<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">শুধু জীবনধারণ করাটাই বাঁচা নয়, বরং বেঁচে থাকার জন্য চাই সৌন্দর্য, রসপিপাসা ও অর্থময় ভাবজগৎ। জীবনধারণের জন্য ভাত-কাপড়ের জোগান পর্যাপ্ত নয়, চাই সৌন্দর্যবোধ। যদি সৌন্দর্য না থাকে তবে জীবদ্দশায় নরক ভোগ করতে হয়। মোতাহের হোসেন চৌধুরীর প্রবন্ধ আমাদের মানবিক হওয়ার পথে একধাপ এগিয়ে নিয়ে যায়, মনুষ্যত্বের গল্প শেখায়, আমাদের মন তৈরি করে। লেখকের </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">নির্বাচিত প্রবন্ধ</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">র মুখ্য বিষয় একজন মানুষ, সকল মানুষকে বলছে, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">“</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">মানুষ হও, জীবনে আনন্দ নিয়ে বাঁচো।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">”</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><img alt="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/1.Print/2024/11.November/08-11-2024/2/kalerkantho-sl-4a.jpg" height="496" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/1.Print/2024/11.November/08-11-2024/2/kalerkantho-sl-4a.jpg" style="float:left" width="350" />মনুষ্যত্ব ধারণ করাটা মানুষ হওয়ার প্রাথমিক সোপান। মোতাহের হোসেন চৌধুরীর নির্বাচিত প্রবন্ধ বইয়ের একটি অধ্যায়ের নাম </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">মনুষ্যত্ব</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">। যেখানে লেখক মানুষের মাঝের দুটি সত্তা</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">জীবসত্তা এবং মানবসত্তা নিয়ে আলোচনা করেছেন। জীবসত্তার কাজ ক্ষুিপপাসায় কাতর হয়ে ছোটাছুটি করা। পক্ষান্তরে, মানবসত্তা মানুষকে মুক্তির আনন্দ উপভোগ করতে শেখায়। এই আনন্দ উপভোগ করার জন্য মানুষকে সংস্কৃতিবান হওয়া প্রয়োজন। সংস্কৃতিবান হওয়ার উপায় লেখক বর্ণনা করেছেন </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সংস্কৃতি-কথা</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> অধ্যায়ে। সংস্কৃতিবান হওয়ার মানে প্রেমবান হওয়া, যার জন্য প্রয়োজন জ্ঞানের, বিজ্ঞানের এবং জীবন উপলব্ধির। এখানে ধর্মের সঙ্গে সংস্কৃতির একটা দ্বন্দ্ব তৈরি হয় বটে, কিন্তু সত্যিকারের জ্ঞান দ্বারা সেই দ্বন্দ্ব মিটিয়ে নেওয়া যায়। আর দ্বন্দ্ব মেটানোর জন্য দরকার মূল্যবোধ এবং যুক্তিচিন্তা। লেখক তাঁর অন্য একটি অধ্যায়ের নাম রেখেছেন </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">মূল্যবোধ এবং যুক্তিচিন্তা</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">। প্রশ্ন হলো, মূল্যাবোধ কাকে বলে? এবং যুক্তিবিচার জিনিসটাই বা কী? লেখকের কাছে মূল্যবোধ হলো জীবনের স্থূল সুখের চেয়ে দূরবর্তী আত্মিক সুখকে চেনা, আরামের চেয়ে সৌন্দর্যকে চেনা, লাভজনক যন্ত্রবিদ্যার চেয়ে আনন্দপ্রদ সুকুমারবিদ্যাকে শ্রেষ্ঠ বলে চেনা। এবং মূল্যবোধ যাচাই করে নেওয়ার পদ্ধতিই হলো যুক্তিবিচার।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">মানুষের বিবেক এবং বুদ্ধিকে সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য মেরুদণ্ড প্রয়োজন। কারণ মেরুদণ্ডহীন মানুষ কখনো মনুষ্যত্ব ধারণ করতে পারে না, সংস্কৃতিবান হতে পারে না, নিজেকে সঠিকভাবে চালনা করতে পারে না। বইয়ের আরেকটি অধ্যায়ের নাম </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">মেরুদণ্ড</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">। মানুষ মাত্রই তো মেরুদণ্ডী, কিন্তু মনুষ্যত্বের থেকে বড় শিরদাঁড়া আর কি হয়! শিরদাঁড়া ছাড়া মানুষ চলতে পারে না। তথাপি মাত্রাজ্ঞানহীন মেরুদণ্ডের সাধনা ব্যক্তির পক্ষে মারাত্মক ক্ষতিকর, কারণ মাত্রাহীন সৌন্দর্য আত্মাকে বিকৃত করে মেরুদণ্ডকে বাঁকা করে তোলে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সাহিত্য মানুষের মন তৈরি করে। মোতাহের হোসেন চৌধুরীর প্রবন্ধ মানুষের মন তৈরির সহায়ক উপদানে ভরপুর। আমরা এখান থেকে প্রয়োজনীয় উপাদান সংগ্রহ করে সুন্দর হৃদয়ের অধিকারী হতে পারি। তবে এই প্রবন্ধ পাঠ আমাদের বৈষয়িক বিষয়ে বিমুখ করে তোলে। খেয়েপরে বেঁচে থাকার দরকার আছে, তার থেকে বেশি দরকার সুখী হয়ে বেঁচে থাকা। এ জন্য আমাদের ভালো গল্প দরকার। পৃথিবী হলো ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র গল্পের সমষ্টি। যত ভালো গল্প, তত ভালো পৃথিবী।</span></span></span></span></p>