জাহান্নামের আগুন যে চোখ স্পর্শ করবে না

মাইমুনা আক্তার
মাইমুনা আক্তার
শেয়ার
জাহান্নামের আগুন যে চোখ স্পর্শ করবে না

প্রত্যেক ঈমানদারের একমাত্র উদ্দেশ্য হওয়া উচিত আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন ও পরকালীন মুক্তি। কারণ পরকালীন জীবন অনন্ত। সেখানে যদি (নাউজুবিল্লাহ) কারো জাহান্নামের ফায়সালা হয়ে যায়, এর চেয়ে দুর্ভাগ্যের আর কিছুই হতে পারে না। কারণ জাহান্নামের আগুন সহ্য করার সাধ্য কার আছে।

সে আগুন দুনিয়ার আগুনের চেয়ে বহুগুণ শক্তিশালী ও ধ্বংসাত্মক।

মহান আল্লাহ তাঁর অসীম দয়ার কারণে পবিত্র কোরআনের মাধ্যমে তাঁর বান্দাদের এই আগুন থেকে বাঁচার সূত্র জানিয়ে দিয়েছেন। নবীজি (সা.)-ও তাঁর উম্মতদের সেই আগুনের ব্যাপারে সতর্ক করেছেন এবং তা থেকে বাঁচার বিভিন্ন ফর্মুলা শিখিয়েছেন। তার মধ্যে একটি হলো, মহান আল্লাহর ভয়ে ক্রন্দন করা।

হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর ভয়ে ক্রন্দন করেছে সে ব্যক্তি জাহান্নামে প্রবেশ করবে না, যে পর্যন্ত না দুধ স্তনে পুনঃপ্রবেশ করবে। আর আল্লাহর রাস্তায় ধুলা এবং জাহান্নামের আগুনের ধোঁয়া একত্রিত হবে না।’ (নাসায়ি, হাদিস : ৩১০৮)

মুমিন কোমল হবে, আল্লাহর স্মরণে তাদের মন বিগলিত হবে, এটাই আল্লাহ চান। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ নিজেই বলেছেন, ‘যারা ঈমান এনেছে তাদের জন্য সে সময় কি এখনো আসেনি যে আল্লাহর স্মরণে আর যে প্রকৃত সত্য অবতীর্ণ হয়েছে তাতে তাদের অন্তর বিগলিত হয়ে যাবে? আর তারা যেন সেই লোকদের মতো না হয়ে যায় যাদের পূর্বে কিতাব দেওয়া হয়েছিল, অতঃপর তাদের ওপর অতিবাহিত হয়ে গেল বহু বহু যুগ আর তাদের অন্তর কঠিন হয়ে পড়ল।

তাদের বেশির ভাগই পাপাচারী।’ (সুরা : হাদিদ, আয়াত : ১৬)

আল্লাহর স্মরণে মুমিনের অশ্রু এতটাই শক্তিশালী যে তা জাহান্নামে ভয়াবহ আগুনকে নিভিয়ে দিতে সক্ষম। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, ‘ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে আমি বলতে শুনেছি, ‘জাহান্নামের আগুন দুটি চোখকে স্পর্শ করবে না। আল্লাহ তাআলার ভয়ে যে চোখ ক্রন্দন করে এবং আল্লাহ তাআলার রাস্তায় যে চোখ (নিরাপত্তার জন্য) পাহারা দিয়ে ঘুমবিহীনভাবে রাত পার করে দেয়।’ (তিরমিজি, হাদিস : ১৬৩৯)

অর্থাৎ তারা জাহান্নামে যাবে না।

এ জন্য মহান আল্লাহর প্রিয় বান্দারা তাঁর স্মরণে ক্রন্দন করে। বিশেষ করে তাঁর কালামের তিলাওয়াত তাদের হৃদয়কে বিগলিত করে। তাদের চোখ বেয়ে অশ্রু ঝরে। 

মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে তাদের ব্যাপারে বলেছেন, ‘আর কোরআন আমি নাজিল করেছি কিছু কিছু করে, যেন তুমি তা মানুষের কাছে পাঠ করতে পারো ধীরে ধীরে এবং আমি তা নাজিল করেছি পর্যায়ক্রমে। বলো, ‘তোমরা এতে ঈমান আনো বা ঈমান না আনো, নিশ্চয়ই এর আগে যাদের জ্ঞান দেওয়া হয়েছে, তাদের কাছে যখন এটা পাঠ করা হয় তখন তারা সিজদাবনত হয়ে লুটিয়ে পড়ে। আর তারা বলে, ‘আমাদের রব মহান, পবিত্র; আমাদের রবের ওয়াদা অবশ্যই পূর্ণ হবে। আর তারা কাঁদতে কাঁদতে লুটিয়ে পড়ে এবং এটা তাদের বিনয় বৃদ্ধি করে’। (সুরা : বনি ইসরাঈল, আয়াত : ১০৬-১০৯)

