<p>উপমহাদেশের কিংবদন্তি তবলাবাদক ওস্তাদ জাকির হোসেন আর নেই। রবিবার (১৫ ডিসেম্বর) যুক্তরাষ্ট্রের সান ফ্রান্সিসকোর একটি হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। দীর্ঘদিন ধরে তিনি রক্তচাপের সমস্যায় ভুগছিলেন বলে জানা গেছে।  </p> <p>ওস্তাদ জাকির হোসেনকে ভারতের উজ্জ্বল কোহিনূরের সঙ্গে তুলনা করা হত। ভারতীয় ধ্রুপদি সংগীতের একজন পুরোধা ছিলেন জাকির হোসেন। কিংবদন্তি এই তবলাবাদকের জীবনের অজানা বেশ কিছু গল্প আছে। যা হয়তো অনেক ভক্ত অনুরাগী জানেন না। এই যেমন মাত্র ৩ বছর বয়সে তিনি শুরু করেন তবলা সঙ্গদ। বাবার কাছেই নিতে শুরু করেন প্রশিক্ষণ। এবং ৭ বছর বয়সে সকলের সামনে শুরু করেন অনুষ্ঠান করা। মাত্র ১২ বছর বয়সে তিনি আন্তর্জাতিক স্তরে পারফর্ম করেন। বিশ্বসংগীত অঙ্গন বুঝে যায়, এক কিংবদন্তির আগমন ঘটতে যাচ্ছে।</p> <p>ধ্রুপদী সংগীতের সঙ্গে যুক্ত এই মানুষটির পড়াশোনা কতদূর? শিল্পী নেহাতই নিজের একাডেমিক লাইনে কাঁচা নয়। বরং, ইকোনমিক্স অর্থাৎ অর্থনীতিতে তার ব্যাচেলর ডিগ্রি আছে। এমনকি বাবার ইচ্ছেতেই তিনি পড়াশোনার দিকে নজর দিয়েছিলেন।</p> <p>ক্যারিয়ারে অসংখ্য সম্মাননার সঙ্গে গ্র্যামি পুরস্কারেও ভূষিত জাকির হোসেন। তার কোলাবরেশন অ্যালবামের জন্য এই পুরস্কার পান তিনি। গ্র্যামির মঞ্চেও তাকে দেখা গিয়েছিল সাদা রঙের পোশাকে। তখনও তাকে দেখে বোঝা সম্ভব হয়নি যে, এতটা অসুস্থ তিনি। এছাড়াও পদ্মভূষণ থেকে পদ্মবিভূষণ সম্মানে ভূষিত হন তিনি। </p> <p>শিল্পীকে শুধু যে তবলায় বোল তুলতে দেখা গিয়েছিল এমনটা নয়। বরং, তিনি বেশ কিছু সিনেমায় মিউজিক কম্পোজার হিসেবে কাজ করেছেন। তার মধ্যে ‘হিট অ্যান্ড ডাস্ট’ এবং ‘ইন কাস্টডি’ উল্লেখযোগ্য।</p> <p>জাকির হোসেন একবার জানিয়েছিলেন, নিজের সোলো পারফর্মের পাশাপাশি তিনি পন্ডিত বিরজু মহারাজের সঙ্গে সঙ্গদ করতেও দারুণ মজা পেতেন। শুধু তাই নয়। বহুবার তাদের একসঙ্গে পারফর্ম করতে পর্যন্ত দেখা গিয়েছে।</p> <p>জাকির হোসেনের সঙ্গে বন্ধুত্ব গাঢ় ছিল পন্ডিত শিবকুমার শর্মার। এমনকি তার মৃত্যুর পর নিজে কাঁধ দিয়েছিলেন কিংবদন্তীর মরদেহকে শ্মশান অবধি পৌঁছে দেওয়ার জন্য। চিতার সামনে দাঁড়িয়ে কাছের বন্ধুকে চলে যেতে দেখেছিলেন তিনি। সেদিন গোটা ভারত সাক্ষী ছিল ধর্মের ঊর্ধ্বে থাকা এক অটুট বন্ধুত্বের।</p> <p>জাকির হোসেনের বলিউডের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল বেশ দারুন। তাকে নানা সময় নানান তারকার সঙ্গে গল্পে ব্যস্ত হতে দেখা যেত। এমনকি, শাবানা আজমি, শশী কাপুরের সঙ্গে মাঝেমধ্যেই আড্ডা জমাতেন তিনি।</p> <p>কিংবদন্তি তবলাবাদক আল্লারাখার প্রথম সন্তান জাকির হোসেন। বাবা আল্লা রাখা তার জন্মের পর কানে ইসলাম প্রার্থনার জায়গায় বলেছিলেন, রিদম। কারণ, যাকে তিনি পুজা করেন ছেলেকেও সেই বিদ্যাই দিতে চেয়েছিলেন তিনি। আর জাকির বাবার ইচ্ছা পূরণ করে নিজেকে নিয়ে গেছেন কিংবদন্তির কাতারে।</p> <p>কত্থক নৃত্যশিল্পী ও শিক্ষক আনতোনিয়া মিনেকোলাকে বিয়ে করেছিলেন জাকির হোসেন। আনতোনিয়া জাকির হোসেনের ব্যবস্থাপকের দায়িত্বে ছিলেন। এই দম্পতির সংসারে দুই মেয়ে রয়েছে। দুজনেরই জন্ম যুক্তরাষ্ট্রের সান ফ্রান্সিসকোতে। বড় মেয়ে আনিসা কুরেশির বয়স ৩৯ বছর। ইউনিভার্সিটি অব কালিফোর্নিয়া, লস অ্যাঞ্জেলেস থেকে স্নাতকোত্তর আনিসা পেশায় একজন চলচ্চিত্র নির্মাতা ও প্রযোজক। জাকির হোসেন ও আনতোনিয়া মিনেকোলার ছোট মেয়ে ইসাবেলা কুরেশির বয়স ৩৭ বছর। ইসাবেলা নৃত্যশিল্পী হিসেবে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। নাচ নিয়ে ডিগ্রিও রয়েছে তার।</p>