<p>আকস্মিক বন্যায় বিপর্যস্ত বৃহত্তর নোয়াখালী, কুমিল্লা ও ফেনীর বিস্তীর্ণ অঞ্চল। এই দুর্যোগে বন্যার্ত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে দেশের সব শ্রেণি, পেশা ও ধর্মের মানুষ। পিছিয়ে নেই দেশের আলেমসমাজও। তাঁরা সাধ্যের সবটুকু দিয়ে পাশে দাঁড়িয়েছেন বানভাসী মানুষের। আলেমদের বহুমুখী কর্মযজ্ঞের খণ্ড খণ্ড চিত্র তুলে ধরেছেন আতাউর রহমান খসরু</p> <p><strong>১. জাতীয় ওলামা মাশায়েখ আইম্মা পরিষদ</strong></p> <p>বন্যার প্রথম দিন থেকে আক্রান্ত মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছে আলেমদের সংগঠন জাতীয় ওলামা মাশায়েখ আইম্মা পরিষদ। বন্যায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত তিন জেলা নোয়াখালী, ফেনী ও কুমিল্লায় চলছে তাদের ত্রাণকার্যক্রম। কুমিল্লার পদুয়ার বাজারে স্থাপিত অস্থায়ী ক্যাম্প থেকে তা পরিচালনা করা হচ্ছে। এ পর্যন্ত সংগঠনটি আনুমানিক ১০ টন চাল, সাত টন আলু, দুই টন পেঁয়াজ, দুই টন ডাল, তিন হাজার প্যাকেট লবণ, তিন হাজার কেজি তেল, সাত হাজার লিটার বিশুদ্ধ খাবার পানি বিতরণ করেছে।</p> <p>সংগঠনটির সাধারণ সম্পদ মুফতি রেজাউল করীম আবরার কালের কণ্ঠকে বলেন, আলহামদুলিল্লাহ! জাতীয় ওলামা মাশায়েখ আইম্মা পরিষদ প্রথম থেকে আক্রান্ত এলাকায় সেবা কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। আমাদের কেন্দ্রীয় কমিটি ও জেলা পর্যায়ের অনেক দায়িত্বশীলের উদ্যোগে ত্রাণকার্যক্রম চলছে। আমরা স্পিড বোট ও ইঞ্জিনচালিত নৌকার মাধ্যমে দুর্গম এলাকা থেকে মানুষকে উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনা করছি।</p> <p><strong>২. দারুন নাজাত কামিল মাদরাসা</strong></p> <p>ছারছীনা দরবারের নির্দেশনা ও সহযোগিতায় দারুন নাজাত কামিল মাদরাসা থেকে এরই মধ্যে এক হাজার পরিবারের মধ্যে ১০ টন শুকনো খাবার ও ওষুধ বিতরণ করা হয়েছে। তারা আরো ১০ হাজার পরিবারের জন্য সহযোগিতা প্রস্তুত করছেন। উপদ্রুত অঞ্চলের যেসব এলাকায় পানি কমছে সেখানে নগদ অর্থ সহায়তাও দেওয়া হচ্ছে।</p> <p>দারুন নাজাত সিদ্দীকিয়া কামিল মাদরাসার সহকারী অধ্যাপক ড. মাওলানা মোফাজ্জেল হোসেন জানান, ছারছীনা দরবারের নির্দেশনায় আমরা কাজ করছি এবং শেষ পর্যন্ত থাকব ইনশাআল্লাহ। ছারছীনা দরবারে ভক্ত ও মুরিদরা ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে ত্রাণ ও উদ্ধার কাজ করে যাচ্ছে। বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর হেমায়েতে ইসলাম মিশন ফান্ডের অর্থায়নে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেওয়া হবে। ইনশাআল্লাহ!</p> <p><strong>৩. তাকওয়া ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ</strong></p> <p>করোনা মহামারির সময় লাশ দাফন কার্যক্রমের মাধ্যমে ব্যাপক প্রশংসা কুড়ায় তাকওয়া ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ। প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার মাওলানা গাজী ইয়াকুব কালের কণ্ঠকে বলেন, আমরা পাঁচ দিন ধরে বন্যাদুর্গত এলাকায় কাজ করে যাচ্ছি। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে অবস্থিত রওজাতুল উলুম মাদরাসায় আমরা অস্থায়ী ক্যাম্প স্থাপন করেছি। এখান থেকে কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। আমরা ২৪ ও ২৫ আগস্ট মোট ১৭ ট্রাক ত্রাণ বিতরণ করেছি। প্রথম থেকে চারটি ইঞ্জিনচালিত নৌকা উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রমে ব্যবহৃত হচ্ছিল। এখন আরো দুটি যুক্ত হয়েছে। বিভিন্ন থানায় আমাদের স্বেচ্ছাসেবী টিম সক্রিয় আছে। তারা ত্রাণ ও উদ্ধারকাজে আসা বিভিন্ন দলকে গাইডও করছে।</p> <p><strong>৪. হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ</strong></p> <p>হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশও বন্যাকবলিত অঞ্চলে ব্যাপক ত্রাণতৎপরতা চালাচ্ছে। সংগঠনের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী বলেন, হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় ও জেলা কমিটির সদস্যরা সম্মিলিত ও পৃথকভাবে অসহায় মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। প্রতিটি জেলা ও থানায় আমরা পৃথক পৃথক স্বেচ্ছাসেবী দল গঠন করেছি। আমার অনুমান, হেফাজতে ইসলামের পক্ষ থেকে এ পর্যন্ত কয়েক কোটি টাকার ত্রাণসামগ্রী বন্যাকবলিত অঞ্চলে বিতরণ করা হয়েছে। এর মধ্যে শুকনা খাবার, ওষুধসামগ্রী ও শিশু খাবার রয়েছে। আগামী মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট) হেফাজতে ইসলামের মহাসচিবের নেতৃত্বে আরো ২০ গাড়ি ত্রাণ বিতরণ করা হবে। বন্যা-পরবর্তী সময়ে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে এক হাজার ঘর তৈরি করে দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।</p> <p><strong>৫. ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ</strong></p> <p>যেকোনো জাতীয় দুর্যোগে মানুষের পাশে দাঁড়ায় ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। এবারের আকস্মিক বন্যায় পিছিয়ে নেই দলটি। দলের আমির ও চরমোনাইয়ের পির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীমের নির্দেশে দলটির সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা বন্যাদুর্গত এলাকায় ত্রাণ ও উদ্ধারতৎপরতা চালাচ্ছে। দলের সহকারী মহাসচিব অধ্যক্ষ মাওলানা শেখ ফজলে বারী মাসউদ কালের কণ্ঠকে বলেন, আমাদের সম্মানিত আমির আমাদের প্রথম দিনই মানুষের পাশে দাঁড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন। আমাদের স্থানীয় নেতাকর্মীরা জীবন বাজি রেখে মানুষের সেবায় কাজ করে যাচ্ছেন। কেন্দ্রীয়ভাবে আমরা সারা দেশ থেকে অর্থ ও সহায়তা সংগ্রহ করে মানুষের মধ্যে বিতরণ করছি। মূল সংগঠন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের পাশাপাশি যুব ও ছাত্র আন্দোলনসহ সহযোগী পেশাজীবী সংগঠনগুলোও এই কাজে সর্বাত্মক কাজ করে যাচ্ছে। বন্যা-পরবর্তী পুনর্বাসন পর্যন্ত আমরা কাজ করে যাব ইনশাআল্লাহ!</p> <p><strong>৬. ফি সাবিলিল্লাহ ফাউন্ডেশন</strong></p> <p>বন্যাকবলিত অঞ্চলে কাজ করছে খ্যাতিমান ইসলামী বক্তা মুফতি হাবিবুর রহমান মিছবাহ প্রতিষ্ঠিত ফি সাবিলিল্লাহ ফাউন্ডেশন। ফেনী ও নোয়াখালীর বিস্তীর্ণ অঞ্চলে ত্রাণ ও উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনা করছে সংস্থাটি। দুর্গত মানুষের ভেতর শুকনা খাবার ও ওষুধ বিতরণ করছে ফাউন্ডেশনের কর্মী ও স্বেচ্ছাসেবীরা। এ ছাড়া স্পিড বোট ও ইঞ্জিনচালিত নৌকাযোগে দুর্গম অঞ্চলে উদ্ধার কার্যক্রম চালাচ্ছে তারা। এরই মধ্যে হেলিকপ্টারের সাহায্যে অন্তঃসত্ত্বা নারীকে উদ্ধার করে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে ফি সাবিলিল্লাহ ফাউন্ডেশন।