বাংলাদেশে আসছে স্টারলিংকের ইন্টারনেট

বাণিজ্য ডেস্ক
বাণিজ্য ডেস্ক
শেয়ার
বাংলাদেশে আসছে স্টারলিংকের ইন্টারনেট

বিশ্বেজুরে স্টারলিংকের স্যাটেলাইটভিত্তিক ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা এখন চার কোটি। জনবিচ্ছিন্ন প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে দ্রুত স্টারলিংকের জনপ্রিয়তা বাড়ছে।

বাংলাদেশেও ব্যবসা করতে আগ্রহী স্টারলিংক। গত সপ্তাহে এ ব্যাপারে স্পেসএক্স, টেসলার প্রতিষ্ঠাতা ও এক্সের (সাবেক টুইটার) মালিক ইলন মাস্কের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের আলোচনাও হয়েছে।

সারা বিশ্বে ১০০টিরও বেশি দেশে সেবা দিচ্ছে স্টারলিংক। উচ্চগতির ইন্টারনেট সেবাটি বাংলাদেশে চালু হলে প্রত্যন্ত গ্রাম, চরাঞ্চল ও পাহাড়ি এলাকার মানুষ উপকৃত হবে।

স্টারলিংক কী : সহজে বলতে গেলে স্টারলিংক হলো একটি সিস্টেম। মোট ৪২ হাজার লো আর্থ অরবিট বা এলইও স্যাটেলাইট দিয়ে একটি ইন্টারনেট কাভারেজ তৈরি করতে যাচ্ছে ইলন মাস্কের কম্পানি স্পেসএক্স।

যত বেশি পরিমাণ স্যাটেলাইট মহাকাশে পাঠানো হবে, স্টারলিংকের ইন্টারনেট সেবা তত উন্নতমানের হবে। ২০১৯ সাল থেকে কম্পানিটি এখন পর্যন্ত প্রায় সাত হাজার স্যাটেলাইট পৃথিবীর নিম্ন কক্ষপথে পাঠিয়েছে। স্টারলিংক সিস্টেম তার স্থাপনের ঝামেলা ছাড়াই ইন্টারনেট সেবা দিয়ে থাকে।

সাবমেরিন কেবলনির্ভর ইন্টারনেট সেবার সঙ্গে স্যাটেলাইটভিত্তিক ইন্টারনেট সেবা স্টারলিংকের এটা অন্যতম বড় পার্থক্য।

সমুদ্রের তলদেশ দিয়ে তারের মাধ্যমে ব্যান্ডউইডথ এনে মোবাইল নেটওয়ার্ক অপারেটর ও ইন্টারনেট সার্ভিস প্রভাইডাররা (আইএসপি) মানুষকে ইন্টারনেট সেবা ব্যবহারের সুবিধা দিয়ে থাকে। সমুদ্রের তলদেশে বসানো এই তার কোনো কারণে কাটা পড়লে ইন্টারনেট সেবা ব্যবহারে বিঘ্ন ঘটে। স্টারলিংকের সেবা ব্যবহারে এই ঝামেলা পোহাতে হয় না। এ ছাড়া গোপনীয়তা বজায় রেখে যোগাযোগের সুযোগ দিয়ে থাকে স্টারলিংক। আবহাওয়া খারাপ থাকলেও স্টারলিংকের ইন্টারনেট সেবা সচল থাকে।
স্টারলিংকের ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, শীত, গরম, ঝড়, ভারি বৃষ্টিপাতের মধ্যেও ইন্টারনেট সেবা ব্যবহার করা যাবে। আবহাওয়ার তীব্রতাভেদে সিগনাল দুর্বল হলেও ইন্টারনেট সংযোগ বহাল থাকবে।

যেভাবে কাজ করে স্টারলিংক : স্টারলিংকের স্যাটেলাইটগুলো মহাকাশ থেকে রেডিও ওয়েভের মাধ্যমে ডেটা স্থানান্তর করে থাকে। এই কাজের জন্য সর্বপ্রথম গ্রাউন্ড স্টেশন থেকে ডেটা পাঠানো হয় পৃথিবীর নিম্ন কক্ষপথে থাকা স্যাটেলাইটগুলোতে। ৫৫০ কিলোমিটার উঁচুতে ঘুরতে থাকা স্যাটেলাইটগুলো ডেটা পাওয়ার পর তা ব্যবহারকারীদের স্থাপন করা স্টারলিংক টার্মিনালে সিগনাল পাঠায়। এরপর স্যাটেলাইটগুলো স্টারলিংক টার্মিনালের সঙ্গে কানেক্ট করে। পৃথিবীর খুব কাছাকাছি থাকায় স্যাটেলাইটগুলো দ্রুতগতির ইন্টারনেট সেবা প্রদান করে। প্রতিটি স্টারলিংক স্যাটেলাইটের ওজন ২৬০ কেজি। স্পেসএক্সের তৈরি একেকটি ফ্যালকন ৯ রকেটে একবারে ৬০টি স্যাটেলাইট মহাকাশে পাঠানো যায়।

খরচ কেমন হবে: স্টারলিংকের ইন্টারনেটে ডাউনলোড গতি ২৫-২২০ এমবিপিএস হলেও বেশির ভাগ ব্যবহারকারী ১০০ এমবিপিএসের বেশি গতি পান। স্টারলিংকে আপলোড গতি সাধারণত ৫ থেকে ২০ এমবিপিএস। স্টারলিংকের এই গতি পেতে চাইলে ব্যবহারকারীদের স্টারলিংক কিট কিনতে হবে। এতে থাকবে রিসিভার বা অ্যানটেনা, কিকস্ট্যান্ড, রাউটার, তার ও বিদ্যুৎ সরবরাহের ব্যবস্থা বা পাওয়ার সাপ্লাই। এটি কিনতে খরচ পড়বে ৩৪৯ ডলার থেকে ৫৯৯ ডলার (৪৩ থেকে ৭৪ হাজার টাকা)। মাসিক সাবস্ক্রিপশন ফি দিতে হবে ১২০ ডলার বা ১৪ হাজার ৫৪২ টাকা। তবে করপোরেট গ্রাহকদের জন্য স্টারলিংক কিটের দাম ও মাসিক খরচ আরো বেশি। তবে দেশভেদে খরচেও ভিন্নতা রয়েছে।