এর বাস্তব চিত্র সাহাবায়ে কিরামের মধ্যে পাওয়া যায়। উবাইদ ইবনে উমাইর (রহ.) বলেন, একদিন আমাদের সঙ্গে উমর (রা.) নামাজ পড়ছিলেন, যখন তিনি সুরা ইউসুফের ৮৪ নং আয়াত ‘...বলল, ইউসুফের জন্য আফসোস আর দুঃখে তার চক্ষুদ্বয় সাদা হয়ে গিয়েছিল’ তিলাওয়াত করেন, তখন তিনি কাঁদতে শুরু করেন। এবং রুকুতে চলে যান। (ফাজায়েলুল কোরআন লি আবি উবাইদ)

আবু দোহা (রহ.) বলেন, আমি শুনেছি যে একবার আয়েশা (রা.) সুরা আহযাবের ৩৩ নং আয়াতে ‘আর তোমরা নিজ গৃহে অবস্থান করবে...’ তিলাওয়াত করে এমন কেঁদেছিলেন যে তাঁর ওড়না ভিজে গিয়েছিল। (আয-যুহদ; আহমদ ইবনে হাম্বল, পৃ: ৯১১)

তাই আমাদের উচিত পবিত্র রমজান মাসের রাতগুলোতে মহান রবের ইবাদতে মগ্ন থাকার চেষ্টা করা। অশ্রুসিক্ত চোখে মহান রবের কাছে অতীতের পাপের জন্য ক্ষমা চাওয়া, ভবিষ্যতের নিরাপত্তার জন্য মহান রবের আশ্রয় চাওয়া।

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

তারাবিতে কোরআনের বার্তা

আল্লাহ কৃতজ্ঞ বান্দাদের পছন্দ করেন

    পর্ব : ২৪
ইসলামী জীবন ডেস্ক
ইসলামী জীবন ডেস্ক
শেয়ার
আল্লাহ কৃতজ্ঞ বান্দাদের পছন্দ করেন

সুরা ঝুমার

আলোচ্য সুরায় মানব সৃষ্টির সূচনা থেকে সমাপ্তি পর্যন্ত বর্ণনা করা হয়েছে। এই সুরার প্রধান আলোচ্য বিষয় আল্লাহর একত্ববাদ, আল্লাহর অস্তিত্বের প্রমাণ, কোরআন ও ওহি। কোরআন এসেছে আল্লাহর পক্ষ থেকে—এ কথার মাধ্যমে সুরাটি শুরু হয়েছে। এরপর আল্লাহর সত্তা ও গুণাবলিতে শিরকের সম্ভাবনা নাকচ করা হয়েছে।

আসমান-জমিনের সৃষ্টি, রাত-দিন, চন্দ্র-সূর্য, মাটির বৈশিষ্ট্য ইত্যাদি বর্ণনা করে আল্লাহর অসীম কুদরতের কথা জানানো হয়েছে। মুমিন ও কাফিরের মধ্যে তুলনামূলক পর্যালোচনা করা হয়েছে। সুরাটি শেষ হয়েছে মানুষকে দুইভাগে ভাগ করার মাধ্যমে। একদল মুমিন আর অন্যদল কাফির।

আদেশ-নিষেধ-হিদায়াত

১. আল্লাহ কৃতজ্ঞ বান্দাদের পছন্দ করেন। (আয়াত : ৭)

২. কেউ কারো পাপের বোঝা বহন করবে না। (আয়াত : ৭)

৩. আল্লাহকে ভুলে যেয়ো না। (আয়াত : ৮)

৪. তাহাজ্জুদ আদায় করো।

(আয়াত : ৯)

৫. আল্লাহকে ভয় করো। (আয়াত : ১০)

৬. আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ করো। (আয়াত : ১২)

৭. পরিবারে ধর্মহীনতার চর্চা কোরো না। (আয়াত : ১৫)

৮. উত্তম কথা গ্রহণ করো। (আয়াত : ১৮)

৯. মানুষের প্রতি কঠোর হৃদয় হয়ো না।

(আয়াত : ২২)