</p> <p><strong>৭. খেলাফত যুব মজলিস</strong></p> <p>ফেনী শহরের সালাউদ্দীন মোড়ে লঙ্গরখানা ও সহায়তা মোড় খুলেছে বাংলাদেশ খেলাফত যুব মজলিস। সেখান থেকে প্রতিদিন তিন থেকে চার হাজার মানুষের মধ্যে তৈরি খাবার বিতরণ করা হচ্ছে। আশপাশে আশ্রয় নেওয়া মানুষ সেখান থেকে খাবার সংগ্রহ করছে। তা ছাড়া নৌকাযোগে বিভিন্ন এলাকায় খাবার পৌঁছে দিচ্ছে যুব মজলিসের কর্মীরা। ত্রাণতৎপরতায় অংশ নিয়েছেন সংগঠনের সভাপতি মাওলানা মামুনুল হকসহ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ। মাওলানা মামুনুল হক এক ফেসবুক পোস্টে এই কার্যক্রম আরো এগিয়ে নেওয়ার আশা ব্যক্ত করেন। তিনি লেখেন, ‘বৃহৎ পরিসরে কাজের জন্য লঙ্গরখানা সম্প্রসারণ করা হচ্ছে। বিভিন্ন আশ্রয়শিবির ও কাছে-দূরের দুর্গত মানুষের দোরগোরায় খাবার পরিবেশনের কাজ চলমান থাকবে ইনশাআল্লাহ। সেই সঙ্গে পানি সরে যাওয়া এলাকায় মানুষের নিকট প্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্য সরবরাহের কার্যক্রমও শুরু করা হবে।’</p> <p><strong>৮. দাওয়াহ ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ</strong></p> <p>দ্বিনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান মারকাজুদ দাওয়াহ আল-ইসলামিয়া, ঢাকার সেবামূলক প্রতিষ্ঠান দাওয়াহ ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ। ২০২২ সালে হওয়া সিলেট-সুনামগঞ্জ বন্যার সময় প্রতিষ্ঠানটি কার্যক্রম শুরু করে। সে সময় তিন মাসব্যাপী পুনর্বাসন কার্যক্রম পরিচালনা করে বেশ সুনাম অর্জন করে। এবার ফেনী, নোয়াখালী ও কুমিল্লায় আকস্মিক বন্যা শুরু হলে ত্রাণ কার্যক্রম শুরু করেছে প্রতিষ্ঠানটি। ঢাকা ও কুমিল্লা থেকে পৃথকভাবে ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। ত্রাণ কার্যক্রমে অংশ নিয়েছেন মারকাজুদ দাওয়াহ আলইসলামিয়ার শিক্ষক মুফতী ফয়জুল্লাহ। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, আমরা ত্রাণ ও পুনর্বাসন উভয়টিকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করি। দাওয়াহ ফাউন্ডেশনের ত্রাণ কার্যক্রম চলমান। ইনশাআল্লাহ পুনর্বাসনের কাজও করা হবে। আমরা ত্রাণ বিতরণের ক্ষেত্রে সেসব অঞ্চলকে প্রাধান্য দিচ্ছি, যেখানে ত্রাণ পৌঁছাচ্ছে না।</p> <p><strong>আরো যাঁরা কাজ করছেন</strong></p> <p>এ ছাড়া আলেমদের পরিচালিত আরো কিছু প্রতিষ্ঠান ও সংস্থা বন্যাদুর্গত অঞ্চলে ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা করছে। যেমন, ইত্তেফাকুল উলামা বৃহত্তর মোমেনশাহী, আল মারকাজুল ইসলামী, প্রবাসী আলেম শায়খ মাহমুদুল হাসানের রেইনড্রপ ট্রাস্ট, সেবাসংস্থা পিসব, হাফেজ্জী হুজুর সেবা সংস্থা, রহমাতুল্লিল আলামিন, সুন্নাহ ট্রাস্ট ইত্যাদি। এ ছাড়া ইসলামী রাজনৈতিক দলগুলোর ভেতর খেলাফত মজলিস, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ও খেলাফত আন্দোলন ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা করছে।</p>