বাংলাদেশের ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা কেন বাতিল করল ভারত?

বিবিসি বাংলা
বিবিসি বাংলা
শেয়ার
বাংলাদেশের ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা কেন বাতিল করল ভারত?
সংগৃহীত ছবি

ভারতের বন্দর ব্যবহার করে অন্য দেশে পণ্য রপ্তানির জন্য বাংলাদেশকে দেওয়া ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা আকস্মিকভাবে বাতিল করার ঘটনাকে ‌‘অস্বাভাবিক’ বলে বর্ণনা করছেন অর্থনীতিবিদেরা। তবে অন্তর্বর্তী সরকারের বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেছেন, বাংলাদেশের বাণিজ্যে তেমন কোনো প্রভাব পড়বে না।

বাংলাদেশকে ভারত গত কয়েক বছর ধরে ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা দিয়ে আসছিল। কিন্তু গত ৮ এপ্রিল ভারতের সেন্ট্রাল বোর্ড অব ইনডাইরেক্ট ট্যাক্সেস অ্যান্ড কাস্টমস (সিবিআইসি) সেই ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করেছে।

প্রাথমিকভাবে আশঙ্কা করা হচ্ছিল, ভারতের এই সিদ্ধান্তে বাংলাদেশ হয়তো বড় কোনো সমস্যায় পড়তে যাচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার থেকে বলা হচ্ছে, কোনো সমস্যা দেখছে না তারা।

বিশ্লেষকরাও বলছেন, এই ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বন্ধ হলে বাংলাদেশের কোনো সমস্যা হবে না। প্রশ্ন উঠছে, তাহলে ভারত কেন, কোন উদ্দেশ্যে হঠাৎ বাংলাদেশের ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করল?

গত ৭ থেকে আজ ১০ এপ্রিল পর্যন্ত, চার দিনব্যাপী ঢাকায় বিনিয়োগ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করা এবং বাংলাদেশকে দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক বাণিজ্যকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলাই এই সম্মেলনের মূল উদ্দেশ্য।

বাংলাদেশে এই বিনিয়োগ সম্মেলন চলাকালে ভারতের পক্ষ থেকে হঠাৎ এই ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিলের সিদ্ধান্তকে কিছুটা ‘অস্বাভাবিক’ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকদের অনেকে।

প্রসঙ্গত, ট্রান্সশিপমেন্ট হলো এমন একটি আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক প্রক্রিয়া, যেখানে একটি দেশ তার পণ্য সরাসরি গন্তব্য দেশে না পাঠিয়ে মাঝপথে অন্য একটি দেশের বন্দর ব্যবহার করার মাধ্যমে রপ্তানি করে। একই প্রক্রিয়া অনুসরণ করে পণ্য আমদানিও করা হয়।

কী কারণে ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিলের সিদ্ধান্ত ভারতের?

২০২০ সালের ২৯ জুন বাংলাদেশ ও ভারতের মাঝে চুক্তি হয়েছিল যে ট্রান্সশিপমেন্ট প্রক্রিয়ায় ভারতের ভূখণ্ড ব্যবহার করে বাংলাদেশের পণ্য তৃতীয় কোনো দেশে পাঠানো যাবে। অর্থাৎ পণ্য পাঠানোর জন্য বাংলাদেশ ভারতের সমুদ্র বা বিমানবন্দর ব্যবহার করতে পারবে। সাধারণত সরাসরি পণ্য পাঠানোর সুবিধা না থাকা, পরিবহন খরচ কমানোসহ বেশ কিছু কারণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এই ট্রান্সশিপমেন্ট প্রক্রিয়া অনুসরণ করে আমদানি-রপ্তানি করে থাকে।

বাংলাদেশও এত দিন ধরে মধ্যপ্রাচ্য বা পশ্চিমের কোনো দেশে এবং ভারতের শুল্ক স্টেশন (ট্রানজিট রুট) ব্যবহার করে পণ্য পাঠাতে পারত।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বিনিয়োগ সম্মেলন চলার সময় ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পেছনে ভূ-রাজনৈতিক কারণ থাকতে পারে।

