আইএমএফের চাপে ওষুধ, গুঁড়া দুধ, বিস্কুট, জুস, ফলমূল, সাবান, মিষ্টিসহ ৬৫ পণ্যে ভ্যাট বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, এনবিআর। শুধু তাই নয়, মোবাইলে কথা বলা, ইন্টারনেট ব্যবহার, হোটেল-রেস্তোরাঁয় খাবারের খরচেও বাড়তি ভ্যাট বসানো হচ্ছে। মানুষের যখন নিত্যপণ্যের বাড়তি দামে চিড়েচ্যাপ্টা অবস্থা, তখনই মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা হয়ে আসছে নতুন করে এই বাড়তি ভ্যাটের খড়্গ। নতুন ভ্যাট আরোপের বিষয়টি উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদন হয়েছে।
ওষুধসহ ৬৫ পণ্যে ভ্যাট বাড়ছে, উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদন
মো. জাহিদুল ইসলাম

অচিরেই তা প্রজ্ঞাপন আকারে জারি করা হবে বলে জানা গেছে। বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছেন, এই বাড়তি ভ্যাট আরোপ জনগণের জন্য অনেকটা মূল্যস্ফীতির আগুনে ঘি ডালার মতো হবে।
এনবিআর সূত্রে জানা যায়, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) সরকারকে দেওয়া ঋণের শর্ত হিসেবে করছাড় কমিয়ে রাজস্ব বাড়ানোর অংশ হিসেবে ভ্যাটহার যৌক্তিক করার কথা বলেছে। সংস্থাটির পরামর্শ মতে মানুষের প্রতিদিন ব্যবহার্য ৬৫ পণ্য ও সেবার ওপর ভ্যাট বাড়ানো হয়েছে।
এ তালিকায় উল্লেখযোগ্য পণ্যগুলো হলো— জীবন রক্ষাকারী ওষুধ, এলপি গ্যাস, গুঁড়া দুধ, বিস্কুট, আচার, টমেটো কেচাপ/সস, সিগারেট, জুস, টিস্যু পেপার, ফলমূল, সাবান, ডিটারজেন্ট পাউডার, মিষ্টি, চপ্পল (স্যান্ডেল), বিমান টিকিট ইত্যাদি। ভ্যাট বাড়ানোর কারণে এসব পণ্য ও সেবার দাম বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে, যা মূল্যস্ফীতিকে উসকে দিয়ে সাধারণ মানুষের কষ্ট বাড়াবে বলে মনে করা হচ্ছে।
সূত্র জানায়, ঋণ দিতে আইএমএফ বাংলাদেশকে কর-জিডিপি অনুপাত ০.২ শতাংশ বাড়ানোর শর্ত দিয়েছে, টাকার অঙ্কে যা ১২ হাজার কোটির বেশি। এই অর্থ ২০২৪-২৫ অর্থবছরের রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রার (চার লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা) সঙ্গে যোগ হবে।
বাজেট প্রণয়নের সময় অর্থ মন্ত্রণালয় এনবিআরকে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করে দেয়। এই লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবভিত্তিক নয় বলে এনবিআর থেকে একাধিকবার জানানো হয়েছে। তার ওপর আইএমএফ আরো ১২ হাজার কোটি টাকা আদায়ের বোঝা চাপিয়ে দিয়েছে। এ অবস্থায় ভ্যাটহার বাড়ানোর বিকল্প ছিল না। সূত্র আরো জানায়, উপদেষ্টা পরিষদ নতুন ভ্যাটহারের বিষয়টি অনুমোদন দিয়েছে।
আগামী দুই-তিন দিনের মধ্যে নতুন প্রজ্ঞাপন জারি হতে পারে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এনবিআরের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে বলেন, সাধারণত বাজেটের সময়ই ভ্যাটের হার বাড়ানো বা কমানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এর বাইরে খুব একটা পরিবর্তন হয় না। তা ছাড়া মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতার কারণে এবার তো তা করার তেমন কারণও নেই। অর্থবছরের মাঝামাঝি সময়ে এসে এনবিআর ভ্যাটহার বাড়াতে চায়নি। এমনিতে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনতে এনবিআর চাল, চিনি, ভোজ্য তেলসহ সাতটি পণ্য আমদানিতে শুল্কছাড় দিয়েছে। কিন্তু অর্থ মন্ত্রণালয় ঋণ পেতে কর-জিডিপি অনুপাত ০.২ শতাংশ বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে এসেছে এবং অতিরিক্ত সেই অর্থ আদায় করতে হবে বাজেট-পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে। তাই মাঝামাঝি সময়ে ভ্যাট বাড়ানো ছাড়া এনবিআরের আর কোনো উপায় ছিল না।
সদ্যোবিদায়ি বছরের ৪ ও ৫ ডিসেম্বর এনবিআরের শুল্ক, ভ্যাট ও আয়কর খাতের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে সফররত আইএমএফ প্রতিনিধিদল। এতে নেতৃত্ব দেন বাংলাদেশে আইএমএফ মিশনের প্রধান জয়েন্দু দে। বৈঠকে আইএমএফ কর অব্যাহতি সুবিধা কমিয়ে আনার জন্য চাপ দেয়। একই সঙ্গে বাজেট-পদক্ষেপের মাধ্যমে কর-জিডিপি অনুপাত আগের ০.৫০ শতাংশের অতিরিক্ত আরো ০.২ শতাংশ বাড়ানোর শর্ত জুড়ে দেয়।
জানা যায়, ক্ষমতার পালাবদলে ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনীতিতে এক ধরনের মন্দাভাব থাকায় কাঙ্ক্ষিত রাজস্ব আদায় হচ্ছে না। এরই মধ্যে বড় ধরনের রাজস্ব ঘাটতির মুখে সরকার। তাই রাজস্ব আয় বাড়াতে বিভিন্ন উপায় খুঁজছে এনবিআর। এরই অংশ হিসেবে ভ্যাট বাড়ানোর এ কৌশল বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান।
সম্পর্কিত খবর

