মাইক্রোসফট ঘোষণা দিয়েছে, এ বছরের ৫ মে বন্ধ হয়ে যাবে স্কাইপ। ইন্টারনেটের মাধ্যমে অডিও-ভিডিও কল করার এই সেবাটি ২০০৫ থেকে ২০১৬ পর্যন্ত তুমুল জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল। সেবাটি প্রথম চালু হয়েছিল ২০০৩ সালে। ভিডিও কলে একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ করার প্রথম প্ল্যাটফর্ম ছিল এটি।
শেষ হচ্ছে স্কাইপ অধ্যায়
- ৫ মে বন্ধ হয়ে যাবে জনপ্রিয় ভয়েস ওভার ইন্টারনেট প্রটোকল [ভিওআইপি] প্ল্যাটফর্ম স্কাইপ। প্রায় দুই যুগ ধরে তথ্যপ্রযুক্তিতে বিভিন্ন অবদান রেখেছে স্কাইপ। সেসবের বিস্তারিত জানাচ্ছেন টি এইচ মাহির

ভয়েস ওভার ইন্টারনেট প্রটোকল কাজে লাগিয়ে তৈরি পরিষেবা স্কাইপ। শুরুতে এটি ব্যবহার করত পিয়ার টু পিয়ার সিস্টেম। তখন কেন্দ্রীয় সার্ভারের ওপর নির্ভর না করে ব্যবহারকারীদের মধ্যে সরাসরি সংযোগ তৈরি হতো, যা পুরোপুরি এনক্রিপ্টেড। এন্ড টু এন্ড এনক্রিপশনে শুধু মেসেজ আদান-প্রদানকারীরাই মেসেজ দেখতে পারেন। স্কাইপ কর্তৃপক্ষও এই মেসেজ দেখতে পারে না।
কয়েক বছর ধরেই স্কাইপের সুরক্ষা নিয়ে সন্দেহের গুঞ্জন চলছে। বিভিন্ন দেশের সরকার স্কাইপ ব্যবহারকারীদের ওপর নজরদারি করার বিভিন্ন উপায় খুঁজে বের করার চেষ্টা করেছে। যেমন—ইতালীয় সরকার স্কাইপের এনক্রিপশন ভাঙার উপায় বের করার জন্য প্রজেক্ট হাতে নিয়েছিল প্রায় দেড় দশক আগেই। ২০০৮ সালে টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিজিটাল অধিকার গবেষণা দল আবিষ্কার করে, চীনা গুপ্তচররা আড়ি পাতার জন্য স্কাইপের একটি পরিবর্তিত সংস্করণ ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দিয়েছে। এ ছাড়া এডওয়ার্ড স্নোডেনের ফাঁস করা গোপন নথি থেকে জানা যায়, মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থা এবং অন্যান্য কর্তৃপক্ষকে কল ও মেসেজ সংগ্রহের অনুমতি দিয়েছে স্কাইপের মালিক মাইক্রোসফট।
মিসরীয় বিপ্লবের সময় ২০১২ সালের ৫ মার্চ ভোরে কায়রোতে অবস্থিত স্টেট সিকিউরিটি ইনভেস্টিগেশনস (এসএসআই) সার্ভিসের গোপন সদর দপ্তরে তল্লাশি চালায় মিসরীয় বিপ্লবীরা। সেখান থেকে উদ্ধার করা নথিপত্রে প্রথম জানা যায় ফিনফিশার নামের এক সফটওয়্যারের কথা। এটি ব্রিটিশ-জার্মান কম্পানি গামা ইন্টারন্যাশনালের তৈরি। ই-মেইল হ্যাক, অন্যান্য ডিভাইসে স্পাইওয়্যার আপলোড করা, ডিভাইসের সব ধরনের যোগাযোগ ট্র্যাক করা, এমনকি এর মাধ্যমে নেওয়া যায় ডিভাইসটির সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার ছিল, এটি দিয়ে স্কাইপ অ্যাকাউন্ট হ্যাক করা যেত। এটিই স্কাইপ হ্যাকের প্রথম অকাট্য প্রমাণ।