‘ভারত দেখেছে, বাংলাদেশ আন্তর্জাতিকভাবে তার নিজের ভাবমূর্তি প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছে এবং এটি ভারত পলিটিক্যালি (রাজনৈতিকভাবে) পছন্দ করছে না।’ বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক লাইলুফার ইয়াসমিন।

‘বাংলাদেশের সাথে তোমরা বাণিজ্য কোরো না, এমন একটি বার্তা দেওয়ার জন্যই’ ভারত এই সময়ে এমন সিদ্ধান্ত জানিয়েছে বলে মনে করেন এই বিশ্লেষক।

বাংলাদেশের জন্য ভারত ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করেছে। একই সঙ্গে ভারত বরাবরই জনগণের সঙ্গে জনগণের সম্পর্কের চেয়ে সরকারের সঙ্গে সরকারের সম্পর্ককে গুরুত্ব দেয়। তাই ভারতের এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার পেছনে এটি একটি অন্যতম কারণ হতে পারে বলেও মনে করেন অধ্যাপক লাইলুফার ইয়াসমিন।

তিনি বলেন, ভারত চাইছে, বাংলাদেশ যেন ভারতের বলয় থেকে বের না হয়ে যায়।

ভারতে বাংলাদেশের ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিলের পেছনের কারণ নিয়ে নানা আলোচনার মধ্যেই বিষয়টি নিয়ে নিজেদের ব্যাখ্যা তুলে ধরেছে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

রাজনৈতিক কোনো কারণে নয়, বরং নিজ দেশের স্বার্থ রক্ষার্থেই বাংলাদেশের ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা প্রত্যাহার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ভারতের কর্মকর্তারা। ‘২০২০ সালে বাংলাদেশকে এই সুবিধা দেওয়া হয়েছিল। এর ফলে আমাদের বিমানবন্দর এবং অন্য বন্দরগুলোতে দীর্ঘদিন ধরে তীব্র জট তৈরি হয়েছিল।’ গতকাল বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল।

‘এতে সময় বেশি লাগার পাশাপাশি খরচ বেড়ে যাওয়ায় আমাদের রপ্তানি বাধাগ্রস্ত হচ্ছিল এবং বন্দরে আটকে পড়া পণ্যের পরিমাণ বাড়ছিল। সে জন্য ২০২৫ সালের ৮ এপ্রিল থেকে এই সুবিধা প্রত্যাহার করা হয়েছে’, বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।

তবে ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিল হলেও নেপাল ও ভুটানে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানি ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। অর্থাৎ ভারতীয় ভূখণ্ড ব্যবহার করে বাংলাদেশ শুধু নেপাল ও ভুটানে আগের মতোই পণ্য রপ্তানি করতে পারবে বলে জানিয়েছেন রণধীর জয়সওয়াল।

ভারতের পোশাকশিল্প খাতের উদ্যোক্তারা আগে থেকেই এই সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবি জানিয়ে আসছিলেন উল্লেখ করেন দিল্লির সাংবাদিক গৌতম লাহিড়ি। তিনি বলেন, এত দিন সেটা শেখ হাসিনা সরকারের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের কারণে বাতিলে অসুবিধা ছিল।

তিনি আরো বলেন, এখন যেহেতু হাসিনা সরকার নেই, গার্মেন্ট ইন্ডাস্ট্রির লোকেরাও চাইছিল বাংলাদেশের পটপরিবর্তনের অ্যাডভান্টেজ (সুযোগ) নিতে।

ভারতের গণমাধ্যমে চীনে ইউনূসের বক্তব্যের সঙ্গে মিলিয়ে ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিলের বিষয়টি উপস্থাপন করার চেষ্টা হয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, এই কাকতালীয় যোগাযোগটা সাম্প্রতিক সময়ে দেখা গেছে।

তিনি জানান, গত কয়েক মাসে বাংলাদেশে অস্থিরতার সুযোগে ভারতের পোশাক রপ্তানির পরিমাণ বেড়েছে।

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কতটা প্রভাব পড়বে?

বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেছেন, ভারত ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করায় বাংলাদেশের বাণিজ্যে কোনো প্রভাব পড়বে না। ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত যে আদেশ জারি করেছে, তাতে বাংলাদেশের অর্থনীতির ওপর বড় কোনো নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে না বলে জানিয়েছেন অর্থনীতিবিদ-ব্যবসায়ীরাও।

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো ও অর্থনীতিবিদ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিলের সিদ্ধান্তটা বেশ অপ্রত্যাশিতই বলা চলে। তবে আমরা এই সুবিধা খুব যে বেশি ব্যবহার করতাম, তা না। ফলে ট্রান্সশিপমেন্ট বন্ধের ফলে আমাদের অর্থনীতিতে বড় ধরনের কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে আমি মনে করি না।

কারণ ভারতের ভূখণ্ড ব্যবহার করে নেপাল ও ভুটানেই বেশি পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ। আর এই দুই দেশে পণ্য রপ্তানিতে ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিলের প্রভাব পড়বে না।

তবে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে ইউরোপ-আমেরিকায় তৈরি পোশাকসহ যেসব পণ্য রপ্তানি হয়, ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিলের কারণে সেগুলো এখন বন্ধ হয়ে যাবে।

অর্থনীতিবিদ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, গার্মেন্টসের যারা রপ্তানিকারক আছেন, অনেক সময় দ্রুততম সময়ের মধ্যে ক্রেতা দেশগুলোর কাছে পণ্য পাঠানোর জন্য তারা ভারতীয় বিমানবন্দর ব্যবহার করতেন। এখন তারা সেটা পারবেন না। ফলে বাংলাদেশ থেকেই পণ্য পাঠাতে হবে।

এদিকে, বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতের একজন রপ্তানিকারক জানান, ভারতের ভূখণ্ড বিমানবন্দর ব্যবহার করে গার্মেন্টস পণ্যের ‘সামান্য কিছু অংশ’ পশ্চিমা দেশগুলোতে যায়। ফলে ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিলের কারণে এ খাতে সেভাবে প্রভাব পড়বে না।

বাংলাদেশের কিছু গণমাধ্যমে খবর এসেছে যে দেশের সর্ববৃহৎ যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরের গেট থেকে রপ্তানি পণ্যবোঝাই চারটি ট্রাক ঢাকায় ফেরত পাঠিয়েছে ভারত।

কিন্তু বন্দর পরিচালক (ট্রাফিক) মো. শামীম হোসেন জানিয়েছেন, তাদের কাছে এ বিষয়ে এখনো সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই। তবে তিনি এ-ও জানান, গতকাল তারা ওই ধরনের তথ্য না পেলেও আজ ট্রান্সশিপমেন্টের একটি ট্রাককে তারা ভারতে পাঠাতে পারেননি। কারণ ওই ট্রাকটির পণ্য নেপাল বা ভুটানের জন্য নয়, অন্য একটি দেশে যাবে।

ভারতের ভূখণ্ড ব্যবহার করে বাংলাদেশ থেকে ঠিক কী পরিমাণ পণ্য নেপাল-ভুটান বাদে অন্য কোনো দেশে রপ্তানি করা হয়, এর সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

তবে এ বিষয়ে মো. শামীম হোসেনকে বলেন, বন্দরে এই হার ‘খুবই সামান্য, খুবই কম।’

এদিকে, ভারত সরকারের ২০২৩ সালের এক হিসাব থেকে জানা যাচ্ছে, ওই বছরের এপ্রিল থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত দিল্লি বিমানবন্দর দিয়ে তৈরি পোশাক ও অন্যান্য পণ্য মিলিয়ে মাত্র পাঁচ হাজার কিলোগ্রামের মতো বাংলাদেশি পণ্য অন্য দেশে রপ্তানি হয়েছিল।

বাংলাদেশ এখন কী করবে?

