।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকও সোনার মজুদ বাড়াচ্ছে। গত তিন বছরে বিশ্বের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো সম্মিলিতভাবে এক হাজার টনের বেশি সোনা কিনেছে। এর মধ্যে গত বছর সর্বোচ্চ ৯০ টন সোনা কিনেছে পোল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গোল্ড প্রাইস ডট অর্গের তথ্যানুসারে, গত ২০ বছরে সোনার দাম বেড়েছে দুই হাজার ৫৩৮.৪২ ডলার।

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