<p>নিউমোনিয়া  হলো ফুসফুসের একটি সংক্রমণ। এটা সাধারণত ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস বা ছত্রাকের কারণে হয়। এই রোগে ফুসফুসের বায়ুথলিগুলোতে প্রদাহ হয়। কখনো কখনো সেগুলো তরল বা পুঁজ দিয়ে পূর্ণ হতে পারে। যদি সময়মতো নিউমোনিয়ার চিকিৎসা না করা হয় তাহলে পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে। কখনো কখনো ফুসফুসে জমতে পারে পানি (প্লুরাল এফিউশন)। ফুসফুসের পানি জমার ব্যাপারটা প্রাণঘাতীও হয়ে উঠতে পারে। তাই দ্রুত সুচিকিৎসা জরুরিঅ</p> <p><strong>ফুসফুসে পানি জমার কারণ</strong><br /> <strong>সংক্রমণজনিত প্রদাহ</strong><br /> নিউমোনিয়ার কারণে ফুসফুস এবং এর চারপাশের টিস্যুতে প্রদাহ দেখা দেয়। ফলে প্লুরাল ক্যাভিটিতে পানি জমতে পারে।</p> <p><strong>দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা</strong><br /> বয়স্ক বা দুর্বল রোগীদের ক্ষেত্রে শরীরে রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থা বেশ নাজুক থাকে। তাদের ক্ষেত্রে এই সমস্যা বেশি দেখা যায়।</p> <p><strong>চিকিৎসায় বিলম্ব</strong><br /> নিউমনিয়য় দ্রুত চিকিৎসা জরুরি। অনেকে এটা নিয়ে অবহেলা করেন। আবার বুঝতে পারেন না, আসলেই রোগটি নিউমনিয়া কিনা। ফলে চিকিৎসা করতে দেরি হয়ে যায়। নিউমনিয়ার চিকিৎসা সময়মতো চিকিৎসা না নিলে জটিলতা বাড়তে পারে। ফুসফুসে জমতে পারে পানি।</p> <p><strong>লক্ষণ</strong></p> <ul> <li>তীব্র বুক ব্যথা।</li> <li>শ্বাসকষ্ট বা শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া।</li> <li>দীর্ঘস্থায়ী কাশি, কখনো কফের সঙ্গে রক্ত আসতে পারে।</li> <li>জ্বর এবং ঠান্ডা লাগা।</li> <li>শারীরিক দুর্বলতা এবং ক্লান্তি।</li> </ul> <p>করণীয়<br /> চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন<br /> ফুসফুসে পানি জমার লক্ষণ দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের কাছে যান। প্লুরাল এফিউশন নির্ণয়ের জন্যকিছু পরীক্ষা প্রয়োজন হতে পারে। যেমন—</p> <ul> <li>ফুসফুসে জমে থাকা পানির অবস্থান এবং পরিমাণ জানতে এক্স-রে বা সিটি স্ক্যান করা যেতে পারে।</li> <li>থোরাসেন্টেসিস নামের একটি প্রকিয়ার সাহায্যে পরীক্ষা করা যায়। এই প্রক্রিয়ায় একটি সূক্ষ্ম সুসের সাহায্যে ফুসফুস থেকে তরল সংগ্রহ করা হয়।</li> <li>সংক্রমণের ধরন এবং তীব্রতা নির্ণয় করতে রক্ত পরীক্ষা করা যায়।</li> </ul> <p>জার্মানির বার্লিন বিশ্ববিদ্যালয়ের সংক্রমণ বিশেষজ্ঞ ডা. ইয়োহানেস গুটম্যানের মত হলো, ‘নিউমোনিয়ার কারণে ফুষফুসে পানি রোগীর শারীরিক অবস্থাকে জটিল করে তোলে। উন্নত চিকিৎসার জন্য এক্স-রে এবং আল্ট্রাসাউন্ড ব্যবহারে সঠিক রোগ নির্ণয় নিশ্চিত করতে হবে। রোগীদের ক্ষেত্রে সুষম পুষ্টি এবং প্রয়োজনীয় ওষুধ সেবন নিশ্চিত করার পাশাপাশি সঠিক ফলো-আপ চিকিৎসা অপরিহার্য।’