যেমনআফ্রিকার দেশগুলোতে স্টারলিংকের ইন্টারনেট সেবা ব্যবহারের খরচ বেশ কম। স্টারলিংকের সেবা চালু হয়েছে এমন ১৬টি দেশের মধ্যে অন্তত পাঁচটি দেশে স্থানীয় ইন্টারনেট সার্ভিস প্রভাইডারদের চেয়ে কম দামে ইন্টারনেট সেবা দিচ্ছে স্টারলিংক। সবচেয়ে কম দামে স্টারলিংকের ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারছেন কেনিয়ার ব্যবহারকারীরা। মাসিক খরচ মাত্র ১০ ডলার। এ ছাড়া আফ্রিকার বেশির ভাগ দেশে স্টারলিংকের সাবস্ক্রিপশন প্যাকেজগুলো ২৮ থেকে ৩৪ ডলারের মধ্যে সীমাবদ্ধ।

স্টারলিংকের ইন্টারনেট সেবা দেশে জনপ্রিয় হবে কি না তা খরচের পরিমাণসহ বেশ কয়েকটি বিষয়ের ওপর নির্ভর করছে।

দেশে কবে আসবে : ২০২৩ সাল থেকে বাংলাদেশে স্যাটেলাইটভিত্তিক ইন্টারনেট সেবাটি চালু করার বিষয়ে আলাপ-আলোচনা চলছে। স্টারলিংকের ওয়েবসাইট থেকে জানা গেছে, তারা চলতি বছরই বাংলাদেশে ইন্টারনেট সেবাটি চালু করতে চায়। তবে এ দেশে ব্যবসা করার আগে সরকারের কিছু শর্ত মানতে হতে পারে স্টারলিংককে। সব মিলিয়ে ব্যবসা সম্প্রসারণে স্টারলিংক সুবিধা করতে পারবে কি না তা সময়ই বলে দেবে। সূত্র : রেস্ট অব ওয়ার্ল্ড, টেকটার্গেট

 

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

দেশ ছাড়িয়ে ভারতের বাজারেও টাঙ্গাইল শাড়ির কদর

    ঈদ ঘিরে ব্যস্ততা টাঙ্গাইলের তাঁতপল্লীতে
কাজল আর্য, টাঙ্গাইল
কাজল আর্য, টাঙ্গাইল
শেয়ার
দেশ ছাড়িয়ে ভারতের বাজারেও টাঙ্গাইল শাড়ির কদর
টাঙ্গাইলের পাথরাইলের যজ্ঞেশ্বর অ্যান্ড কোং-এর ব্যবসায়ী খোকন বসাক তাঁর শাড়ির শোরুমে। ছবি : কালের কণ্ঠ

ঈদুল ফিতর ও পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে টাঙ্গাইলের তাঁতপল্লীতে বেড়েছে কর্মব্যস্ততা-বেচাকেনা। তবে সুতাসহ প্রয়োজনীয় উপকরণের অধিকতর মূল্যবৃদ্ধির কারণে ব্যবসায়ীদের লাভ কম। তাঁরা ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা চেয়েছেন। টাঙ্গাইলের ঐতিহ্যবাহী তাঁতের শাড়ি দেশের সীমানা পেরিয়ে বিদেশেও রপ্তানি হয়।

মূলত দুই ঈদ, দুর্গাপূজা ও পহেলা বৈশাখ উপলক্ষেই শাড়ির ব্যবসা হয়ে থাকে। প্রান্তিক তাঁতিরা সবচেয়ে দুরবস্থায়।

টাঙ্গাইল সদর উপজেলার ধুলটিয়া, বাজিতপুর, সুরুজ, বর্থা, বামনকুশিয়া, তারটিয়া ও দেলদুয়ার উপজেলার পাথরাইল, চণ্ডী, নলুয়া, দেওজান, নলশোঁধা, বিষ্ণুপুর, মঙ্গল হোড়, কালিহাতী উপজেলার বল্লা, রামপুর তাঁতশিল্পের জন্য বিখ্যাত। এখানে তৈরি হয় হাইব্রিড, সুতি ও সিল্ক জামদানি, বালুচরি, ধানসিঁড়ি, আনারকলি, সফট সিল্ক, রেশম, তশর, কাতান, একতারি ও দোতারি নামের নানা শাড়ি।

টাঙ্গাইলের তাঁতশিল্পের শাড়ি, লুঙ্গি, গামছা, চাদরের সারা বছরই কমবেশি বেচাকেনা হয়ে থাকে। পাইকারি ক্রেতারা সড়কপথে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে এসে কাপড়ের হাট থেকে কিনে নিয়ে বাজারজাত করেন।

সরেজমিনে তাঁতপল্লীতে গিয়ে দেখা যায়, ব্যস্ত সময় কাটছে তাঁত শ্রমিকদের। পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও কাপড় বুনতে সহযোগিতা করছেন।