স্কাইপ বন্ধের খবরে অনেক ব্যবহারকারীই বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। বেশির ভাগ ব্যবহারকারী একে তথ্য-প্রযুক্তি ইতিহাসের বড় অধ্যায়ের শেষ বলে আখ্যা দিয়েছেন। এই সেবা ব্যবহারের স্মৃতিচারণা করেছেন অনেকেই।
এখনো তিন কোটি ৬০ লাখেরও বেশি ব্যবহারকারী নিয়মিত স্কাইপ ব্যবহার করেন। সেবাটি বন্ধ হয়ে গেলে একই অ্যাকাউন্ট দিয়ে তাঁরা মাইক্রোসফট টিমসে লগইন করতে পারবেন। এর সব সেবাই পাওয়া যাবে টিমসে। অবশ্য বহুদিন ধরেই প্রযুক্তি বিশ্লেষকরা ধারণা করছিলেন, স্কাইপ বন্ধ করে টিমসকেই একমাত্র মেসেজিং প্ল্যাটফর্ম হিসেবে চালু রাখবে মাইক্রোসফট। কেননা একই প্রতিষ্ঠানের দুই প্ল্যাটফর্মে একই সেবা পরিচালনা করা শুধুই সময় ও অর্থের অপচয়।
সম্পর্কিত খবর

গেম
লেক ডিস্ট্রিক্ট রহস্য
শাহরিয়ার মোস্তফা

বাস্তবেই ১৯৫৭ সালে যুক্তরাজ্যের উইন্ডস্কেলে অবস্থিত পারমাণবিক চুল্লিতে ঘটেছিল এক প্রলয়ংকরী দুর্ঘটনা। বিস্তীর্ণ এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছিল তেজস্ক্রিয় পদার্থ। দুর্ঘটনাটির ওপর ভিত্তি করেই অ্যাটমফলের কাহিনি সাজানো হয়েছে,যদিও এর সঙ্গে বাস্তবতার মিল সামান্যই।
অ্যাটমফলের পটভূমি ১৯৬০-এর দশকের উত্তর ইংল্যান্ডের লেক ডিস্ট্রিক্ট অঞ্চল।
ফার্স পারসন সারভাইভাল অ্যাকশন ঘরানার গেম অ্যাটমফল। এর মূল চরিত্রের কোনো নাম-পরিচয় নেই। অতীতের সব স্মৃতি কোনো এক অজানা কারণে হারিয়ে ফেলেছে সে।
পটভূমি ও ঘরানায় গেমটির সঙ্গে মিল হওয়ার কথা স্টকার বা মেট্রো সিরিজের। অথচ গেমপ্লের দিক থেকে এর সঙ্গে বরং ফার ক্রাই সিরিজেরই মিল বেশি। গেমারের মূল শত্রু এক ডুমস ডে কাল্ট, তাদের বিভিন্ন আউটপোস্ট দখল করা গেমের বড় অংশ।
অ্যাটমফলের গেমপ্লে পুরোপুরি গেমারের স্বাধীনতার দিকে লক্ষ রেখে সাজানো হয়েছে। নিজের ইচ্ছামতো যেমন পুরো এলাকা ঘুরে বেড়ানো যাবে, কোন মিশন গেমার খেলবে বা সেটা শেষ করবে কিভাবে, তার কোনো কিছুতেই বাধ্যবাধকতা নেই। গেমারকে মিশন দেওয়ার সময়েও চরিত্রগুলো সরাসরি কোনো নির্দেশনা দেবে না, প্রতিটি মিশনই যেন ধাঁধার সমাধান করা।
বিভিন্ন রসদ জোগাড় করা এবং নতুন সব অস্ত্র ও যন্ত্রপাতি তৈরি করা গেমপ্লের অন্যতম অংশ। পাশাপাশি নিজেকে আরো শক্তিশালী করতে মূল চরিত্রের স্কিল বাড়াতে হবে। গেমটিতে স্ট্যামিনা সিস্টেম দেওয়া হয়নি, এর বদলে আছে হার্টবিট সিস্টেম। দৌড়ালে বা দেয়াল বেয়ে ওঠার পর হৃত্স্পন্দন বেড়ে যাবে গেমারের। সে সময় লক্ষ্যভেদ করা হবে যেমন কঠিন, তেমনই দীর্ঘ সময় হার্টবিট বেশি থাকলে শরীরের ক্ষতিও হতে পারে।