১০. কোরআন পাঠে মুমিন হৃদয় বিগলিত হয়। (আয়াত : ২৩)

১১. কোরআন সহজ ও সাবলীল। (আয়াত : ২৮)

১২. আল্লাহ ছাড়া কাউকে ভয় কোরো না। (আয়াত : ৩৬)

১৩. মানবীয় জ্ঞান মুক্তির জন্য যথেষ্ট নয়। (আয়াত : ৪৯)

১৪. আল্লাহর অনুগ্রহ থেকে নিরাশ হয়ো না। (আয়াত : ৫৩)

১৫. মুত্তাকিদের আল্লাহ রক্ষা করেন। (আয়াত : ৬১)

সুরা মুমিন

আলোচ্য সুরায় আল্লাহর একত্ববাদ ও পরকাল বিষয়ে বর্ণনা করা হয়েছে। সুরায় আরশ বহনকারী ফেরেশতাদের সম্পর্কে বর্ণনা করা হয়েছে। সত্য-মিথ্যার চিরন্তন দ্বন্দ্বের কথা বর্ণনা করা হয়েছে। এখানে বলা হয়েছে যে কিয়ামতের দিন জাহান্নামবাসী জাহান্নাম থেকে বের হওয়ার আবেদন করবে। কিন্তু তাদের আবেদন ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করা হবে। সুরার শেষে মহানবী (সা.)-কে ধৈর্য ধারণ করার উপদেশ দেওয়া হয়েছে, যেভাবে মুসা (আ.) ধৈর্য ধারণ করেছেন।

আদেশ-নিষেধ-হিদায়াত

১. অবিশ্বাসীদের অবাধ বিচরণে বিভ্রান্ত হয়ো না। (আয়াত : ৪)

২. আল্লাহমুখী মানুষরাই উপদেশ গ্রহণ করে। (আয়াত : ১৩)

৩. পরকালে বন্ধুত্ব কাজে আসবে না। (আয়াত : ১৮)

৪. কুদৃষ্টি ও অন্তরের পাপ সম্পর্কে আল্লাহ জানেন। (আয়াত : ১৯)

৫. উদ্ধত ব্যক্তি থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাও। (আয়াত : ২৭)

৬. ভিত্তিহীন বিতর্ক ঘৃণ্য কাজ। (আয়াত : ৩৫)

৭. স্বজাতিকে সত্যের পথে আহ্বান করো। (আয়াত : ৩৮)

৮. আল্লাহ দ্বিনের সেবকদের রক্ষা করেন। (আয়াত : ৪৫)

৯. দ্বিনের ব্যাপারে তর্ক কোরো না। (আয়াত : ৫৬)

১০. আল্লাহকে ডাকো। কেননা তিনি বান্দার ডাকে সাড়া দেন। (আয়াত : ৬০)

১১. আল্লাহর ইবাদত থেকে বিমুখ হয়ো না। (আয়াত : ৬০)

১২. ক্ষমতার দম্ভ ও উল্লাস আল্লাহ পছন্দ করেন না। (আয়াত : ৭৫)

সুরা হা-মিম-সাজদা

এই সুরায় বলা হয়েছে, অবিশ্বাসীরা কোরআন নিয়ে চিন্তা করে না। আর নবী-রাসুলরা সবাই মানুষ ছিলেন। এই সুরায় আদ ও সামুদ জাতির ঘটনা বর্ণনা করা হয়েছে, পৃথিবীতে শক্তিমত্তায় ও ক্ষমতায় কেউ তাদের সমকক্ষ ছিল না। এই সুরায় সতর্ক করা হয়েছে যে কিয়ামতের দিন মানুষের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ তার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবে। কিছু মানুষ কোরআন নিয়ে ব্যঙ্গ করে। কিন্তু শিগগিরই তাদের পরিণতি ভয়াবহ হবে। এমন ভবিষ্যদ্বাণীর মাধ্যমে সুরাটি শেষ হয়েছে যে প্রতিটি যুগে মানুষকে সৃষ্টিজগতের কিছু কিছু রহস্য উদ্ঘাটন করার ক্ষমতা দেওয়া হবে।

আদেশ-নিষেধ-হিদায়াত

১. কোরআনবিমুখদের অন্তর পাপাচ্ছাদিত। (আয়াত : ৫)

২. পরকালে অবিশ্বাসীরা জাকাত দেয় না। (আয়াত : ৭)

৩. দ্বিনবিমুখ মানুষদের সতর্ক করো। (আয়াত : ১৩)

