প্রাণ-প্রকৃতি

গায়ক পোকা কৃষ্ণ-রক্তিম সিকাডা

  • মৃত্যুঞ্জয় রায়
শেয়ার
গায়ক পোকা কৃষ্ণ-রক্তিম সিকাডা

 পৃথিবীতে প্রায় তিন হাজার প্রজাতির সিকাডা রয়েছে। সিকাডার দেহ তিনটি অংশে বিভক্তমাথা, বুক ও পেট। সিকাডাদের বুকের তলায় শব্দ সৃষ্টিকারী বা সংগীত উৎপাদনকারী বিশেষ অঙ্গাদি রয়েছে। তারা শব্দ সৃষ্টি করে দেহের অমসৃণ কোনো অঙ্গের সঙ্গে অন্য কোনো বিশেষ অঙ্গের ঘষাঘষি করে।

সেই বিশেষ অঙ্গটি হলো ডানা 

 

বসন্তের ফুরফুরে হাওয়া বইছে। পুব দিক থেকে সকালের সূর্যটা রোদ ঢেলে দিয়েছে কচি সবুজ পাতাগুলোর ওপর। চকচক করছে নধরকান্তি কচি পাতারা। চৈত্রের এ রকম এক সকালে এসেছি আমরা চার প্রকৃতিসখা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মায়াভরা জঙ্গলটায় গাছপালা দেখতে।

হঠাত্ একটা বুটিজামগাছের পাতায় পাতায় অনেকগুলো পোকা চোখে পড়ল। বুটিজামের মুকুল বেরিয়েছে, শিগগিরই ফুল ফুটবে। পোকাগুলো কিছুক্ষণ এক জায়গায় থেকে আবার লাফ দিয়ে অন্য পাতায় গিয়ে বসছে। আর তাতেই ওদের রূপটা দেখতে পেলাম।
উড়ার সঙ্গে সঙ্গে কালচে ডানা চারটি মেলে ধরতেই সেই পোকাদের লাল টকটকে পেটটা বেরিয়ে পড়ল। দ্রুত পোকাটার ছবি তুলতে চেষ্টা করলাম। কাছে গেলে পাতায় বাতাসের দোল লাগলে ওরা উড়ে যাচ্ছিল। তাই ছবি তোলাটা সহজ হলো না। অবশেষে কয়েকবার চেষ্টার পর ছবি তুলতে পারলাম।
পোকাটার চেহারা দেখে অনুমান করেছিলাম, সিকাডা হবে। সাভার থেকে ঢাকায় ফিরে এসে বইপত্র ও অন্তর্জাল ঘেঁটে নিশ্চিত হলাম, ওর নাম কৃষ্ণ-রক্তিম সিকাডা।

এ পোকার ইংরেজি নাম Black and scarlet cicada I Red-nosed cicada। বৈজ্ঞানিক নাম Huechys sanguinea, পরিবার সিকাডিডি, বর্গ হেমিপ্টেরা। হুয়েকিস গণে সারা পৃথিবীতে ২৫টি প্রজাতি রয়েছে। এগুলোর মধ্যে Huechys phaenicura I Huechys sanguinea প্রজাতি দুটি সাধারণত এ উপমহাদেশে বেশি দেখা যায়। এই পোকার প্রজাতিগত নামের শেষাংশ স্যানগুইনিয়া, যার অর্থ রক্ত বা রক্তিম। এদের কাঁধ, পেট ও পিঠ রক্তিম লাল। এরা ছোট আকারের পোকা, দেহের দৈর্ঘ্য এক ইঞ্চিরও কম, প্রায় দুই সেন্টিমিটার। দেহের রং টকটকে লাল, পাখার রং ধোঁয়াশা-ধূসর কালো বা ধূসর কালচে। শুঁড় ও পা গাঢ় কালো। সাধারণত এপ্রিল মাসে ডিম ফুটে এর বাচ্চা বের হয়। এপ্রিলেই দেখা পেলাম ওদের। দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এই পোকার আদি নিবাস। বিশেষ করে বাংলাদেশ, মায়ানমার, ভারত ও দক্ষিণ চীনে এদের বেশি দেখা যায়। তবে সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম ও মালয়েশিয়ায়ও এই পোকা আছে। Huechys phaenicura প্রজাতির সিকাডাদের বলে কমলা সিকাডা।