গেমটির গ্রাফিক মনোমুগ্ধকর। সবুজ বনভূমি দেখে বিশ্বাস করা কঠিন, এর মধ্যেই ভয়ংকর বিপদ লুকিয়ে আছে। তবে যারা ফলআউট বা স্টকারের মতো গেমপ্লে খুঁজছেন তাঁদের অ্যাটমফল ভালো না-ও লাগতে পারে।

সার্ভারের জন্য আলিবাবার নতুন প্রসেসর
- আলিবাবার গবেষকদল তৈরি করেছে নতুন একটি প্রসেসর। আরআইএসসি-ভি বা রিস্ক-ফাইভ আর্কিটেকচারে তৈরি প্রসেসরগুলো সার্ভারে ব্যবহার উপযোগী। শুয়ানটাই সি৯৩০ প্রসেসরের বিস্তারিত জানাচ্ছেন টি এইচ মাহির

শুয়ানটাই প্রসেসরটি তৈরিতে গবেষণা চালিয়েছে আলিবাবার দামো একাডেমি। ২৮ ফেব্রুয়ারি নতুন এই প্রযুক্তিপণ্য উন্মোচিত হয়েছে বেইজিংয়ের এক প্রযুক্তি প্রদর্শনীতে। শুয়ানটাই সি৯৩০ নামের এই সিপিইউটির ডিজাইনের পাশাপাশি তৈরিও করছে আলিবাবারইনিজস্ব সেমিকন্ডাক্টর ইউনিট টি-হেড। অর্থাৎ সি৯৩০-এর মাধ্যমে তথ্য-প্রযুক্তিতে পশ্চিমা দেশগুলোর ওপর নির্ভরশীলতা কমানোতে আরো এক ধাপ এগিয়ে গেল চীন।
ওয়েব সার্ভার, ডেটা সেন্টার এবং প্রাতিষ্ঠানিক ওয়ার্কস্টেশন কম্পিউটিংয়ে ব্যবহারের জন্য বানানো হয়েছে এই প্রসেসর। প্রযুক্তিবিদদের অভিমত, চীনের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া নানা প্রযুক্তিগত নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে চীনের লড়াইয়ের বড় অংশ হতে যাচ্ছে এটি। এর মধ্যেই আলিবাবার এই প্রসেসর চীনা প্রযুক্তি নির্মাতা ও সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে বেশ সাড়া ফেলেছে।
রিডিইউসড ইনস্ট্রাকশন সেট কম্পিউটিং বা রিস্ক ঘরানার সিপিইউ আর্কিটেকচারের মধ্যে আছে রিস্ক-ফাইভ।
বহুদিন ধরেই আলিবাবা কাজ করছে রিস্ক-ফাইভ প্রসেসর তৈরিতে। এর আগে ২০১৯ সালে সি৯১০ এবং ২০২৩ সালে সি৯২০ নামের দুটি প্রসেসর তারা বাজারে এনেছে। নতুন সি৯৩০ প্রসেসরটি এর মধ্যেই বিভিন্ন প্রযুক্তিপণ্য নির্মাতার কাছে পাঠিয়েছে আলিবাবা। এসব প্রতিষ্ঠানের অভিমত, উচ্চ কার্যক্ষমতাসম্পন্ন প্রসেসরটিকে তারা ইন্টেল জেনন এবং এএমডি এপিক সিপিইউয়ের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা সম্ভব। তবে এ ছাড়া কোনো পারফরম্যান্স বেঞ্চমার্ক পাওয়া যায়নি। আলিবাবার দাবি, স্পেকিন্ট২০০৬ বেঞ্চমার্কে সি৯৩০ স্কোর প্রতি গিগাহার্জে ১৫ পয়েন্ট স্কোর করেছে। এখন দেখার পালা আরো আধুনিক বেঞ্চমার্কে প্রসেসরটির পারফরম্যান্স দেখার।
