<p style="text-align:justify">যুক্তরাষ্ট্রে ঘুষ প্রদান ও প্রতারণার দায়ে অভিযুক্ত ভারতীয় ধনকুবের আদানি গ্রুপের চেয়ারপারসন গৌতম আদানির বিরুদ্ধে শক্ত প্রমাণ রয়েছে। আইনজ্ঞরা বলছেন, এসব প্রমাণ আদানির বিরুদ্ধে মামলাটি আরো শক্ত করতে সহায়ক হবে। তবে আদানিকে অচিরেই প্রত্যর্পণ করিয়ে বিচারের মুখোমুখি দাঁড় করানোর সম্ভাবনা কম।</p> <p style="text-align:justify">ব্রুকলিনের ফেডারেল আদালতের প্রসিকিউটর গৌতম আদানি ও সাগর আদানির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে। অভিযোগ হলো আদানি গ্রিন এনার্জির জন্য সৌরশক্তি প্রকল্পের কাজ পেতে তারা ভারতীয় সরকারি কর্মকর্তাদের ঘুষ দিয়েছেন। ২৬ কোটি ৫০ লাখ মার্কিন ডলারের একটি কাজের ব্যাপারে এই ঘুষ দেন তারা। দুর্নীতিবিরোধী কার্যক্রমে তারা ভুল তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করেছেন বলেও অভিযোগ। </p> <p style="text-align:justify">একই মামলায় অ্যাজুর পাওয়ার গ্লোবালের পাঁচ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের বিদেশি দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন (এফসিপিএ) লঙ্ঘনের ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তোলা হয়েছে।</p> <p style="text-align:justify">গৌতম আদানি ছাড়াও তার ভাগনে সাগর আদানিসহ সাতজনকে অভিযুক্ত করা হয়। তারা কাজের চুক্তি পেতে ভারতের সরকারি কর্মকর্তাদের ঘুষ দিতে রাজি হয়েছিলেন। ২০ বছর মেয়াদি এই কাজ করে প্রায় ২০০ কোটি ডলার মুনাফা অর্জনের সম্ভাবনা ছিল। এ ছাড়া ঘুষের বিনিময়ে আদানি গ্রুপ ভারতে সর্ববৃহৎ সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প তৈরির কাজ পেতে অভিযুক্ত ভারতীয় কর্মকর্তাদের ঘুষ দেন।</p> <p style="text-align:justify">অ্যাজুর পাওয়ার গ্লোবাল বলেছে, তারা তদন্তে সহযোগিতা করেছে। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে তারা আর প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে নেই। অন্যদিকে, আদানি গ্রুপ অভিযোগকে ‘ভিত্তিহীন’ দাবি করেছে। তারা বলেছে বিষয়টি আইনগতভাবে মোকাবেলা করা হবে।</p> <p style="text-align:justify">গৌতম আদানির বিরুদ্ধে সমন জারি হলেও তিনি হেফাজতে নেই। অভিযুক্ত হওয়ার পর থেকে ভারতে অন্তত দুটি জনসমাগমে তাকে দেখা গেছে। গত ৯ ডিসেম্বর একটি অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গেও তাকে দেখা যায়।</p> <p style="text-align:justify">অভিযোগ অনুযায়ী, প্রসিকিউটররা সাগর আদানির সেলুলার ফোনে কথিত অর্থপ্রদানের ফোল্ডার খুঁজে পান। যেটিকে তারা ‘ঘুষের নোট হিসেবে উল্লেখ করেছেন। গৌতম আদানি নিজের ই-মেইলে একটি তল্লাশি ওয়ারেন্টের অনুলিপি ও ২০২৩ সালের ১৭ মার্চ তার ভাগ্নেকে দেওয়া এফবিআইয়ের গ্র্যান্ড জুরি সমন পাঠানোর তথ্য সংরক্ষণ করেছিলেন।</p> <p style="text-align:justify">দুর্নীতিবিরোধী কার্যক্রমে ভুল তথ্য দিয়ে বিনিয়োগকারীদের বিভ্রান্ত করার ক্ষেত্রে সাগর আদানি ও গৌতম আদানির ভূমিকার বিষয়টি প্রমাণ করতে এসব ইলেক্ট্রনিক প্রমাণাদি প্রসিকিউটরদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে।</p> <p style="text-align:justify">প্রাক্তন ফেডারেল প্রসিকিউটর এবং আইন সংস্থা ডে পিটনির অন্যতম অংশীদার স্টিফেন রেনল্ডস বলেন, ‘অভিযোগগুলোর মধ্যে প্রমাণিত উপাদান রয়েছে। এটি সবসময় একটি মামলাকে শক্তিশালী করে।’