<p>মানুষকে আল্লাহ তাআলা অল্প ইলম বা জ্ঞান দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। সে কখনো তার বুদ্ধি-বিবেক দিয়ে সঠিক পথ খুঁজে পায় না। তখন সে সিদ্ধান্তহীনতায় দিকভ্রান্ত হয়ে ঘুরতে থাকে। মানুষের এমন কঠিন বিপদ আর সংশয়ের সময় আল্লাহ তাআলা তাঁর নিজ অনুগ্রহে পথ দেখান। তিনি আল-হাদি। তিনি পথপ্রদর্শক, যিনি বান্দাকে পথ দেখান। ধীরে ধীরে তাকে গন্তব্যস্থলে নিয়ে যান। শত অন্ধকার থেকে তিনি বান্দাকে আলোর উপত্যকার দিকে নিয়ে যান। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আল্লাহ মুমিনদের অভিভাবক। তিনি তাদের অন্ধকার থেকে বের করে আলোতে নিয়ে আসেন। আর যারা কুফর অবলম্বন করেছে তাদের অভিভাবক শয়তান, যারা তাদের আলো থেকে বের করে অন্ধকারে নিয়ে যায়। তারা সবাই অগ্নিবাসী। তারা সর্বদা তাতেই থাকবে।’ (সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ২৫৭)</p> <p>অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহ তোমাদেরকে তোমাদের মাতৃগর্ভ থেকে এমন অবস্থায় বের করেছেন যে তোমরা কিছুই জানতে না। তিনি তোমাদের জন্য কান, চোখ ও অন্তঃকরণ সৃষ্টি করেছেন। যাতে তোমরা শোকর আদায় করো।’ (সুরা : নাহল, আয়াত : ৭৮)</p> <p>অর্থাৎ নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডলের সব গোপন রহস্য (যা কেউ জানে না, জানার দিক দিয়ে) আল্লাহ তাআলারই বৈশিষ্ট্য। (অতএব, জ্ঞানগুণে তিনি পরিপূর্ণ) এবং (শক্তিতে এমন পরিপূর্ণ যে এসব গোপন রহস্যের মধ্যে যে একটা বিরাট কাজ আছে অর্থাৎ) কিয়ামতের কাজ (তা) এমন (ত্বরিত গতিতের সম্পন্ন) হবে, যেমন চোখের পলক, বরং তার চেয়েও দ্রুত। (কিয়ামতের কাজের অর্থ মৃতদের মধ্যে প্রাণ সঞ্চারিত হওয়া। এটা যে চোখের পলকের চেয়েও দ্রুত হবে, তা বর্ণনাসাপেক্ষ নয়। কেননা, চোখের পলক একটি গতি। গতি কালের অধীন। কিন্তু প্রাণ সঞ্চারিত হওয়া মুহূর্তের ব্যাপার। মুহূর্ত কালের চেয়ে দ্রুত। এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই।</p> <p>যারা মুমিন তাদের আল্লাহ তাআলা মিথ্যার বেড়াজাল থেকে সত্যের পথের দিশা দেন। প্রতিটি প্রাণকে সৃষ্টি করার পর তাকে চলার পথ শিক্ষা দিয়ে দেন। ছোট মাছের পোনা জন্ম লাভ করার পর, সে চলা শিখে যায়। তাকে নতুন করে শেখাতে হয় না। এটা মহান আল্লাহর কুদরতি নিদর্শন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘মুসা বলল, আমাদের রব তো তিনি, যিনি প্রত্যেককে তার উপযুক্ত আকৃতি দিয়েছেন, তারপর তার পথ প্রদর্শনও করেছেন।’ (সুরা : তাহা, আয়াত : ৫০)</p> <p>অর্থাৎ প্রতিটি সৃষ্টির গঠন-প্রকৃতির মধ্যে আল্লাহ তাআলার কুদরত ও হিকমতের মাহাত্ম্য বিদ্যমান। তিনি যাকে যেই আদলে সৃষ্টি করেছেন, সে অনুযায়ী নিজ দায়িত্বে আঞ্জাম দেওয়ার নিয়ম-নীতিও শিক্ষা দিয়েছেন। যেমন জগতে আলো ও তাপ সরবরাহের জন্য সূর্যকে এক বিশেষ আকৃতি দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। সেই আকৃতি অনুযায়ী দায়িত্ব পালনের জন্য তার দরকার ছিল সৌর জাগতিক সুনির্দিষ্ট নিয়মে আপন কক্ষপথে আবর্তিত হতে থাকা। আল্লাহ তাআলা তাকে তা শিখিয়ে দিয়েছেন।</p> <p>এভাবে প্রত্যেক প্রাণীকে শিক্ষা দিয়েছেন সে কিভাবে চলবে এবং কিভাবে নিজ জীবিকা সংগ্রহ করবে। মাছের পোনা পানিতে জন্ম নেয় এবং সঙ্গে সঙ্গে সাঁতারও কাটে। এটা তাকে কে শিক্ষা দিয়েছে? পাখিরা হাওয়ায় ওড়ার তালিম কার কাছে পেয়েছে? মোদ্দাকথা প্রতিটি মাখলুককে তার গঠন প্রকৃতি অনুযায়ী জীবিত থাকা ও জীবনের রসদ সংগ্রহ করার নিয়ম আল্লাহ তাআলাই শিক্ষা দান করেছেন। (তাওজিহুল কোরআন)</p> <p>এ জন্য সর্বদা আল্লাহর কাছে সত্য, সরল ও সঠিক পথের প্রার্থনা করা। আমি যেন সত্য পথ বিচ্যুত না হই। আমাকে যেন সর্বদা তিনি আগলে রাখেন সঠিক পথের দিকে। এর জন্য আমাদের প্রিয় নবী (সা.) আমাদের দোয়া শিখিয়েছেন। আব্দুল্লাহ (রা.) সূত্রে নবী (সা.) থেকে বর্ণিত, তিনি এই বলে দোয়া করতেন,</p> <p style="text-align: center;"><span style="color:#16a085;"><span style="font-size:20px;"><strong> اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ الْهُدَى وَالتُّقَى وَالْعَفَافَ وَالْغِنَى</strong></span></span></p> <p>উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকাল হুদা, ওয়াত তুকা, ওয়াল আফাফা, ওয়াল গেনা।’</p> <p>অর্থ : হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে হিদায়াত, তাকওয়া, নিষ্কলুষতা ও সচ্ছলতার জন্য প্রার্থনা করছি। (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৬৬৫৬)<br />  </p>