চীনের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার পরিপ্রেক্ষিতে এআই ও ক্লাউড অবকাঠামো উন্নয়ন করতে ৩৮০ বিলিয়ন ইউয়ান বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে চীনা সরকার। এর বড় অংশ আলিবাবা বিনিয়োগ করেছে সার্ভারের জন্য প্রসেসর তৈরির গবেষণায়। হ্যাংজুভিত্তিক স্টার্ট-আপ ডিপসিকের তৈরি উচ্চ কার্যক্ষমতাসম্পন্ন এআই মডেলগুলোর জনপ্রিয়তায় চীনে এআই সার্ভারের চাহিদা বাড়ছে দ্রুত। এই চাহিদা মেটাতে নতুন প্রসেসরগুলো গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করছে আলিবাবা। কয়েক দশক ধরেই এআইশিল্পে কাজ করছে এই প্রতিষ্ঠান। চীনজুড়ে আরো ডেটা সেন্টার নির্মাণ করবে তারা। ডিপসিক যেমন কম খরচে উচ্চ কার্যক্ষমতাসম্পন্ন এআই সেবার মাধ্যমে ওপেনএআইয়ের একচেটিয়া আধিপত্য ভেঙে দিয়েছে, তেমনি রিস্ক-ফাইভ প্রসেসর এআইশিল্পে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটাবে, এটাই প্রতিষ্ঠানটির আশা।
চীনা প্রসেসরগুলো ইন্টেলের আধিপত্যকে চোখ-রাঙানি দিচ্ছে। এরই মধ্যে চীন সরকার প্রতিটি কম্পিউটারে রিস্ক-ফাইভ প্রসেসর ব্যবহারের জন্য নির্দেশনা জারি করেছে। বিশ্বব্যাপী এই প্রসেসরগুলোর চালান ২০৩০ সালের মধ্যে ১৬.২ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছবে বলে ধারণা করে হচ্ছে, ২০২৩ সালে যা ছিল মাত্র ১.৩ বিলিয়ন ডলার। আগামী দিনে আর্ম ও এক্স৮৬-এর পাশাপাশি বাজারে রিস্ক-ফাইভভিত্তিক কম্পিউটারও জনপ্রিয় হবে বলেই ধারণা করছেন প্রযুক্তি বিশ্লেষকরা।

রেকর্ড গড়েছে ইলেভেন১১ বটনেট
- সাইবার হামলায় ব্যবহৃত নেটওয়ার্ক ‘বটনেট’। বিশ্বের সবচেয়ে বড় বটনেটভিত্তিক হামলার ঘটনা ঘটে গত মাসের শেষ সপ্তাহে, যুক্তরাষ্ট্রে। বিস্তারিত জানাচ্ছেন আশিক উল বারাত

ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহে প্রায় ৩০ হাজার ওয়েবক্যাম ও ভিডিও রেকর্ডার লক্ষ্য করে বিশাল এক সাইবার হামলা হয় যুক্তরাষ্ট্রে। মোট ৮৬ হাজার ইন্টারনেট অব থিংস ডিভাইসের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় ‘ইলেভেন১১’ নামের একটি ম্যালওয়্যার। হ্যাকড ডিভাইসগুলোর মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ ডেটা ট্রাফিক তৈরি করে বেশ কিছু ওয়েবসেবাদানকারী সার্ভারের কার্যক্ষমতা নষ্ট করে দেয় এই হামলার হোতারা। মূলত যোগাযোগ ও গেম হোস্টিং ইনফ্রাস্ট্রাকচার সার্ভার লক্ষ্য করেই হামলাটি চালানো হয়।
নোকিয়ার ডিপফিল্ড ইমার্জেন্সি রেসপন্স টিম এই হামলার তদন্ত করেছে। তদন্তে বেরিয়ে এসেছে, এই হামলায় ব্যবহার করা হয়েছে ইলেভেন১১বট নামের নতুন এক বটনেট ম্যালওয়্যার। এই ম্যালওয়্যার ইন্টারনেটে সংযুক্ত বিভিন্ন ধরনের স্মার্ট ডিভাইস, যেমন—স্মার্ট লাইট, স্মার্ট থার্মোস্ট্যাট বা স্মার্ট ফ্রিজের মতো ইন্টারনেট অব থিংস (আইওটি) ডিভাইসকে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে তৈরি করে নিজস্ব নেটওয়ার্ক, যার নাম বটনেট।