তাঁতের শাড়ির রাজধানী হিসেবে পরিচিত টাঙ্গাইলের পাথরাইল। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসছেন ক্রেতারা। চলছে পাইকারি-খুচরা শাড়ি বিক্রি। সুতার দাম বেড়েছে। বেড়েছে শাড়ির দামও।
এতে খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায়ীদের বেশি দামে কিনতে হচ্ছে শাড়ি। তবে হ্যান্ড লুমের স্থান দখল নিচ্ছে পাওয়ার লুম। পাওয়ার লুমের দৌরাত্ম্যে প্রান্তিক তাঁতি সম্প্রদায় আজ অস্তিত্ব সংকটে। তাঁতের কাজ ছেড়ে অন্য পেশায় নিযুক্ত হচ্ছে তারা।

দেশ ছাড়িয়ে ভারতের বাজারেও টাঙ্গাইল শাড়ির কদর

প্রান্তিক তাঁতি নয়ন বণিক বলেন, টাঙ্গাইলের হস্তচালিত তাঁত বিলুপ্তির পথে। বেশির ভাগ কারিগর খটখটি ও চিত্তরঞ্জন ছেড়ে সেমি অটো বা হ্যান্ড পাওয়ার লুম ও অটো বা পাওয়ার লুমে চলে গেছে। খটখটি (পিট লুম) ও চিত্তরঞ্জন তাঁতে শাড়ি বুনতে সময় বেশি লাগে। শাড়ি বুনে যা উপার্জন হয়, এতে সংসার চলে না। কিন্তু পাওয়ার লুম বা সেমি অটো পাওয়ার লুমে অল্প সময়ে বেশি শাড়ি বুনানো যায়।

সুধীর দাস বলেন, একজন দক্ষ কারিগর একসঙ্গে পাশাপাশি চারটি পাওয়ার লুমে কাজ করতে পারেন। ফলে কারিগররা পাওয়ার লুম ও সেমি অটো বা হ্যান্ড পাওয়ার লুমের দিকে ঝুঁকছেন। এ ছাড়া অন্যান্য পেশার শ্রমিকদের উন্নয়নে নানা ধরনের সংগঠন থাকে। তাঁদের এ পেশায় কোনো সংগঠনও নেই। যাঁরা নিরুপায় তাঁরাই এখনো এ পেশায় রয়েছেন।

রাজশাহী থেকে টাঙ্গাইলে আসা পাইকারি শাড়ি ব্যবসায়ী সাদেক আলী কালের কণ্ঠকে বলেন, টাঙ্গাইলের শাড়ির মান ভালো থাকায় চাহিদা অনেক বেশি। ঈদে পাথরাইল ও করটিয়া হাট থেকে শাড়ি কিনে এলাকায় বিক্রি করব।  বাংলাদেশ তাঁত বোর্ডের স্থানীয় ঋণ সহযোগিতা নিয়ে একাধিক তাঁতি অভিযোগ করেছেন। ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক তাঁত মালিকরা পড়েছেন মহাসংকটে। অনেকেই বাধ্য হয়ে ঝুঁকে পড়ছেন ভিন্ন পেশায়। টাঙ্গাইল তাঁত বোর্ডের তথ্য মতে, জেলায় প্রায় ৩৫ হাজার তাঁত রয়েছে। এতে পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষভাবে লক্ষাধিক তাঁত শ্রমিক জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। তবে বর্তমানে তাঁতের এক-তৃতীয়াংশই পুঁজির অভাবে বন্ধ রয়েছে।

দিবাকর বিশ্বাস বলেন, আমি প্রায় ৪০ বছর ধরে তাঁতের কাজ করি। মহাজন সব কিছু দেন। আমরা শুধু কাপড় তৈরি করে দিই। হারেচ মিয়া নামের আরেক তাঁতি বলেন, আমাদের পরিস্থিতি ভালো না। ঈদেও আগের মতো বিক্রি নেই। তাঁত বোর্ডের সাহায্য পাই না।

টাঙ্গাইল শাড়ি ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ও যজ্ঞেশ্বর অ্যান্ড কোং-এর মালিক রঘুনাথ বসাক বলেন, টাঙ্গাইলের শাড়ি সারা দেশেই যায়। প্রতিবছর প্রায় ৭৫ লাখ পিস শাড়ি আমরা ভারতে রপ্তানি করে থাকি। এবার এর সংখ্যা আরো বাড়বে। ঈদে আগের মতো বেচাকেনার সেই জোয়ার নেই। এক হাজার ২০০ থেকে দুই হাজার টাকা দামের শাড়ি বেশি বিক্রি হয়। উৎপাদনের সব কাঁচামালের দাম কয়েক গুণ বেশি হয়ে গেছে, কিন্তু সে হারে কাপড়ের দাম বাড়েনি। এই শিল্পকে বাঁচাতে হলে সরকারি সাহায্য বাড়াতে হবে।

রঘুনাথ বসাক আরো বলেন, আমাদের টাঙ্গাইলের শাড়ি জিআই পেয়েছে। আশা করি, তাদের প্রচেষ্টায় টাঙ্গাইলের শাড়ির আবারও সেই সুদিন ফিরে আসবে।

বাংলাদেশ তাঁত বোর্ড বাজিতপুর অঞ্চলের লিয়াজোঁ কর্মকর্তা আদিবা হোসেন মিতু কালের কণ্ঠকে বলেন, টাঙ্গাইলের শাড়ির সুনাম সারা বিশ্বে। রোজার ঈদ ও পহেলা বৈশাখ পাশাপাশি হওয়ায় দুই উৎসবে এবার বেচাকেনা ভালোই হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, করোনার পর থেকে তাঁতের শ্রমিক সংকট দেখা দিয়েছে। অসংখ্য শ্রমিক অন্য পেশায় চলে গেছেন।

মন্তব্য

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় বিনিয়োগ বাড়াবে সৌদি

    ২০৩০ সালের মধ্যে ৫২৫টি ফিনটেক কম্পানি প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা এআই খাতে বিশ্বসেরা ১৫টি দেশের একটি হতে চায় সৌদি
বাণিজ্য ডেস্ক
বাণিজ্য ডেস্ক
শেয়ার
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় বিনিয়োগ বাড়াবে সৌদি

