<p>মানুষের সব ইচ্ছা পূরণ হয় না। আবার ইচ্ছা পূরণের সুযোগ থাকলেও মানুষ কখনো কখনো তা পূরণ করা থেকে বিরত থাকে। বিরত থাকে বৃহৎ কোনো কল্যাণের কথা চিন্তা করে। মহানবী (সা.)-ও তাঁর এমন কিছু ইচ্ছা পূরণ করা থেকে বিরত ছিলেন। তিনি তা করেছিলেন উম্মতের বৃহত্তর কল্যাণ চিন্তা করে। যেন উম্মত ভবিষ্যতে ফিতনার শিকার না হয়।</p> <p><strong>যে কাজগুলো করার ইচ্ছা ছিল</strong></p> <p>মহানবী (সা.) পবিত্র কাবাঘরের পুনর্নির্মাণের ব্যাপারে তিনটি ইচ্ছা পোষণ করতেন। তাহলো—</p> <p>১. ইবরাহিম (আ.)-এর অবকাঠামো অনুসারে কাবাঘরের পুনর্নির্মাণ করা।</p> <p>২. কাবাঘরের দরজা ভূমির নিকটবর্তী করা।</p> <p>৩. পূর্ব ও পশ্চিমে দরজা স্থাপন করা। অষ্টম হিজরিতে মক্কা বিজয়ের পর এই ইচ্ছাগুলো বাস্তবায়নের সুযোগ পেলেও নবীজি (সা.) তা পূরণ করা থেকে বিরত থাকেন।</p> <p>পবিত্র কাবাঘর পুনর্নির্মাণের ব্যাপারে নবীজি (সা.)-এর উল্লিখিত ইচ্ছা তিনটি একাধিক হাদিসে এসেছে। যেমন—</p> <p>১. ইবরাহিম (আ.)-এর অবকাঠামো ফিরিয়ে আনা : আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, তোমার কি জানা নেই যে তোমার সম্প্রদায় কুরাইশ কাবা তৈরি করেছে এবং ইবরাহিম (আ.)-এর ভিত্তির থেকে ছোট নির্মাণ করেছে? আমি [আয়েশা (রা.)] তখন বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আপনি কি ইবরাহিম (আ.)-এর ভিত্তির ওপর কাবাকে আবার নির্মাণ করবেন না? তিনি বলেন, যদি তোমার গোত্রের কুফরির যুগ নিকট অতীতে না হতো (তবে আমি করতাম)। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৪৪৮৪)</p> <p>২. দরজার চৌকাঠ ভূমির নিকটবর্তী করা : আয়েশা (রা.) বলেন, নবী (সা.)-কে প্রশ্ন করলাম, (হাতিমের) দেয়াল কি বায়তুল্লাহর অন্তর্ভুক্ত, তিনি বলেন, হ্যাঁ। আমি বললাম, তাহলে তারা বায়তুল্লাহর অন্তর্ভুক্ত করল না কেন? তিনি বলেন, তোমার গোত্র তথা কুরাইশের কাবা নির্মাণের সময় অর্থ নিঃশেষ হয়ে যায়। আমি বললাম, কাবার দরজা এত উঁচু হওয়ার কারণ কী? তিনি বলেন, তোমার গোত্র এ জন্য করেছে, যেন যাকে ইচ্ছা ঢুকতে দেবে এবং যাকে ইচ্ছা নিষেধ করবে। যদি তোমার গোত্রের যুগ জাহিলিয়াতের নিকটবর্তী না হতো এবং আশঙ্কা না হতো যে তারা একে ভালো মনে করবে না, তাহলে আমি দেয়ালকে বায়তুল্লাহর অন্তর্ভুক্ত করে দিতাম এবং তার দরজা ভূমি বরাবর করে দিতাম। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১৫৮৪)</p> <p>৩. কাবাঘরে দুটি দরজা স্থাপন : নবী (সা.) বলেছেন, ‘আয়েশা! তোমাদের গোত্র যদি (ইসলাম গ্রহণে) নতুন না হতো, তবে আমি কাবা ভেঙে ফেলে তার দুটি দরজা বানাতাম। এক দরজা দিয়ে লোক প্রবেশ করত আরেক দরজা দিয়ে বের হতো।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১২৮)</p> <p><strong>ঘটনার শিক্ষা ও বিধান</strong></p> <p>মহানবী (সা.)-এর উল্লিখিত কর্মপদ্ধতি দ্বারা কয়েকটি বিষয় প্রমাণিত হয়। যেমন—</p> <p>১. বৈধ কাজ পরিহারের অবকাশ : কোনো জাতি-গোষ্ঠীর মধ্যে ফিতনা ছড়িয়ে পড়ার ভয় থাকলে অপরিহার্য নয় এমন বৈধ কাজ পরিহার করার অবকাশ আছে।</p> <p>২. ফিতনা থেকে আত্মরক্ষা করা : কোনো কল্যাণ অর্জনের চেয়ে অকল্যাণ থেকে আত্মরক্ষা করা বেশি গুরুত্বপূর্ণ।</p> <p>৩. বিধান বাস্তবায়নে তাড়াহুড়া নয় : শরিয়তের বিধি-বিধান বাস্তবায়নে তাড়াহুড়া করা কাম্য নয়।</p> <p>৪. নবীজি (সা.)-এর আনুগত্য অপরিহার্য : নবীজি (সা.) যেমন কাবাঘর নির্মাণের ব্যাপারে ইচ্ছাগুলো পূরণ করেননি, পরবর্তী যুগের মুসলিম শাসকরাও তা থেকে বিরত থেকেছেন। কেননা দ্বিনের ব্যাপারে নবীজি (সা.)-এর অনুসরণ অপরিহার্য। আবদুল্লাহ ইবনু ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, ওমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) হাজরে আসওয়াদ লক্ষ্য করে বলতেন, আল্লাহর কসম, আমি নিশ্চিতরূপে জানি তুমি একটি পাথর, তুমি কারো কল্যাণ বা অকল্যাণ করতে পারো না। নবী (সা.)-কে তোমায় চুম্বন করতে না দেখলে আমি তোমাকে চুম্বন করতাম না। এরপর তিনি চুম্বন করলেন। পরে বললেন, আমাদের রামল করার উদ্দেশ্য কী ছিল? আমরা তো রামল করে মুশরিকদের আমাদের শক্তি প্রদর্শন করেছিলাম। আল্লাহ এখন তাদের ধ্বংস করে দিয়েছেন। এরপর বললেন, যেহেতু কাজটি আল্লাহর রাসুল (সা.) করেছেন, তাই তা পরিত্যাগ করা পছন্দ করি না। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১৬০৫)</p> <p>আল্লাহ সবাইকে সঠিক জ্ঞান দান করুন। আমিন।</p>