ওয়েবসেবা ব্যবহার ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি এই সাইবার হামলার কারণে লক্ষাধিক ব্যবহারকারী ইন্টারনেট সংযোগেও নানা সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে।
রাশিয়া, উত্তর কোরিয়া, ইরান ও চীনের হ্যাকাররা এ ধরনের হামলা বেশি চালায়। সাইবার নিরাপত্তা গবেষকরা বলছেন, এই বটনেটটির সর্বাধিক আইপি ঠিকানা রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে (২৪.৪%)। পাশাপাশি আছে তাইওয়ান (১৭.৭%) এবং যুক্তরাজ্যে (৬.৫%)। সাধারণত হামলার শিকার বেশি হয় যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো।
বাংলাদেশেও বেশ কয়েকবার ডিডিওএস হামলা চালিয়েছে সাইবার অপরাধীরা। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল ২০২৩ সালের শেষ দিকে জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ব্যাপক সাইবার আক্রমণ। এ ছাড়া স্মার্ট ইলেকশন ম্যানেজমেন্ট বিডি নামের সরকারি অ্যাপের কার্যক্রম ব্যাহত করার জন্য ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের দিন সাইবার আক্রমণ চালানো হয়। সাইবার বিশেষজ্ঞদের মতে, ২০২৪ সালের তৃতীয় প্রান্তিকে বাংলাদেশে সাইবার হামলার সংখ্যা বেড়ে ৩৩৭-এ পৌঁছেছে, যা দ্বিতীয় প্রান্তিকে ছিল ১৬৪। এই বৃদ্ধির ফলে বাংলাদেশ সাইবার ঝুঁকির শীর্ষ দেশগুলোর একটি হয়ে উঠেছে।

ডিজিটাল চিত্রকর্মের শিল্পী হতে চাইলে...
- ডিজিটাল চিত্রকর্ম থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ফটোকার্ড ডিজাইন—ডিজিটাল শিল্পীদের কাজের শেষ নেই। ডিজিটাল শিল্পকর্মে ব্যবহৃত হার্ডওয়্যার, সফটওয়্যার এবং কিভাবে ডিজিটাল মাধ্যমে শিল্পী হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করা যায়, তার বিস্তারিত জানাচ্ছেন এস এম তাহমিদ

কাজের সুবিধার্থে শিল্পীদের পছন্দ ডিজিটাল ক্যানভাস। প্রায় ৩০ বছর ধরে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হচ্ছে কম্পিউটার গ্রাফিকস, এখন শৌখিন শিল্পীরাও আঁকাআঁকির জন্য স্কেচবই ফেলে বেছে নিচ্ছেন ট্যাবলেট। ডিজিটাল শিল্পী হিসেবে ক্যারিয়ারও গড়ছেন অনেকে।
ডিজিটাল শিল্পকর্মের আছে বেশ কয়েকটি রকম ফের।
ভেক্টর ইলাস্ট্রেশন : সরল জ্যামিতিক আকৃতি ব্যবহার করে চিত্রকর্ম বা পটভূমি তৈরি করাকেই বলা হয় ভেক্টর ইলাস্ট্রেশন বা আর্ট।
ডিজিটাল পেইন্টিং : রংতুলি আর ক্যানভাসের ডিজিটাল সংস্করণ ব্যবহার করে চিত্রকর্ম তৈরি করেন অনেক শিল্পী। জলরং, তেল বা রেখাচিত্র—সব কিছুই করা যায় ডিজিটালি। ডিজিটাল ক্যানভাসে আঁকার বড় সুবিধা হলো ভুল ঠিক করা সহজ, পাশাপাশি রং বা ক্যানভাস কেনার প্রয়োজনীয়তা নেই।