সাধারণভাবে এই প্রজাতির পোকারা সিকাডা নামে পরিচিত। পৃথিবীতে প্রায় তিন হাজার প্রজাতির সিকাডা রয়েছে। সিকাডার দেহ তিনটি অংশে বিভক্ত—মাথা, বুক ও পেট। সিকাডাদের বুকের তলায় শব্দ সৃষ্টিকারী বা সংগীত উত্পাদনকারী বিশেষ অঙ্গাদি রয়েছে। পোকারা সাধারণত মুখ দিয়ে শব্দ উত্পাদন করে, কিন্তু সিকাডা সেদিক থেকে ব্যতিক্রম। তারা শব্দ সৃষ্টি করে দেহের অমসৃণ কোনো অঙ্গের সঙ্গে অন্য কোনো বিশেষ অঙ্গের ঘষাঘষি করে। সেই বিশেষ অঙ্গটি হলো ডানা। এ ছাড়া সিকাডা প্রজাতিগুলোর নিচের দিকে সামনের উদরীয় অংশের গোলাকার পক্ষল টিম্বাল নামের যে অঙ্গ থাকে, সেটাই এদের সুরেলা সংগীত সৃষ্টিতে মূল ভূমিকা রাখে। টিম্বালের কাছে বিশেষ এক ধরনের মাংসপেশি থাকে। সেই মাংসপেশিটি এসব পোকা বারবার টেনে ধরে আর ছেড়ে দেয়। ফলে তৈরি হয় সুরেলা শব্দ। দুপুর বা সন্ধ্যাবেলা সাধারণত সিকাডারা প্রকট সুরেলা সুরে গান ধরে বা শব্দ সৃষ্টি করে। এমন জোরে শব্দ ঝিঁঝি পোকা ছাড়া আর কোনো পোকা করতে পারে না।

সিকাডারা সাধারণত গাছে বাস করে, গাছ থেকে রস চুষে খেয়ে বাঁচে। ঝিঁঝিঁ পোকারা থাকে মাটির মধ্যে গর্ত করে। এই পোকার লাল নাক, কাঁধ ও পেট এবং কালো ডানা দ্বারা সহজে চেনা যায়। এদের বাচ্চারা মাটিতে বা ঝোপঝাড়ে থাকে। এরাও দলে দলে থাকে। এই পোকার জীবনচক্রকে বলা হয় অসম্পূর্ণ রূপান্তর। ডিম, নিম্ফ বা বাচ্চা ও পূর্ণাঙ্গ পোকা—এই তিনটি ধাপে ওদের জীবনচক্র শেষ হয়। মেয়ে পোকারা পুরুষ পোকার সঙ্গে মিলনের পর গাছের শাখা-প্রশাখায় গুচ্ছাকারে ডিম পাড়ে। ডিম ফুটে বাচ্চা বের হওয়ার পর তারা মাটির নিচে বসবাস শুরু করে। বেশ কয়েকবার খোলস বদলানোর পর শেষ ধাপে গিয়ে বাচ্চারা একদিন পূর্ণাঙ্গ পোকা হয়ে যায়। পূর্ণাঙ্গ পুরুষ পোকারা তাদের দেহের সঙ্গে ডানা ঘষে সুরেলা গানের সৃষ্টি করে, যাতে সেই গানের সুরে আকৃষ্ট হয়ে মেয়ে সিকাডা পুরুষটার কাছে আসে এবং মিলনের আমন্ত্রণ গ্রহণ করে। কখনো কখনো বাচ্চারা মাটিতে দুই থেকে পাঁচ বছর পর্যন্ত সময় কাটায়। বাচ্চাদের রং কমলা, ওদের ডানা থাকে না, গাছের শিকড় থেকে রস খেয়ে বাঁচে। কোনো কোনো সিকাডার বাচ্চারা মাটিতে ১৩ থেকে ১৭ বছর পর্যন্ত জীবন কাটায়। বড়ই বিচিত্র আর রহস্যময় এই গায়ক পোকাদের স্বভাব ও জীবনযাপন। এই প্রজাতির পোকা থেকে চীনে লোকচিকিত্সার ওষুধ তৈরি করা হয় বলে জানা গেছে।

 

মৃত্যুঞ্জয় রায় : কৃষিবিদ ও প্রকৃতিবিষয়ক লেখক

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

বাটা কোন দেশের, জানে না লুটপাটকারীরা

    ভাঙচুরের ঘটনায় গ্রেপ্তার ৭২
ওমর ফারুক
ওমর ফারুক
শেয়ার
বাটা কোন দেশের, জানে না লুটপাটকারীরা