সৌদি আরব তার বিনিয়োগ খাতে বৈচিত্র্য আনতে চাইছে। তেলসম্পদ ফুরিয়ে যাওয়ার আগেই তারা নানা খাতে বিনিয়োগের বিশদ পরিকল্পনা নিয়েছে। সেই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে তারা ফিনটেক বা আর্থিক প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করতে চাইছে। মূল লক্ষ্য ফিনটেক হলেও মরুর দেশটি এআই বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, এন্টারপ্রাই সিস্টেম এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (এসএমই) খাতে ব্যাপক বিনিয়োগে আগ্রহী।

এসব খাতে সরকার যেমন পৃষ্ঠপোষকতা করছে, তেমনি বিনিয়োগকারীরাও আগ্রহ দেখাচ্ছে।

টেকসই প্রবৃদ্ধি নিশ্চিতে ফিনটেকে বিনিয়োগ : সৌদি সরকার দেশের বাণিজ্য খাতে তেলনির্ভরতা কমিয়ে ভারসাম্য আনার পরিকল্পনা আগেই নিয়েছে। সেই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে তারা বিভিন্ন সেক্টরে পরিকল্পিতভাবে বিনিয়োগ করছে। এসব বিনিয়োগ দেশটির ভিশন ২০৩০-এর আওতাধীন।

এসব খাতে ভেঞ্চার ক্যাপিটাল বা উদ্যোগ মূলধন কিভাবে সংগ্রহ করা যায়, তার পরিকল্পনাও তৈরি করা হয়েছে।

ক্রিসেন্ট এন্টারপ্রাইজেসের ডেপুটি সিইও এবং প্রতিষ্ঠানটির বিনিয়োগ বিভাগ সিই ভেঞ্চার্সের প্রধান তুষার সিংভি ফিনটেকের গুরুত্ব তুলে ধরেন। তিনি বলেন, সরকার ২০৩০ সালের মধ্যেই ৫২৫টি ফিনটেক কম্পানি প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে। তাঁর ভাষায়, টেকসই প্রবৃদ্ধি নিশ্চিতে সৌদি আরবে ফিনটেক সেক্টর গড়ে তোলা হয়েছে।

২০২৩ সালে মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকার ফিনটেক ভেঞ্চার ক্যাপিটালের ৫৮ শতাংশই সরবরাহ করেছে সৌদি আরব। ট্যাবি ও স্যামসাং পে চালু হওয়ার কারণে সৌদি আরব মূলত ক্যাশলেস সোসাইটি গঠনের দিকেই ছুটছে এবং বিনিয়োগকারীও এই খাতে অর্থলগ্নি করতে উৎসাহ পাচ্ছে।

তেলনির্ভরতা কমাতে রোডম্যাপ : সিংভি বলেন, ফিনটেকের সঙ্গে বড় ধরনের অর্থনৈতিক বৈচিত্র্যকরণের যোগসূত্র রয়েছে। ভিশন ২০৩০ হচ্ছে সৌদি আরবের তেলনির্ভর অর্থনীতির পরের চালচিত্রের একটি উচ্চাভিলাষী রোডম্যাপ। তবে এই রোডম্যাপ ব্যাপক বিনিয়োগ টানতে সক্ষম হওয়ার কারণে ফিনটেক, লজিস্টিকস ও স্বাস্থ্যসেবার মতো দীর্ঘমেয়াদি গ্রোথ সেক্টর সবল হতে পেরেছে।

বিশেষ করে ইএসজি (এনভাযরনমেন্টাল, সোশ্যাল অ্যান্ড গভর্নেন্স বা পরিবেশগত, সামাজিক এবং প্রশাসনিক ব্যবস্থা) সম্পর্কিত বিনিয়োগগুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টেকসই বা স্থায়িত্ব নিশ্চিত করতে পারায় তার সামাজিক বেশ সুদূরপ্রসারী হতে পেরেছে।

নুবা ক্যাপিটালের ম্যানেজিং পার্টনার খালিদ তালহুইনি বলেন, ফিনটেক খাতের প্রবৃদ্ধির কারণে সৌদি আরবের ঐতিহ্যগত আর্থিক সেবার মান বেড়েছে। ব্যাংক থেকে গ্রাহক ও ব্যবসায়ীরা খুব বেশি সহায়তা পেতেন না। এখন ফিনটেকের বিকাশের কারণে এসব খাত থেকে সেবার মান বেড়ে যাওয়ায় সার্বিক অর্থনীতি পরিপক্বতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। 

ব্যাবসায়িক কাজে এআইয়ের ব্যবহার : সৌদি আরব এআই খাতেও বেশ এগিয়ে যেতে পেরেছে। সৌদি ডাটা, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স অথরিটি এবং মার্কিন টেকনোলজি কম্পানি এনভিডিয়া মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকায় একটি বৃহৎ কম্পিউটিং ডাটা সেন্টার প্রতিষ্ঠা করেছে, যার পারফরম্যান্স বেশ সন্তোষজনক। সৌদি আরব ২০৩০ সালের মধেই এআই খাতে বিশ্বসেরা ১৫টি দেশের একটি হতে চাইছে। খালিদ তালহুইনি অবশ্য মনে করেন, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে বড় মাপের এআই অবকাঠামো গড়ে তোলার চেয়ে দৈনন্দিন ব্যাবসায়িক কাজে এআইয়ের প্রয়োগ অধিকতর ইতিবাচক প্রমাণিত হতে পারে। তার ধারণা, সব কম্পানি ব্যাপক মাত্রার এআই অথবা ডিপটেক খাতে বিনিয়োগে আগ্রহী হবে না। কারণ সব কম্পানির মূলধন সমান হয় না। তিনি এটাও বলেন, এআইয়ের লক্ষ্য ব্যক্তি নয়, সামগ্রিক অর্থনীতি হওয়া উচিত।