ভারতের ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিল, বেনাপোল থেকে ফেরত এল ৪ পণ্যবাহী ট্রাক
অনলাইন ডেস্ক

বাংলাদেশকে দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা প্রত্যাহার করায় বেনাপোল বন্দর থেকে চারটি মালবাহী ট্রাক ফেরত পাঠিয়েছে ভারত। বুধবার (৯ এপ্রিল) দুপুরে বেনাপোল বন্দর থেকে রপ্তানি পণ্যবোঝাই ওই ট্রাকগুলো রপ্তানিকারক ঢাকায় ফেরত নিয়ে গেছে বলে জানা গেছে।
এর আগে গত মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) জারি করা সার্কুলার নং ১৩/২০২৫-কাস্টমসের মাধ্যমে কার্যকর হওয়ায় বুধবার থেকে ভুটান, নেপাল এবং মায়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের দ্রুত ও স্বল্প খরচে বাণিজ্য করার পথ বন্ধ হয়ে যায়। ভারতের নিষেধাজ্ঞায় বেনাপোল বন্দর থেকে ফেরত যাওয়া পণ্যের রপ্তানিকারক ডিএসভি এয়ার এন্ড সি লি. প্রতিষ্ঠান।
ভারতের পেট্রাপোল ক্লিয়ারিং এন্ড ফরওয়াডিং এজেন্টস স্টাফ ওয়েল ফেয়ার এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কার্তিক চক্রবর্তী বলেন, ‘স্থলবন্দর দিয়ে ট্রানজিট সুবিধা বন্ধের জন্য ভারতের অর্থ মন্ত্রণালয় একটি চিঠি ইস্যু করেছে কাস্টমসে। এ চিঠির আলোকে ট্রানজিট সুবিধার পণ্য বেনাপোল থেকে পেট্রাপোল বন্দরে প্রবেশ বন্ধ হয়ে যায়।'
বেনাপোল আমদানি-রপ্তানি সমিতির সহসভাপতি উজ্জ্বল বিশ্বাস জানান, 'ভারত সরকারের এ ধরনের সিদ্ধান্তে দুই দেশের বাণিজ্য ও বন্ধুত্ব সম্পর্কে টানাপোড়েন তৈরি হবে।
সিএন্ডএফ এজেন্ট স্টাফ এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সাজেদুর রহমান বলেন, ‘ভারত সরকার ট্রানজিট সুবিধা বাতিল করায় বেনাপোল থেকে চারটি রপ্তানি পণ্যবোঝাই ট্রাক ফেরত গেছে। এতে রপ্তানি বাণিজ্য বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বে।’
বেনাপোল স্থল বন্দরের উপপরিচালক (ট্রাফিক) সজিব নাজির জানান, 'ট্রানজিট সুবিধা বাতিল করায় পেট্রাপোল কাস্টমস থার্ডকান্ট্রির পণ্যে কার্পাস ইস্যু করেনি।

ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিলের প্রভাব কেমন হবে, জানালেন বিশেষজ্ঞরা
অনলাইন ডেস্ক