থ্রিডি মডেলিং : থ্রিডি আর্টের প্রথম ধাপ মডেল তৈরি। মডেলের সঙ্গে ভিজ্যুয়াল ইফেক্ট জুড়ে তৈরি হয় সব ধরনের থ্রিডি গ্রাফিকস, সেটা হতে পারে খুব সাধারণ প্রডাক্ট শোকেস থেকে শুরু করে বিলিয়ন ডলার বাজেটের ভিডিও গেম। ভাস্কর্য তৈরি আর থ্রিডি মডেলিংয়ের কার্যপ্রণালী অনেকটা একইরকম। প্রতিটি মডেল শুরু হয় একটি কিউব বা স্ফিয়ার থেকে। এর সঙ্গে নতুন অংশ জোড়া দিয়ে অথবা সেটা টেনে নতুন আকার দিয়ে ধীরে ধীরে তৈরি করা হয় পূর্ণাঙ্গ মডেল। একে বলা হয় মেশ বা কার্ভ মডেলিং। ভেক্টর আর্টের মতো থ্রিডি মডেলও প্রয়োজন অনুযায়ী ছোট-বড় করা যায়। বেশির ভাগ থ্রিডি মডেল তৈরিতে রেফারেন্স ছবি ব্যবহার করেন শিল্পী, তবে এখন থ্রিডি স্ক্যানিং প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে প্রাথমিক একটি মডেল তৈরি করে এরপর সেটি পরিমার্জন করার মাধ্যমে মডেলিং করাই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
সফটওয়্যার
ওয়েবসেবা ক্যানভা টুডি গ্রাফিকস শিল্পীদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয়। বিশেষত সফটওয়্যার ইন্টারফেস, ওয়েবসাইট ডিজাইন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের জন্য ফটোকার্ড তৈরি এবং নানা বিজ্ঞাপন তৈরিতে এটি বহুল ব্যবহৃত। ভেক্টর গ্রাফিকস তৈরির জন্য ইলাস্ট্রেটর ও ইংকস্কেপ, থ্রিডি মডেলিংয়ের জন্য ব্লেন্ডার ও অটোডেস্ক মায়া এবং ডিজিটাল পেইন্টিং করার জন্য আডবি ফটোশপ, ক্রিতা ও প্রোক্রিয়েটের মতো সফটওয়্যার ব্যবহৃত হয়ে থাকে। নির্মাতা প্রতিষ্ঠান অ্যাফিনিটির তৈরি ডিজাইনার, ফটো ও পাবলিশার সফটওয়্যারগুলো ধীরে ধীরে আডবির সফটওয়্যারের বিকল্প হয়ে উঠছে।
হার্ডওয়্যার
ডিজিটাল আর্ট নিয়ে কাজ করার জন্য কিছুটা শক্তিশালী হার্ডওয়্যার প্রয়োজন। টুডি আর্ট করতে চাইলে প্রয়োজন গ্রাফিকস ট্যাবলেট। ডিজিটাল ক্যানভাসে আঁকার জন্য এই হার্ডওয়্যারে আছে টাচপ্যাড ও ডিজিটাল কলম। ডিজিটাল পেইন্টিংয়ের জন্য গ্রাফিকস ট্যাবলেট অপরিহার্য, ভেক্টর ইলাস্ট্রেশন করার জন্যও এটি খুবই কাজের। গ্রাফিকস ট্যাবলেট বাজারে সবচেয়ে প্রতিষ্ঠিত ব্র্যান্ড ওয়াকম, তবে এ প্রতিষ্ঠানের হার্ডওয়্যারের মূল্য প্রায় সাত হাজার টাকা থেকে শুরু। কম বাজেটে কাজ শুরু করতে চাইলে হুইয়নের গ্রাফিকস ট্যাবলেটগুলোও খুবই কাজের, দামও কম, আড়াই হাজার টাকা থেকে শুরু।
প্রতিটি ডিজিটাল আর্ট সফটওয়্যার চালনার জন্য অনেক র্যাম এবং শক্তিশালী প্রসেসর প্রয়োজন। তাই অন্তত ৬ কোরের আধুনিক প্রসেসর এবং ১৬ জিবি র্যাম পিসিতে থাকতে হবে। যারা থ্রিডি মডেলিং নিয়ে কাজ করতে আগ্রহী তাদের পিসিতে আলাদা গ্রাফিকস কার্ডও প্রয়োজন।