এমন একসময় ভারত থেকে এই সিদ্ধান্ত এলো, যখন বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ভারতে আশ্রয় দেওয়া নিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্কে টানাপোড়েন চলছে।

এখন, নতুন করে হাজির হওয়া এই সমস্যা সামলাতে কী করবে বাংলাদেশ?

বাণিজ্য উপদেষ্টা যদিও আজ বলেছেন, বাংলাদেশের বাণিজ্যিক সক্ষমতা বাড়ানো হবে।

তিনি আরো বলেন, আমরা নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় সংকট কাটাতে চেষ্টা করব। নিজস্ব সক্ষমতায় প্রতিযোগিতায় যেন কোনো ঘাটতি না হয়, সেটা নিয়ে কাজ করছি। বাণিজ্যিক সক্ষমতা বাড়ানো হবে। একই সঙ্গে কাজ করছি যোগাযোগের ব্যাপারেও যাতে কোনো ঘাটতি না হয়।

সরকারের পদক্ষেপ সম্পর্কে বাণিজ্য উপদেষ্টা আরো বলেন, কিছু আছে অবকাঠামোগত বিষয়, কিছু আছে খরচ বৃদ্ধি, এসব নিয়ে কাজ করছি। আশা করছি, সমস্যা কাটিয়ে উঠব।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক লাইলুফার ইয়াসমিন মনে করেন, ভারত এই সুবিধা বন্ধ করায় বাংলাদেশের জন্য একদিক থেকে ভালো হয়েছে। কারণ, এতে করে ‘ভারতের ওপর বাংলাদেশের নির্ভরতা কমে যাবে’ এবং আর কোন কোন উপায়ে পণ্য পাঠাতে পারে, এখন সেদিকে মনোযোগ দিতে পারবে বাংলাদেশ।

অধ্যাপক ইয়াসমিনের মতে, বাংলাদেশ যদি এখন ‘এয়ার ট্রেডকে’ (আকাশপথে বাণিজ্য) আরো বেশি গতিশীল করতে পারে, তাহলে ভারতের প্রতি এই নির্ভরশীলতা থাকবে না।

তবে তিনি এ-ও বলেন, ‘ল্যান্ড বর্ডারের কোনো বিকল্প নাই।’

তাই ভারতের এই সিদ্ধান্তের কারণে ‘কিছুটা হলেও বাংলাদেশ ঝামেলায় পড়বে’ জানিয়ে তিনি আরো বলেন, এটি বন্ধ করতে হলেও ভারতের আগে থেকে নোটিশ দেওয়া প্রয়োজন ছিল। 

সূত্র : বিবিসি বাংলা

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

ভারতসহ ৩ দেশ থেকে যেসব পণ্য আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা

অনলাইন ডেস্ক
অনলাইন ডেস্ক
শেয়ার
ভারতসহ ৩ দেশ থেকে যেসব পণ্য আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা

ভারত, নেপাল ও ভুটান থেকে সুতা, গুঁড়া দুধ, টোব্যাকো, নিউজপ্রিন্ট, বিভিন্ন ধরনের পেপার ও পেপার বোর্ডসহ একাধিক পণ্যের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

গত ১৩ এপ্রিল প্রকাশিত গেজেটের মাধ্যমে এই নির্দেশনা জারি করে এনবিআরের কাস্টমস উইং।

কাস্টমস আইন, ২০২৩-এর ধারা ৮-এর উপধারা (১)-এর ক্ষমতাবলে এই প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। প্রজ্ঞাপনটি অবিলম্বে কার্যকর হবে বলে জানানো হয়েছে।

