<p>২৬৩ দিনে ‘বাঁচার লড়াই’য়ে বিজয় অর্জিত হওয়ার প্রসঙ্গটি রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহর ‘বাতাসে লাশের গন্ধ’ কবিতায় প্রাণময় :</p> <p><em>‘...স্বাধীনতা, সে আমার স্বজন- হারিয়ে পাওয়া একমাত্র স্বজন-</em></p> <p><em>স্বাধীনতা- আমার প্রিয় মানুষের রক্তের কেনা অমূল্য ফসল...।’</em></p> <p>সুরা সাফের ১৩ নম্বর আয়াত ‘নাসরুম মিনাল্লাহি ওয়া ফাতহুন কারিব।’ (আল্লাহর সাহায্য ও বিজয় নিকটবর্তী) এবং বাঙালির বিজয় আকাঙ্ক্ষায় সুরা ফাতহ খু্বই প্রাসঙ্গিক। ফাতহ অর্থ বিজয়। মহান আল্লাহ বলেন, ‘(হে রাসুল), নিশ্চয়ই আমি আপনাকে দিয়েছি সুস্পষ্ট বিজয়।’ (সুরা : ফাতহ, আয়াত : ১)</p> <p>মহান রাব্বুল আলামিন মুসলিম জনতার বিজয় আকাঙ্ক্ষা ও স্বদেশের চেতনায় সন্তুষ্ট হয়ে মক্কা বিজয়ের সুসংবাদ জানিয়ে বলেন, ‘(হে রাসুল), আল্লাহ তো মুমিনদের ওপর সন্তুষ্ট হলেন যখন তারা বৃক্ষতলে আপনার নিকট বায়াত গ্রহণ করল, তাদের অন্তরে যা ছিল তা তিনি অবগত ছিলেন, তাদের তিনি দান করলেন প্রশান্তি এবং তাদের পুরস্কার দিলেন আসন্ন বিজয়।’ (সুরা : ফাতহ, আয়াত : ১৮)</p> <p>ইসলামের ইতিহাসে দেড় হাজার বছরে রয়েছে ভাঙাগড়ার অধ্যায়। ৭১১, ৭১২ খ্রিস্টাব্দে স্পেনে মুসলিম শাসনের সূচনা করেছিলেন সেনাপতি তারিক বিন জিয়াদ। ১২৩৮ সালে মুহাম্মদ ইবনু নাসর গ্রানাডা জয়ের স্মারক হিসেবে তৈরি হয় আল হামরা। বলা হয়, ‘তাজমহল যদি হয় পৃথিবীর বুকে একটি গোলাপ, তবে আল হামরা হলো পৃথিবীর বুকে একটি গোলাপের বাগান।’</p> <p>মুহাম্মদ ইবনু নাসর বিজয়ী বেশে গ্রানাডায় প্রবেশকালে জনতার উল্লাস ধ্বনি ছিল ‘মারহাবান লি-ল-নাসর’ অর্থাৎ আল্লাহর কৃপায় বিজয়ীকে সুস্বাগতম। তিনি বলেছিলেন, ‘লা গালিবা ইল্লাল্লাহ’ অর্থাৎ অন্য কেউ বিজয়ী না, যদি না আল্লাহ চান। অথচ কালে স্রোতে হারিয়েছে স্পেনে ৭১১-১৪৯২ খ্রি. পর্যন্ত প্রায় ৭৮০ বছরের গৌরবগাথা। এখন শুধু স্পেনের বুকে জ্বলজ্বল করছে মুসলমানদের পরাজয়-পরাধীনতার কলঙ্ক।</p> <p>ইতিহাসের বহতাধারায় সিন্ধু বিজয় ৭১২ খ্রি.। ১২০৪-০৫ খ্রি. বখতিয়ার খলজি অশ্বারোহী নিয়ে বিনা বাধায় বাংলায় মুসলিম শাসনের সূচনা করেন। ১২০৬ খ্রি. কুতুবুদ্দিন আইবেক দিল্লির সুলতান হিসেবে অভিষিক্ত হন। ১৫২৬-১৫৪০, ১৫৫৫-১৮৫৭ খ্রি. ছিল মোগল আধিপত্যে ভাঙাগড়ার সর্বশেষ সাক্ষী আবু জাফর সিরাজউদ্দিন মুহাম্মদ বাহাদুর শাহ জাফর বা দ্বিতীয় বাহাদুর শাহ। সিরাজউদ্দৌলার পরাজয়ে পলাশীর আম্রকাননে অস্তমিত হয় বাংলা-বাঙালির অহংকারের রাজতিলক। যবনিকাপাত হয় ১২০৪-১৭৫৭ খ্রি. পর্যন্ত সাড়ে ৫০০ বছরের মুসলিম শাসনধারা।