৪. পরকালে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ মানুষের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবে। (আয়াত : ২০)

৫. আল্লাহর প্রতি উদাসীনতা ধ্বংস ডেকে আনে। (আয়াত : ২৩)

৬. কোরআনচর্চায় বাধা দিয়ো না। (আয়াত : ২৬)

৭. মানুষকে আল্লাহর পথে আহ্বান করো। (আয়াত : ৩৩)

৮. শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় নাও। (আয়াত : ৩৬)

৯. কোরআন বিকৃতকারীদের জন্য জাহান্নাম। (আয়াত : ৪০)

১০. কোরআন মুমিনের জন্য আরোগ্যস্বরূপ। (আয়াত : ৪৪)

১১. সম্পদের মোহ অন্তহীন। (আয়াত : ৪৯)

গ্রন্থনা : মুফতি আতাউর রহমান

 

 

মন্তব্য

ওমরাহ শেষে বিশেষ সেবা পেলেন দেড় লক্ষাধিক মুসল্লি

ইসলামী জীবন ডেস্ক
ইসলামী জীবন ডেস্ক
শেয়ার
ওমরাহ শেষে বিশেষ সেবা পেলেন দেড় লক্ষাধিক মুসল্লি
সংগৃহীত ছবি

পবিত্র রমজান উপলক্ষে ওমরাহ পালন করতে আসা মুসল্লিদের জন্য চুল কাটার বিশেষ পরিষেবা চালু করেছে সৌদি আরব। এরমাধ্যমে ইহরাম থেকে মুক্ত হয়ে থাকেন ওমরাহ পালনকারীরা। রমজানের ২১ দিনে প্রায় দেড় লাখ মুসল্লি এই পরিষেবা থেকে উপকৃত হয়েছেন। 

জানা যায়, প্রথম বারের মতো এ বছর পবিত্র মসজিদুল হারামের আঙিনায় ওমরাহ শেষে ইহরাম সম্পন্ন করতে চুল কাটার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

পুরুষ ও নারী ওমরাযাত্রীদের জন্য মারওয়া এলাকার বিপরীতে ১২টি স্থানে এ ব্যবস্থা করা হয়েছে। পুরোপুরি জীবাণুমুক্ত সরঞ্জাম দিয়ে ১১২ কর্মী মোবাইল সেলুনে সেবা দিচ্ছেন।

এর আগে গত ২ মার্চ মক্কার পবিত্র মসজিদুল হারামের আঙিনায় পরীক্ষামূলক ওমরাহযাত্রীদের জন্য চুল কাটার পরিষেবা চালু করেছে পবিত্র দুই মসজিদের পরিচালনা বিভাগ। এর মাধ্যমে ওমরাহযাত্রীরা সহজেই ইহরাম থেমে মুক্ত হতে পারছেন।

 

সূত্র : সৌদি গেজেট 

মন্তব্য
কোরআন থেকে শিক্ষা

আল্লাহর ইবাদতের মাধ্যমে মসজিদ আবাদ রাখা

ইসলামী জীবন ডেস্ক
ইসলামী জীবন ডেস্ক
শেয়ার
আল্লাহর ইবাদতের মাধ্যমে মসজিদ আবাদ রাখা

আয়াতের অর্থ : ‘সে সব ঘর যাকে সমুন্নত করতে এবং যাতে তাঁর নাম স্মরণ করতে আল্লাহ নির্দেশ দিয়েছেন, সকাল ও সন্ধ্যায় তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে।’ (সুরা : নুর, আয়াত : ৩৬)

আয়াতে আল্লাহ তাঁর ইবাদত ও জিকিরের মাধ্যমে মসজিদ আবাদের নির্দেশনা দিয়েছেন।

শিক্ষা ও বিধান

১. আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, পৃথিবীর সব মসজিদ এই আয়াতের অন্তর্ভুক্ত। অর্থাৎ সব মসজিদ আল্লাহর ইবাদত ও জিকিরের মাধ্যমে আবাদ রাখা আবশ্যক।

২. অথবা আয়াতে নবীদের প্রতিষ্ঠিত মসজিদের প্রতি অধিক যত্নশীল হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সেগুলো হচ্ছে মসজিদুল হারাম, মসজিদে নববী, মসজিদে কুবা ও মসজিদুল আকসা।

৩. একদল তাফসিরবিদ বলেন, ‘সমুন্নত করা’ বাক্যে ইঙ্গিত মেলে যে সাধারণ বাড়ি-ঘরের তুলনায় মসজিদের কাঠামো উন্নত ও কিছুটা ভিন্ন হওয়া উত্তম।