খুলনার খালিশপুরের সাজিদ (২০) গত সোমবার যোগ দিয়েছিলেন খুলনা শহরে ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভ মিছিলে। সেই বিক্ষোভ থেকেই কিছু সুযোগসন্ধানী লোক খুলনা শহরে বাটার শোরুমে প্রথমে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে ভাঙচুর করে। এরপর লুটপাট চালায়। সেই লুটপাটকারীদের মধ্যে ছিলেন সাজিদও।

পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তারের পর তাঁর কাছ থেকে এক জোড়া জুতাও উদ্ধার করেছে।

পুলিশ সাজিদের মতো আরো অনেকের কাছেই জানতে চেয়েছিল, বাটা কোন দেশের প্রতিষ্ঠান। তাঁরা কেউই জানাতে পারেননি। তাহলে কেন তাঁরা হামলা ও লুটপাট করেছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তাঁরা জানান, অনেকেই লুটপাট করেছে, এ কারণে তাঁরাও লুটপাটে যোগ দিয়েছেন।

এ বিষয়ে খুলনার সোনাডাঙ্গা থানার ওসি মো. শফিকুল ইসলাম মোবাইল ফোনে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ঘটনার সময় কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। এরপর ভিডিও ফুটেজ দেখে শনাক্ত করে জড়িত আরো অনেককে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। আমরা এখন পর্যন্ত ৩৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছি। অন্যদের চিহ্নিত করা হচ্ছে।

এক প্রশ্নের জবাবে শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করছি। তারা জানায়, বাটা ইসরায়েলি পণ্য কি না তারা তা জানে না।’ তিনি আরো বলেন, ‘ঘটনার পর আশপাশের এলাকায় কিছু জুতা পড়ে ছিল, সেগুলো শিক্ষার্থীরা উদ্ধার করে থানায় জমা দেয়। আর যেগুলো লুট হয়েছে সেগুলো আমরা উদ্ধারের চেষ্টা করছি। এখন পর্যন্ত পাঁচ জোড়া জুতা উদ্ধার করা গেছে।

’ আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের এখন পর্যন্ত রাজনৈতিক পরিচয় জানা যায়নি। তবে আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করে জানার চেষ্টা করছি। তারা শুধু লুটপাটের উদ্দেশ্যেই এ ঘটনা ঘটিয়েছে, নাকি অন্য কোনো কারণ আছে, সেগুলো তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।’

সোনাডাঙ্গা থানার পুলিশ সদস্যরা জানান, গত মঙ্গলবার রাত থেকে গতকাল বুধবার পর্যন্ত পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁদের মধ্য রয়েছেন খালিশপুরের বাসিন্দা মো. সাইদ তালুকদার (১৮), খান জাহানআলী থানার বাড়ৈপাড়ার মৃত আনন্দ দাসের ছেলে সবুজ দাস ওরফে মো. আবদুল্লাহ (২৬), খালিশপুরের রাজ শিকদার (২১), মো. আশরাফ হোসেন (২৬) এবং সোনাডাঙ্গার মো. লাল মিয়া (৫২)।

ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ভাঙচুরের ঘটনায় ৭২ জন গ্রেপ্তার : প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম গতকাল সাংবাদিকদের জানান, গাজায় গণহত্যার প্রতিবাদে গত সোমবার অনুষ্ঠিত বিক্ষোভের সময় দেশের বিভিন্ন স্থানে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ভাঙচুর ও হামলার ঘটনায় ১০টি মামলা করা হয়েছে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৭২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্যের বরাতে প্রেস সচিব জানান, গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে খুলনায় ৩৩ জন, সিলেটে ১৯ জন, চট্টগ্রামে পাঁচজন, গাজীপুরে চারজন, নারায়ণগঞ্জে চারজন, কুমিল্লায় তিনজন এবং কক্সবাজারে চারজন রয়েছেন। এসব ঘটনা সংক্রান্তে এখন পর্যন্ত মোট ১০টি মামলা করা হয়েছে।