</p> <p><strong>ওষুধ</strong><br /> যদি নিউমোনিয়ার কারণ ব্যাকটেরিয়া হয় তাহলে চিকিৎসক রোগিকে অ্যান্টিবায়োটিক দেন। অন্যদিকে ভাইরাসজনিত কারণ হলো অ্যান্টি ভাইরাল ওষুধ প্রয়োগ করা হয়। প্রদাহ কমাতে এবং ফুসফুসের কার্যক্ষমতা বজায় রাখতে চিকিৎস দেওয়া অন্যান্য ওষুধও গ্রহণ করুন।</p> <p><strong>তরল অপসারণ প্রক্রিয়া</strong><br /> ফুসফুসে পানির পরিমাণ বেশি হলে চিকিৎসক প্লুরাল ক্যাভিটি থেকে পানি বের করে নিতে পারেন। <br /> এই প্রক্রিয়া সাধারণত হাসপাতালে করা হয় এবং এতে রোগীর দ্রুত সুস্থ্য হয়ে ওঠেন।</p> <p><strong>বিশ্রাম এবং পুষ্টিকর খাবার</strong><br /> ফুসফুসে পানি জমলে পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে পুষ্টিকর খাবার, যেমন: প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার ডাল, ডিম, মাছ, শাকসবজি এবং ফলমূল খেতে হবে।</p> <p><strong>সঠিক মাত্রায় পানি পান</strong><br /> যদিও ফুসফুসে পানি জমা হলে পানি কম খেতে বলা হয় না, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী পানি পানের পরিমাণ ঠিক করুন।</p> <p><strong>প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা</strong><br /> <strong>ভ্যাকসিন গ্রহণ</strong><br /> নিউমোনিয়ার জন্য পিভি-১৩ এবং পিপিএসভি-২৩ ভ্যাকসিন নিতে পারেন। ইনফ্লুয়েঞ্জা এবং কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন গ্রহণ করুন, কারণ এগুলো থেকেও নিউমোনিয়ার ঝুঁকি তৈরি হতে পারে।</p> <p><strong>ধূমপান বন্ধ করুন</strong><br /> ধূমপান ফুসফুসের সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ায়। তাই ধূমপান ছেড়ে দিন।</p> <p><strong>সঠিক জীবনযাপন</strong><br /> সুষম খাদ্য গ্রহণ করুন, নিয়মিত হালকা ব্যায়াম করুন, ঠান্ডা বা ধুলোময় পরিবেশ থেকে দূরে থাকুন।</p> <p>এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের মায়ো ক্লিনিকের ফুসফুস বিশেষজ্ঞ ডা. জন ডব্লিউ. ম্যাকিন্টায়ার বলেন, ‘ফুসফুসে পানি জমলে যা দ্রুত শনাক্ত এবং চিকিৎসা করা প্রয়োজন। অ্যান্টিবায়োটিক এবং প্রদাহনাশক ওষুধ এই রোগের চিকিৎসায় কার্যকর। রোগীদের ক্ষেত্রে থোরাসেন্টেসিস পদ্ধতিতে তরল অপসারণ অত্যন্ত ফলপ্রসূ হতে পারে। নিউমোনিয়া প্রতিরোধে টিকাদান কর্মসূচি বিশ্বব্যাপী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।’</p> <p>নিউমোনিয়া এবং ফুসফুসে পানি জমা একটি গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা। সময়মতো চিকিৎসা করলে পুরোপুরি সেরে উঠা সম্ভব। লক্ষণ দেখা মাত্র চিকিৎসকের পরামর্শ নিন এবং নিজের জীবনযাপন পদ্ধতিতে স্বাস্থ্যকর পরিবর্তন আনুন। সচেতন থাকুন, সুস্থ থাকুন।</p> <p>সূত্র: ল্যানসেট<br />  </p>