৪. মসজিদ আবাদের সর্বনিম্ন স্তর হলো তাতে নিয়মিত আজান হওয়া এবং পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ জামাতের সঙ্গে আদায় করা।

৫. আয়াতে ব্যবহৃত সকাল-সন্ধ্যা শব্দদ্বয় থেকে বোঝা যায়, তীব্র নিরাপত্তাহীনতার মতো একান্ত অপারগতা ছাড়া মসজিদ সব সময় ইবাদতকারীদের জন্য উন্মুক্ত করা রাখা প্রয়োজন। (তাফসিরে আবু সাউদ : ৬/১৭৮)

মন্তব্য

প্রযুক্তির ছোঁয়ায় বদলে যাওয়া সাহরি ও ইফতার

আতাউর রহমান খসরু
আতাউর রহমান খসরু
শেয়ার
প্রযুক্তির ছোঁয়ায় বদলে যাওয়া সাহরি ও ইফতার

মাহমুদ আহমেদ হাশেমির বয়স ৬৭ বছর। তিনি ইসলামাবাদের বাসিন্দা। যখন তিনি তাঁর পরিবারকে সঙ্গে নিয়ে একটি রঙিন দস্তরখানে চারপাশে বসে ইফতার করছিলেন, তখন প্লেট, চামচ ও কাঁটা চামচের শব্দে চারপাশ মুখোর হয়ে উঠেছিল। তিন ছেলে, ছেলের বউ ও নাতিদের নিয়ে তাঁর সুখের সংসার আরো সুখের হয়ে উঠেছিল।

তাঁরা মেঝেতে বসেই ইফতার করছিলেন।

হাশেমি পরিবারের ইফতারের দিকে তাকালে যে কেউ বুঝতে পারবে পাকিস্তানের ইফতার সংস্কৃতিতে যুক্ত হয়েছে আধুনিক জীবনধারার অনেক কিছু। যেমন—চামচ ও কাঁটা চামচের ব্যবহার। মূলত রমজান সংস্কৃতি প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে চর্চিত হয় মুসলিম পরিবারে।

তবে তাতে সময়ের সঙ্গে অনেক পরিবর্তনও আসে। 

বর্তমান সময়ে রমজান সংস্কৃতিকে দারুণভাবে প্রভাবিত করছে আধুনিক প্রযুক্তি। গণমাধ্যমের রমজানবিষয়ক আয়োজন, ইফতার-সাহরির সময় জানতে অ্যাপসের ব্যবহার, অনলাইন কেনাকাটা ও সামাজিক মাধ্যমে সমাজ উন্নয়নমূলক নানা কর্মসূচি চলমান পরিবর্তন প্রক্রিয়ারই অংশ। একসময় এটা রমজান মাসের সাধারণ বৈশিষ্ট্য থাকলেও এখন টিভি, মোবাইল ফোন ও অ্যালার্ম ঘড়ির প্রভাবে তা গুরুত্ব হারিয়েছে।

সারা বিশ্বের মুসলমানের কাছে মোবাইল অ্যাপসগুলো রমজান উদযাপনের অপরিহার্য অনুষঙ্গ হয়ে উঠেছে। এর মাধ্যমে মানুষ নামাজের সময়সূচি জানা, কোরআন তিলাওয়াত করা, রমজানের কর্মপরিকল্পনা সাজানো এবং ইফতার-সাহরির সময় জানা যায়। এ ছাড়া অ্যাপসের মাধ্যমে জাকাত ও সদকাতুল ফিতরের হিসাবও সহজে বের করা যায়। আগে মানুষ রমজানে বিভিন্ন ধর্মীয় সভা-সমাবেশে যেতেন এবং দ্বিনি আলোচনা শুনতেন। কিন্তু এখন ইউটিউবের মতো সামাজিক মাধ্যমগুলো মানুষের সে প্রয়োজন পূরণ করছে।

