<p>স্কিন ক্যান্সার হলো ত্বকের কোষের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি, সাধারণত ত্বকের সূর্যের সংস্পর্শে আসা অংশে বেশি দেখা যায়। এটি বিভিন্ন ধরনের হতে পারে, যেমন বেসাল সেল কারসিনোমা, স্কোয়ামাস সেল কারসিনোমা, এবং মেলানোমা। মেলানোমা সবচেয়ে গুরুতর ধরন।</p> <p><strong>স্কিন ক্যান্সারের কারণ</strong><br /> <strong>অতিরিক্ত সূর্যের আলো : </strong>দীর্ঘ সময় সূর্যের অতিবেগুনি (UV) রশ্মির সংস্পর্শে থাকা স্কিন ক্যান্সারের প্রধান কারণ।<br /> <strong>কৃত্রিম UV রশ্মি :</strong> সানবেড বা ট্যানিং বেড ব্যবহারের ফলে UV রশ্মির ক্ষতিকর প্রভাব পড়তে পারে।</p> <p>হার্ভার্ড মেডিক্যাল স্কুলের ডার্মাটোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. ডেভিড ফিশার বলেন, ‘সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি ত্বকের কোষের ডিএনএ ক্ষতিগ্রস্ত করে। এটাই স্কিন ক্যান্সারের প্রধান কারণ। তাই সানস্ক্রিন ব্যবহার ও সুরক্ষামূলক পোশাক পরিধান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।</p> <p><strong>জিনগত কারণ : </strong>পরিবারের কারো স্কিন ক্যান্সারের ইতিহাস থাকলে ঝুঁকি বাড়ে। এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ক্যান্সার ইনস্টিটিউটের জেনেটিক এপিডেমিওলজি শাখার প্রধান ড. মার্গারেট টাকার বলেন, ‘পরিবারে স্কিন ক্যান্সারের ইতিহাস থাকলে ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। তাই নিয়মিত ত্বক পরীক্ষা ও চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।’</p> <p><strong>প্রদাহ প্রবণ ত্বক :</strong> ত্বকের বারবার প্রদাহ বা ক্ষত হওয়ার ফলে ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ে।</p> <p><strong>হালকা ত্বক :</strong> ফর্সা বা হালকা ত্বকের মানুষের স্কিন ক্যান্সারের ঝুঁকি বেশি।</p> <p><strong>রেডিয়েশন এক্সপোজার : </strong>চিকিৎসায় ব্যবহৃত রেডিয়েশন বা তেজস্ক্রিয় রশ্মি স্কিন ক্যান্সার ঘটাতে পারে।</p> <p><strong>লক্ষণ</strong></p> <ul> <li>অসামঞ্জস্যপূর্ণ তিল বা দাগ অনেক সময় ত্বকের ক্যান্সারের কারণ হতে পারে। ত্বকের তিল বা দাগের আকার, রং বা আকৃতিতে পরিবর্তন হলে সেটা ক্যান্সারের লক্ষণ হতে পারে।</li> <li>ত্বকে ক্যান্সারে আক্রান্ত হলে নতুন করে ছোট গুটি বা ফোস্কা দেখা ।</li> <li>ত্বকের কোনো ক্ষত যদি দীর্ঘমেয়াদি হয়, কিংবা দীর্ঘদিন না সারলে ক্যান্সারের ঝুঁকি থাকে।</li> <li>ত্বকের কোনো স্থানে পুরু আবরণ, দড়কচড়া ও আঁটসাঁট অংশ থাকলে ত্বকের ক্যান্সারের ঝুঁকি থাকে।</li> <li>ত্বকের তিল সাধারণ রঙের না হয়ে লালচে, বাদামি, কালো বা নীলাভ রঙের তিল দেখা দিলে ক্যান্সারের ঝুঁকি তৈরি হতে পারে।</li> <li>কোনো গুটি বা ক্ষত থেকে রক্তপাত বা অস্বাভাবিক ব্যথা অনুভূত হলে সেটা ক্যান্সারের ঝুঁকি ইঙ্গিত করে।</li> </ul> <p><strong>প্রতিকার ও চিকিৎসা</strong></p> <ul> <li>সার্জারির মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত ত্বকের অংশ অপসারণ করে ত্বকের ক্যান্সার সারানো যায়।</li> <li>ক্ষতিগ্রস্ত কোষ ফ্রিজিংয়ের মাধ্যমে ধ্বংস করা যায়, একে  ক্রায়োথেরাপি বলে। এর মাধ্যমে ত্বকের ক্যান্সার সারানো সম্ভব।</li> <li>ক্যান্সার কোষ ধ্বংস করতে রেডিয়েশন থেরাপি ব্যবহার করেন। এর মাধ্যমেও ত্বকের ক্যান্সার সারানো সম্ভব।</li> <li>শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে ক্যান্সার কোষ ধ্বংস করা যায়।</li> <li>কেমিক্যাল ব্যবহার করে অর্থাৎ কেমোথেরাপি দিয়ে ক্যান্সার কোষ ধ্বংস করা যায়</li> </ul> <p><strong>প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা</strong></p> <ul> <li>প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে আগে থেকেই ত্বকের ক্যান্সার এড়ানো যায়। </li> <li>রোদে বেরুনোর আগে সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে পারেন। SPF ৩০ বা এর বেশি সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন।</li> <li>সরাসরি সূর্যের আলো এড়িয়ে চলুন।</li> <li>সানগ্লাস এবং প্রটেকটিভ পোশাক পরুন।</li> <li>নিয়মিত ত্বক পরীক্ষা করুন এবং অস্বাভাবিক কিছু নজরে এলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।</li> <li>সানবেড বা ট্যানিং বেড ব্যবহারে বিরত থাকুন।</li> <li>সুষম খাবার গ্রহণ করুন এবং বেশি করে পানি খান।</li> </ul> <p>অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ড ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির পাবলিক হেলথ বিভাগের অধ্যাপক ড. অ্যাডেল গ্রিন বলেন, ‘স্কিন ক্যান্সার প্রতিরোধে জনসচেতনতা বৃদ্ধি ও সঠিক শিক্ষা অপরিহার্য, বিশেষ করে শিশুদের মধ্যে সান প্রোটেকশন অভ্যাস গড়ে তোলা উচিত।’</p> <p>স্কিন ক্যান্সার দ্রুত শনাক্ত করা গেলে এর চিকিৎসা সম্ভব। ত্বকের যত্ন নেওয়া এবং নিয়মিত পরীক্ষার মাধ্যমে ঝুঁকি অনেকাংশে কমানো যায়। ত্বকে কোনো অস্বাভাবিক পরিবর্তন হলে অবিলম্বে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া গুরুত্বপূর্ণ।</p> <p>সূত্র : স্মিথসনিয়ান ম্যাগাজিন</p>