</p> <p style="text-align:justify">ব্রুকলিনের প্রাক্তন ফেডারেল প্রসিকিউটর ও উইগিন অ্যান্ড ডানা নামক আইন সংস্থার অংশীদার পল টুচম্যান বলেন, ‘প্রসিকিউটররা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে পারেন। গৌতম আদানি যুক্তি দিতে পারেন যে তিনি ব্যক্তিগতভাবে প্রতিষ্ঠানটির ঘুষবিরোধী কার্যক্রম সম্পর্কে বিনিয়োগকারীদের কাছে দেওয়া বিবৃতির বিষয়ে সম্পৃক্ত ছিলেন না।’</p> <p style="text-align:justify">ব্রুকলিনের সাবেক ফেডারেল প্রসিকিউটর এবং আইন সংস্থা কোহেন অ্যান্ড গ্রেসারের অংশীদার মার্ক কোহেন বলেন, ‘প্রসিকিউটররা ভারতে সাক্ষীদের কাছ থেকে সাক্ষ্য-প্রমাণ নিতেও চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বেন। কারণ এর জন্য নয়াদিল্লির সহায়তার প্রয়োজন হতে পারে। ওই দেশের সরকার এমন সাক্ষ্য সুবিধা দেওয়ার ক্ষেত্রে বেঁকে বসতে পারে।’</p> <p style="text-align:justify">ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গত ২৯ নভেম্বর এক বিবৃতিতে বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এই মামলার বিষয়ে কোনো অনুরোধ নয়াদিল্লি পায়নি। মামলাটিকে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এবং মার্কিন বিচার বিভাগের মধ্যকার বিষয় বলেও জানায় দেশটি।</p> <p style="text-align:justify">গৌতম আদানিকে প্রত্যর্পণ করতে ভারতকে কিছু বলা হয়েছে কি না, এ নিয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে মার্কিন বিচার বিভাগ।</p> <p style="text-align:justify">আদানি গ্রুপ এবং গৌতম আদানি সম্প্রতি বিবৃতি দিয়ে বলেছে, প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহীদের বিরুদ্ধে এফসিপিএ লঙ্ঘনের অভিযোগ আনা হয়নি।</p> <p style="text-align:justify">এফসিপিএ লঙ্ঘনের ষড়যন্ত্রের জন্য পাঁচ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে। প্রতারণার অভিযোগে গৌতম আদানি এবং অভিযুক্ত অন্যদের প্রত্যেকের ২০ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে।</p> <p style="text-align:justify">ব্রুকলিন ইউএস অ্যাটর্নি কার্যালয়ের বিজনেস অ্যান্ড সিকিউরিটিজ ফ্রড সেকশনের ডেপুটি চিফ ড্রু রোল বলেছেন, মার্কিন পুঁজিবাজারের অখণ্ডতা রক্ষা করার দায়িত্ব তার অফিসের।</p> <p style="text-align:justify">তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ব্যবসায় সম্পৃক্ত বিদেশিদের ঘুষের বেশ কয়েকটি অভিযোগ প্রমাণ করেছে। গত আগস্টে বিচারকরা মোজাম্বিকের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রীকে ঋণের অর্থ আত্মসাতের জন্য জালিয়াতি এবং মানি লন্ডারিং ষড়যন্ত্রের অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করেন।</p> <p style="text-align:justify">ড্রু রোল বলেন, ‘যখন আদানির মতো প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগকারীদের বিভ্রান্ত করে তখন সৎ প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়।’</p> <p style="text-align:justify">গত ৬ ডিসেম্বর নিউ ইয়র্কে প্র্যাকটিসিং ল ইনস্টিটিউট আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরো বলেন, ‘এটি শুধুমাত্র একটি ঘুষের মামলা নয়, এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সিকিউরিটিজ এনফোর্সমেন্ট কেস। আমাদের পুঁজিবাজারে আসতে হলে আপনাকে অবশ্যই নিয়ম মানতে হবে।’</p> <p style="text-align:justify">সূত্র : রয়টার্স</p>