এখন ইউটিউব ও ফেসবুকের মতো সামাজিক মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ ইসলামী ব্যক্তিত্বের বক্তব্য প্রচার করা হয়। কখনো কখনো তাঁরা লাইভ আলোচনাও করে থাকেন। তাঁরা রোজাসহ ধর্মীয় বিধি-বিধান, কোরআনের তাফসির, আত্মিক পরিশুদ্ধি ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা করেন। ইউটিউব ও ফেসবুকে ইসলামী শিক্ষার নানা উপকরণও পাওয়া যায়। এসব প্ল্যাটফরমে নারীদের রান্না প্রণালীও শেখানো হয়। টেলিভিশন ও রেডিওতে এমন আয়োজন শুরু হয়েছে কয়েক দশক আগে। রমজানকেন্দ্রিক অনুষ্ঠান ও আয়োজনগুলো সহজেই সামাজিক মাধ্যমে প্রচার করা যায়। আর মানুষও সেগুলোর ব্যাপারে তাদের মতামত তুলে ধরতে পারে।

হাতে লেখা ঈদ কার্ড মাহমুদ হাশেমির জন্য একটি সুখস্মৃতি। রমজান শেষে ঈদের সময় মানুষ পরিবার-পরিজন ও বন্ধুদের সঙ্গে হাতে লেখা ঈদ কার্ড বিনিময় করত। এখন মানুষ হোয়াটঅ্যাপ, ইমো ও ম্যাসেঞ্জারে ডিজিটাল শুভেচ্ছা বিনিময় করে। তাঁর ভাষায় ‘প্রিয়জনের কাছ থেকে ঈদ কার্ড পাওয়ার অনুভূতি কতই চমৎকার ছিল। তখন প্রিয়জন ও আত্মীয়-স্বজন কার্ড পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করত। মানুষ ঈদ কার্ডগুলো তাদের বসার ও শোয়ার ঘরে প্রদর্শন করত। এখন আপনার কাছে শুধু একটি ছবি ছাড়া আর কিছুই আসবে না।

মাহমুদ আহমেদ হাশেমি বলেন, আমাদের শৈশবে শুধু ঘরে তৈরি খাবার দিয়ে ইফতার ও সাহরি করা হতো। বড় জোর আশপাশের দোকান থেকে কোনো ইফতারসামগ্রী কিনে আনা হতো। ইফতার ও সাহরিতে পরিবারের সবাই একই খাবার খেত। কিন্তু দিন দিন অ্যাপসের মাধ্যমে নিজের পছন্দের খাবার অর্ডার করার প্রবণতা বাড়ছে। মাহমুদ হাশেমি তাঁর শৈশব ও কৈশোরের অনেক রমজান সংস্কৃতি হারিয়ে যাওয়া এবং তাতে পরিবর্তন আসায় দুঃখ প্রকাশ করেন।

মাহমুদ আহমেদ হাশেমির ছেলের নাম মিরাজ মোস্তফা হাশেমি। তিনি পাকিস্তানের ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির অধ্যাপক। তিনি বলেন, ডিজিটাল উদ্ভাবনগুলো যেমন মোবাইল অ্যাপ মানুষের দৈনন্দিন জীবনকে সহজ করেছে। একই সঙ্গে তা রমজানের ঐতিহ্যকেও লালন করে। ফুডপান্ডার মতো অ্যাপগুলো ঐতিহ্যবাহী ইফতার বাজারে উপস্থিত হওয়ার বিকল্প মাত্র। এর দ্বারা জনসাধারণ উপকৃত হচ্ছে, বিশেষত চাকরি ও অন্যান্য কারণে যাদের হাতে পর্যাপ্ত সময় থাকে তারা।

মিরাজ হাশেমি মনে করেন প্রযুক্তির উন্নয়ন সমাজের জন্য একটি ইতিবাচক পরিবর্তন নিয়ে এসেছে। কেননা তাঁর মতো বহু মানুষ যাদের বাজারে যাওয়ার ইচ্ছা থাকলেও সময়ের অভাবে তা হয়ে ওঠে না। এ ছাড়া ডিজিটাল প্ল্যাটফরমগুলো মানুষের জন্য সমাজসেবামূলক কর্মকাণ্ড এবং অন্যকে সহায়তা করার কাজকেও সহজ করেছে, যা পবিত্র রমজানের অন্যতম দাবি। তবে অতীতের কিছুদিন মিরাজ হাশেমির স্মৃতিতে সুখস্মৃতি হিসেবে ফিরে আসে। যখন আত্মীয়-স্বজনরা ভিডিও কলে কথা বলতে পারত না, তখন পারিবারিক ও সামাজিক অনুষ্ঠানে সবার সঙ্গে দেখা হতো, অনেক আনন্দের সময় কাটত। একইভাবে শৈশবে দাদা-দাদির সঙ্গে ঈদের কেনাকাটার স্মৃতিটাও ছিল বেশ আনন্দের।

অ্যারাব নিউজ অবলম্বনে

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