নিজের ‘ক্লাউড’ বা হোমল্যাব তৈরি করা খুব কঠিন নয়। তবে এ জন্য কম্পিউটার এবং নেটওয়ার্কিং সম্পর্কে কিছু বিশেষ জ্ঞান প্রয়োজন। একবার সেটআপ করার পর আর তেমন রক্ষণাবেক্ষণের প্রয়োজন নেই। চ্যাটজিপিটি, জেমিনি-এর সাহায্য নিয়ে ও রেডিটের মতো ফোরামের পোস্টের গাইডলাইন দেখেও হোমল্যাব বানানো যেতে পারে।
শক্তিশালী হার্ডওয়্যারেরও প্রয়োজন নেই। তবে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট থাকতে হবে।
হার্ডওয়্যার
অনেকেই পুরনো ল্যাপটপ ব্যবহার করে তৈরি করে হোমল্যাব। এ কাজে ডেস্কটপ ব্যবহার করা উচিত, এতে স্টোরেজ বাড়ানো সহজ হবে।
বেশ কিছু ওয়েবসেবার জন্য ইন্টেল প্রসেসর বেশি কার্যকর, সঙ্গে থাকতে হবে অন্তত ৮ থেকে ১৬ জিবি র্যাম। স্টোরেজ লাগবে অন্তত দুটি ড্রাইভ। অপারেটিং সিস্টেমের (ওএস) জন্য ১২০ জিবি এসএসডি যথেষ্ট, ফাইল রাখার জন্য অন্তত একটি আলাদা হার্ড ডিস্ক লাগবে। তথ্য নিরাপত্তার জন্য তিনটি সমান ধারণক্ষমতার হার্ড ডিস্ক ব্যবহার করা উচিত। ল্যাপটপ ব্যবহারকারীরা ইউএসবি হার্ড ডিস্ক কাজে লাগাতে পারে। ইন্টারনেট সংযোগের জন্য সরাসরি ইথারনেট কেবল ব্যবহার করা উচিত, তবে ওয়াই-ফাই দিয়েও কাজ চলবে।
সফটওয়্যার
হোমল্যাব তৈরিতে উইন্ডোজ ব্যবহার সম্ভব, তবে প্রক্রিয়াটি জটিল। প্রক্সমক্স, আনরেইড বা ট্রুন্যাস স্কেলের মতো অপারেটিং সিস্টেম এ কাজে জনপ্রিয়। প্রতিটি ওএস বিনা মূল্যে নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটে পাওয়া যাবে।
ওএস ইনস্টল করার পর আর মনিটর বা কি-বোর্ড-মাউসের প্রয়োজন নেই, সরাসরি কম্পিউটারের ওয়েব পোর্টাল থেকেই সব নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। ট্রুন্যাস স্কেল বা আনরেইড ব্যবহার করা সবচেয়ে সহজ, দুটির ওয়েব পোর্টাল ইন্টারফেসও কাছাকাছি। প্রক্সমক্স আরো বেশি ফিচারসমৃদ্ধ হলেও ব্যবহার করা আরো জটিল। ওয়েব পোর্টালে প্রথম প্রবেশের পর ফাইল রাখার জন্য হার্ড ডিস্কগুলো প্রস্তুত করে নিতে হবে। এরপর পোর্টাল থেকেই অ্যাপ ইনস্টলের মতো এক ক্লিকেই সেটআপ করা যাবে বিভিন্ন ওয়েবসেবা।
ভিডিও স্ট্রিমিং সেবা
নেটফ্লিক্সের মতো ভিডিও স্ট্রিমিং সেবা তৈরির জন্য জনপ্রিয় সেবা প্লেক্স, এমবি এবং জেলিফিন। জেলিফিনের তুলনায় প্লেক্স বা এমবি ফিচারে অল্পবিস্তর এগিয়ে থাকলেও বিনা মূল্যে ব্যবহার করা যাবে না। তাই জেলিফিনের জনপ্রিয়তাই বেশি। ওয়েব পোর্টালের মাধ্যমে জেলিফিন ইনস্টল করার পর ইউজার নেম ও পাসওয়ার্ড দিয়ে অ্যাকাউন্ট তৈরি করতে হবে। এরপর জেলিফিন লাইব্রেরিতে যুক্ত করতে হবে সিনেমা, টিভি সিরিজ ও সংগীতের ফোল্ডার। জেলিফিন নিজ থেকেই সিনেমা ও টিভি সিরিজের যাবতীয় তথ্য ও ছবি ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহ করে তৈরি করবে লাইব্রেরি। ব্যবহারকারীরা স্মার্টফোন বা টিভিতে জেলিফিন অ্যাপ ইনস্টল করে নেটফ্লিক্সের মতোই সিরিজ বা সিনেমা দেখতে পারবে। একাধিক ব্যবহারকারীও একসঙ্গে স্ট্রিম করতে পারবে, বলা যায় নেটফ্লিক্সের প্রায় সব সুবিধাই জেলিফিনের মাধ্যমে পাওয়া যাবে। প্লেক্স বা এমবি ইনস্টল করার পদ্ধতিও প্রায় এক।
মিউজিক স্ট্রিমিং