ভারতীয় স্থল শুল্ক স্টেশন ব্যবহার করে তৃতীয় দেশে রপ্তানি পণ্য পরিবহনের জন্য বাংলাদেশকে দেওয়া ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করেছে নরেন্দ্র মোদির সরকার। মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) ভারতের কেন্দ্রীয় পরোক্ষ কর ও শুল্ক বোর্ডের (সিবিআইসি) জারি করা এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এরপর থেকে ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিলের প্রভাব কেমন হতে পারে তা নিয়ে চলছে আলোচনা। তবে, অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা বলছেন ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত যে আদেশ জারি করেছে তার ফলে বাংলাদেশের অর্থনীতির ওপরে বড় কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না।
এ বিষয়ে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা ‘সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো ও অর্থনীতিবিদ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিলের সিদ্ধান্তটা বেশ অপ্রত্যাশিতই বলা চলে। তবে আমরা এই সুবিধাটা খুব যে বেশি ব্যবহার করতাম, তা না। ফলে ট্রান্সশিপমেন্ট বন্ধের ফলে আমাদের অর্থনীতিতে বড় ধরনের কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে মনে করি না।’
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ট্রান্সশিপমেন্টের আওতায় ভারতের ভূখণ্ড ব্যবহার করে নেপাল ও ভুটানে কিছু পণ্য রপ্তানি করতো বাংলাদেশ।
তিনি আরো বলেন, ‘গার্মেন্টসের রপ্তানিকারকরা অনেক সময় দ্রুততম সময়ের মধ্যে ক্রেতা দেশগুলোর কাছে পণ্য পাঠানোর জন্য ভারতীয় বিমানবন্দর ব্যবহার করতেন। এখন তারা সেটা পারবেন না।
এদিকে, বাংলাদেশের তৈরি পোশাকখাতের একজন রপ্তানিকারক জানিয়েছেন, ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে গার্মেন্টস পণ্যের ‘সামান্য কিছু অংশ’ পশ্চিমা দেশগুলোতে যায়। ফলে ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিলের কারণে খাতটিতে সেভাবে প্রভাব পড়বে না।
ভারতের ভূখণ্ড ব্যবহার করে বাংলাদেশ থেকে ঠিক কী পরিমাণ পণ্য অন্য দেশে রপ্তানি করা হয়, সেটার সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য ব্যবসায়ীরা জানাতে পারেননি।
তবে, ভারত সরকারের ২০২৩ সালের এক হিসাব থেকে জানা যাচ্ছে, ওই বছরের এপ্রিল থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত দিল্লি বিমানবন্দর দিয়ে তৈরি পোশাক ও অন্যান্য পণ্য মিলিয়ে মাত্র পাঁচ হাজার কিলোগ্রামের মতো বাংলাদেশি পণ্য অন্য দেশে রপ্তানি হয়েছিল।

অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম চার বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন
বিবিসি

বিশ্বব্যাপী মার্কিন পাল্টা শুল্ক কার্যকর হওয়ার প্রথম দিনে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম চার বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছেছে।
বুধবার ব্রেন্টের অপরিশোধিত তেলের দাম কমে ব্যারেলপ্রতি ৬০ ডলারে বিক্রি হচ্ছে, যা করোনাকালে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের পর সর্বনিম্ন।
বিশ্লেষক অ্যাশলে কেলি বলছেন, হোয়াইট হাউস চায় তেলের দাম আরো কমে যাক। কারণ এটাই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য লাভজনক হবে।

ব্যাংকের টাকা লোপাট করে কেউ পালাতে পারবে না : গভর্নর
অনলাইন ডেস্ক

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, ‘ব্যাংকের টাকা লোপাট করে কাউকে পালিয়ে যেতে দেওয়া হবে না।’ তিনি বলেন, ‘ব্যাংকগুলোতে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বন্ধ করা হবে, যাতে কেউ লুটপাটের রাজত্ব কায়েম করতে না পারে। অনিয়ম, কেলেঙ্কারি ও সুশাসনের ব্যর্থতার কারণে ব্যাংক ও ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান উভয়ের জন্য প্রয়োজন সংস্কার।’
বুধবার (৯ এপ্রিল) রাজধানীর বিআইবিএম কার্যালয়ে দশম বার্ষিক ব্যাংকিং সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
গভর্নর বলেন, সংস্কারের জন্য গত বছরের ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর টাস্কফোর্স গঠন, নতুন আইন প্রবর্তন ও ব্যাংক কম্পানি আইনের মতো বিদ্যমান আইন সংশোধনসহ ব্যাংকিং খাতের একগুচ্ছ সংস্কারের উদ্যোগ নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। ফলস্বরূপ লুটপাট করা কিছু ব্যাংক ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করলেও কোমর ভেঙে আছে বেশ কিছু ব্যাংকের।
আর সব ব্যাংকের অবস্থা খারাপ নয়, তবে যেগুলো খারাপ সেগুলোর অবস্থা খুব খারাপ উল্লেখ করে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘ব্যাংকের টাকা লোপাট করে আর কাউকে পালিয়ে যেতে দেওয়া হবে না এবং ব্যাংকগুলোতে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বন্ধ করা হবে।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আরো বলেন, ‘গ্রাহকের স্বার্থে ব্যাংকের বোর্ডে হস্তক্ষেপ করবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এবং আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে আরো একটি ব্যাংকের বোর্ড ভেঙে দেওয়া হবে।
এ সময় বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসের (বিএবি) চেয়ারম্যান আব্দুল হাই সরকার বলেন, ‘ব্যাংকের প্রকৃত মালিক গ্রাহকরাই। তাই তাদের আস্থার দিকে গুরুত্ব দিতে হবে। না হলে ঘুরে দাঁড়াতে সক্ষম হবে না এই খাত।’