প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, ভারত থেকে ডুপ্লেক্স বোর্ড, নিউজপ্রিন্ট, ক্রাফট পেপার, সিগারেট পেপার, মাছ, সুতা, আলু, গুঁড়া দুধ, টোব্যাকো, রেডিও-টিভি পার্টস, সাইকেল ও মোটর পার্টস, ফরমিকা শিট, সিরামিকওয়্যার, স্যানিটারিওয়্যার, স্টেইনলেস স্টিলওয়্যার, মার্বেল স্ল্যাব ও টাইলস এবং মিক্সড ফেব্রিক্স—এই পণ্যগুলো আমদানি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তবে মূসক নিবন্ধিত বিড়ি উৎপাদনকারী শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো কাঁচামাল হিসেবে তামাক ডাঁটা আমদানি করতে পারবে বলে প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ রয়েছে।

একই সঙ্গে পূর্বে জারি করা এস.আর.ও নং ২৯৭-আইন/২০২৪/৮৯/কাস্টমস প্রজ্ঞাপনটির কয়েকটি ক্রমিক নম্বর সংশোধন করা হয়েছে। এতে পণ্য তালিকার হালনাগাদ করা হয় এবং ‘সকল রফতানিযোগ্য পণ্য’ আগের মতোই অব্যাহত রাখা হয়েছে।

কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে, স্থানীয় শিল্পকে সুরক্ষা এবং অবৈধ রি-এক্সপোর্ট বা রিরাউটিং রোধ করতেই এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। বিশেষ করে টেক্সটাইল, কাগজ ও সিরামিক পণ্য খাতে দেশীয় শিল্পের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা রক্ষা করাই মূল উদ্দেশ্য। তবে কিছু ব্যবসায়ী মহল থেকে এই নিষেধাজ্ঞার প্রভাব নিয়ে উদ্বেগও প্রকাশ করা হচ্ছে। তারা বলছেন, বিকল্প উৎস থেকে পণ্য আমদানিতে খরচ বাড়বে, যা শেষ পর্যন্ত ভোক্তার ওপর প্রভাব ফেলতে পারে।

মন্তব্য

যে কারণে লিটারে ১৪ টাকা বাড়ল সয়াবিন তেলের দাম

অনলাইন ডেস্ক
অনলাইন ডেস্ক
শেয়ার
যে কারণে লিটারে ১৪ টাকা বাড়ল সয়াবিন তেলের দাম
সংগৃহীত ছবি

রাজস্ব আদায় এবং আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্য, এই দুটি বিষয়ে সমন্বয়ের কারণেই দেশের বাজারে সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দিন। তিনি বলেছেন, আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে ভোজ্য তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) ভোজ্য তেলের আমদানি, সরবরাহসহ সার্বিক বিষয় পর্যালোচনাসংক্রান্ত এক সভা শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি।

আরো পড়ুন
ভারত থেকে এল ১০ হাজার টন সিদ্ধ চাল

ভারত থেকে এলো ১০ হাজার টন সিদ্ধ চাল

 

তিনি জানান, ভোজ্য তেলের ক্ষেত্রে মাসে প্রায় সাড়ে ৫০০ কোটি টাকা অব্যাহতি ছিল।

সরকার পরিচালনা ব্যয়ের উদ্দেশ্যে রাজস্ব অব্যাহতির ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা আছে। এই সীমাবদ্ধতা থেকে উত্তরণের ক্ষেত্রে রমজানকেন্দ্রিক চিন্তা করে প্রায় ২০০০ কোটি টাকা রাজস্ব অব্যাহতি দেওয়া হয়েছিল।

বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেছেন, এই মুহূর্তে আন্তর্জাতিক বাজার এবং ট্যারিফ কমিশনের ফর্মুলার ভিত্তিতে আজ তেলের মূল্য পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে। ফর্মুলা অনুযায়ী তেলের মূল্য লিটার প্রতি আসে প্রায় ১৯৭ টাকা।

কিন্তু শিল্পের সাথে আলোচনা ও সহযোগিতার ভিত্তিতে ১৮৯ টাকা প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল নির্ধারণ করা হয়েছে। খোলা সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ১৬৯ টাকা। 

