<p style="text-align:justify">খুলেছে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বেরোবি)। আজ রবিবার (২৯ সেপ্টেম্বর) ৯০ দিন বন্ধ থাকার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস-পরীক্ষাসহ সব একাডেমিক কার্যক্রম আবার শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে ক্লাস পরীক্ষায় ফিরেছেন শিক্ষার্থীরা। তবে এদিন সবাই উপস্থিত থাকলেও নেই আবু সাঈদ। তার স্মৃতিতে কাঁদছে ক্যাম্পাস। ক্লাস শুরু হলেও অন্তর অশান্ত বেরোবির শিক্ষার্থীদের। তারা বিভিন্নভাবে আবু সাঈদকে স্মরণ করছেন। তারা এ হত্যার বিচার দাবি করছেন।</p> <p style="text-align:justify">এর আগে গত বুধবার (২৫ সেপ্টেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলো খোলার পর শিক্ষার্থীরা হলে, মেসে ফিরতে শুরু করেছেন। আবু সাঈদের রুম এখনো ফাঁকা। এটা মেনে নিতে পারছেন না তার সহপাঠী ও বন্ধুরা। ক্লাসে বসেও শিক্ষার্থীরা আবু সাঈদকে মনে করছেন। তার খালি চেয়ারটি দেখে তাদের চোখে জল। তারা বলছেন, ‘আবু সাঈদ ছাড়া ক্লাস আর আগের মতো হবে না। তার অভাবে ক্যাম্পাস মনে হচ্ছে অনেক নিস্তব্ধ।’</p> <p style="text-align:justify">ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী রাকিব আহমেদ বলেন, ইতিমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসি নিয়োগ হয়েছে। সঙ্গে একাডেমিক কার্যক্রম আরম্ভ হয়েছে। আমরা ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থীরা ক্লাস পরীক্ষায় ফিরছি। কিন্তু সবচেয়ে বেদনার বিষয় হচ্ছে, আমাদের ভাই শহীদ আবু সাঈদ উনি আর কখনোই ক্লাসে ফিরবেন না। তাকে ছাড়া বিভাগে এসে ক্লাস করে কতটা শূন্যতা অনুভব করছি তা ভাষায় প্রকাশযোগ্য নয়। </p> <p style="text-align:justify">দুই হাত টান করে বুক চিতিয়ে দেওয়া আবু সাঈদকে কাছ থেকে যেভাবে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে, সেই দৃশ্যপট মনে হলে কিছুটা নিস্তব্ধ হয়ে যাই, নির্বাক হয়ে যাই। এই সেই আবু সাঈদ, যিনি সদা-সর্বদা বিপদ-আপদে পাশে থাকতেন, যেকোনো বিষয়ে সাহায্য-সহযোগিতায় এগিয়ে আসতেন, সেই আবু সাঈদ আজ আমাদের মাঝে নেই। আজ ক্লাসে যে সিটে তিনি আসন গ্রহণ করতেন, সেই সিটও আবু সাঈদের শূন্যতা অনুভব করবে। সেই সিটও একা হয়ে যাবে। তার সেই বুক পেতে দাঁড়িয়ে থাকার দৃশ্য মনের কোণে ভেসে ওঠে, হৃদয়টা হাহাকার করে ওঠে। আর কখনোই আবু সাঈদকে আমরা ক্যাম্পাসে দেখতে পাব না, এই শূন্যতা আমাদের অন্তরে আজীবন থাকবে।</p> <p style="text-align:justify">ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সাদিয়া তাহসীন বলেন, গত ৫ আগস্ট স্বৈরাচারের পতনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের দ্বিতীয় স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে। এই স্বাধীনতার প্রথম শহীদ হয়েছেন আমাদের ক্যাম্পাসের বড় ভাই আবু সাঈদ। স্বৈরাচারের পতনের পর দেশ স্বাধীন হলেও আবু সাঈদ আর ফিরলেন না। বিশ্ববিদ্যালয় খুলেছে, ক্যাম্পাসে ফিরে এসেছি আমরা, কিন্তু ৭৫ একরের এই ক্যাম্পাসে আবু সাঈদকে আর কখনোই দেখা যাবে না। </p> <p style="text-align:justify">আমাদের সহপাঠী, শিক্ষক, বন্ধুরা সবাই আছে, শুধু আবু সাঈদ নেই। আবু সাঈদের স্মৃতি আজও বেরোবিয়ানদের মনে হাহাকার তৈরি করছে। তার হত্যাকারীরা এখনো প্রাপ্য সাজা পায়নি, যা বেরোবিয়ানদের জন্য আরেকটি বেদনার জায়গা। আবু সাঈদ হয়তো আর ফিরবেন না, কিন্তু তার হত্যার ন্যায়বিচার হলে কিছুটা স্বস্তি মিলবে। তবে তার অনুপস্থিতির শূন্যতা কখনো পূরণ হবে না। আবু সাঈদ চিরকাল বেরোবিয়ানদের মাঝে বেঁচে থাকবেন।</p> <p style="text-align:justify">শিক্ষার্থী ফাতিহুল ইসলাম শোভন বলেন, শহীদ আবু সাঈদ  বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের সূচনা করেছিলেন। তার নেতৃত্বে এই আন্দোলন দেশের মানুষের স্বাধীনতা ফেরানোর পথে এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হয়ে দাঁড়ায়। দীর্ঘ তিন মাস ক্লাস বন্ধ থাকার পর ২৯ সেপ্টেম্বর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম পুনরায় শুরু হলো, কিন্তু সেই ক্লাসে আর সাঈদ উপস্থিত থাকবেন না। তার শূন্যতায় আমরা সবাই শোকাহত। তবু তার জন্য ন্যায়বিচার এখনো সম্পন্ন হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে আমাদের অনুরোধ, শহীদ আবু সাঈদ হত্যার বিচার দ্রুত সম্পন্ন করে তার আত্মার শান্তি নিশ্চিত করা হোক।</p> <p style="text-align:justify">শিক্ষার্থী নুসরাত তাবাসসুম বলেন, আবু সাঈদ ভাই- যাকে আমরা সব সময় বিপদে-আপদে পাশে পেতাম। কিন্তু আজ তাকে কোথাও খুঁজে পাচ্ছি না। ১৬ জুলাই হঠাৎ করেই তিনি চলে গেলেন না-ফেরার দেশে। আবু সাঈদ ভাইয়ের বসার চেয়ারটাও এখনো ফাঁকা পড়ে আছে, যেন তার অপেক্ষায়। মেসে তার জিনিসপত্রগুলোও ঠিক আগের মতোই রয়ে গেছে, অথচ তিনি আর কখনো ফিরে আসবেন না। ক্যাম্পাস, ক্লাস, মেস—সব জায়গায়ই তার অনুপস্থিতি আমাদের মনে কষ্টের স্মৃতি হয়ে আছে। আর কখনোই আবু সাঈদ ভাইকে আমাদের ক্যাম্পাসে দেখতে পাব না, এ শূন্যতা আমাদের হৃদয়ে চিরকাল থেকে যাবে।</p>