<p style="text-align:justify">অপহরণের পর ধর্ষণ। তিন মাসেরও বেশি সময় ধরে আটকে রেখে চালানো হচ্ছিল পাশবিক নির্যাতন। এক পর্যায়ে মারধরে তার ডান চোখ মারাত্মক আহত হয়। এ অবস্থায় তাকে ফেলে রেখে যাওয়া হয় বাড়ির সামনে। তিন মাস বিনা চিকিৎসায় অবশেষে সেই কিশোরী আজ সোমবার দুপুরে না ফেরার দেশে চলে গেল। খবর পেয়ে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে মর্গে পাঠিয়েছে। </p> <p style="text-align:justify">ঘটনাটি ময়মনসিংহের নান্দাইলের সিংরুইল ইউনিয়নের নারায়নপুর গ্রামের। বিচার চেয়ে আদালতে সালিশী আবেদনের পর ময়মনসিংহ পিবিআই তদন্ত করলেও গত তিন মাসেও কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেনি। এ ঘটনায় এলাকায় তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।</p> <p style="text-align:justify">এ ঘটনা নিয়ে আজ সোমবার ১২টা ২৩ মিনিটে কালের কণ্ঠের অনলাইনে ‘আমি কি বিচার দেখে যেতে পারতাম না’? শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। এর ঠিক ১২ মিনিট পরেই ওই তরুণী মারা যাওয়ার খবর আসে। এ ছাড়াও কালের কণ্ঠে ঘটনার বিস্তারিত নিয়ে এর আগেও খবর প্রকাশিত হয়।</p> <p style="text-align:justify">জানা যায়, মেয়েটি নান্দাইল উপজেলার বাকচান্দা ফাজিল মাদরাসার অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী ছিল। পাশেই স্থানীয় বাকচান্দা আব্দুস সামাদ উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্র কচুরী গ্রামের মো. হানিফ মিয়ার ছেলে হোসাইন (১৯) তাকে প্রেম নিবেদনের পর ব্যর্থ হয়ে গত জুন মাসের এক তারিখে তাকে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে যায়। এ অবস্থায় দীর্ঘ তিন মাসেরও বেশি সময় অজ্ঞাত স্থানে রেখে গত ৬ সেপ্টেম্বর দুপুরে বাড়ির সামনে সড়কের পাশে ফেলে রেখে যায়।</p> <p style="text-align:justify">খবর পেয়ে পরিবারের লোকজন তাকে উদ্ধার করে স্থানীয় এক পল্লী চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান। সেখান থেকে ময়মনসিংহ ও পরে ঢাকার আগারগাঁও চক্ষু হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করানো হয়। সেখানে গত ১৫ দিন চিকিৎসার সময় বাম চোখ বাঁচাতে ডান চোখটি তুলে ফেলেন চিকিৎসক। কিন্তু অর্থাভাবে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা না করিয়ে পরিবার বাড়িতে নিয়ে আসে। চিকিৎসক সঙ্গে দিয়ে দেন চোখের কর্নিয়া।</p> <p style="text-align:justify">পরে চিকিৎসকের পরামর্শমতে ওই চোখের কর্নিয়া নিরাপত্তা ও সতেজ থাকার জন্য বাড়ির ফ্রিজে রাখা হয়। ডাক্তারের পরামর্শে পরিবার অপেক্ষায় ছিল যদি মেয়েটি সুস্থ হয়, তাহলে আহত চোখে কর্নিয়া স্থাপন করা যাবে। কিন্তু সবই ভেস্তে গেল। দীর্ঘ দিন যন্ত্রণারর পর অবশেষে পরপারে চলে গেল পাপিয়া।</p> <p style="text-align:justify">মৃত্যুর খবর পেয়ে সোমবার দুপুরে পাপিয়ার বাড়িতে গেলে দেখা যায়, বাড়ির ভেতর আহাজারির করুণ শব্দ। মা মোছাম্মৎ রানু আক্তার মেয়ের লাশে পাশে বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন। পাশেই বাবা বসে বুক চাপড়ে  আহাজারি করছেন আর বলছেন, আমার ছেড়ি তো তিলে তিলে কষ্ট লইয়া মরছে। আমি তো কিছুই করতাললাম না। আমি এক অভাগা বাবা। আমিও আমার মায়ের (মেয়ে) সাখে যাইয়াম। </p> <p style="text-align:justify">মা রানু আক্তার বলেন, ধমডা যাওনের আগেও আমার ধন আমারে কইছে আম্মা আমার কাছে হোসেনের (অভিযুক্ত) চোখটা আইনা দেও। আমার দম যাওয়নের আগে দেইখ্যা যাইতাম চাই। এই বায় বারবার কইছে। কিন্তু আমি তো কিছুই বুঝ দিতাললাম না। আমি এর বিচার চাই।’ </p> <p style="text-align:justify">এ সময় ওই বাড়িতে উপস্থিত ছিলেন নান্দাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফরিদ আহম্মেদ। তিনি বলেন, পত্রিকায় দেখে আমি মেয়েটি ও তার পরিবারকে সান্ত্বনাসহ আইনি কিছু সহায়তা দিতে এসেছিলাম। কারণ, এই ঘটনাটি নিয়ে আদালতে মামলা হলে পিবিআই তদন্তের দায়িত্ব পায়। তারাই তদন্ত করছিল। এখানে আমাদের অন্য কিছু করার ছিল না। তবে এখন ময়নাতদন্তের জন্য লাশ মর্গে পাঠানো হয়েছে। কর্তৃপক্ষের নির্দেশ মতো নতুনভাবে আইনি প্রক্রিয়া করা হবে।</p> <p style="text-align:justify">অন্যদিকে, আদালতে বিচারের জন্য আবেদন করলে আদালত মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় ময়মনসিংহ পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই)। তদন্তের দায়িত্ব পেয়েছিলেন পরিদর্শক মোসলেহ উদ্দিন। গত কয়েকদিন ধরেই তিনি বলছিলেন সিআর মামলায় তার প্রতিবেদন ছাড়া কিছুই করার নাই। মৃত্যুর পর সোমবার ফের জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি এখন গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হবে।</p> <p style="text-align:justify">এ বিষয়ে জানতে চাইলে ময়মনসিংহ পিবিআই পুলিশ সুপার মো. রকিবুল আক্তার কালের কণ্ঠকে জানান, এখন আমরা আমাদের মতো করে আইনি প্রক্রিয়া করবো। তারপরও নিহতের পরিবার যদি থানায় হত্যা মামলা করেন, সেটি করতে পারেন।</p>