আরো পড়ুন
চল্লিশের পরেও থাকবে যৌবন, ছাড়তে হবে যে ৫ অভ্যাস

চল্লিশের পরেও থাকবে যৌবন, ছাড়তে হবে যে ৫ অভ্যাস

 

তিনি আরো বলেন, দেশে ৩০ লাখ টনের ভোজ্য তেলের চাহিদা আছে। এর মধ্যে ৭ লাখ টন স্থানীয় সয়াবিন থেকে আসে।

নতুন করে ৬ লাখ টন রাইস ব্রান তেল বাজারে আনতে সক্ষম হয়েছি। প্রতিযোগিতার সক্ষমতা বৃদ্ধি করার ক্ষেত্রে সেনা কল্যাণ সংস্থার অয়েল মিলকেও কার্যকর করার চেষ্টা হয়েছে। ৩ লাখ টনের উৎপাদন সক্ষমতা নিয়ে তারা মাত্র ২০ হাজার টন উৎপাদন করতো। এ ছাড়া আরো দুটো তেল কম্পানি ‘গ্লোবাল’ এবং চট্টগ্রামের একটি বড় কম্পানি নতুন করে আবার বাজারে এসেছে। আশা করি, সামনে তেলের দাম আবার কমাতে পারব।
সামনে প্রতিযোগিতার কারণে মূল্য কমবে বলে আশা করি।

শেখ বশিরউদ্দিন বলেন, পাম অয়েলের ক্ষেত্রে সরকার যে মূল্য নির্ধারণ করেছে, প্রতিযোগিতা সক্ষমতার কারণে নির্ধারিত মূল্যের থেকেও ১০ টাকা কমে তা বিক্রি হচ্ছে। আশা করি, আগামী ২-৩ মাসের আরো ২-৩টি উৎপাদনে আসবে এবং সরকার যে ১০-১২ লাখ টন তেলের স্থানীয় যোগান নিশ্চিত করতে পেরেছে এর ফলে ব্যাপক বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে, অভ্যন্তরীণ রাজস্ব বাড়বে, বাজারে প্রতিযোগিতা সৃষ্টি হবে এবং সামগ্রিকভাবে দেশের জন্য ভালো হবে। ভোক্তা পর্যায়ে আমরা যে দাম বাড়াতে বাধ্য হলাম, এই বাধ্যবাধকতা মনে করছি সাময়িক। অদূর ভবিষ্যতে এই মূল্য নামিয়ে আনতে সক্ষম হবো।

মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত জানানোর আগেই তেলের দাম বাড়িয়ে রবিবার ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রেস বিজ্ঞপ্তির প্রসঙ্গে প্রশ্ন করলে উপদেষ্টা বলেন, এটা তারা করতে পারেন না। তারা ট্যারিফ কমিশনে আবেদন করতে পারেন। তেল নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য। এটার দাম সরকার নির্দিষ্ট করে।

তিনি বলেন, ভোজ্য তেলের ক্ষেত্রে কর অব্যাহতির মেয়াদ ৩০ মার্চের পর থাকছে না। মূল্যস্ফীতি এখন নিয়ন্ত্রণের মধ্যে আছে। তেলের এ দাম বৃদ্ধি জনগণের জন্য অসহনীয় হবে না।

মন্তব্য

সয়াবিন তেলের নতুন দাম নির্ধারণ

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
সয়াবিন তেলের নতুন দাম নির্ধারণ
ফাইল ছবি

প্রতি লিটার বোতলজাত তেলের দাম লিটারপ্রতি ১৮৯ টাকা নির্ধারণ করেছে সরকার। একই সঙ্গে খোলা তেল লিটার ১৬৯ টাকা ও পাম অয়েল ১৪৯ টাকা লিটার বিক্রি করতে হবে।

মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) সচিবালয়ে তেলের দাম নিয়ে ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দিন।

দেশের রাজস্ব আয় বাড়ানো এবং আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় করার জন্য এই দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা।