প্রতি প্রান্তিকে এসএমই বাড়ছে ৩ শতাংশ হারে :

ভিশন ২০৩০-এর পরিকল্পনার আলোকে সৌদি আরবে এসএমই (ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প খাত) খাতেও বেশ খানিকটা এগিয়ে গেছে। দেশটির মুনবেস ক্যাপিটালের ম্যানেজিং পার্টনার ইবরাহিম আবদেল রহিম বলেন, ২০২৩ সালের চতুর্থ প্রান্তিকে সৌদি আরবের এসএমই সংখ্যা ১৩ লাখ ১০ হাজারের পৌঁছায়। এটি প্রতিটি প্রান্তিকে ৩ শতাংশ হারে বেড়েছে। সূত্র : এরাব নিউজ

 

মন্তব্য
১১ দিনের ছুটিতে দেশ

বন্দরে কনটেইনারজট বাড়ার শঙ্কা

    বন্দর সচল রাখতে ৩৮ ধরনের আমদানি পণ্যের বাইরে আরো বেশি পণ্য বেসরকারি ১৯টি অফ-ডকে পাঠাতে চায় বন্দর কর্তৃপক্ষ
মুহাম্মদ আবু তৈয়ব, চট্টগ্রাম
মুহাম্মদ আবু তৈয়ব, চট্টগ্রাম
শেয়ার
বন্দরে কনটেইনারজট বাড়ার শঙ্কা

চট্টগ্রাম বন্দরের কঠোর পদক্ষেপের কারণে মার্চে কমে এসেছিল কনটেইনারজট। অথচ ফেব্রুয়ারি মাসে চট্টগ্রাম বন্দরের ধারণক্ষমতার ৭৭ শতাংশ কনটেইনারজট ছিল। কনটেইনারের চাপে দিশাহারা হয়ে পড়েছিল বন্দর। এখন স্বাধীনতা দিবসের দুই দিন ও ঈদের ছুটি ৯ দিন মিলে ১১ দিনের সরকারি ছুটিতে কনটেইনার জটের শঙ্কায় আছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ।

এ অবস্থায় বন্দর সচল রাখতে ৩৮ ধরনের আমদানি পণ্যের বাইরে আরো বেশি পণ্য বেসরকারি ১৯টি অফ-ডকে পাঠাতে চায় বন্দর কর্তৃপক্ষ। আগামী ছয় মাসের জন্য কনটেইনার ডিপো থেকে ডেলিভারির অনুমতি চেয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) চিঠি দেওয়া হয়েছে। যাতে জট সামাল দেওয়া সম্ভব হয়। কিন্তু তৈরি পোশাক খাতের ব্যবসায়ীদের দাবি, ছুটিতে আমদানি কনটেইনার সামাল দিলে হবে না, একই সময়ে সবচেয়ে বেশি রপ্তানি কনটেইনার হ্যান্ডলিং করতে হবে।

না হলে পোশাক খাতের ব্যবসায়ীরা লোকসানে পড়বেন।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, প্রতিবছর ঈদের আগে স্টেকহোল্ডার প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে বৈঠক করে বন্দর। ডেলিভারি নিতে সব ধরনের সেবাও চালু রাখে। কিন্তু আমদানিকারকরা ডেলিভারি না নেওয়ায় বন্দর চালু রাখার সুফল পাওয়া যায় না।

তবে বন্দর ব্যববহারকারীরা বলছেন, ঈদের আগে এবং চার-পাঁচ দিন পর কনটেইনার ডেলিভারি অনেকটাই কমে যায়। এ কারণে বন্দর এবং ডিপোগুলোতে জট তৈরি হয়। এটি প্রতিবছরের ঘটনা। ঈদের আগের এবং পরের তিন দিন ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে সরকার। এ কারণে আমদানি পণ্য ডেলিভারি নিতে সমস্যায় পড়েন আমদানিকারকরা।

সড়কপথে হয়রানি, বাড়তি ভাড়া আদায়সহ নানা সমস্যার কারণে আমদানিকারকরা ঈদের ছুটিতে পণ্য ডেলিভারি নিতে চান না। যদিও রপ্তানি পণ্য পরিবহন এই নিষেধাজ্ঞার বাাইরে থাকে। এ ছাড়া বন্দর চালু থাকলেও ব্যাংক, কাস্টমের সেবা পুরোপুরি চালু থাকে না। বন্ধ থাকে কারখানার গুদামও। সড়কে পণ্যবাহী যান চলাচলেও থাকে নিষেধাজ্ঞা। এসব কারণে বন্দর চালু থাকলেও ডেলিভারি নেওয়া কঠিন হয়ে দাঁড়ায় আমদানিকারকদের জন্য।

চট্টগ্রাম বন্দরের কনটেইনারের অবস্থান বিশ্লেষণ করে জানা যায়, চট্টগ্রাম বন্দরের অভ্যন্তরে ধারণক্ষমতা ৫৩ হাজার ৫১৮ টিইইউএস (২০ ফুট দৈর্ঘ্যের একক কনটেইনার)। এর মধ্যে গত ২৪ মার্চ কনটেইনার ছিল ৩১ হাজার ১৭৫ টিইইউএস। ২৩ মার্চ ছিল ৩১ হাজার ২১৩ টিইইউএস। আর ১৫ মার্চ ছিল ২৯ হাজার ১৫৯ টিইইউএস। এখন বন্দরে কনটেইনারজট নেই বললে চলে। স্বাভাবিক রয়েছে।