খুলনা থেকে কালের কণ্ঠের খুলনা ব্যুরো প্রধান এইচ এম আলাউদ্দিন জানান, কেএফসি, ডমিনোস পিত্জা ও বাটা শোরুমে হামলা-ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনায় পৃথক তিনটি মামলা করা হয়েছে। তিন মামলায় মোট আসামির সংখ্যা প্রায় তিন হাজার। তবে আসামিরা সবাই অজ্ঞাতপরিচয়। এ ঘটনায় প্রথম দিন ৩১ জনকে গ্রেপ্তার করার পর আরো পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ নিয়ে মোট গ্রেপ্তার হলো ৩৬ জন।

 

 

মন্তব্য
সবিশেষ

বিলুপ্ত ‘ডায়ার উলফ’ ফেরালেন বিজ্ঞানীরা

কালের কণ্ঠ ডেস্ক
কালের কণ্ঠ ডেস্ক
শেয়ার
বিলুপ্ত ‘ডায়ার উলফ’  ফেরালেন বিজ্ঞানীরা

টেলিভিশন সিরিজ ফ্যান্টাসি ড্রামা ‘গেম অব থ্রোনস’ বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয়তা এনে দিয়েছে ডায়ার উলফকে। এবার জিন প্রযুক্তিবিদ্যায় (জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং) ভর করে প্রায় সাড়ে ১২ হাজার বছর পরে পৃথিবীতে ফিরে এলো নেকড়ের এই প্রজাতি, আদতে যা বিলুপ্ত একটি বিশেষ প্রজাতির সাদা নেকড়ে, যার বিজ্ঞানসম্মত নাম অ্যায়োনোসিয়ন ডায়ারাস।

যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের ডালাসভিত্তিক ‘কলোসাল বায়োসায়েন্সেস’ নামের একটি বায়োটেক সংস্থার কর্মকর্তাদের দাবি, জিন প্রযুক্তিবিদ্যার সাহায্যে বিজ্ঞানীরা বিশ্বের প্রথম বিলুপ্ত প্রাণী পুনরুদ্ধারের (ডি-এক্সটিংকশন) কাজটি সফলভাবে সম্পন্ন করেছেন। সফলভাবে পরীক্ষাগারে তিনটি ডায়ার উলফ ছানার জন্ম হয়েছে।

সংস্থাটি জানিয়েছে, ২০২৪ সালের ১ অক্টোবর দুটি পুরুষ ডায়ার উলফ ছানা জন্মগ্রহণ করে। পরে চলতি বছরের ৩০ জানুয়ারি একটি স্ত্রী ছানার জন্ম হয়। তাদের বিজ্ঞানীরা প্রথমে ডায়ার উলফের জিনোম (বংশগতির ধারায় সঞ্চালিত জিন চিত্র) পুনরুদ্ধার করেন, যা প্রাচীন ডিএনএ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছিল। এরপর সেই জিনোমের মৌলিক বৈশিষ্ট্যগুলো চিহ্নিত করা হয়।
পরের ধাপে আধুনিক গ্রে উলফ বা ধূসর নেকড়ের ডিএনএ সংগ্রহ করে তাঁরা জিন প্রযুক্তিবিদ্যার সাহায্যে তৈরি করেন ডায়ার উলফের ‘জেনেটিক কোড’ সংবলিত ডিএনএ। সেই ডিএনএ প্রতিস্থাপিত করা হয় ধূসর নেকড়ের ডিম্বাণুতে। কারণ জিন বিশেষজ্ঞ রলেন্সের মতে, ২৫ লাখ বছর আগে বংশগতির ধারায় জিনগত পৃথকীকরণ হয়েছিল দুই প্রজাতির নেকড়ের। ফলে এখনো অনেক জিনগত মিল রয়েছে তাদের।
তবে নেকড়ে নয়, ডায়ার উলফ ভ্রূণের গর্ভধারিণী (সারোগেট মাদার) হিসেবে বেছে নেওয়া হয় কুকুরকে। এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে কলোসাল বায়োসায়েন্সেসের সহপ্রতিষ্ঠাতা এবং সিইও বেন ল্যাম বলেন, ‘আমাদের বিজ্ঞানীরা ১৩ হাজার বছরের পুরনো একটি দাঁত এবং ৭২ হাজার বছরের পুরনো একটি খুলি থেকে ডায়ার উলফের ডিএনএ সংগ্রহ করেছিলেন। জিন প্রযুক্তিবিদ্যার ক্ষেত্রে এটি একটি ঐতিহাসিক সাফল্য।’ সূত্র : সিএনএন