যদিও জেলিফিন, এমবি বা প্লেক্সের মাধ্যমে ভিডিওর পাশাপাশি গানও স্ট্রিম করা যায়, এ সেবাগুলো গানের অ্যালবাম বা প্লেলিস্ট তৈরির জন্য আদর্শ নয়। সে জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে ন্যাভিড্রোম। জেলিফিনের মতোই, পোর্টাল থেকে ইনস্টল করে, নতুন ইউজার তৈরির পর মিউজিক লাইব্রেরির ফোল্ডার যুক্ত করলেই কাজ শেষ। স্মার্টফোন অ্যাপ বা পিসি থেকে স্পটিফাইয়ের মতোই ন্যাভিড্রোমের মাধ্যমে করা যাবে মিউজিক স্ট্রিমিং। এটিও নিজে থেকেই শিল্পী, অ্যালবামের ছবি ও অন্যান্য তথ্য সংগ্রহ করে লাইব্রেরি সাজিয়ে নিতে সক্ষম।
ফাইল স্টোরেজ
ড্রপবক্স বা গুগল ড্রাইভের মতো ফাইল স্টোরেজ সেবা ওউনক্লাইড ও নেক্সটক্লাউড। এর মধ্যে নেক্সটক্লাউড বেশি জনপ্রিয়। এটিও ইনস্টল করা যাবে পোর্টাল থেকে, এরপর ইউজার নেম আর পাসওয়ার্ড দিয়ে তৈরি করতে হবে অ্যাকাউন্ট। স্মার্টফোন অ্যাপ থেকেও ফাইলগুলো ব্যবহার করা যাবে। অন্য কারো সঙ্গে ফাইল শেয়ার করার প্রক্রিয়া কিছুটা জটিল, তবে সম্ভব। বেশির ভাগ ব্যবহারকারী ফোন ও ল্যাপটপের ফাইল ব্যাকআপ রাখার জন্যই নেক্সটক্লাউড ব্যবহার করে।
অনলাইন অফিস
যারা গুগল ডকসের বিকল্প হোস্ট করতে চায়, তাদের জন্য আছে কোলাবোরা ও নেক্সটক্লাউড অফিস। ব্রাউজারের মাধ্যমে ডকুমেন্ট, স্প্রেডশিট ও প্রেজেন্টেশন তৈরির সুবিধা এ দুটি সেবাতেই পাওয়া যাবে। অন্যান্য ওয়েবসেবার মতো এটিও পোর্টাল থেকে ইনস্টলের পর ইউজার তৈরি করে নিতে হবে। একাধিক ব্যক্তি একই ডকুমেন্ট এডিট করার সুবিধাও এতে আছে। নেক্সটক্লাউড অফিসের তুলনায় কোলাবোরার ফিচার কিছুটা বেশি। তবে দুটোই ব্যবহার করা যাবে বিনা মূল্যে।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা
শক্তিশালী জিপিইউ থাকলে নিজস্ব কম্পিউটারেই এআই চ্যাটবট এবং ছবি তৈরির সেবা চালানো সম্ভব। মেটার তৈরি ওপেন সোর্স লামা, ডিপসিক, ওপেনসোর্স জিপিটি ও স্টেবল ডিফিউশনের মতো এআই মডেলগুলো পোর্টাল থেকে এক ক্লিকেই ইনস্টল করা যায়। তবে এগুলো চালানোর জন্য অনেক বেশি পরিমাণ বিদ্যুৎ খরচ হয়, তাই এখনো নিজস্ব এআই সেবা তেমন প্রচলিত নয়।
ফটো ব্যাকআপ
স্মার্টফোনে তোলা ছবি নিরাপদে রাখার জন্য গুগল ফটোস সবচেয়ে জনপ্রিয়। এ সেবাটির বেশির ভাগ ফিচারই বিনা মূল্যে দিচ্ছে ইমিচ। এমনকি এআইয়ের মাধ্যমে ফটো শ্রেণিবিন্যাসও করে ইমিচ। এর জন্য প্রসেসরের বিল্ট-ইন জিপিইউ যথেষ্ট। ইমিচ ইনস্টল করার উপায়ও একই, পোর্টাল থেকে ইনস্টল করে নতুন অ্যাকাউন্ট তৈরি করে নিলেই চলবে। স্মার্টফোনে ইমিচ অ্যাপ ইনস্টল করে লগ-ইন করলে, ছবি ও ভিডিও নিজ থেকেই ব্যাকআপ নেবে ইমিচ। এআই ব্যবহার করে ছবিতে থাকা ব্যক্তিদের চেহারা শনাক্ত করে নিজ থেকেই ছবি শ্রেণিবিন্যাস করবে ইমিচ। ভবিষ্যতে এতে এডিটিং টুলস যুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা আছে।
অন্যান্য
নিজস্ব মেসেজিং সেবা, ভিডিও ও অডিও কল সেবা, গেমিং সার্ভার থেকে শুরু করে পূর্ণাঙ্গ ওয়েবসাইটও একই মেশিনে চালানো সম্ভব। যারা ওএস হিসেবে প্রক্সমক্স ব্যবহার করেছে, তারা চাইলে একাধিক কম্পিউটার একসঙ্গে ব্যবহার করে শক্তিশালী ক্লাস্টারও বানাতে পারবে।
ইন্টারনেটের মাধ্যমে ব্যবহার
নিজ ওয়াই-ফাই বা ল্যানের বাইরে থেকে সেবাগুলো ব্যবহার করার সবচেয়ে সহজ ও অনিরাপদ উপায় পোর্ট ফরওয়ার্ডিং করা। তবে, নিজস্ব ডোমেইনে যুক্ত করা বা ভিপিএন-এর মাধ্যমে ওয়েবসেবাগুলো ব্যবহার করা সবচেয়ে নিরাপদ। এ বিষয়ে অনলাইনে বেশ কিছু টিউটরিয়াল আছে।