অথচ গত ১৯ ফেব্রুয়ারি বন্দরের ইয়ার্ডে কনটেইনারের সংখ্যা দাঁড়িয়েছিল ৪১ হাজার ৫৫০ টিইইউএসে। ওই হিসাবে ধারণক্ষমতার ৭৭ শতাংশ পূর্ণ ছিল বন্দরের ইয়ার্ড। সরকারি ১১ দিনের ছুটিতে আবারও কনটেইনারজট হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।

চট্টগ্রাম বন্দরের হ্যান্ডলিং করা কনটেইনারের ৯৫ শতাংশই ফুল কনটেইনার লোড (এফসিএল)। এর মধ্যে ৬৬ শতাংশ আমদানি পণ্যবাহী এফসিএল কনটেইনার বন্দরের ইয়ার্ডে খুলে ডেলিভারি দেওয়া হয়। আর ১৭ শতাংশ পণ্য ডেলিভারি দেওয়া হয় বেসরকারি কনটেইনার ডিপো থেকে, ২০ শতাংশ সরাসরি চলে যায় শিল্প মালিকের কারখানায়। ৩ থেকে ৪ শতাংশ যায় রেলপথে।

এদিকে ছুটিতে কনটেইনারজট এড়াতে আমদানি পণ্যবাহী আরো বেশি এফসিএল কনটেইনার বেসরকারি ডিপো থেকে ডেলিভারি দিতে চায় চট্টগ্রাম বন্দর। আগামী ছয় মাসের জন্য আরো বেশি এফসিএল কনটেইনার ডিপোগুলো থেকে ডেলিভারি দিতে অনুমতি চেয়ে এনবিআরে চিঠি দিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।

চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব মো. ওমর ফারুক বলেন, সরকারী ছুটি ১১ দিনের হলেও বন্দর শুধু ঈদের নামাজের সময় বন্ধ থাকবে। বাকি সময় বন্দর সচল থাকবে। সে জন্য আমরা চাচ্ছি, এফসিএল কার্গোগুলো বেসরকারি অফ-ডকে নেওয়ার জন্য। আমরা এরই মধ্যে চিঠি লিখেছি এনবিআরকে। ছয় মাসের জন্য আমাদের যেন বাইরের ঘাটে রাখার অনুমতি দেওয়া হয়। এনবিআর থেকে যে সিদ্ধান্ত আসবে, সে অনুসারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পোশাকশিল্প মালিকদের অভিযোগ ঈদে বাড়তি রপ্তানি কনটেইনারেরই চাপ সামলাতে পারে না ডিপোগুলো। প্রতিদিনের বিপুল অঙ্কের ট্রাক ও কাভার্ডভ্যানের ডেমারেজের কথা উল্লেখ করে বিজিএমইএর সাবেক সহসভাপতি রাকিবুল আলম চৌধুরী কালের কণ্ঠকে বলেন, ঈদের সময় রপ্তানিমুখী গাড়ির লম্বা লাইন পড়ে থাকে। জায়গা এবং কনটেইনারের স্বল্পতার কারণে সেগুলো ক্লিয়ার করা সম্ভব হয় না। এর জন্য আমরা প্রতিনিয়ত ট্রাক ড্যামারেজ দিই। এর মধ্যে যদি এখন আবার রপ্তানিমুখী কার্গোগুলো ঢুকিয়ে দেওয়া হয়, তাহলে সেটা বন্দরের জন্য বিপর্যয় নিয়ে আসবে। এ ছাড়া আইসিডিগুলোর চার্জ বন্দর থেকে তিন গুণ বেশি। সেই সঙ্গে রয়েছে যন্ত্রপাতি ও জনবল সংকট। সক্ষমতা না বাড়িয়ে বেশি আমদানি কনটেইনার ডিপোতে পাঠালে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন ব্যবসায়ীরা।

বাংলাদেশ ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপোটস অ্যাসোসিয়েশনের (বিকডা) দাবি, ডিপো থেকে পণ্য ডেলিভারি নিলে বন্দরে কনটেইনারজট কমায় গড়ে জাহাজের অবস্থানকাল কমবে। এতে জাহাজ ভাড়া কমায় আমদানিকারকরা লাভবান হবেন। বিকডার সেক্রেটারি জেনারেল রুহুল আমিন শিকদার বলেন, বছরে ২৩ লাখ কনটেইনার হ্যান্ডলিং করে ডিপোগুলো। এর মধ্যে আমদানি কনটেইনার তিন লাখ, রপ্তানি সাত লাখ ও খালি কনটেইনার ১৩ লাখ। যখন সব ধরনের এফসিএল কনটেইনার বেসরকারি অফ-ডকগুলো থেকে ডেলিভারি হবে তখনই চট্টগ্রাম বন্দরে যানজট কমে যাবে এবং জাহাজের ফেরত যাওয়ার সময় কমে আসবে।

উল্লেখ্য, গত বছর ঈদুল ফিতর ও পহেলা বৈশাখে টানা আট দিনের সরকারি ছুটিতে চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যক্রম পুরোপুরি চালু থাকলেও এর সুফল মেলেনি কনটেইনার ডেলিভারি কার্যক্রমে। আট দিনে বন্দরে জমেছে অতিরিক্ত ছয় হাজার ৬৬ টিইইউএস কনটেইনার।

মন্তব্য

ঈদের কেনাকাটায় ডিজিটাল লেনদেন বেড়ে দ্বিগুণ

    অভিজাত বিপণিবিতানের ৮০ শতাংশই ডিজিটাল পেমেন্ট
মো. জয়নাল আবেদীন
মো. জয়নাল আবেদীন
শেয়ার
ঈদের কেনাকাটায় ডিজিটাল লেনদেন বেড়ে দ্বিগুণ
রাজধানীর বিপণিবিতানগুলোতে কেনাকাটায় বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ক্রেতারা কার্ড কিংবা এমএফএস সেবা ব্যবহার করছেন। ছবি : লুৎফর রহমান