 

 

মন্তব্য

বর্ষবরণের প্রস্তুতি

শেয়ার
বর্ষবরণের প্রস্তুতি
দুয়ারে কড়া নাড়ছে বাংলা নতুন বছর। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে চলছে বর্ষবরণের প্রস্তুতি। গতকাল তোলা। ছবি : মোহাম্মদ আসাদ
মন্তব্য

তবু ফিটনেসহীন গাড়ি বেড়ে ছয় লাখ

    অনুপযুক্ত গাড়ি দেড় বছরে বেড়েছে লাখের ওপরে ঈদ মৌসুমে ৩১৬ দুর্ঘটনা
বিশেষ প্রতিনিধি
বিশেষ প্রতিনিধি
শেয়ার
তবু ফিটনেসহীন গাড়ি বেড়ে ছয় লাখ

ফরিদপুর সদরের বাখুণ্ডা শরিফ জুট মিলের সামনে গত মঙ্গলবার সকালে চালক নিয়ন্ত্রণ হারালে খাদে পড়ে যায় যাত্রীবাহী বাস। তাতে বাবা-ছেলেসহ প্রাণ হারান সাতজন। পরে যাচাই করতে গিয়ে বিআরটিএ ফরিদপুর কার্যালয়ের কর্মকর্তারা দেখতে পান, বাসের ফিটনেস সনদের মেয়াদ গত ৫ মার্চ শেষ হয়েছে। বিআরটিএ ফরিদপুর কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক নাসির উদ্দিন গতকাল দুপুরে কালের কণ্ঠকে বলেন, হাইডেক্স পরিবহনের এই বাসের ফিটনেস ছিল না।

পাঁচ সদস্যের কমিটি তদন্ত শুরু করেছে।

নিরাপদ ঈদ যাত্রার জন্য ফিটনেসহীন গাড়ি চলাচল রোধে যৌথ অভিযান শুরু করা হয়েছিল গত ২২ মার্চ। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ-বিআরটিএর হিসাবে গত ১২ মার্চ পর্যন্ত দেশে ফিটনেসহীন গাড়ি ছিল ছয় লাখ ১১ হাজার ১৪১টি। তবে অভিযান চালানোর পরও এ ধরনের অনুপযোগী গাড়ি বাড়ছেই।

সংস্থাটির গত ৮ এপ্রিলের তথ্য অনুসারে, দেশে ফিটনেসবিহীন গাড়ি বেড়ে হয়েছে ছয় লাখ ২৭ হাজার ৮৭৫টি। অথচ বিআরটিএ গত দেড় বছর আগে জানিয়েছিল, ফিটনেসহীন গাড়ি ছিল পাঁচ লাখ। দেড় বছরে ফিটনেসহীন গাড়ি এক  লাখের বেশি বেড়েছে।

গত ১৯ ডিসেম্বর রাজধানীতে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে পরবর্তী এক মাসের মধ্যে রাজধানীতে চলাচলকারী সব ধরনের যানবাহনের ফিটনেস নিশ্চিত করা না হলে বিআরটিএর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে সতর্ক করেছিলেন সড়ক পরিবহন ও সেতু উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান।

তাঁর ওই সতর্কবাণীর পরও পরিস্থিতির তেমন উন্নতি হয়নি বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।

বিআরটিএ ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়ের ফিটনেস শাখার দায়িত্বে থাকা সহকারী পরিচালক মো. রুহুল আমীন গত সন্ধ্যায় কালের কণ্ঠকে বলেন, বিআরটিএর ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানকালে ফিটনেসহীন গাড়ি আটক করে ডাম্পিংয়েও পাঠানো হয়। ২০২৩ সাল থেকে খেলাপি মালিকদের নিয়মিত চিঠিও দেওয়া হচ্ছে। তিনি স্বীকার করেন, ঢাকায়ও ফিটনেসহীন গাড়ি বাড়ছে।

সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮-এর ২৫ ধারা অনুযায়ী, বিআরটিএ থেকে মোটরযানের ফিটনেস সনদ নেওয়ার বিধান রয়েছে।

তার পরও ১০ বছরের বেশি সময় ধরে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক মোটরযানের ফিটনেস নবায়ন করা হয়নি।