</p> <p>১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ বিতারণ-পরবর্তী ঐতিহাসিক পথপরিক্রমায় ৩০ লাখ শহীদের রক্ত সাগরপারে ১৬ ডিসেম্বর, ১৯৭১ উড্ডীন হয় লাল-সবুজের পতাকা। অসম সাহসী সবার প্রতি ভালোবাসা ও শ্রদ্ধায় জাতীয় স্মৃতিসৌধের ভিত্তিপ্রস্তরে স্থান পেয়েছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পঙক্তিমালা :</p> <p><em>‘বীরের এ রক্তস্রোত, মাতার এ অশ্রুধারা</em></p> <p><em>এর যত মূল্য সে কি ধরার ধুলায় হবে হারা?’</em></p> <p>আমরা মুসলমান। ঐতিহাসিক মক্কা বিজয় ও অত্যাচারিতের প্রতি প্রতিশ্রুত সাহায্যের সত্যায়নে মহান আল্লাহ বলেন, ‘যখন আল্লাহর পক্ষ থেকে সাহায্য ও বিজয় আসবে এবং দলে দলে লোকদের ইসলামে প্রবেশ করতে দেখবেন, তখন স্বীয় প্রতিপালকের প্রশংসার সঙ্গে তাসবিহ পড়ুন এবং আল্লাহর কাছে ইস্তিগফার করুন।’ (সুরা : নাসর, আয়াত : ১-৩)।</p> <p>এখানে পালনীয় নির্দেশনা—</p> <p>১.  বিজয়ের জন্য মহান আল্লাহর মহত্ত্ব, পবিত্রতা ও বড়ত্ব বর্ণনা করা।</p> <p>২.  মহান আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করা।</p> <p>৩.  মহান আল্লাহর দরবারে কায়মনোবাক্যে আত্মনিবেদন ও ইস্তিগফার করা।</p> <p>মক্কায় প্রবেশ করে প্রিয় নবী (সা.) আট রাকাত নফল নামাজ আদায় করেন। অতএব, বিজয় দিবসে নফল নামাজ পড়া ইসলামের শিক্ষা। এ নামাজকে ‘বিজয়ের নামাজ’ বলে।</p> <p>মাতৃভূমির প্রতি বিশেষ অনুরাগ-আবেগের নাম ‘স্বদেশপ্রেম’। স্বদেশপ্রেম ঈমানের অংশ। পবিত্র কোরআনের বাকারাহ, কাসাস, নুহ, ফাতহ, বালাদসহ বিভিন্ন সুরার অসংখ্য আয়াতে স্বদেশপ্রেমের অনুপ্রেরণা পাওয়া যায়। স্বদেশপ্রেমের তাৎপর্য রয়েছে সুরা আনআমের ৯২ নম্বর আয়াতে। পবিত্র মক্কা নগরীকে ‘উম্মুল কুরা’ বলা হলো। ‘উম্মুল’ অর্থ জননী/ মা, এবং ‘কুরা’ অর্থ জনপদ। বলা চলে, একজন মানুষ যেমন মা ছাড়া জন্মাতে পারে না, তেমনি মাতৃভূমি বা স্বদেশ পরিচয়হীন মানুষের অস্তিত্ব অনর্থন। স্বদেশের প্রতি ভালোবাসায় নিবেদন :</p> <p><em>‘ভায়ের মায়ের এত স্নেহ কোথায় গেলে পাবে কেহ...</em></p> <p><em>...এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি</em></p> <p><em>সকল দেশের রাণী সে যে- আমার জন্মভূমি।’</em></p> <p> </p> <p><em>লেখক : সহকারী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান ইসলামিক স্টাডিজ, কাপাসিয়া ডিগ্রি কলেজ, কাপাসিয়া, গাজীপুর-১৭৩০</em></p> <p> </p>