আলোয় আলোয় সেজেছে শহরের বিভিন্ন সড়ক, বিপণিবিতান আর সুপারশপ। হাসছে কৃত্রিম চাঁদ আর তারা। লাল-নীল বাতির ঝলমলে আলো মার্কেটগুলোতে তৈরি করেছে আলাদা আকর্ষণ। ঈদের আগেই যেন ঈদের আমেজ ফুটে উঠেছে রাজধানীজুড়ে।

নতুন পোশাকে নিজেকে সাজাতে প্রতিটি মার্কেটে ভিড় করছে শিশু, নারী, তরুণ, যুবকসহ নানা বয়সের মানুষ। শপিংয়ের আনন্দ দ্বিগুণ করেছে ডিজিটাল পেমেন্টে হরেক রকম অফার। তাই তো এক বছরের ব্যবধানে অভিজাত বিপণিবিতানগুলোতে ডিজিটাল লেনদেন বেড়ে ৮০ শতাংশ পর্যন্ত পৌঁছেছে।

ঈদুল ফিতর সামনে রেখে ক্রেতারা কার্ড ও মোবাইল ফিন্যানশিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) ব্যবহার করে কেনাকাটা বাড়িয়েছেন।

বিভিন্ন ব্র্যান্ড, ফ্যাশন হাউস ও ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, অভিজাত বিপণিবিতান ও ব্র্যান্ডের দোকানে এখন প্রায় ৬০ থেকে ৮০ শতাংশ লেনদেন হচ্ছে ক্যাশলেস। গত বছর যা ছিল ৪০ শতাংশের মধ্যে।

কর্মকর্তারা বলছেন, ক্যাশলেস পেমেন্টের বিভিন্ন সুবিধা ও নিরাপত্তা, সেই সঙ্গে ব্যাংক ও এমএফএসগুলোর দেওয়া ডিসকাউন্ট ও অফার ক্রমেই বাড়তে থাকাসহ বেশ কয়েকটি কারণে ক্যাশলেস লেনদেন বাড়ছে। তাঁরা বলছেন, করোনা মহামারির সময় থেকেই নগদবিহীন লেনদেন বেড়েছে আগের থেকে অনেক বেশি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে এটিএম, পিওএস, সিআরএম ও ই-কমার্সভিত্তিক লেনদেন ছিল ৪০ হাজার ৮৩৯ কোটি টাকা। গত জানুয়ারিতে সেটি বেড়ে ৪৩ হাজার ৫৯৪ কোটি টাকায় পৌঁছেছে।

অন্যদিকে গত জুলাই মাসে মোবাইল ফিন্যানশিয়াল সার্ভিস বা এমএফএসের মাধ্যমে মোট এক লাখ ২২ হাজার ৯২৩ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছিল। কিন্তু সাত মাসের ব্যবধানে তা ৩৯.৬৫ শতাংশ বেড়ে মোট লেনদেন এক লাখ ৭১ হাজার ৬৬৪ কোটি টাকায় পৌঁছেছে।

ব্যাংকগুলো এখন ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে ঈদের পোশাক, জুতা, গয়নাসহ বিভিন্ন পণ্য কেনাকাটায় ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় দিচ্ছে।

পাশাপাশি রমজান মাসজুড়ে ইফতারেও মূল্য ছাড় দেওয়া হচ্ছে; সঙ্গে রয়েছে বাই-ওয়ান গেট-ওয়ানসহ নানা ঈদ উপহার। এসব কারণেই ডিজিটাল লেনদেন বেড়ে দ্বিগুণে পরিণত হয়েছে।

রাজধানীর বেইলি রোডে অবস্থিত ইনফিনিটি, রিচম্যান ও লুবনান শোরুমে গিয়ে দেখা যায়, লোকসমাগম খুবই কম। বিক্রয় প্রতিনিধিরা বলছেন, সন্ধ্যার পর সমাগম বাড়ে। শোরুমের ক্যাশিয়ার ফয়সাল আহমেদ কালের কণ্ঠকে জানান, এখানে বেশির ভাগ গ্রাহকই কার্ডে পেমেন্ট করেন। কেউ কেউ বিকাশ বা নগদে। ক্যাশ পেমেন্টের পরিমাণ খুবই কম। ৮০ শতাংশের বেশি গ্রাহক এখানে ডিজিটাল পেমেন্ট করেন। একই এলাকায় অবস্থিত আরেক অভিজাত বিপণিবিতান আর্টিসান। কাপড়ের দোকান হিসেবে দেশজুড়ে খ্যাতি আছে তার। আর্টিসানের ম্যানেজার শাকিল খান কালের কণ্ঠকে বলেন, আমাদের শোরুমে ৮০ শতাংশ গ্রাহকই ডিজিটাল পেমেন্ট করেন। যদিও আগের বছর এই হার আরো কম ছিল। তিনি আরো জানান, আমাদের যেকোনো পণ্যে কার্ডে পেমেন্ট করলেই ন্যূনতম ২৫ শতাংশ ছাড়। তা ছাড়া বিকাশ ও নগদে ক্যাশব্যাক অফারও রয়েছে।

রাজধানীর ব্যস্ত এলাকা তেজগাঁও। এই এলাকার আড়ং শোরুমে দুপুর থেকেই ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। পরিবার পরিজন নিয়ে শপিং করতে আসেন জুলফিকার শাহীন। কেনাকাটায় পেমেন্টের পছন্দের মাধ্যম সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি এক বাক্যে বলেন, কার্ডের কোনো বিকল্প নেই। নগদ টাকা বহনের ঝক্কি ঝামেলা করার চেয়ে কার্ডে পেমেন্ট করাই ভালো।