বিআরটিএর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, দফায় দফায় কর মওকুফের পরও মালিকরা গাড়ির ফিটনেস হালনাগাদ করছেন না। বারবার অভিযান চালানোর পরও এসব গাড়ির মালিকরা কৌশলে গাড়ি চালানোর ব্যবস্থা টিকিয়ে রেখেছেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব গাড়ির জন্য সড়কে দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি বাড়ছে। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের হিসাবে, ১৯৯৮ থেকে ২০১৩ পর্যন্ত সংঘটিত সড়ক দুর্ঘটনাগুলোর অন্যান্য কারণের মধ্যে ছিল ৬৬ হাজার ৬৬১টি অনুপযোগী (ফিটনেসবিহীন) গাড়ি। এখনও সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ এটি। সড়ক নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. হাদিউজ্জামান বলেন, সড়কে দুর্ঘটনা বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ ফিটনেসহীন গাড়ি। বাস ও ট্রাকের মতো ভারী গাড়ির ফিটনেস তুলনামূলকভাবে কম। গবেষণায় দেখতে পেয়েছি, ২০১৯ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় ভারী গাড়ি, বাস ও ট্টাকের সংশ্লিষ্টতা ছিল ৪৩.৪ শতাংশ। ২০২০ সালে তা বেড়ে হয় ৪৪.৫ শতাংশ। এখন তা আরো বেড়েছে।

বিআরটিএর মোটরযান পরিদর্শকরা জানান, কোনো গাড়ি সড়কে চলাচলের উপযোগী কি না, তা যাচাই করার জন্য গাড়ির ৩২টি বিষয় পর্যবেক্ষণ করতে হয়। সব বিষয় খালি চোখে ধরা পড়ে না। মিরপুর ছাড়া বাকি অন্য সব সার্কেলে গাড়ির ফিটনেস পরীক্ষা করা হয় চোখে দেখে। চোখে শুধু গাড়ির বডি, চেসিস নম্বর, ইঞ্জিনের অবস্থা, হেডলাইট ও লুকিং গ্লাস এ ধরনের ছয়-সাতটি অবস্থা দেখে ফিটনেস সনদ দেওয়া হয়। গাড়ির ফিটনেস পরীক্ষা যান্ত্রিকভাবে সম্পন্ন করতে ১৯৯৪ সালে প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। ২০০৪ সালে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) অর্থায়নে ১০০ কোটি টাকা ব্যয়ে মোট পাঁচটি সেমি অটোমেটিক (আধা-স্বয়ংক্রিয়) ভেহিকল ইন্সপেকশন সেন্টার (ভিআইসি) বা যানবাহন পরীক্ষণকেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। শেষ পর্যন্ত শুধু বিআরটিএর মিরপুর কার্যালয়ে এ কেন্দ্র চালু হয়।

ঈদ মৌসুমে ৩১৬ দুর্ঘটনা

যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী। গতকাল বুধবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জানান, ঈদুল ফিতরের আগে-পরে দেশের বিভিন্ন সড়কে ৩১৫টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এসব দুর্ঘটনায় ৩২২ জন নিহত হয়েছেন। প্রতিবারের মতো দুর্ঘটনার শীর্ষে রয়েছে মোটরসাইকেল।

সংবাদ সম্মেলনে দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে ফিটনেসহীন গাড়ির কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, দেশের সড়ক-মহাসড়কে মোটরসাইকেল, ব্যাটারিচালিত রিকশা, অটোরিকশা অবাধে চলাচল; জাতীয় মহাসড়কে রোডসাইন বা রোড মার্কিং, সড়কবাতি না থাকায় হঠাৎ ফিডার রোড থেকে যানবাহন উঠে আসা; সড়কে মিডিয়ামে রোড ডিভাইডার না থাকা, অন্ধবাঁকে গাছপালায় দৃষ্টিপ্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি; মহাসড়কের নির্মাণ ত্রুটি, যানবাহনের ত্রুটি, ট্রাফিক আইন অমান্য করার প্রবণতাউল্টোপথে যানবাহন, সড়কে চাঁদাবাজি, পণ্যবাহী যানে যাত্রী পরিবহন; অদক্ষ চালক, ফিটনেসবিহীন যানবাহন, অতিরিক্ত যাত্রীবহন ও বেপরোয়া যানবাহন চালানো এবং একজন চালক অতিরিক্ত সময় ধরে যানবাহন চালানোয় দুর্ঘটনা ঘটছে।

 

 

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