আঁকাআঁকির জন্য আইপ্যাড খুবই জনপ্রিয়। উজ্জ্বল ও কালার অ্যাকুরেট ডিসপ্লে, নিখুঁত ডিজিটাল পেন এবং শক্তিশালী হার্ডওয়্যারের পাশাপাশি আডবি ও অ্যাফিনিটি দুই প্রতিষ্ঠানের পুরো সফটওয়্যার স্যুট এবং প্রোক্রিয়েটের মতো চমৎকার সফটওয়্যারের কারণেই জনপ্রিয় আইপ্যাড ও অ্যাপল পেনসিল।
আর্ট তুলে ধরার উপায়
ডিজিটাল শিল্পকর্ম তুলে ধরার জন্য পোর্টফোলিও তৈরি করা জরুরি। ওয়েবসাইট ডিজাইন বা বিজ্ঞাপনের জন্য ভেক্টর ইলাস্ট্রেশনের পোর্টফোলিও তৈরিতে জনপ্রিয় প্ল্যাটফর্ম বিহান্স। নিজস্ব ওয়েবসাইট তৈরি করেও কাজের শোকেস তৈরি করা যেতে পারে। ডিজিটাল পেইন্টিংয়ের জন্য বিহান্সের পাশাপাশি আর্টস্টেশনও জনপ্রিয়। যারা শুধু নির্দিষ্ট কাজের জন্য নয়, বরং নিজের শৈল্পিকতা তুলে ধরতে চায় তাদের জন্য আর্টস্টেশন আদর্শ। থ্রিডি মডেলিংয়ের জন্য পোর্টফোলিও তৈরি একটু জটিল। মডেলের রেন্ডার করা ছবি বিহান্স বা আর্টস্টেশনে আপলোড করার পাশাপাশি মডেল তৈরি এবং তার শোকেসের ওপর তৈরি ছোট ভিডিও ইউটিউবে আপলোড করা উচিত। অনেক থ্রিডি আর্টিস্ট কার্বনমেড ওয়েবসাইটটিতে মডেল আপলোড করেন। পোর্টফোলিও তৈরির পর অবশ্যই তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করা উচিত। পিন্টারেস্ট বা রেডিটের মতো ফোরামেও আপলোড করে অনেকে।
কাজের ধরন
বিজ্ঞাপন সংস্থা, পণ্য প্রস্তুতকারী ও সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান, প্রকাশনী থেকে শুরু করে গণমাধ্যম—প্রতিটি প্রতিষ্ঠানেই আছে ডিজিটাল আর্টিস্টের প্রয়োজনীয়তা। বিভিন্ন ফ্রিল্যান্স কাজের প্ল্যাটফর্মেও ডিজিটাল আর্টিস্টদের জন্য কাজের অভাব নেই। সব ক্ষেত্রেই পোর্টফোলিও তৈরি সবচেয়ে জরুরি। ভেক্টর ইলাস্ট্রেশনের কাজ অপেক্ষাকৃত সহজ, ব্যবহারের ক্ষেত্রও অনেক।
ইউজার ইন্টারফেস ডিজাইনারদের কদর প্রতিনিয়ত বাড়ছে, ওয়েবসাইটের জন্য থিম তৈরিতেও ভেক্টর ইলাস্ট্রেশন প্রয়োজন। থ্রিডি মডেল ব্যবহার করে ভিজ্যুয়াল ইফেক্টস এবং ভিডিও গেম তৈরিত হয়। তবে এ ধরনের কাজের সুযোগ কিছুটা কম। বেশির ভাগ সময় থ্রিডি মডেল তৈরির জন্য খণ্ডকালীন নিয়োগ দেওয়া হয়, অর্থাৎ ফ্রিল্যান্স প্ল্যাটফর্মেই কাজ পাওয়া যাবে বেশি। ডিজিটাল পেইন্টিংয়ের বিক্রি অথবা পেইন্টিংয়ের জন্য কমিশন খুঁজে পাওয়ার সেরা মাধ্যমও অনলাইন ফ্রিল্যান্স প্ল্যাটফর্ম। ডিজিটাল আর্ট বিক্রির জন্য বেশ কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম আছে। সেখানে পোর্টফোলিওর সব ডিজাইন আপলোড করলে ক্রেতারা যেকোনো সময় কিনতে পারবে। তবে বেশির ভাগ শিল্পী একে উপরি রোজগারের পথ হিসেবে ব্যবহার করেন।