আড়ংয়ের একজন বিক্রয় প্রতিনিধি জানান, আমাদের এখানে ৭০ শতাংশের বেশি অনলাইন পেমেন্ট হয়। ক্যাশ কাউন্টারের সামনে অন্তত আধাঘণ্টা লক্ষ করে দেখা যায়, ৫০ জন গ্রাহকের মধ্যে ক্যাশ দিয়েছেন মাত্র আটজন। বাকিরা সবাই ডিজিটাল পেমেন্ট করেছেন। ক্যাশ কাউন্টারের সামনে কোন ব্যাংকের কার্ডে কত শতাংশ ছাড় তার তালিকা ঝুলছে। এক ক্যাশ অপারেটর জানান, ব্যাংকের কার্ডে পেমেন্ট করলে এক হাজার টাকার পণ্যে ২৫০ টাকা পর্যন্ত ছাড়া পাওয়া যাচ্ছে। তাই কার্ডে পেমেন্টের চাহিদা বেশি। সবাই চায় একটু কম দামে ভালোমানের পণ্য কিনতে।

কোন ব্যাংকের কার্ডে কত শতাংশ ছাড় : ডাচ-বাংলা ব্যাংক ইফতার ও ডিনারে বুফে ও টেক অ্যাওয়ে অফারে একটি কিনলে তিনটি ফ্রি চালু করেছে। নির্ধারিত পাঁচতারা ও বিলাসবহুল হোটেলে ডাচ-বাংলা ব্যাংকের ভিআইপি ব্যাংকিং ডেবিট কার্ড, ভিসা সিগনেচার ও মাস্টারকার্ড ওয়ার্ল্ড ক্রেডিটকার্ড ব্যবহার করে উপভোগ করা যাবে এই অফার। এই রমজানে ডাচ-বাংলা ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড দিয়ে পিওএস পেমেন্ট করলে পাবেন ২০ শতাংশ ক্যাশব্যাক।

ব্র্যাক ব্যাংক পিএলসির কার্ডে ঈদ কেনাকাটায় ট্যুরস ও ট্রাভেলস খাতে সর্বোচ্চ ৭০ শতাংশ পর্যন্ত ডিসকাউন্ট পাওয়ার সুযোগ আছে। বিভিন্ন আলোচিত ও বড় অনলাইন শপিং স্টোর থেকে সর্বোচ্চ ২০ শতাংশ ডিসকাউন্ট পাবেন।

ঢাকা ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে বিভিন্ন নামকরা ব্র্যান্ডের পণ্য কিনতে ২০ শতাংশ ছাড় পাওয়ার সুযোগ আছে। সর্বোচ্চ দেড় হাজার টাকা ডিসকাউন্টও পেতে পারেন।

সিটি ব্যাংক আমেরিকান এক্সপ্রেস প্লাটিনাম, গোল্ড, ব্লু ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে প্যান্ডামার্টে ১২ শতাংশ ছাড় পাবেন। এতে প্রতিবার কেনাকাটায় সাশ্রয় হবে ২৫০ টাকা পর্যন্ত। এ ছাড়া আড়ংয়ের বিভিন্ন শাখা থেকে পণ্য কেনা যাবে ১০ শতাংশ ছাড়ে। সঙ্গে থাকছে ৫০০ টাকা পর্যন্ত ক্যাশব্যাক।

মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের বিভিন্ন কার্ডের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন স্টোর থেকে ডিসকাউন্ট পাওয়া যাচ্ছে। ১০ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত দুই শর বেশি ব্র্যান্ড শপ থেকে ঈদ উপলক্ষে নানা পণ্য কেনার সুযোগ আছে। ইসলামী ব্যাংক মাস্টারকার্ডের মাধ্যমে বিভিন্ন ফ্যাশন ব্র্যান্ড ও লাইফস্টাইল আউটলেট থেকে ১০ থেকে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত ডিসকাউন্ট পাওয়ার সুযোগ আছে।

বিকাশ গ্রাহকরা দেশের বিভিন্ন জেলার নির্বাচিত ব্র্যান্ড শপ থেকে বিকাশ পেমেন্টের সঙ্গে আর-১ কুপন কোড যোগ করে সর্বোচ্চ ৫০০ টাকা পর্যন্ত তাৎক্ষণিক ছাড় পাচ্ছেন। আর কুপন কোডের প্রতিবার ব্যবহারে ১০ শতাংশ তাৎক্ষণিক সর্বোচ্চ ১০০ টাকা পর্যন্ত ছাড়ও মিলছে। দিনে দুবার ও ক্যাম্পেইন চলাকালে সর্বোচ্চ পাঁচবার ২০০ টাকা পর্যন্ত তাৎক্ষণিক ছাড় পাওয়া যাবে। এ ছাড়া গ্রাহকেরা *২৪৭# ডায়াল করে পেমেন্ট করার সময় প্রতিদিন ১০০ টাকা পর্যন্ত ও ক্যাম্পেইন চলাকালে ১৫০ টাকা পর্যন্ত ক্যাশব্যাক পাচ্ছেন। কুপনের এই সুবিধা চালু থাকবে ১ এপ্রিল ২০২৫ পর্যন্ত। প্রতি পেমেন্টে শুধু একবারই একটি কুপন ব্যবহার করা যাবে। ই-কমার্স পোর্টাল দারাজ থেকে বিকাশে কেনাকাটায় ন্যূনতম ৫৫০ টাকা বিকাশ পেমেন্ট করলেই মিলছে ১০০ টাকা পর্যন্ত ডিসকাউন্ট ভাউচার। এ ছাড়া পবিত্র রমজান মাসজুড়ে উপহারের জোয়ার বিকাশ রেমিট্যান্সে ক্যাম্পেইনও চালু আছে।

 

 

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