তবে এটা সাময়িক সিদ্ধান্ত বলে জানান তিনি।

নতুন ঘোষণায় পাঁচ লিটার সয়াবিন তেলের বোতলের নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৯২২ টাকা, যা আগে ছিল ৮৫২ টাকা। এসময় তিনি বলেন, সাড়ে ৫শ' কোটি টাকা রাজস্ব অব্যাহতি দিয়েছে সরকার। এ ছাড়া রমজানে ২ হাজার কোটি টাকা অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।

বর্তমানে তেলের চাহিদা ৩০ লাখ মেট্রিক টন জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, এর মধ্যে ৭ লাখ মেট্রিক টন সরিষার তেল আর ৬ লাখ মেট্রিক টন রাইস ব্রান তেল দেশে উৎপাদন হয়।

তিনি আরো বলেন, এখন মূল্যস্ফীতি সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে, সিঙ্গেল ডিজিটে আছে। তাই তেলের দাম যেটুকু বাড়ানো হয়েছে তাতে খুব একটা প্রভাব পড়বে না মানুষের জীবনে। তেলের এই দামের ফলে মাসে ৭০ টাকার মত বেশি খরচ বাড়বে।

মন্তব্য

স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে সুতা আমদানি বন্ধ

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে সুতা আমদানি বন্ধ
ছবি: কালের কণ্ঠ

বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে পোশাকশিল্পের সুতা আমদানির সুবিধা বাতিল করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। তবে স্থলপথ ছাড়া সমুদ্রপথে বা অন্য কোনো পথে সুতা আমদানি করা যাবে।

এ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) প্রকাশ করেছে সংস্থাটি। ২০২৪ সালের ২৭ আগস্ট জারি করা প্রজ্ঞাপন সংশোধন করে নতুন এই প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।

এই আদেশ তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর করা হয়।

জানা গেছে, ভারতের উত্তর ও দক্ষিণ অঞ্চলে উৎপাদিত সুতা প্রথমে কলকাতায় গুদামজাত করা হয়। এরপর সেখান থেকে বাংলাদেশে পাঠানো হয়। এসব সুতা তুলনামূলক কমদামে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে।

এ কারণে দেশীয় সুতার পরিবর্তে স্থলবন্দর দিয়ে আসা সুতা বেশি ব্যবহার করা হচ্ছে। যার ফলে দেশের বস্ত্রশিল্পকারখানাগুলো বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়ছে বলে দাবি করেছিল বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ)।

এ ছাড়া চীন, তুরস্ক, উজবেকিস্তান এবং দেশে উৎপাদিত সুতার দাম প্রায় একই রকম হলেও স্থলবন্দর দিয়ে আসা ভারতীয় সুতার দাম অনেক কম থাকে। অর্থাৎ স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি করা সুতা চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে ঘোষিত দামের চেয়ে অনেক কম দামে আসে।

এতে দেশের সুতা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছে না।

এর আগে, গত ফেব্রুয়ারি মাসে দেশে স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে বস্ত্রখাতের অন্যতম কাঁচামাল সুতা আমদানি বন্ধের দাবি জানায় বস্ত্রশিল্পমালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ)। এরপর গত মার্চ মাসে এক চিঠিতে পোশাকশিল্পে দেশে তৈরি সুতার ব্যবহার বাড়াতে স্থলবন্দর দিয়ে পোশাকশিল্পের সুতা আমদানি বন্ধ করার জন্য এনবিআরকে ব্যবস্থা নিতে বলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন। তখন ট্যারিফ কমিশন থেকে এনবিআর চেয়ারম্যানকে পাঠানো চিঠিতে দেশীয় টেক্সটাইল শিল্পের স্বার্থ সংরক্ষণে সব সীমান্তসংলগ্ন সড়ক ও রেলপথ এবং স্থলবন্দর ও কাস্টম হাউসের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসারে সুতা কাউন্ট নির্ণয়ে যথাযথ অবকাঠামো প্রস্তুত না হওয়া পর্যন্ত আগের মতো সমুদ্রবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুপারিশ করা হয়।

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